মাঝে মাঝে মনে হয় জীবনটা অন্যরকম হবার কথা ছিল!
মস্কোর বিখ্যাত মেট্রোতে চড়ে যাচ্ছিলাম রিচ্-নোই বোখজাল(ট্রেন স্টেশন) থেকে প্রসপেক্ট মিরাতে।
আড়াআড়ি সিটের উল্টোদিকে মুখোমুখি বসে আছেন পক্ককেশী এক বৃদ্ধা মহিলা সাথে লাল জ্যাকেট পড়া ছোট্ট একটা ফুটফুটে মেয়ে। বৃদ্ধা মহিলা কেন যেন প্রথম থেকেই তার ঘন নীল চোখের দৃষ্টি মেলে পলকহীন চোখে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে!
আর মাঝে মাঝে পাশে বসা মেয়েটির সাথে আমাকে লক্ষ্য করে কানে কানে কি যেন বলছিলেন। বাচ্চা মেয়েটাও অবাক চোখ মেলে তাকিয়ে ছিল আমার দিকে।
আমি স্বভাবতই একটু অস্বস্তি বোধ করছিলাম।
দুটো স্টপেজ পরে আমার পাশ থেকে দুজন যাত্রী উঠে গেলে তিনি অতি সঙ্কোচে এসে মেয়েটিকে নিয়ে আমার গা ঘেষে বসলেন।
আমি দুবার আড়চোখে তাকালাম তার দিকে- বৃদ্ধার জিজ্ঞাসু দৃষ্টি আমার অস্বস্তি আরো বাড়িয়ে দিল কয়েকগুন।
আচমকা তিনি বেশ বিনম্রভাবে আমার দৃস্টি আকর্ষন করে বললেন;
(এখানে প্রথম কয়েক লাইন আমি বাংলা অনুবাদ করে তার বলা কিছু রুশ শব্দ অবিকল বসিয়ে দিচ্ছি। রুশ শব্দগুলো নাহলে কেন যেন মনে হচ্ছে তার সত্যিকারে অনুভুতি প্রকাশ পাচ্ছেনা। )
-রিবিয়েতা ইজভিনিচে।
আতকুদা ভি?
(ভি অর্থাৎ তিনি আপনি করে বলেছেন আমাকে,
-জনাব কিছু মনে করবেন না!কোথা থেকে এসেছন আপনি?)
-ইয়া? আত বাংলাদেশ। (আমি? বাংলাদেশ থেকে। )
-বাংলাদেশ গিজিয়ে নাখোজিৎসা? রিয়াদম ইন্দি স্তো-লে?
(বাংলাদেশের অবস্থান কোথায়? ইন্ডিয়ার কাছে নাকি?)
-দা-রিয়াদম ইন্দি। (জ্বী ইনডিয়ার কাছে)
-ও বজ্বা মোই!ভি ইজনায়েচে তাগোরা?( ও আমার ঈশ্বর!
আপনি কি তাগোরকে চেনেন?)
-তাগোর কাকোই তাগোর?(তাগোর কোন তাগোর?)
-তাগোর পয়েত(কবি)রবিন্দ নাত তাগোর?
-ও রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের কথা বলছেন? জ্বী আমি চিনি তাকে। তিনিতো আমাদের বিশ্বকবি।
মহিলা বিস্মিত নেত্রে আমার দিকে চেয় ভীষন অবাক হয়ে বললেন,
-তাই?সত্যি? আমি তার কবিতা খুব ভালবাসি। আমার মেয়ে মানে এর মা(সাথের ছোট্ট মেয়েটিকে দেখিয়ে বললেন)ও তাঁর খুব ভক্ত!
-তাই নাকি? আপনারা রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা পড়েছেন?
-হ্যা অনেক! এই যে আমার নাতনীও জানে তার নাম। নাতনী তার মিস্টি হেসে সম্মতিসুচক ঘাড় নেড়ে জানাল-কথা সত্যি!
-খুব ভাল লাগল শুনে।
-আমি থাকি গ্রামে। নাতনীকে নিয়ে এসেছি মস্কো দেখাতে’।
একটু থেমে রক্তিম মুখে লজ্জিত ভঙ্গীতে বললেন, আমি কোনদিন ভারতীয় কাউকে সামনাসামনি দেখিনি। এই প্রথম তোমাকে দেখলাম। যদি কিছু মনে না কর আমি কি তোমার হাতখানা ছুয়ে দেখতে পারি?
তার কথা শুনে এবার আমার বিস্ময়ের পালা! ভীষন অবাক হয়ে বললাম, কেন নয় অবশ্যই!’হাতখানা বাড়িয়ে দিলাম তার দিকে, নিন ছুয়ে দেখুন।
বৃদ্ধা পরম মমতায় তার শ্বেতশুভ্র হাতখানা বাড়িয়ে আলতো করে ধরে রাখলেন আমার হাতে।
‘ তার চোখের দিকে চেয়ে আমি চমকে উঠলাম! চোখের পাতা ভিজে উঠেছে খুশীর আনন্দঅশ্রুতে!
সেভাবেই তিনি আদ্র কন্ঠে বললেন,-আমি বাড়িতে গিয়ে আমার মেয়ের কাছে বলব,
‘আজ আমি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দেশের লোকের হাত ছুয়ে এসেছি!
(দু'বছর আগের লেখা রিপোস্ট দিলাম)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।