পল্লবীর গণহত্যার চাঞ্চল্যকর তথ্য
নিজামী কাদের মোল্লাবাহিনী ৯ ঘণ্টা গণহত্যা চালায়
* ভোররাতে মসজিদ থেকে টেনে বের করে হত্যা করা হয় মুসল্লিদের ** আকাশে ছিল পাকিস্তানি হেলিকপ্টার
বাকী বিল্লাহ [ সংবাদ - ৫ আগস্ট ২০১০ ]
১৯৭১ সালে রাজধানীর পল্লবীতে গণহত্যার সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আকাশপথে হেলিকপ্টার দিয়ে নিজামী ও কাদের মোল্লা বাহিনীর নিরাপত্তা দিয়েছিল। আর স্থলপথে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার বাহিনী মেশিনগানসহ অত্যাধুনিক অস্ত্র নিয়ে নির্বিচারে হত্যাকা- চালিয়েছিল। ভোর বেলায় তারা মসজিদ থেকে স্বাধীনতার পক্ষের মুসলি্লদের বের করে এক এক করে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। হত্যার পর টেনেহিঁচড়ে ৪টি কূপে তাদের লাশ ছুড়ে
ফেলে দেয়া হয়। সরজমিনে পল্লবীর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুসন্ধানে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য বের হয়ে আসছে।
এলাকার প্রত্যক্ষদর্শীরা সিআইডির কাছে এমন স্বীকারোক্তি দিয়েছে। অভিযুক্ত আসামি কাদের মোল্লা ও কামরুজ্জামান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদে ৩৪৪ জন মানুষ হত্যা সম্পর্কে অনেক তথ্য স্বীকার করেছে। পল্লবীর আলবদরী গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ বিভিন্ন সূত্র জানায়, ১৯৭১ সালে পল্লবীর আলবদরী গ্রামে ঘরে ঘরে স্বাধীনতার পক্ষের লোকজন ছিল। সেখানে মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান করছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে জামায়াত নেতা কাদের মোল্লা, কামরুজ্জামান, মতিউর রহমান নিজামীসহ শীর্ষ জামায়াত নেতারা ২৪ এপ্রিল ভোর ৫টার দিকে আধুনিক অস্ত্র নিয়ে পল্লবীর আলবদরী গ্রাম ঘেরাও করে।
এ সময় তাদের সমর্থনে আকাশপথে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ৪টি হেলিকপ্টারযোগে ভারি অস্ত্র নিয়ে টহল দেয়। এরপর অভিযুক্ত জামায়াত নেতারা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ঘুমন্ত মানুষ ঘর থেকে এক এক করে টেনেহিঁচড়ে বের করে নির্বিচারে হত্যা করে। জামায়াত নেতারা কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পুরো এলাকাজুড়ে এসব তা-ব চালিয়েছে।
সূত্র মতে, রিমান্ডে নেয়ার পরপর এসব জামায়াত নেতা অপরাধ শনাক্তকারীদের দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদে অনেক তথ্য দিয়েছে। তারা পল্লবীর গণহত্যায় কারা জড়িত এবং তারা কি ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছে এমন তথ্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে।
তাদের স্বীকারোক্তি সংবলিত বিভিন্ন তথ্য গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা বিশ্লেষণ করে একই তথ্য যাচাই-বাছাই করার জন্য সরজমিনে গিয়ে প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে অনেক ক্লু উদঘাটন করেছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানায়, পল্লবীর আলবদরী গ্রামের গণহত্যার ১২/১৩ প্রত্যক্ষদর্শী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদে গণহত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছে।
সিআইডির টিম দেখে প্রায় ৩০০ মানুষ পল্লবীর গণহত্যাস্থলে জমায়েত হয়ে সিআইডিকে তথ্য দিয়েছে। সিআইডি এসব তথ্য আদালতে দিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, তারা আদালতে গিয়েও ৭১ সালের গণহত্যার ঘটনা বর্ণনা দিতে পারবে।
গণহত্যার সময় কোন গর্তে বা কূপে লাশ ফেলা হয়েছে তারও প্রত্যক্ষদর্শী রয়েছে।
একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, পল্লবীর আলবদরী গ্রামে ২৪ এপ্রিলের গণহত্যার সময় ভোর ৫টা থেকে শুরু করে দুপুর ২টা পর্যন্ত (টানা ৯ ঘণ্টা) ধরে নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতন চালানো হয়। তখন আকাশপথে ৪টি হেলিকপ্টার থেকে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী জামায়াত নেতাদের অস্ত্র সরবরাহ করে। আর জামায়াত নেতা ও তাদের সহযোগীরা একের পর এক নির্মম হত্যাকা- চালায়।
উল্লেখ্য, পল্লবীর গণহত্যার চাঞ্চল্যকর এ মামলাটি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য গঠিত বিশেষ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।