সত্য প্রকাশে সবসময় নির্ভিক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে তিন মহাব্যবস্থাপককে নির্বাহী পরিচালক হিসেবে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। এই পদোন্নতি দেয়ার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে দুটি সুপার নিউমারারি পদ। নতুন পদোন্নতি পাওয়া এই তিন নির্বাহী পরিচালক হলেন সিতাংশু কুমার সুর চৌধুরী, সুধীর চন্দ্র দাস ও দাশগুপ্ত অসীম কুমার। এই নিয়োগ নিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীর পক্ষ থেকে সরকার ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলে বিষয়টি জানানো হয়েছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষ থেকে দেয়া অভিযোগে বলা হয়, সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকে ৩ জন কর্মকর্তাকে মহাব্যবস্থাপক হতে নির্বাহী পরিচালক হিসেবে পদোন্নতি দিতে জঘন্য জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। ওই ঘটনার সঙ্গে পদোন্নতি কমিটির চেয়ারম্যান ডেপুটি গভর্নর নজরুল হুদা ও প্রশাসন বিভাগের নির্বাহী পরিচালক আবুল কাশেম সরাসরি জড়িত বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসানকে মহাব্যবস্থাপক হতে নির্বাহী পরিচালক পদে পদোন্নতি দেয়ার পর বিদ্যমান প্যানেলের সব কর্মকর্তার পদোন্নতি প্রাপ্য হয়ে যায়।
কিন্তু কয়েক কর্মকর্তাকে মহাব্যবস্থাপক হতে নির্বাহী পরিচালক পদে পদোন্নতি দেয়ার জন্য তড়িঘড়ি করে বেআইনিভাবে সাপ্লিমেন্টারি প্যানেল প্রস্তুতের উদ্যোগ নেয়া হয়। এতে পদোন্নতি পাওয়া উপরোক্ত ৩ কর্মকর্তাসহ জ্যেষ্ঠ আরও ২ কর্মকর্তা প্যানেলভুক্ত হওয়ার সব যোগ্যতা অর্জন করেন। এ পরিস্থিতিতে শুরু হয় জালিয়াতি। জ্যেষ্ঠ ২ কর্মকর্তাকে প্যানেল হতে বাদ দেয়ার জন্য তাদের বাত্সরিক গোপনীয় রিপোর্ট গায়েব করে দিয়ে নতুনভাবে বাত্সরিক রিপোর্ট প্রস্তুত করা হয়। রিপোর্টিং কর্মকর্তা মফিজ উদ্দিন চৌধুরীকে প্রশাসন বিভাগের নির্বাহী পরিচালক আবুল কাশেমের কক্ষে ডেকে এনে জ্যেষ্ঠ ২ কর্মকর্তার একজনের ‘এক্সসেলেন্ট’ রিপোর্ট ডাউনগ্রেড করে ‘সেটিসফ্যাক্টরি’ করা হয়।
ফলে পদোন্নতির যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও মহাব্যবস্থাপক ফজলুর রহমান রিপোর্ট জালিয়াতির কারসাজিতে সাপ্লিমেন্টারি প্যানেল হতে বাদ পড়ে যান। অপরদিকে পদোন্নতি পেতে দাসগুপ্ত অসীম কুমারের ‘গুড’ রিপোর্টকে আপগ্রেড করে ‘এক্সসেলেন্ট’ করা হয়। এরূপ ভয়ঙ্কর জালিয়াতি সংঘটিত করে এসকে সুর চৌধুরী, সুধীর চন্দ্র দাস ও দাসগুপ্ত অসীম কুমারকে দু’দিনের ব্যবধানে একে একে পদোন্নতি দেয়া হয়।
জানা গেছে, প্যানেল কমিটির ২ সদস্য ডেপুটি গভর্নর ২ ও ৩কে স্বয়ং গভর্নর টেলিফোনে বাইরের সভা হতে ডেকে এনে প্যানেলে দস্তখত করান এবং একইদিনে সাপ্লিমেন্টারি প্যানেল প্রস্তুত করা হয়। একইসঙ্গে পদোন্নতি দেয়া এবং কাজ বণ্টন করা হয়।
সবকিছু করা হয় খুবই দ্রুত এবং পরিকল্পনামাফিক। সব কাজ এত দ্রুততার সঙ্গে করা হয় যে, ভুক্তভোগী কর্মকর্তারা কিছু বুঝে ওঠার আগেই কর্মচারী নির্দেশ জারি হয়ে যায়।
জানা যায়, চলতি বছরের ২৯ এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় হতে চিঠি দিয়ে জানানো হয় যে, নির্বাহী পরিচালক চৌধুরী মহিদুল হক মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন এবং তার নাম গেজেট প্রকাশের প্রক্রিয়াধীন আছে। ৩ মে চৌধুরী মহিদুল হকের নামে গেজেট প্রকাশিত হয়। একইভাবে চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধি পায় অপর এক নির্বাহী পরিচালক মুক্তিযোদ্ধা হারুনুর রশীদ চৌধুরীর।
কিন্তু সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রের ৪ নং ধারা লঙ্ঘন করে নিশ্চিত অবহিত হওয়া সত্ত্বেও নির্বাহী পরিচালকের পদ শূন্য ঘোষণা করা হয় এবং ওই পদে বেআইনিভাবে তড়িঘড়ি করে পদোন্নতি দেয়া হয়। পরে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রত্যয়নপত্র এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের পত্রের পরিপ্রেক্ষিতে ২৪ মে চৌধুরী মহিদুল হকের এলপিআর আদেশ বাতিল করা হয় এবং মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার অবসরের তারিখ দু’বছর পিছিয়ে দেয়া হয়।
অর্থাত্ দুই নির্বাহী পরিচালক এলপিআরে যাচ্ছেন না জেনেও নতুন করে তিনজনকে পদোন্নতি দেয়া হয়। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর মুর্শিদ কুলি খান বলেন, নতুন নির্বাহী পরিচালকের দুটি সুপার নিউমারারি পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। বার্ষিক গোপনীয় রিপোর্ট (এসিআর) পরিবর্তন করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা করার নিয়ম রয়েছে।
রিপোর্টিং কর্মকর্তার দেয়া এসিআর পদোন্নতি কমিটি যে কোনো সময় পরিবর্তন করতে পারে। এ প্রসঙ্গে অবশ্য নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নির্বাহী পরিচালক বলেন, যদি পদোন্নতি কমিটি এসিআর পরিবর্তনই করতে পারে, তাহলে আর এসিআর দেয়ার প্রয়োজনইবা কী। জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ ব্যাংকে ৭টি নির্বাহী পরিচালকের পদ রয়েছে। নতুন তিনজনকে নিয়োগ দেয়ায় নির্বাহী পরিচালক পদের সংখ্যা এখন ১০টি।
( আমার দেশ )
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।