চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র অসন্তোষ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে নজিরবিহীন ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে গত সোমবার। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭টি বাসসহ শতাধিক কক্ষ, প্রশাসনিক ভবন, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, আইটি ভবন, ব্যাংক, পোস্ট অফিস, জাদুঘর, টেলিফোন অফিস সর্বত্রই চলে এ তাণ্ডব। এসব ভবনের কম্পিউটার, ফটোকপি মেশিন, এমনকি রাস্তার পাশে থাকা সাইনবোর্ডগুলোও রক্ষা পায়নি ভাঙচুরের হাত থেকে। এ সময় পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। একজন শিক্ষক, পুলিশের একজন এএসপিসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন।
এ ঘটনার পর আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় দেড় মাসের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
কেন এ ভাঙচুর? শিক্ষার্থীদের একটি অংশ দাবি করে আসছিল, বর্ধিত টিউশন ফি প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবে এবং সে আন্দোলন তারা চালিয়েও যাচ্ছিল। সোমবার হঠাৎ মুখে কালো কাপড় বেঁধে একদল তরুণ লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে এবং ভাঙচুর শুরু করে দেয়। প্রত্যক্ষদর্শী এবং পুলিশের অভিযোগ, এরা ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ভাঙচুরের সময় বহদ্দারহাটে আট খুনের মামলার আসামি শিবির নেতা তৌফিকসহ কিছু বহিরাগত সেখানে উপস্থিত ছিল বলে শিবির নেতারাও স্বীকার করেছেন।
পুলিশের ধারণা, হামলার ঘটনাটি অত্যন্ত সুপরিকল্পিত। জানা যায়, সকাল ১০টার দিকে ক্যাম্পাসে হাজার দেড়েক শিক্ষার্থী মিছিল বের করেন। তাঁদের মধ্য থেকে কয়েকজন রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা এক পুলিশের প্লাস্টিকের ঢাল কেড়ে নিয়ে ভেঙে ফেলেন এবং পুলিশকে চ্যাংদোলা করে কচুরিপানাভর্তি পুকুরে ফেলে দেন এবং আরেক পুলিশকে মারধর করেন। এ সময় আরো পুলিশ জড়ো হয়ে প্রথম দফা লাঠিপেটা করে। এরপর পুলিশ শহীদ মিনারের সামনে অবস্থান নেয়।
মিছিলকারীরা সেখানে গিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে কয়েকজন পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশ দ্বিতীয় দফা লাঠিপেটা করে। একপর্যায়ে মুখে কাপড় বাঁধা তরুণরা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে এবং নির্বিচারে ভাঙচুর চালাতে থাকে। এ তাণ্ডবে ক্যাম্পাসে কয়েক কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি কত বেড়েছে? গত ২২ মে সিন্ডিকেট সভায় ভর্তি ও টিউশন ফি বাড়ানোর এবং ১ জুলাই থেকে তা কার্যকর করার সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়।
বিজ্ঞান অনুষদে ভর্তি ফি ৬৮০ টাকা বাড়িয়ে চার হাজার ১০০ টাকা করা হয়েছে। অন্যান্য অনুষদে ১৭০ টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে তিন হাজার ২০০ টাকা। বিজ্ঞান অনুষদে (গণিত বিভাগ ছাড়া) সম্মান শ্রেণীতে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষের অনাবাসিক শিক্ষার্থীর বার্ষিক টিউশন ফি ৯০৩ টাকা (মাসে ৭৫ টাকার মতো) বাড়িয়ে দুই হাজার ২৩০ টাকা করা হয়েছে। অন্যান্য অনুষদে ৯২৯ টাকা বাড়িয়ে দুই হাজার ১৭০ টাকা করা হয়েছে। অনাবাসিক ছাত্রদের ক্ষেত্রে বিজ্ঞান অনুষদে ৬২৯ টাকা (মাসে ৫২ টাকার মতো) বাড়িয়ে বছরে দুই হাজার ৭৪০ টাকা এবং অন্যান্য অনুষদে ৮২৯ টাকা বাড়িয়ে (মাসে ৬৯ টাকা) দুই হাজার ৬৮০ টাকা করা হয়েছে।
স্নাতকোত্তর শ্রেণীতেও বৃদ্ধির হার একই রকম।
টিউশন ফি কমানোর যে দাবি শিক্ষার্থীরা করেছেন তা অবশ্যই যৌক্তিক। প্রশাসন একসঙ্গে এত টাকা না বাড়িয়ে মাসে ১০ বা ২০ টাকা বাড়ালে শিক্ষার্থীদের হয়তো এতটা গায়ে লাগত না। বিষয়টি অবিলম্বে সিন্ডিকেট পুনর্বিবেচনা করবে বলে আমরা আশা করি। কিন্তু শিক্ষার্থীরা যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বেন সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি করা অত্যন্ত অনভিপ্রেত।
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারজন শিক্ষককেও লাঞ্ছিত করা হয়েছে। এটি অত্যন্ত ন্যক্কারজনক ঘটনা। আন্দোলন মানে নৈরাজ্য নয়। অনেক অভিভাবক সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাজনীতি ও সেশনজটের ভয়ে বাধ্য হন শিক্ষার্থীদের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাতে এবং তিন-চার মাসের একেকটি সেমিস্টারে ৫০ হাজার টাকা করে দিতে। তাঁরা যে খুব একটা বিত্তশালী তা নন, কেবল সন্তানের মঙ্গল কামনায় এ খরচ করতে বাধ্য হন তাঁরা।
আমরা চাই, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং শিক্ষার্থী সবার মধ্যেই শুভ বোধ জন্ম নেবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ কিভাবে আরো উন্নত হয়, সে চেষ্টাই তারা করে যাবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।