নর্দমার রাত, হিরন্ময় তাঁত
০১.
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সাধারণত বেতনফি বৃদ্ধি করে টানা কোনো বন্ধের কাছাকাছি সময়ে যেমন রমজানের বন্ধের আগে। এবং আন্দোলন বাঞ্ছাল করার জন্যে হয় শিবির, নাহয় ছাত্রলীগ, নাহয় ছাত্রদলকে দিয়ে কোনো না কোনো ঘটনা ঘটায়। ফলত আন্দোলন একটা বাঁকে যেতে না যেতেই মুখ থুবড়ে পড়ে। এবং সাফার করে হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী। এইসব আমার শোনা কথা নয়, এটা আমার কাছ থেকে দেখা বিষয়।
এবার যেমন শিবির আর ছাত্রলীগের ছেলেদের কাজে লাগিয়ে প্রশাসনিক ভবন এবং আশপাশ ভাঙচুর করালো। যার জের ধরে ছাত্রীহলগুলিতে প্রশাসনের ইশারায় পুলিশের নারকীয় লাঠিচার্জ, (অভিযোগ উঠেছে পুলিশ বেশ কয়েকজন ছাত্রীর কাপড় টেনে ছিঁড়ে ফেলে এবং শরীরের আপত্তিকর জায়গায় হাত দেয়)। গণগ্রেফতার, (চারশতাধিক সাধারণ শিক্ষার্থী গ্রেফতার হয়) এবং আগে ভাগেই দীর্ঘদিনের জন্যে ক্যাম্পাস বন্ধ করে দিলো।
ফলত একটা আন্দোলন মুখ থুবড়ে পড়লো।
০২.
এবার প্রশাসনিক ভবনে এবং ক্যাম্পাসে যে ভাঙচুর সংগঠিত হয়েছে তা শুরু করেছে ছাত্রলীগ এবং শিবিরের ছেলেরা।
এবং উস্কে দিয়েছে সাধারণ ছাত্রদের। একটা সংগঠিত আন্দোলনকে তখনি এইভাবে নস্যাৎ করে দিলো যখন প্রশাসন খানিকটা নমনীয় দাবী, বহিস্কারাদেশ এবং মামলা প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে।
প্রগতিশীল ছাত্রজোট সাধারণছাত্রদের ব্যানারে যে দাবী আদায়ের আন্দোলনটা গত কয়েকদিন ধরে গড়ে তুলেছিলো সেটা প্রচণ্ডভাবে আহত হলো।
এটা কি ষড়যন্ত্র?
ছাত্রলীগের যে কজন গ্রেফতার হয়েছে প্রত্যেককেই নেতারা ছাড়িয়ে নিয়ে এসেছে।
সবচে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের কর্মী, এবং সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা।
যেকজনকে গ্রেফতার করেছে তাদের কারোরই জামিন হয় নি। কোর্টে চালান দেয়ার কথা চলছে। হাজতে তাদের খাওয়া দাওয়ার ব্যাপক অসুবিধা হচ্ছে। বহিষ্কৃত (সুজনকান্তি দে, লোকপ্রশাসন বিভাগ দ্বিতীয়বর্ষ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের কর্মী, যাকে দুইবছরের জন্যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়) এবং গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে যাদেরকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি-- প্রত্যেকেরই পারিবারিক অবস্থা খুবি খারাপ, তাদের টিয়্যুশনির টাকায় সংসার চলে।
০৩.
যে আন্দোলন গতি পেলো ছাত্রছাত্রীদের দেহের রক্তে লেখা শ্লোগান দিয়ে সে আন্দোলন এখন বলতে গেলে মুখ থুবড়ে পড়লো।
আন্দোলনের চতুর্থ দিন শনিবার দুপুরে শতাধিক শিক্ষার্থী সিরিঞ্জ দিয়ে শরীর থেকে রক্ত সংগ্রহ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কার্যালয় ও প্রশাসনিক ভবনের দেয়ালে লিখে দিয়েছে- 'বর্ধিত বেতন ফি প্রত্যাহার কর, সুজনের বহিস্কারাদেশ বাতিল কর। '
০৪.
আমি ৯ বছর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছি। এবং দাবী আদায়ের সকল আন্দোলনের সাথে সরাসরি যুক্ত ছিলাম। দেখেছি বেতন ফি বৃদ্ধি বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সহ ছাত্রদের অধিকার আদায়ের কোনো আন্দোলনে ছাত্রশিবির, ছাত্রলীগ অথবা ছাত্রদল ছিলো না। তাদের মূল কাজ কী তা আমরা সকলেই জ্ঞাত।
তবে দেখা গেছে তারা প্রায় সময় আন্দোলের শেষদিকে যখন ইতিবাচক একটা ফল সম্ভাব্য হয়ে উঠে তখন কোনো না কোনো একটা ঝামেলা করবেই। হতে পারে এটা তাদের হঠকারিতা কিংবা পূর্বপরিকল্পিত কিংবা প্রশাসনের ষড়যন্ত্রের অংশ অথবা আন্দোলেনর সুফল নিজেদের ব্যানারে নেয়ার চেষ্টা। কিন্তু এতে সাধারণ ছাত্রদের যে রক্তক্ষয়ী আন্দোলন তা বলতে গেলে ধ্বংসই হয়ে যায়।
০৫.
সহকারি প্রক্টর চন্দন পোদ্দার মিডিয়ার কাছে বলেছেন, আন্দোলনকারিদের দায়দায়িত্ব আমাদের নয়। ক্যাম্পাসে কেউ উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করলে তাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনির হাতে তুলে দেয়া হবে।
এমতাবস্থায় গ্রেফতারকৃত শতাধিক শিক্ষার্থীর কী হবে বুঝতে পারছি না।
০৬.
এ আন্দোলন শুরুতে শান্তিপূর্ণ ছিলো। কিন্তু কতৃর্পক্ষ এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে টিয়ারসেল, লাটিচার্জ, গ্রেফতার, শোকজ এবং বহিস্কারের মাধ্যমে সহিংস আন্দোলনে পরিণত করেছে। এই দায়িত্ব সাধারণ ছাত্ররা কেনো নেবে?
০৭.
ছাত্রছাত্রীরা এবারের নতুন সেশনে ভর্তি হতে গিয়ে দেখছেন তাদেরকে বিভিন্ন খাতে আগের বছরের তুলনায় অনেক বেশি বেশি ফি দিতে হচ্ছে। স্নাতক সম্মানশ্রেণী কলা, সমাজবিজ্ঞান এবং বাণিজ্য অনুষদে আবাসিক শিক্ষার্থীর ভর্তি ফি গতবছর ছিলো ১৮৫১ টাকা, যেটা এবছর বেড়ে হয়েছে ২৬৮০ টাকা, আর অনাবাসিক শিক্ষার্থীর ক্ষেতে গতবছর ছিলো ১৩২৭ টাকা, আর এবছর ২১৭০ টাকা।
বিজ্ঞান অনুষদে আবাসিক শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে ভর্তিফি গত বছর ১৯১১ টাকা, আর এইবছর ২৭৪০ টাকা। অনাবাসিকের ক্ষেত্রে গতবছর ছিলো ১৩২৭ টাকা। আর এইবছর তা বেড়ে ২২৩০টাকা।
মূল-সনদের জন্যে গতবছর দিতে হতো ৪৮৪টাকা। এবছর ৮০০টাকা।
জরুরী ভিত্তিতে উঠানোর জন্যে গতবছর দিতে হয়েছে ৭০৪টাকা। এইবছর ১২০০টাকা।
এছাড়াও প্রত্যেক খাতে বেতন ফি বাড়ানো হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে ননকলেজিয়েট ও ডিসকলেজিয়েট ফিও। ননকলেজিয়েট ফি রাখা হয়েছে এক হাজার টাকা আর ডিসকলেজিয়েটের ক্ষেত্রে রাখা হয়েছে ৩০০০ থেকে ৭০০০ টাকা।
স্নাতকোত্তর শ্রেণী কলা, সমাজবিজ্ঞান এবং বাণিজ্য অনুষদে অনাবাসিক শিক্ষার্থীর বেতন ও ভর্তি ফি গত বছর ছিল ২০৩১ টাকা, এ বছর ২৯২০ টাকা। আর আবাসিকদের গত বছর ছিল ২৪৫৫ টাকা, এ বছর তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৩৪২০ টাকা।
০৮.
মানুষ রুখে উঠে তখনই যখন দেয়ালে তার পিঠ ঠেকে যায়।
এইকথা বোঝার ক্ষমতা কি তাদের মানে মানুষরূপী কর্তৃপক্ষের আছে?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।