জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান, সাবেক ফল রাষ্ট্রপতি পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও জাতীয় পার্টি
মানবজমিন এবং একজন পিতার অশ্রুসজল ঈদ --- হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ
এবারের ঈদের বেশ আগে থেকেই মনটা খুব খারাপ ছিলো। উত্তরবঙ্গের মঙ্গা পরিস্থিতি আমাকে খুব পীড়া দিয়েছে। মঙ্গার কারণে বিদেশ সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরে এসেছি। ফিরেই চলে গেছি উত্তরাঞ্চলে। দেখেছি মানুষের দুর্বিষহ অবস্থা।
উপলব্ধি করেছি অনাহারকিষ্ট মানষের যন্ত্রনা। মনটা পাগল হয়ে উঠেছিলো- যদি এই সব ক্ষুধার্ত মানুষের মুখে খাবার তুলে দিতে পারতাম ! আমার সাধের সীমা ছিলো অপরিসীম, কিন্তু সাধ্যের মাত্রা তা ছিলো খুবই সীমিত। যতোটুকু সম্ভব ছিলো তাই নিয়ে মঙ্গাপীড়িত কিছু মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। আহ্বান জানিয়েছিলাম দেশের বিত্তবান সমাজের কাছে মঙ্গায় কাতর জনগণের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। বলেছিলাম- সামনে ঈদ, এই সময় দেশের একটি অঞ্চলের বিপুল জনগোষ্ঠীকে অভুক্ত রেখে আমরা ঈদ উদযাপন করতে গেলে আনন্দে পূর্ণতা থাকবে না।
তাই আসুন সবাই- সকল মহল মঙ্গাকবলিত অঞ্চলের আর্ত মানবতার পাশে গিয়ে দাঁড়াই। দুঃখজনক হলেও সত্য যে- বিত্তবানদের ঈদ যথারীতি ব্যয়বহুল আনন্দেই উদযাপিত হয়েছে। অপরদিকেত ক্ষুধার্ত মানুষ এক বেলার ভাতের জন্য হা-হাকার করেছে।
এসব ঘটনায় মনটা ভারাক্রান্ত ছিলো। তবুও ঈদ মুসলমানদের ধর্মীয় জীবনের এমন এক গুরুত্বপূর্ণ দিন, যে দিনকে শত দুঃখ বেদনার মধ্যেও কোনোভাবে উপো করা যায় না।
সন্তান-সন্ততি, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সকলের মিলন ঘটায় এই ধর্মীয় উৎসব। দুঃখ-কষ্টের মধ্যে উৎসবের ছোঁয়া শীতল থাকলেও প্রানের পবিত্র আমেজ ফুরিয়ে যায় না। তাই ভারাক্রান্ত- মনের বেদনাকে চাপা রেখে পুত্র এরিককে নিয়ে ঈদের নামাজ পড়ে দেশবাসীর কল্যানে খোদার দরবারে মোনাজাত করতে চেয়েছিলাম। এরিক শিশু। নিষ্পাপ।
অবুঝ। কিন্তু আলাহকে চিনেছে। এতোটুকু বয়সেই মনের মধ্যে দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপিত হয়েছে যে, আল্লহর কাছে যা চাইবে তাই পাওয়া যাবে। ওকে ওমরাহ করতে নিয়ে গিয়েছিলাম। বলেছিলাম সকলের জন্য দোয়া চাইতে।
অবিশ্বাস্য স্মরণশক্তি কাজ করে এরিকের মাথায়। পবিত্র কাবা শরীফের সামনে দাঁড়িয়ে নাম ধরে ধরে সকলের জন্য দোয়া চেয়েছে। বলেছে- আল্লাহ তুমি আমাদের দেশকে ভালো করে দাও। ভেবেছিলাম ঈদের নামাজ পড়ে এরিককে দেশ ও জনগণের জন্য দোয়া চাইতে বলবো, দেশের মঙ্গা দূর করে দিতে বলবো। ওকে যাই বলি তোতা পাখির মতো তাই বলে যেতে পারে।
শুনলে মনটা ভরে যায়। সেই এরিককে নিয়ে এবার আমি ঈদের নামাজে যেতে পারিনি। ঈদের দিনে এরিককে আমি বুকে তুলে নিতে পারিনি। ঈদের জামাতে ওর কচি মুখে আমি শুনতে পারিনি- হে আল্লাহ, আমাদের দেশটাকে ভালো করে দাও ! যারা না খেয়ে আছে তাদের খাবারের ব্যবস্থা করে দাও ! কিন্তু কেনো পারলাম না ? কেনো একজন পিতা হয়ে আমি ঈদের দিনে সন্তানের সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত হলাম ? কেনো আমার ঈদের আনন্দ বেদনার অশ্র“তে ধুয়ে গেলো ? কে বা কারা এর জন্য দায়ি ? তাদের বিরুদ্ধে আমার অভিযোগ আমি জনতার আদালতে পেশ করতে চাই। আনন্দময় ঈদের দিনে পড়ন্ত বেলায় পুত্র এরিকের জন্য মনটা যখন খাঁ-খাঁ করে যাচ্ছিলো- তখন মনে হলো বেদনার কালিতে লিখে রাখি এক অসহায় পিতার অশ্রু ভেজা একটি ঈদ উদযাপনের কাহিনী।
ঈদের দিনে মঙ্গাপীড়িত মানুষের ছবি একদিকে আমার আনন্দকে বিবর্ণ করে রেখেছিলো আগে থেকেই। তার উপর পুত্র এরিকের কাছে না থাকার কষ্টগুলো অশ্রুসিক্ত করে রেখেছে সারাক্ষন। আমি দায়ি করবো একটি পত্রিকাকে। আমি রাজনীতিবিদ হলেও আমার একটা ব্যক্তি জীবন আছে। সেখানে আছে ঘাত-প্রতিঘাতের অনেক চিহ্ন।
অনেক তিক্ত অভিজ্ঞতাকে আমার বয়ে বেড়াতে হয়। আমার দাম্পত্য জীবনে তালাকের মতো নির্মম ও নিষ্ঠুর বিধানকে অবলম্বন করতে হয়েছে। একজন স্বামী জীবন যন্ত্রনার কোন পর্যায়ে উপনীত হলে তালাকের মতো পন্থাকে গ্রহন করতে হয়- বিবেকবান মানুষমাত্রই সেই পরিস্থিতিকে সহানুভূতির দৃষ্টিতে দেখা উচিত। আমি বিদিশাকে কেনো তালাক দিয়েছি তার প্রেক্ষাপট, ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে সকলেই অবগত আছেন। নতুন করে বলার কিছু নেই।
একজন ধর্মপ্রান মুসলমান হিসেবে তালাকের পরে প্রাক্তন স্ত্রীর সাথে কোনোভাবে হৃদয়ঘটিত সম্পর্ক রাখতে পারি না এবং তা কোনোভাবে সম্ভবও নয়। তবে সন্তানের কারণে তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী বা স্বামীর মধ্যে সাধারণ কোনো যোগাযোগ থাকাটা দোষের কিছু হতে পারে না। আমাদের দু’জনের একটি শিশু সন্তান রয়েছে। আলাদা আলাদাভাবে সে বাবা-মায়ের কাছে থাকে। তালাকের পর সমঝোতার মাধ্যমে এরিক এক সপ্তাহ আমার কাছে এবং এক সপ্তাহ তার মার কাছে থাকে।
আমার ছেলে তো এই সাত দিনের গণ্ডি সম্পর্কে অবুঝ। তাই সে মায়ের কাছে যখন থাকে তখন আমার কাছেও চলে আসতে চায়। তার মা তাই কখনো কখনো আমার কাছে এরিককে পাঠিয়ে দেয়। তাই এরিককে নিয়ে আসা বা দিয়ে আসার জন্য বিদিশার সাথে এই বিষয়ে যোগাযোগ করা ছাড়া আর কি কোনো গত্যন্তর আছে ? অথচ দৈনিক মানবজমিন পত্রিকাটি আমার শিশু সন্তানের মা-বাবার কাছে যাওয়া আসার বিষয়টিকে কেন্দ্র করে এমন একটি উদ্দেশ্যমুলক খবর ছাপিয়ে বসলোÑ যে কারণে দেশের মানুষের মধ্যে একটি ভুল ধারনা জন্ম নিয়েছে। রিপোর্টটি প্রকাশ করা হয়েছে ঈদের ঠিক একদিন আগে।
তারপর ৩ দিন পত্রিকা বন্ধ। সুতরাং প্রতিবাদ দিলেও তা প্রকাশিত হবে ৪ দিন পর। আর মানবজমিনের নীতি হলো- আমার কোনো প্রতিবাদ সাধারণত তারা ছাপায় না। এদিকে আমার সাথে বিদিশার কাল্পনিক খবর প্রকাশিত হওয়ায় বিদিশা ঈদের দিনে এরিককে আমার কাছে পাঠাতে অস্বীকৃতি জানায়। কারণ চুক্তি অনুসারে ওই সময়ে এরিকের বিদিশার কাছেই থাকার কথা।
তাই এরিক আমার সাথে ঈদের জামাতে যেতে পারলো না- ঈদে সে পিতার সান্নিধ্য পেলো না। আমি সন্তানের ছোঁয়া পেলাম না- ঈদের খাবার তার মুখে দিতে পারলাম না। অনেক যত্নে সন্তানের জন্য ঈদের যে পোষাকটি কিনেছিলাম, সেটি তাকে পড়াতে পারলাম না। মানবজমিন এই পরিস্থিতিটি সৃষ্টি করে সাংবাদিকতার কি মহান দায়িত্ব পালন করেছে- সে বিচারের ভার যদি তাদের বিবেকের উপর ন্যস্ত করি তাহলে কি রায় পাওয়া যাবে তা জানি না। তবে এইটুকু বলতে পারি- মানবজমিন একটি শিশুর ঈদ উদযাপন থেকে বঞ্চিত করে আলাহর কাছে তার হাত তুলে মোনাজাত করা থেকে বিরত করে, একজন পিতার ঈদকে অশ্রুসিক্ত করে শুধু অন্যায় নয়, পাপও করেছে।
ঈদের আগের দিনে দৈনিক মানবজমিনে “এরশাদ-বিদিশা ফের প্রেম মগ্ন ” শিরোনমের লিড নিউজটি দেখে আমি বিস্মিত এবং হতবাক হয়েছিলাম। মিথ্যা তথ্য এবং অমানবিক বক্তব্য মিশ্রিত ওই খবরটি দেখে আমি দারুন ভাবে আহত হয়েছিলাম- ওরা কেনো এভাবে আমার ক্ষতি করতে চায়। আমি বিদিশাকে কোনো গাড়ি দেইনি। অথচ লেখা হয়েছে- আমি তাকে দুইটি গাড়ি দিয়েছি। আমার ছেলের স্কুলে যাওয়ার জন্য একটি ছোট্ট গাড়ি কিনে দিয়েছি।
সেটা বিদিশাকে দেয়া হয়েছে বলে লেখা হয়েছে। এই ধরণের অসত্য কথার কি প্রতিবাদ করা যায় ! আমার ছেলে যখন তার মায়ের কাছে থাকে তখন আমি মাঝে মাঝে ওর জন্য খাবার পাঠাই। এরিক যখন আমার কাছে থাকে তখন ওর মা কখনো কখনো কিছু খাবার পাঠায়। এটা কি খুব অপরাধের বিষয় ? সন্তানের মুখে খাবারও দিতে পারবো না ? যারা এটা নিয়ে লিখেছেন তাদের কি সন্তান-সন্ততি নেই ? তারা কি তাদের সন্তানের মুখে খাবার তুলে দেন না ? কি অদ্ভুত মানষিকতা ! কি চমৎকার সাংবাদিকতা ! আমরা আমাদের সন্তানের জন্য খাবার দেই বা পাঠাই- সেটাকে সূত্র ধরে আমার নামে একটি উদ্দেশ্যমূলক খবর ছাপিয়ে জনগণের কাছে আমাকে হেয় করা হলো- আমার ছেলেকে ঈদের আনন্দ উপভোগ থেকে বঞ্চিত করা হলো। এই কদর্যতায় আমি আহত হয়েছি- ব্যথিত হয়েছি।
মানবজমিন তার জন্ম থেকে আজীবন আমার বিরুদ্ধে শুধু কুৎসা আর অপপ্রচারই করেছে। আমি সব সময় মার দৃষ্টিতে দেখেছি। ভেবেছি হলদে সাংবাদিকতা নির্ভর পত্রিকা- যা লেখে লিখুক। আমাকে নিয়ে লিখে পত্রিকা বিক্রি করে আয় রোজগার করে যদি খেয়ে-পড়ে ওরা বাঁচে তো বাঁচুক। কিন্তু মনুষত্ব-মানবিকতা বিসর্জন দিয়ে এতোটা কদর্য পথ অনুসরণ করবে ভাবিনি।
ওদের কারণে আমার ছেলেটা এবার ঈদের জামাতে যেতে পারলো না- এই কষ্ট আমি ভুলতে পারি না। কিন্তু কেনো ওরা আমার ব্যক্তি জীবনের উপর এভাবে আঘাত হানবে ? আমি রাজনীতি করি তাই বলে কি ?
ঈদের আগে আমি উত্তরবঙ্গে মঙ্গাপীড়িত এলাকায় দুর্গত মানুষের পাশে গিয়েছিলাম। তাদের সাধ্যমতো সাহায্য করেছিলাম। কিন্তু তা মানবজমিন পত্রিকায় লীড নিউজ হয়নি। এমনকি তা ছোট করেও ছাপায়নি।
মঙ্গাপীড়িত মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানিয়েছি- সে কথাও এই পত্রিকা ছাপেনি। মনে হয়- দুর্গত মানুষকে সাহায্য করা বা এদের এদের সাহায্যে এগিয়ে আসার আহ্বান এদের কাছে ভালো লাগেনি। এই কাজগুলো না করলেও এই পত্রিকার কোনো মাথা ব্যাথা থাকতো না। মাথা ব্যাথা উঠেছে আমি কেনো আমার সন্তানের জন্য খাবার পাঠালাম বা তার মা কেনো খাবার পাঠালো। আলেকজান্ডারের সেই বিখ্যাত ডায়ালগের সাথে সুর মিলিয়ে বলতে হয়- কি বিচিত্র এই মানবজমিনী সাংবাদিকতা !
আমাদের দেশে রাজনীতি করাটাই যেনো অপরাধ।
হয়তো কিছু সংখ্যক রাজনীতিবিদ রাজনীতির নামে কিছু অযৌক্তিক কাজ করে ফেলেন। কারণ এই ঘুঁনে ধরা সমাজ ব্যবস্থার মধ্যে তারাও বাসিন্দা। ছোটো-খাটো স্বার্থের কাছে তারাও আত্মসমর্পন করেন। কিন্তু ত্যাগী রাজনীতিবিদও তো আছেন। দেশ গড়া, দেশ পরিচালনা, সকল ধরণের অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া কিংবা দুর্যোগ দুর্বিপাকে মানুষের সেবায় এগিয়ে আসা- ইত্যাদি ক্ষেত্রে রাজনীতিকরাই তো অবদান রাখেন।
আমাদের স্বাধীনতা অর্জনও তো রাজনৈতিক আন্দোলনের ফসল। আবার দেশ ও জাতির সেবা করতে গিয়ে জেল-জুলুম-নির্যাতন-নিপীড়ন সে সবও সহ্য করতে হয় রাজনীতিকদের। সেই সাথে মিডিয়ার খড়গটিও সব সময় ধরা থাকে রাজনীতিকদের ঘাড়ের উপর। তাদের ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক জীবন যা তাদের একান্ত-ই নিজস্ব, তার উপরে মিডিয়ার দৃষ্টি থাকবে কেনো ? রাজনীতিকের রাজনীতি নিয়ে সমালোচনা পর্যালোচনা যাই করা হোক না, তা মিডিয়ার এখতিয়ারভুক্ত হতে পারে। কিন্তু সেখানে তার ব্যক্তি জীবন নিয়ে ঘাটাঘাটিতে দেশের কি উপকার বা সাংবাদিকতার কি মহান দায়িত্ব থাকতে পারে ? একজন শিল্পীর একটি ছবিকে ভালো বা মন্দ বলা যেতে পারে।
কিন্তু সেই ছবির সমালোচনা করতে গিয়ে শিল্পীর ক’টা বউ বা কার সাথে সে প্রেম করে- এটা কি আলোচনার বিষয় হতে পারে ?
প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই কিছু ভুলত্রুটি, ন্যায় অন্যায়, আবার কিছু সৎগুন পাশাপাশি অবস্থান করে। কোনো মানুষই সমালোচনার উর্দ্ধে নয়। আমরা সংবাদপত্রকে সমাজের আয়না বলে মনে করি। কিন্তু এই সেক্টরে যারা কাজ করেন তারা সবাই কি দুধে ধোঁয়া তুলসি পাতা ? যারা নীতির কথা বলেন, তাদের মধ্যে কি দুর্নীতি কাজ করে না ? সে সব নিয়ে তো মিডিয়ায় ঝড় উঠতে দেখা যায় না। অথচ আমরা যারা রাজনীতি করবো- জীবনের আরাম আয়েশ হারাম করে মানুষের সেবায় আত্মনিয়োগ করবো- তার বিনিময়ে বরণ করতে হবে জুলুম নির্যাতন, এমনকি ব্যক্তি জীবনের উপরও মিডিয়ার আঘাত।
আমি স্বীকার করি সব সেক্টরে পচন ধরেছে। মিডিয়া এর বাইরে থাকতে পারে না, হয়তো। কিন্তু এখানে একটু ব্যতিক্রম আমরা অবশ্যই আশা করবো। কারণ মিডিয়া সেক্টর এখনো সমাজের শিক্ষক হিসেবে কাজ করে। তার মধ্যে দু’একটা সাংবাদিকতার নীতিমালা লংঘন করে এমন সব কাজ করে বসে যা গোটা সেক্টরের উপরই অবজ্ঞার সৃষ্টি করে।
দুঃখের সাথে বলতে হয় মানবজমিন সেই কাজটাই করছে। মানুষকে আঘাত করা, মানুষের তি করা বা সমাজের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা খুবই সহজ ব্যাপার। কিন্তু তার উল্টোটা করা কঠিন কাজ। প্রত্যেক মানুষের ঘরে অস্ত্র রয়েছে। যেমন দা-বটি-ছুরি এ সবই অস্ত্রের মধ্যে পড়ে।
কিন্তু সবাই তা নিয়ে ছিনতাই বা ডাকাতি করতে যায় না। ধারালো অস্ত্র প্রাত্যহিক জীবনের অতি প্রয়োজনীয় সামগ্রী। সেটাকে কিভাবে ব্যবহার করা হবে সেটাই বিষয়। অস্ত্র যখন অন্যায়ভাবে ব্যবহৃত হয়- সেটাই হচ্ছে সন্ত্রাস। লেখকের হাতের কলম সবচেয়ে বড় অস্ত্র।
সেই অস্ত্র যদি অকারণে বা অসৎ উদ্দেশ্য হাসিলের মনোবৃত্তি নিয়ে কাউকে আঘাত করে তাহলে সেটাই হয় কলম সন্ত্রাস। মানবজমিন আমার উপর সেই সন্ত্রাস চালিয়েছে। আমি আহত হয়েছি। তাদের কলম-সন্ত্রাসের কারণে আমার সন্তানের ধর্মীয় ক্রিয়া-কলাপ ব্যহত হয়েছে। এর কি জবাব দেবে মানবজমিন !
আমার কোনো কর্ম যদি কারো জন্য অন্যায়ভাবে ক্ষতির কারণ হয়, তার জন্য আমি যে কোনো ধরণের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে প্রস্তুত আছি।
কিন্তু আমি আমার সন্তানের জন্য খাবার পাঠিয়েছি বা অন্য কেউ তার জন্য খাবার দিয়েছে- এতে কি কারো কোনো ক্ষতি হয়েছে ? অথচ এতোটুকু সাধারণ ও স্বাভাবিক তথ্যকে উপজীব্য করে কল্পনার আশ্রয় নিয়ে কাহিনী তৈরী করে আমার ভয়ানক ক্ষতি করা হয়েছে। এর ফলে আমার ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে, মানুষের কাছে আমাকে হেয় করা হয়েছে, এমনকি যে ধর্মীয় বিধানকে আমি মান্য করতে বাধ্য- তাও প্রশ্নের সামনে ফেলে দেয়া হয়েছে। এর কি বিচার আছে ?
এরিক আমার শুধু সন্তানই নয়, সে আমার আরো অনেক কিছু। একজন রাজনৈতিক পিতার সন্তান হিসেবে সে আমার দেশের তাবৎ শিশু সমাজের প্রতীক। এরিকের মুখমন্ডলের দিকে তাকিয়ে আমি সব শিশুর ছবি দেখার চেষ্টা করে।
আমি বিশ্বাস করি আমার সন্তানকে যেভাবে ভালোবাসি- সব পিতা এভাবেই তার সন্তানকে ভালোবাসেন। আমি আমার সন্তানকে যেভাবে ভবিষ্যতের জন্য গড়ে তুলতে চাই- সব পিতা-মাতা তাদের সন্তানকে সেভাবেই গড়তে চায়। আমি রাজনীতি করি মানুষের জন্য। মানুষের প্রত্যাশা পুরণই আমার প্রচেষ্টা। এক এরিকের প্রতি ভালোবাসা দিয়ে আমি সব শিশুদের প্রতি ভালোবাসা জানাই।
কোনো শিশুর কষ্ট আমি সহ্য করতে পারি না। এবারের ঈদে আমার সন্তান এরিক কষ্ট পেয়েছে। সে তার পিতাকে কাছে পায়নি। ঈদের জামাতে যেতে পারেনি। জামাতে বসে আল্লাহর দরবারে হাত উঠাতে পারেনি।
সেই কষ্ট আমার ঈদকে ম্লান করে দিয়েছে। একজন স্নেহময় পিতার ঈদ উদযাপিত হয়েছে সন্তানের জন্য অশ্রু বিসর্জনের মধ্য দিয়ে। ঈদের অবসরে সেই বেদনাবিধুর স্মৃতি মন্থন করেই লেখা হলো এই কাহিনী।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।