সিরিয়ার ওপর শক্তি প্রয়োগের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে ফ্রান্স। ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী লঁরা ফ্যাবিয়াস গতকাল বৃহস্পতিবার বলেছেন, বাশার আল-আসাদ সরকার নিজের জনগণের ওপর রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেছে বলে প্রমাণিত হলে ‘শক্তি প্রয়োগের’ প্রয়োজন হতে পারে।
এদিকে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়টি ‘গুরুতর উত্তেজনা বৃদ্ধির’ শামিল বলে মন্তব্য করেছে জাতিসংঘ। এ ঘটনায় ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করে সিরিয়ায় অবস্থানরত জাতিসংঘের অস্ত্র পরিদর্শক দলকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ব সংস্থাটি।
বিএফএম টিভিতে গতকাল বৃহস্পতিবার ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহারের বিষয়টি নিশ্চিত হলে সে ক্ষেত্রে ফ্রান্সের অবস্থান হচ্ছে এমন—এ ঘটনার অবশ্যই প্রতিক্রিয়া হবে এবং সেই প্রতিক্রিয়া হতে পারে শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে।
শক্তি প্রয়োগের বিষয়ে পরিষ্কার আর কিছু বলেননি ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তবে তিনি সিরিয়ার মাটিতে সেনা পাঠানোর বিষয়টি নাকচ করে দেন।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তর গতকাল এক বিবৃতিতে বলেছে, যুক্তরাজ্য এবং আরও ৩৬টি দেশ বিষয়টি নিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবকে চিঠি দিয়েছে। অস্ত্র পরিদর্শক দলকে ঘটনাটি শিগগিরই তদন্ত করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার জন্য মহাসচিবের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা বিশ্বাস করি, রক্তপাত বন্ধের সর্বোত্কৃষ্ট পথ হচ্ছে রাজনৈতিক সমাধান।
তবে আমরা আগেও অনেকবার বলেছি, সিরিয়ার নিষ্পাপ জীবন বাঁচাতে আমরা বিকল্প পথকেও নাকচ করে দিতে পারি না। ’
বাশারবিরোধী বিদ্রোহীরা অভিযোগ করেছে, সেনাবাহিনী গত বুধবার রাজধানী দামেস্কের অদূরে রাসায়নিক অস্ত্রের হামলা চালিয়েছে, যাতে এক হাজার ৩০০ মানুষ নিহত হয়েছে। সেনাবাহিনী ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। নিরপেক্ষ অন্য কোনো সূত্র থেকে এই অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
বিদ্রোহীরা এমন সময় এই অভিযোগ তুলেছে, যখন জাতিসংঘের ৩৫ সদস্যের এক অস্ত্র পরিদর্শক দল সিরিয়ায় অবস্থান করছে।
রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের নতুন এই অভিযোগ শুনে গত বুধবারই জরুরি বৈঠক করে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। বৈঠকের পর জাতিসংঘের উপমহাসচিব জ্যান এলিয়াসন এ ঘটনাকে ‘গুরুতর উত্তেজনা বৃদ্ধি’ বলে উল্লেখ করেন। নিরাপত্তা পরিষদের প্রেসিডেন্ট ও জাতিসংঘে নিযুক্ত আর্জেন্টিনার রাষ্ট্রদূত মারিয়া ক্রিস্টিনা পার্সিভাল বলেন, কী ঘটেছে তা স্পষ্ট করতে হবে।
নিরাপত্তা পরিষদের প্রেসিডেন্ট জানান, মহাসচিব বান কি মুন দ্রুত এ ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করতে চান। পরিষদের সদস্যরা মহাসচিবের এই প্রত্যয়কে স্বাগত জানিয়েছেন।
১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদ এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, অভিযোগ সত্যি হলে তা হবে ‘আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন’।
বিশ্বজুড়ে প্রতিক্রিয়া: রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারে ব্যাপক প্রাণহানির অভিযোগ ওঠায় বিশ্বজুড়ে প্রতিক্রিয়া হয়েছে। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের দীর্ঘদিনের মিত্র বলে পরিচিত রাশিয়া যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জাতিসংঘ পরিদর্শকদের রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের কথিত ঘটনাস্থলে যেতে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র এ ঘটনায় ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আগে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছিলেন, সিরিয়া রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করলে তা হবে ‘চূড়ান্ত সীমা’ লঙ্ঘন।
তা দেশটিতে সামরিক হস্তক্ষেপ ডেকে আনতে পারে বলে সতর্ক করে দেন তিনি।
তবে সিরিয়ার মিত্র ইরান তার সমর্থনে এগিয়ে এসেছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ গতকাল বলেন, সিরিয়ার রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা।
রাসায়নিক অস্ত্রের প্রভাব নিয়ে কাজ করেন এমন বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সিরিয়ার বাশারবিরোধীদের ভিডিওচিত্রে যা দেখা গেছে, তাতে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায় না।
ফিনিশ ইনস্টিটিউট ফর ভেরিফিকেশন অব দ্য কেমিক্যাল উইপন্স কনভেনশনের পরিচালক পলা ভেনিনেন বলেন, ‘ভিডিওচিত্র দেখে আমি পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারছি না যে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে।
কারণ, হতাহত ব্যক্তিদের আশপাশে যাদের দেখা যাচ্ছে, তারা কেউ নিরাপত্তামূলক পোশাক বা মুখোশ ব্যবহার করছে না। ’
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রাসায়নিক ও জীবাণু নিরাপত্তা প্রকল্পের প্রধান জন হার্ট বলেন, যে বিষাক্ত গ্যাস ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে, তার প্রভাবে নিহত ব্যক্তিদের যেমন শারীরিক পরিবর্তন হওয়ার কথা, ঠিক তা হয়নি। বিবিসি, এএফপি ও রয়টার্স।
সিরিয়ায় রাসায়নিক হামলার অভিযোগ
১৯ মার্চ
সিরীয় সরকার অভিযোগ করে, খান আল-আসাল এলাকায় বিদ্রোহীরা রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করে ৩১ জনকে হত্যা করেছে। একই দিনে বিদ্রোহীরা অভিযোগ তোলে, আল-ওতাবেহ এলাকায় সেনাবাহিনীর রাসায়নিক অস্ত্রের হামলায় ছয় ব্যক্তি নিহত হয়েছে।
২৪ মার্চ
সিরিয়ার পরিস্থিতির তথ্য সরবরাহকারী সংগঠন লোকাল কো-অর্ডিনেশন কমিটি (এলসিসি) জানায়, আদরা এলাকায় হামলায় দুই ব্যক্তি নিহত হয়েছে।
১৩ এপ্রিল
আলেপ্পোর শেখ মাকসুদ এলাকায় হামলায় তিন ব্যক্তি নিহত হয়। ইন্টারনেটে প্রচার করা ভিডিওচিত্রে মৃতদেহে বিষাক্ত গ্যাসের প্রভাব দেখা যায়।
২৯ এপ্রিল
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সারাকেব এলাকায় হেলিকপ্টার থেকে ফেলা বিষাক্ত গ্যাসে আটজন অসুস্থ হয়
২১ আগস্ট
দামেস্কের অদূরে ঘুটা এলাকায় শত শত লোক নিহত হওয়ার অভিযোগ। এ জন্য সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহীরা পরস্পরকে দায়ী করছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।