আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সুমন মোহাম্মদের ব্লগ শান্তির ধর্ম ইসলাম, ২য় পর্ব প্রসঙ্গে



সুমনের ব্লগের লিঙ্কঃ Click This Link তার ব্লগের মূল কথা হলোঃ ১) মক্কায় যখন নবী কোনঠাসা ছিলো, তখনই শুধু নিজের জান রক্ষার্থে কোরানে শান্তির কথা এসেছে। ২) মদীনায় গিয়ে এক গোষ্ঠীনেতায় পরিণত হওয়ার পর থেকেই কোরানে একের পর এক যুদ্ধের বাণী আসা শুরু হয়েছে। এবং নবীর নেতৃত্বে মুসলিমরা তখন সিরিয়ার পথে যাতায়াতকারী ব্যবসায়ী এবং আশেপাশের ছোট ছোট গোষ্ঠীর উপর আক্রমন করে লুটপাট শুরু করে। আমি নিজে খুব একটা যে ধার্মিক তা না। তবে নিজের ধর্মের পাশাপাশি অন্যান্যদের ধর্ম বা মতবাদের প্রতিও কমবেশী শ্রদ্ধাবোধ আছে।

অন্যের বিশ্বাসকে যেমন আঘাত হানতে যাই না, নিজেরটায় আঘাত এলেও চুপ করে বসে থাকাটা পছন্দের না। তার এই লেখার উত্তরে তাই আমার কিছু কথাঃ "আর তারা শুরু করে দিল মদিনার পাশ দিয়ে সিরিয়ার দিকে যাওয়া বানিজ্য পথে বানিজ্য দলের ওপর আতর্কিত আক্রমন করে তাদের মাল জিনিস লুটপাট, মদিনার আশে পাশের ছোট ছোট গোষ্ঠির ওপর আতর্কিত আক্রমন ও তাদের ধন সম্পদ লুন্ঠন। " তারা যে সিরিয়াগামী ব্যবসায়ীদের মাল লুটপাট আর ছোট ছোট গোষ্ঠীর উপর আক্রমন করে লুটপাট করতো তার কিছু উদাহরণ দিলেন না কেন? এছাড়া বলেছেন যে সমস্ত মাক্কী সুরা শান্তির বাণী বহন করে। কারণ মক্কায় যেহেতু কোনঠাসা ছিলেন, তাই ইহুদী খৃস্টানদের তোয়াজ করে চলতে হয়েছে। মদীনা থেকে এসে মক্কা বিজয় করার পরেও তো আরও সুরা এসেছে।

সেগুলোও কিন্তু মাক্কী সুরা। তো তখন শুধু মদীনার মতো ছোট এক শহরের অধিপতি না তিনি। তখন যুদ্ধাংদেহী কোন সুরা আসলো না কেন? এছাড়া আপনি মনে হয় প্রথম যুদ্ধ, তথা প্রথমবার কোরানে যুদ্ধের ব্যাপারে বলা হয়, তখনকার পরিস্থিতি সম্পর্কে জানেন না। কোরাইশদের অত্যাচারে টিকতে না পেরে তখনকার মুসলিমরা তাদের ঘরবাড়ি থেকে নিয়ে সব সম্পত্তি মক্কায় ফেলেই মদীনায় চলে যেতে বাধ্য হয়। এতো কিছুর পরেও ৬২৪ খৃস্টাব্দে আবু জেহেল ১০০০ সৈন্য, ৭০০ উট আর ১০০ ঘোড়ার এক বিশাল দল নিয়ে মদীনায় আক্রমন করতে আসে।

তখন মাত্র ৩১৩ জন অনুসারী নিয়ে বদরে তাদের মুকাবিলা করেন নবী। এছাড়া সিরিয়ায় যাবার পথে ব্যবসায়ীদের আক্রমনের যে কাহিনী বললেন তখন, এরকম ক'বার হয়েছে জানেন? বা কেন হয়েছে? আমি আমার সম্পত্তি সব অত্যাচারের ভয়ে ফেলে এসেছি। এখন দেখি সেই অত্যাচারীরা আমার সব সম্পত্তি নিয়ে সিরিয়ার পথে রওয়ানা হয়েছে বিক্রি করার জন্য। তো আমার কি সেটা ফিরিয়ে আনার অধিকার নেই? ইসলাম শান্তির ধর্ম বলে প্রয়োজনেও যুদ্ধ করতে পারবে না যদি বলেন, তাহলে তো শান্তির জন্য কোন দেশেই কোথাও কারও যুদ্ধ করা উচিত না। কেউ এক গালে থাপ্পর দিলে আরেক গাল পেতে বসে থাকলেই হয়।

পাকিস্তানীরা যখন অত্যাচার করতো, তখন সেটাও মাথা নিচু করে মেনে নিলেই শান্তি বজায় থাকতো। যুদ্ধের কি দরকার ছিলো? রাজাকাররা দেশের লাখ লাখ মা-বোনদের ধরে নিয়ে গেলেও চুপ করে বসে থাকা উচিত ছিলো। কারণ কিছু করতে গেলেই তো শান্তি নষ্ট। বুশের মতো অত্যাচারীও যখন কোন দেশে আক্রমন করে, তখনও বলে যে বিশ্বে নাকি শান্তি প্রতিষ্ঠা করার জন্যেই এই যুদ্ধ করা। তাই আক্রান্ত হবার আগেই আক্রমন করো।

ইসলাম তো সেই শিক্ষাও দেয়নি। আবার এটাও বলেনি যে কেউ এক গালে থাপ্পর মারলে আরেক গাল পেতে বসে থাকো। যখন যুদ্ধ করতে বলা হয়েছে, তখন যুদ্ধের সময় কি কি নিয়ম মেনে চলতে হবে তাও বলা হয়েছে। আবু গারিব কারাগার কিংবা গুয়ান্তানামো বে-র মতো যুদ্ধবন্দীদের উপর অত্যাচার করার ক্ষেত্রে কড়া নিষেধাজ্ঞা আছে। কই, কোরানের সেসব আয়াত নিয়ে তো কিছু বললেন না? ইসলামে যুদ্ধের নিয়মাবলীঃ ১।

কাউকে আগুনে পুড়িয়ে মারা বা অত্যাচার করা যাবে না। ২। যেসব আহত শত্রু আক্রমন করার অবস্থায় নেই, বা আক্রমন করছে না, তাদের আক্রমন করা যাবে না। ৩। যুদ্ধে যারা বন্দী হবে তাদের মারা যাবে না।

৪। দড়ি দিয়ে বাঁধা, বা বন্দী কাউকে মারা যাবে না। ৫। আবাসিক এলাকায় আক্রমন বা ধ্বংসযজ্ঞ চালানো যাবে না। যারা যুদ্ধ করছে তাদের বাদে অন্য কারও কোন সম্পত্তিতেই হাত দেয়া যাবে না।

৬। দখলকৃত এলাকার সাধারণ জনগনের কোন জিনিস তাদের কাছ থেকে মূল্য না দিয়ে নেয়া যাবে না। ৭। শত্রুদের দেহাবশেষ নিয়ে অসম্মান করা যাবে না। ৮।

শত্রুদের দেহাবশেষ ফেরত দিতে হবে। ৯। শত্রুপক্ষের সাথে কোন চুক্তি করলে তা ভঙ্গ করা যাবে না। ১০। শত্রুপক্ষের সাথে প্রকাশ্যে যুদ্ধ ঘোষণা না করে তাদের সাথে যুদ্ধ করা যাবে না, যদি না শত্রুপক্ষই আগে আক্রমন করে থাকে।

রেফারেন্সঃ http://www.hweb.org.uk/content/view/18/2/ আপনার হিসাব অনুযায়ী যে শান্তি চাইবে, তার মোটেই যুদ্ধ করা উচিত না, তাকে এসে কেউ মেরে ফেললেও, বা তার চোখের সামনে আত্মীয়স্বজনকে মেরে ফেললেও। এছাড়া ধর্মের কথা বাদ দিন, ধরে নিন আপনি একজন শান্তিকামী মানুষ। তো শান্তিতে বসবাসের জন্য আপনি কি করবেন? ১। আশেপাশের পাড়া-প্রতিবেশীদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করবেন না? তারা যদি কিছু নিয়ে লাগতে আসে, তখন অবশ্যই পার্থক্যের পাশাপাশি মিলগুলোও ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করবেন। বলবেন যে আপনার অমুক চিন্তার সাথে কিন্তু আমিও একমত।

তাই চলুন আমরা যার যার মতবাদ নিয়ে পাশাপাশি নিজেদের মতো করে বাস করি। ২। তারপরেও তারা যদি আপনাকে জ্বালিয়ে যায়, তখন কি করবেন? আপনার এক কাজের লোককে ধরে তারা ধরুন মেরে ফেললো, আপনার ফসল বিনষ্ট করে গোয়াল থেকে গরু খেদিয়ে দিলো। আপনাকেও যখন তখন মেরে ফেলার হুমকি দিতে লাগলো। আপনি কি চুপ করে বসে থাকবেন? ধরা যাক আপনি একটু বেশি মাত্রায় শান্তিকামী।

তো আপনি হয়তো শান্তিতে বাস করার জন্য পাড়া ছেড়ে অন্য জায়গাতেই চলে গেলেন, যেখানে জ্বালানোর মতো কেউ নেই। ৩। এখন যদি নতুন এই পাড়াতেও এসে আপনার আগের পাড়ার প্রতিবেশীরা আপনার সাথে লাগতে চায়, এখন আপনি কি করবেন? পাড়া থেকে পাড়ায় পালিয়ে বেড়াবেন? নাকি এইবার নিজের অধিকার আদায়ের জন্যে লড়াইয়ে নামবেন? যদি লড়াইয়েই নামেন, তো আপনাকে কি আমার যুদ্ধবাজ অত্যাচারী ঘোষণা করা উচিত? যেকোন যুদ্ধেই কমপক্ষে দু'টা পক্ষ থাকে। একই সাথে নিশ্চয় দুই পক্ষই দোষী হতে পারে না? দোষ বিচার করতে গেলে দেখতে হবে কে কি কারণে যুদ্ধ করছে? সে কি অন্যের দেশের মাটি দখল করতে যুদ্ধ করছে, নাকি নিজের মাটি অন্যের দখল থেকে বাচাঁনোর জন্য। কিন্তু দেখা যাচ্ছে আপনি সেসবের ব্যাখ্যায় না গিয়ে সরাসরি একপক্ষকে দোষী ঘোষণা করে দিলেন।

এটাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত না বলে আর কি বলা উচিত আমার? এবার আসি আপনার বিভ্রান্তিমূলক ভুল তথ্য প্রসঙ্গে। আপনি বলেছেন শুধু মক্কাতে অবতীর্ণ সুরাতেই শান্তির বাণী এসেছে। মদীনায় গিয়ে ক্ষমতা পেয়েই নাকি যুদ্ধের বাণী শুরু হয়ে গিয়েছিল। উদাহরণ হিসাবে আপনি কোরানের দ্বিতীয় সুরা বাক্বারাহ এর ২৫৬ নাম্বার আয়াতকে মাক্কী সুরা হিসাবে তুলে ধরেছেনঃ "দ্বীনের ব্যাপারে কোন জবরদস্তি বা বাধ্য-বাধকতা নেই। " (২/২৫৬) অথচ এটা মাক্কী না, মাদানী সুরা।

মদীনায় অবতীর্ণ। রেফারেন্সঃ Click This Link দেখা যাচ্ছে মদীনাতেও শান্তির বাণী এসেছে। অথচ ইচ্ছে করে নিজের যুক্তি প্রমাণের জন্য অকাট মিথ্যে বলতেও আপনি দ্বিধা করেননি। সেই আপনার কাছ থেকে শুধু কোন ধর্ম কেন, মানবতা বা সততা সম্পর্কেই বা কি শিখার আছে আমাদের? সাধেই কি বলে অল্প বিদ্যা ভয়ঙ্করী? ধর্মের মতো কোন স্পর্শকাতর একটা বিষয় নিয়ে বক্তব্য রাখতে গেলে এমনিতেই যথেষ্ট সতর্ক থাকতে হয়, সেটা ইসলাম, হিন্দু বা অন্য যেকোন ধর্মই হোক না কেন। (এটাও কিন্তু ইসলাম ধর্মেরই কথা, আপনার দেয়া কোরানের আয়াতে ইহুদী আর খৃস্টানদের সম্পর্কে বলা কথা থেকেই জানা যায়)।

কিন্তু আপনার মধ্যে অন্যের মতবাদ সম্পর্কে ন্যূনতম শ্রদ্ধাবোধ পর্যন্ত নেই। আজকে আপনার ভাল লাগেনি তাই এক ধর্ম সম্পর্কে সত্যি মিথ্যার গোঁজামিল দিয়ে যা খুশি বলে যেতে পারেন, কাল আবার অন্য কোন বিষয় নিয়ে এভাবে গেঁজাবেন। নিজের ভ্রান্তির মধ্যে বসবাস করেন, আর অন্যদের মধ্যেও তা ছড়াতে চান। আপনারা কবে মানুষ হবেন? আয়নায় কখনও নিজের চেহারা দেখে নিজেকে মানবতার প্রতীক মনে হয়? মাঝে মধ্যে নিজেকে নিয়ে একটু লজ্জাও কি করে না?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.