যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন ম্যারাথনে সম্প্রতি ভয়াবহ বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলায় নিহত হয়েছে তিনজন। আহত হয়েছে দুই শতাধিক। সন্দেহভাজন হামলাকারীরা রাশিয়ার চেচেন বংশোদ্ভূত অভিবাসী দুই ভাই। সারনায়েভ ভাতৃদ্বয়ের এই হামলা স্পষ্টতই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড।
কিন্তু এই হামলার অন্তর্নিহিত কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী মুসলিম অভিবাসীদের সমাজবিচ্ছিন্নতাই তীব্রভাবে ফুটে ওঠে। হামলার পেছনে বৃহত্তর কারণও থাকতে পারে।
ওই দুই সহোদরের চাচা রুসলান সারনি। ভাইয়ের ছেলেদের ওই হামলার ব্যাপারে তিনি বলেন, এঁদের এই কর্মকাণ্ড দিয়ে বৃহত্তর সম্প্রদায়কে মূল্যায়ন করলে চলবে না। কেননা, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী রুশ চেচেন অভিবাসীদের মধ্যে তিনি ও তাঁর পরিবারের সদস্যরাও রয়েছেন।
তাঁরা মার্কিনদের সঙ্গে মিলেমিশে চলেন এবং প্রচলিত আইন মান্য করেন।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ভয়াবহ নয়-এগারোর হামলার পর থেকে এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে বাইরের সন্ত্রাসীদের হামলায় ২৪ জনের মতো নিহত হয়েছে। এই সময়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হানাহানিতে মারা গেছে এক লাখের বেশি। আর মোটরযান দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে প্রায় চার লাখ।
সন্ত্রাসী হামলায় নিহত মানুষের সংখ্যা এত কম থাকার একটা প্রধান কারণ, দেশটিতে (মুসলিম সম্প্রদায়ের লোক ছাড়া) সমাজবিচ্ছিন্নতার শিকার অভিবাসীদের সংখ্যা খুব বেশি নয়।
অথচ বিভিন্ন জরিপে বারবার দেখা গেছে, অভিবাসী মুসলিমরাই আমেরিকান মূল্যবোধের সঙ্গে বরাবর নিজেদের একাত্ম করে রেখেছে।
অবশ্য ইউরোপের দেশগুলোতে অভিবাসী মুসলমানদের সমাজবিচ্ছিন্ন করে রাখার প্রবণতায় পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। বোস্টন কলেজের গবেষক জোনাথন লরেন্স বলেন, ১৯৯০ সালের আগে ওই সব দেশে মুসলমানরা ব্যাপকভাবে অবহেলিত ছিল। অভিবাসী মুসলমানদের অবস্থা ছিল আরও শোচনীয়।
জোনাথন লরেন্স আরও বলেন, তবে এই দেশগুলোতে মুসলমানদের অবহেলিত করে রাখার বিপদ সম্পর্কে দুই দশক ধরে সচেতনতা বাড়তে দেখা যাচ্ছে।
এসব দেশ এখন স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজনের ও মুসলিম অভিবাসীদের সমাজভুক্ত করার চেষ্টা করছে। সরকারের সব পর্যায় থেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর এবং সমাজের মূলধারায় তাদের সম্পৃক্ত করার পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। ফলে দেশগুলোতে অন্য ধর্মের মতোই এখন ইসলাম ধর্মও প্রাধান্য পাচ্ছে, গড়ে উঠছে এই ধর্মের বিভিন্ন সংগঠন। জার্মানি এর অন্যতম উদাহরণ। লরেন্স বলেন, এ অবস্থায় ইউরোপের দেশগুলোর মুসলিমরা অন্যদের মতোই প্রতিষ্ঠানিক উন্নয়নের চালিকাশক্তি হয়ে উঠছে।
দায়দায়িত্ব নিচ্ছে যেকোনো ক্ষয়ক্ষতির। মুসলমানদের সমাজভুক্ত করার এই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র।
পিউ রিসার্চ সেন্টারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ইউরোপে মুসলিমদের সংখ্যা আমেরিকার চেয়ে বেশি। জার্মানিতে এই হার ৫ শতাংশ এবং ফ্রান্সে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। অথচ যুক্তরাষ্ট্রে ১ শতাংশেরও কম।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র সে দেশের মুসলমানদের সঙ্গে যত সুসম্পর্ক রাখবে, দেশটি তত উপকৃত হবে। এই সুসম্পর্কের ফলে মুসলমানদের কাছ থেকে সন্দেহভাজন (মুসলিম) হামলা-কারীদের ব্যাপারে আগাম তথ্য পেয়ে সতর্কও হতে পারবে। এই একটি কারণেই সম্প্রতি কানাডায় আল-কায়েদা-সমর্থিত এক হামলার পরিকল্পনা ব্যর্থ করে দেওয়া সম্ভব হয়। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।