আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গল্প: বড়শি কন্যা

writerrazu.com

মাঝারি সাইজের একটা পুকুর। টলটলে পানি। পুকুরের পশ্চিম পাড়ে অতি আধুনিক বড় শহর। নিউ ইয়র্কের মত। পূর্বে তৃতীয় বিশ্বের একটি দরিদ্র গ্রাম।

উত্তরে পাহাড়ী এলাকা আর দক্ষিণে সাগর। পুকুরে অনেক মাছ। পুকুরের পাড়গুলোতে তাই বড়শি কন্যাদের ব্যাপক আনাগোনা। সবাই বড়শি কন্যা নয়, কেউ কেউ আসে খালি হাতে, কেউ কেউ কারেন্ট জাল হাতে। তবে বড়শি কন্যাই বেশী।

আচ্ছা, খালি হাতে কেন আসে? যারা খালি হাতে আসে মাছ-কি পানি থেকে লাফ দিয়ে উঠে হেটে হেটে ওদের সাথে চলে যায়? হু, যায়! প্রকৃতি বড়ই রহস্যময়! আর যারা কারেন্ট জাল নিয়ে আসে, একসাথে অনেক মাছ ধরতে? ওরা আসলে বোকা। বেশী খাই-খাই করা ভালো না। আর তাছাড়া এত মাছ একসাথে মেইনটেইন করাÑওÑতো টাফ। আবার অন্যরাও এই জালওয়ালীদের ব্যাপক গালমন্দ করে। এসব কারণে জালওয়ালীদের সংখ্যা খুবই কম।

বড়শি কন্যাই বেশী। বিচিত্র সব মাছ কিলবিল করছে পুকুরে। কেউ রেমন্ডের স্যুট-টাই পড়া, কারো শ্যাম্পু করা লম্বা চুল-দাড়ি-গোঁফ, কারো আবার চকচকে চেহারা, বড় ভূড়ির উপর বেল্ট দিয়ে প্যান্ট বেধে রাখা। এই মাছগুলিকেই সবাই ধরতে চায়। আবার কিছু চালচুলোহীন মাছও আছে।

যাদের কেউ ধরতে চায় না। বরং কারো বড়শিতে এই মাছগুলো গাঁথলে বড়শি কন্যাদের মন খারাপ হয়। বড়শি কন্যারা যে যার সাধ্যমত ভালো ভালো আকর্ষণীয় আদার গেঁথে দেয় বড়শীতে। সেই আদার খেতে এসে ধরা পড়ে মাছগুলো। সাধারণত যার আদার যত আকর্ষণীয় তার বড়শীতেই সবচেয়ে দামী মাছ ধরা পড়ে।

তবে টেকনিকেরও ব্যাপার আছে। ভালো টেকনিক জানলে কম আকর্ষণীয় আদার দিয়েও দামী মাছ ধরা যায়। বড়শী কন্যারা টসটসে ঠোট, খাড়া বুক, চকচকে উরু, গোলগাল নিতম্ব, যোনী নিয়ে আসে আদার হিসেবে। পুকুরের পশ্চিমপাড়ে যেসব বড়শী কন্যারা বসেছিল তাদের একজন মার্গারেট। সকাল থেকে আকর্ষণীয় আদার গেঁথে বসে আছে মার্গারেট কিন্তু একটাও মাছ ধরতে পারেনি।

অথচ এক কালে পশ্চিম পাড়ের বড়শী কন্যাদের ব্যাপক দাপট ছিল। পুকুরের সব মাছ পশ্চিম পাড় ঘেঁষে ঘুরঘুর করত। দিনবদলের ঝড়ের হাত থেকে মেরেলিন মনরোর গাউনটা হয়তো রক্ষা করা গেছে। দেয়ালে ঝুলন্ত মনরো দুই হাতে গাাউনটা চেপে ধরে পশ্চিম পাড়ের ইতিহাস হয়তো মনে করিয়ে দিচ্ছে কিন্তু পুকুর পাড়ে সেই দাপট আর তাদের দখলে নেই। মার্গারেট তাই হা করে তাকিয়ে থাকে পূর্ব পাড়ের ময়নার দিকে।

সকাল বেলায় মার্গারেটের “টসটসে ঠোটের” আদারটা চুরিকরে খেয়ে পালিয়েছে একটা কর্পোরেট মাছ। ময়না দুপুর ১২টায় ঘুম থেকে উঠেছিল। তারপর মাত্র ১ কাপ কফি খেয়ে কানিজ আলমাসের কাছে ফেসিয়াল করে তারপর গেল পুকুর পাড়ে। আদার ফেলতে না ফেলতেই একটা ইঞ্জিনিয়ার মাছ ধরে ফেলল ময়না। বিজয়ীর মত চারপাশটা একবার দেখে নিল সে।

বিজয়ের আনন্দ তার সারা শরীরে ফুটে উঠল। বিস্মিত মার্গারেট করুণ সুরে ময়নাকে প্রশ্ন করল, “তোরা এত সহজে কিভাবে পারিস? ঠোটটা খেয়ে পালিয়েছে একটা, এখন বুক দিলাম। তবুতো হচ্ছে না!” “শুধু আকর্ষণীয় আদার হলেই হবে না, ট্রিকও জানতে হবে। চোখের পানি, নাকের পানি কাজে লাগা। ” ইঞ্জিনিয়ার মাছ নিয়ে চলে যাবার পথে ময়না এই বুদ্ধিই দিয়ে গেল মার্গারেটকে।

কিন্তু এই বুদ্ধি মার্গারেট কিভাবে ব্যবহার করবে, তাই বুঝছে না। চোখের পানি, নাকের পানি দিয়ে কিভাবে মাছ ধরে? উত্তর পাড়ের মাথাই এবং দক্ষিণ পাড়ের মংপং। তারা এই মাছ ধরা প্রতিযোগিতায় প্লেট রাউন্ডের চ্যাম্পিয়ন আর রানারআপ। তারাও চায় ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার-ক্রিয়েটিভ মাছ ধরতে, কিন্তু পারে না। তবে কিছু মাছ আছে যেগুলি তাদের বড়শির আশপাশে ঘুরঘুর করে।

মাথাই-মংপংরা সহজেই তাদের ধরে নেয়। কালোÑমাথা মোটাÑগাবর টাইপের কিছু মাছ আছে এরা মাথাই-এর বড়শীতে বিধার জন্যে ধান্দায় থাকে আর নাক বোচা-খাটো-ফর্সা মাছগুলি মংপং এর জন্যে। এই মাছগুলি ধরতে তেমন আদারও লাগে না। তবে দামি মাছদের মধ্যে মাখাই এর কদর দিন দিন বাড়ছে বলে মনে হচ্ছে। মাছ গুলিও কম চালাক নয়! বোকাসোকা বড়শী কন্যা পেলে আদার খেয়ে পালায়! আবার বেশী চালাকি করতে গিয়ে কোন কোন মাছ আদার ছাড়াই ধরা পড়ে যায়।

মাছÑবড়শী কন্যা, চালাকিÑচালাকি খেলা। মার্গারেট যতক্ষণ চোখের পানি, নাকের পানি নিয়ে গভীর চিন্তায় মগ্ন ততক্ষণে তার “বুকটা” খেয়ে পালিয়েছে একটা ক্রিয়েটিভ মাছ। কয়েক বছর আগেও এই ক্রিয়েটিভ মাছগুলোর কোন দামই ছিল না। কেউ ধরতে চাইতো না। কিন্তু তখন তাদের ব্যাপক ডিমান্ড।

বড়শি খালি দেখে হাউমাউ করে কেঁদে উঠল মার্গারেট। ময়না যেখানে বসেছিল সেখানে এসে বসল মহুয়া। সেও কানিজ আলমাসের কাছ থেকে ঘুরে এসেছে। ময়নার কাছ থেকে ‘চোখের পানি’ থিউরী শিখে এসেছে। গতকাল তার “ঠোটটা” খোয়া গেছে।

আজ প্রথমে সে “বুক” দেবে তারপর প্রয়োজনে পর্যায়ক্রমে, উরু-নিতম্ব-যোনী। একটা পাজেরোওয়ালা ব্যবসায়ী মাছ তাকে ধরতেই হবে। মার্গারেটের দিকে তাকিয়ে মহুয়া বলে “মার্গা, এভাবে হবে না। ময়না’দির কাছ থেকে কোচিং নিয়ে আয়। উনি অনেক ট্রিক জানে।

শিখে আয় তখন দেখবি মাছ ধরা কত সহজ!” উত্তর পাড় থেকে মাথাই বলে “আমরা শিখতে পারব?” “অবশ্যই” মহুয়া উত্তর দেয়। সে আরও বলে “তুই আর মংপং গিয়েও শিখে নিস। আজকাল আর কোন বোকা মাছ নেই। সবগুলিই চালাক। দেখবি দু’দিন পর তোদেরও কাজে লাগছে।

” মাথাই আর মংপং একে অন্যের দিকে তাকায়। কিছুক্ষণ পর মহুয়া একটা পাজেরোওয়ালা ব্যবসায়ী মাছ ধরে ফেলে। মার্গারেট আর আদার না দিয়ে ময়নার খোঁজে বের হয়।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.