আর মাত্র আঠার কিংবা উনিশ দিন পরেই রহমত, মাগফিরাত আর নাজাতের পয়গাম নিয়ে আমাদের কাছে আগমন ঘটবে মাহে রমজানের। ইসলামী মাসিক পত্রিকাসমূহের অন্যতম 'মাসিক রহমত'-এর জুলাই সংখ্যায় ছাপা হয়েছে কামরুজ্জামান লসকর(রহমতুল্লাহি আলাইহি) কতৃক লিখিত রমজান আসছে শিরোনামের একটি লেখা। ব্লগারদের উপকারে আসতে পারে এই চিন্তা করে লেখাটি হুবহু তুলে দিলাম:
রমজান আসছে
রমজান আসছে। পূণ্যের বার্তা নিয়ে রমজান আসছে। জিনিস পত্রের দাম সকাল-সন্ধ্যা বাড়বে।
লালসালুর গিলাফ দিয়ে নিজেদের আড়াল করে দ্বীনের দুশমনরা ভর দুপুরে খানাপিনার আয়োজন করবে। দিনভর খানাদানা বিক্রি করে বিকেলবেলা মুনাফিকের আরেক রুপ প্রকাশ পাবে। গিলাফটাকে খুলে ফেলে টুপী মাথায় বেরিয়ে আসবে। হরেক রকম ইফতার নিয়ে দাওয়ার কাছে বসে পড়বে। ঈমানদারদের আদুরে সুরে ডেকে বেচাবিক্রি করতে থাকবে।
রোযার দিনের অজুহাতে সারারাত খাবার দোকান খোলা রাখবে। সেহেরীটাও কষ্ট করে খাইয়ে দেবে। রোযার মাসে হোটেল মালিকদের অনেক লাভ।
আসছে রোগবালাই। রোযা না রাখার অজুহাত খাড়া রাখা চাই।
তাই আলসার আসবে মহামারীর মতো, কেননা রোযা না রাখা তার একমাত্র দাওয়াই। অফিস-আদালতের ক্যান্টিন-রেস্তোরা জমে উঠবে পর্দা ছাড়াই। নিরপেক্ষরা নসীহত করবে:অমুসলিমদের অধিকার খর্ব করবে এই অধিকার কারো নেই। অমুসলিমদের অবশ্য রমজান মাসে বাইরে খেতে আমি কখনো দেখিনি। সংখ্যালঘু উসীলা দিয়ে বিশ্বাসীরা আপন মুখে নিজেরাই ছাই মাখে।
রমজান আসছে রহমত, বরকত ও মাগফিরাত নিয়ে। কিন্তু আমাদের দেশে আসে ধনীদের অভাব-অনটনের দিন হিসেবে। সাধারণ মধ্যবিত্তরা যাকাতের অর্থ কড়ায়-গণ্ডায় হিসাব করে গরীবের হাতে তুলে দেয়ার অপেক্ষা করে। হিসাব-নিকাশ ঠিক হলো কিনা সেই ভয়ে অস্তির হবে। কিছু অর্থ সদকায় ব্যয় করে আল্লাহর কাছে ক্ষমাভিক্ষা চাইবে।
কোটিপতিরা ফাঁকি দেয়ার ফাঁক-ফোকর খুঁজবে। অযুত-কোটি নির্বোধ পতিরা যাকাত নিয়ে চিন্তা-ভাবনাও করে না, সাহিবে মাল হলেই পরে যাকাতের কথা উঠে। হাজার হাজার কোটি টাকার ঋণে ওরা জর্জরিত, ঋণগ্রস্থের যাকাত আবার কিসের? ঈদের দিন ওরাই কিন্তু পাজেরো আর নিশান গাড়িতে সওয়ার হয়ে ঈদগাহের দিকে ছুটে। বড় নিষ্ঠুর এই ধনিক আর বণিক শ্রেণীর মানুষ। পরের টাকায় পোদ্দারী করার নেশায় ওরা বিভোর।
বাপদাদার জমিদারি কয়জনেরই বা আছে? কিচ্ছু নেই। তবু ওরা ধনীর চেয়েও ধনী। ওদের কাছে রাজা-বাদশাহও ফকির। ব্যাংক ওদের খাজাঞ্চীখানা; পার্টিতেই ওদের খানাপিনা, প্রপার্টি কত কেউ জানে না। তবু ওদের অভাব-অনটনের শেষ নেই।
যাকাত দেবার প্রশ্নই উঠেনা। গরীব ওদের দেখাই পাবে না। বিনা হিসাবে যাকাতের নামে যদিও কিছু দেয়, তার পরিমাণ কয়েক মুঠি ভিক্ষা ছাড়া আর কিছু না।
রমজান আসছে এবং ইফতার পার্টির নামে দলাদলি করার মোক্ষম সুযোগও আসছে। রাজনৈতিক ইফতারের ধুম পড়ে যাবে।
দামী উপহার পাওয়া যাবে। এভাবে বেছে বেছে যেভাবে বিয়ের দাওয়াত দেওয়া হয় সেইভাবে পরবর্তী নির্বাচনে কাজে লাগবে এমন লোকদেরকে ইফতারে দাওয়াত দেয়া হয়। উদ্দেশ্য একই; প্রচ্ছন্নভাবে দলীয় কর্মকাণ্ডকে জোরদার করা-ধর্মীয় বিশ্বাসে ইফতার সেহরী করানোর রেওয়াজই এখন নেই। একেবারে যে নেই তা নয়; জীবন সায়াহ্নে যখন রোযা রাখার সাধ্য থাকে না কিংবা অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী হলে একজন মিসকীনের খোঁজ পড়ে। তাকে দু’বেলা খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে হয়।
রমজান আসে মদীনায় ও মক্কা মুকাররামায় অনাবিল পবিত্রতা নিয়ে। নবীর দেশে পুরোটাই হয়ে উঠবে পবিত্রতার প্রতীক। আরবের দশগুণ বেশি মুসলমানের বাসভূমিতে আমরা রমজানের পবিত্রতা রক্ষা করতে পারি না এরও হয়তো কোনো অজুহাত তৈরি করে রেখেছি ক্বিয়ামতের দিন পেশ করার জন্য। সে দেশেও অমুসলিম আছে এবং বহু আছে। কিন্তু দুরাচারী করার দু:স্বপ্নও কেউ দেখে না।
উপবাস নি:সন্দেহে কষ্টের ব্যাপার, অথচ এই কষ্টকে এতো হাসিমুখে বরণ করার পরিবেশ কেবল একটি দেশেই বিদ্যমান আছে। রমজানকে ঘিরে এতো আনন্দ, এতো আয়োজন আর কোনো জাতির জীবনে এখন আর নেই। আমার কাছে মনে হয়েছে হজ্জের চেয়েও রমজানের আনন্দ ওদের কাছে বেশি। কারণ হজ্জের মৌসুমে প্রায় দশদিন আর রমজানের আনন্দ মাসব্যাপী। হজ্জে ওরা অতিথিসেবক।
কিন্তু রমজানে অতিথি, সেবকও। আতিথেয়তার চুড়ান্তরুপ দেখেছি রমজান মাসের আরবে।
আমি বিদেশী তাই বাঙালি পরিবার থেকে যেমন ইফতারীর দাওয়াত আসছিলো তেমনি আরবী পরিবার থেকেও আসছিল। শেষের দিকে একই দিনে দু’টি করে ইফতারী পেয়ে মুশকিলে পড়লাম। মুশকিল ওরাই আছান করে দিলো।
ইফতার ও সেহরীতে ভাগাভাগি করে ফেললো দাওয়াতকে। জীবনে প্রথম সেহরীতে দাওয়াত খাওয়ার অভিজ্ঞতা হলো।
একবার রমজানে বিদ্যুত ও টেলিফোন বিল খুব কম আসলো। অবাক হয়ে বাড়িওয়ালাকে জিজ্ঞেস করলাম, কারণ কি? উনি বললেন: ভালো করে পড়ে দেখুন আসলে রেটই কমিয়ে দেয়া হয়েছে। পনের বছর আগে এই রেট ছিলো এখন আবার সেখানে ফিরে গেছে সরকার।
এটা জনগণের প্রতি রমজান উপলক্ষে সরকারের সহানুভূতি-শুভেচ্ছা উপহার। এই সহানুভূতিতে কেউ পিছিয়ে নেই। ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম কমাতে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হবে।
মক্কা-মদীনায় প্রচুর বাঙালির বসবাস এখন। রমজানে মাছের চাহিদা বেড়ে যায়।
আমদানিকারকরা চেম্বারকে জানালে, সাথে সাথে আমদানির কোটা বাড়িয়ে দেয়া হয়। সেই সাথে মাছের দাম অন্য সময়ের চাইতে অনেক কমানো হয়।
মদীনায় প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুয়ে আছেন। বহু মুসলমান রমযানের ইবাদত সেখানে করার জন্য সমবেত হন। দেশ বিদেশের লক্ষ লক্ষ মুসলমানের জমায়েত তারাবীহ, উপবাসের কৃচ্ছতা ও গভীর মৌনতা দেখে যথার্থই মনে হয় এমন পরিপূর্ণ আত্মসমর্পিত জাতিকেই তো দয়াময় জান্নাতের বাসিন্দা করবেন।
কোটি কোটি মুসলমানের দেশে কোটি কোটি বেনামাজী থাকতে পারলে রোযাদারের সংখ্যা কত হতে পারে তার হিসাব লাল পর্দার আড়ালে বেপরোয়া পাপাচার দেখলে সহজেই অনুমান করা যায়। আমল-আকিদার স্তর অনুযায়ী আমাদের চিন্তা ধারণার ব্যারোমিটারও যথাস্থানে রয়ে গেছে। আরবে রোযার সময় অহেতুক কেউ খাবে এটা চিন্তা করা সম্ভব নয়; আমরা আল্লাহর হুকুমের অমান্যকারীকে প্রতিরোধ করতে পারি-এমন চিন্তাও করতে পারি না। আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব, এই ধারণার সীমানায়ও আমাদের চিন্তা প্রবেশ করতে পারে না।
দয়াময় আল্লাহর সাথে ভালোবাসার জন্যই যদি আমাদের রোযা থাকার কারণ হয়ে থাকে, তাহলে যারা তুচ্ছ জ্ঞান করে প্রকাশ্য বাগাওয়াতি করে তাদের প্রতি আমাদের আচরণে কি কোনো পরিবর্তনই হওয়া উচিত নয়? সারাদিন চোরাই পথে পর্দা ফেলে হারাম রুজির ধান্দা করে দিনের শেষে তারই অংশ পবিত্র বলে চালিয়ে দিলে মুত্তাকীরা বেকুব বনে যাবে! দুপুরের দস্তরখানায় বিকালে পাগড়ী বেঁধে ইফতারীর দোকান খুলবে আর মুমিন মুসলমান তার দোকানে লাইন লাগাবে- এটা কিন্তু প্রিয় বান্দাদের শানের খেলাফ।
বিবেক-বুদ্ধি আছে বলেই ঈমান এনেছি; ইনসাফ-বিচার আছে বলেই দ্বীনের উপর পথ চলছি। হায়া-শরম আছে বলেই পর্দাওয়ালার কাছে যেতে ঘৃণা লাগে, ওর ইফতার কেনার চেয়ে পানি দিয়ে ইফতার কেনা অনেক ভালো। রমজানের সাথে জিনিসপত্রের দাম বাড়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। তবু বাড়বে। বিশেষ করে শেষ দশদিন বাজারে আগুন লাগবে।
কেননা ঈদের লাগামহীন খরচ তুলতে ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া হয়ে উঠবে। বছরের যেকোনো সময়ের চেয়ে মুনাফাখোরী রমজানের শেষ দশদিনেই অর্জিত হয়, তার প্রমাণ ব্যবসায়ীদের ব্যালান্স শীটেই পাওয়া যায়।
মাগফিরাতের শেষ দশদিন হারামাইনের দেশের মানুষদের পাগল করে তুলে। কি দিন, কি রাত। দিনে উপবাস, রাতে কদরের সন্ধান।
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দুই ইবাদতখানা বাইতুল্লাহর মসজিদ ও মসজিদে নববীর কানায় কানায় ভরে উঠবে। শেষ দশদিনের রমজান, ইতেকাফ আর কদরের সন্ধান আল্লাহর প্রেমিকদের বিভোর করে দেয়। তারাবীহ ছাড়াও মধ্যরাতের সালাতুল কিয়াম, মাত্র দশরাতের সালাতে কুরআনুল কারীমের সম্পূর্ণ তিলাওয়াত, দশটি রাত লাগাতার জেগে থাকার সুযোগ ভাগ্যবান মুসলমানরাই পেয়ে থাকেন।
ধর্মনিরপেক্ষ দেশে রোযার মাসে দিনে দুপুরে হোটেলে খাওয়ার সৌভাগ্য হয়। এখানে আল্লাহর আইন মান্য করা জরুরী নয়।
মুসলমান ধর্মনিরপেক্ষ হলে তার জায়গা কোথায় হবে এটা জেনে নেয়াও খুব জরুরী। নইলে মানবধর্মের অনুসারীরা ইসলামকে মানবধর্মের প্রতিকূল মনে করবে। মানুষের সৃষ্টিকর্তা মানুষের জন্য যে ধর্ম মনোনীত করেছেন তা যদি মানবধর্ম না হয় তাহলে ধর্মনিরপেক্ষদের কল্পিত মানবধর্মের অনুসারীরা মানুষ নয়; মানুষ হলেও কুরআনের ভাষায়, ওদের কান আছে শুনে না, চোখ আছে দেখে না, অন্তর আছে বুঝে না। ওরা পশু কিংবা তার চেয়েও অধম। না খেয়ে থাকার কষ্ট দয়াময় ঠিকই বুঝেন তবু দীর্ঘ একমাস একবেলা না খেয়ে কষ্ট করতে দেন এই জন্য যে, অনন্তকালের জীবনে তিনি তাঁর অনুগত বান্দাকে নিয়ামতপূর্ণ আহার দিয়ে সন্তুষ্ট করতে চান।
আল্লাহর অসন্তুষ্টি অর্জনকারী বান্দার জন্য গজবই একমাত্র পুরস্কার।
রমজান আসছে ঈদের ধুমধাম নিয়ে। রোযা নামাজ নেই তবু ঈদের আনন্দ উপভোগ করা চাই। এই সমাজ চোর ডাকাতদের মুক্ত বাজার। রমযানে ওরাও ভয়ে থাকে, কারণ সাহেবদের ঈদের খরচ ওদের জোগান দিতে হয়।
হালাল কামাই করতে পরিশ্রম লাগে, হারাম কামাই করতে অজুহাত লাগে। মিথ্যা অজুহাতে হয়রানির ভয়ে আল্লাহর বান্দারা দয়াময়ের সাহায্য প্রার্থনা করতে থাকে। একজন ঈদ করার জন্য আরেকজনের হৃদপিণ্ডে ছুরি মারার পথ খুঁজে। ঘাড় মটকানোর যখন প্রয়োজন হয় তখন উজানের জন ভাটির জনকে বলে, তুই পানি ঘোলা করছিস বলে আমি পানি পান করতে পারছি না। কিয়ামতের দিন এরাও কি মুজাহিদের সাথে হাউজে কাউসারের কাছে পানি পান করতে দাঁড়াবে? হায়রে দুরাত্না! দ্বীনকে বেঈমানের কাছে বিক্রি করে দিয়ে কী আশা তুমি করতে পারো!রমজান সাক্ষী আছে, ভাই হয়ে ভাইয়ের পায়ে বেড়ী পরিয়েছো, জিন্দানখানার বাসিন্দা করেছো, জালিম কাফেরের পক্ষ নিয়ে মু’মিনকে অতর্কিতে বন্দী করেছো; কাল কিয়ামতের দিন বিচারক আল্লাহ হবেন, রক্ষীরা আল্লাহর হবে, বাদী মুজাহিদ হবে, আসামী হবে তোমরা সবাই।
প্রথম সাক্ষী রমজানের মাস হবে এবং বুঝে নাও পরিণতি কি হবে।
আজ মুজাহিদকে সন্ধান করার জন্য পাগল হয়ে পড়েছ, অথচ তোমার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুজাহিদ ছিলেন। উম্মতের একাংশকে কেয়ামত পর্যন্ত মুজাহিদ হবার অসিয়ত করে গেছেন। আজ তালেবে ইলমকে তালেবান বলে গালি দিচ্ছো অথচ তোমার নবী তোমার জন্য, তোমার পিতা-মাতার জন্য, তোমার স্ত্রী-পুত্র-কন্যার জন্য ইলম তলব করা ফরজ হওয়ার সংবাদ দিয়ে গেছেন। মুজাহিদ তোমার শত্রু, দেশের শত্রু, জাতির শত্রু- এই কথাটা বুঝানোর জন্য হেন কাজ নেই- যা করছো না।
অথচ তোমার বন্ধু তোমার বিশ্বাসকে ছিনিয়ে নিয়েছে। তোমার পিতামাতার ছিলো আরেক চিন্তা; তোমার জাতিকে নাফরমানির জন্য আল্লাহ তা’আলা পরিবর্তন ও ধ্বংস করে দিতে পারেন এই আশংকায় যারা অস্থির তুমি তাদের পায়ের ধুলোর যোগ্য নও। এই মুসিবতের সময় মুজাহিদ বুক পেতে দিয়েছে তোমাকে রক্ষা করার জন্য। তার বিনিময় যদি এই হয়,তুমি হবে ভাতৃঘাতী কৃতঘ্ন পাপাচারী, তাহলে খুব ভালো করে জেনে নাও যে, দুনিয়াতে মুজাহিদ আর তোমার এক ঠিকানা ছিলো না। আখেরাতেও এক ঠিকানা হবে না।
কেয়ামতের দিন যদি মসজিদকে আমাদের সম্পর্কে সাক্ষী করা হয়, কুরআনুল কারীমকে যদি সাক্ষী করা হয়, রমজানের মাসকে যদি সাক্ষী করা হয়, তাহলে সত্যবাদী সাক্ষীদের সাক্ষ্যকে কিভাবে মূল্যায়ন করা হবে? আর প্রকৃত ব্যাপার তো এটাই যে, এরা শুধু সাক্ষী নয়, বাদীও হবে। দ্বীনকে নিয়ে এই খেল-তামাসার পর্যায়ে আমরা কেন পৌঁছলাম? আমরা কি এমন কোথাও পৌঁছে গেছি, যাদের সম্পর্কে কুরআনে বলা হয়েছে: সুতরাং তারা ফিরে আসবে না।
রমজান আসলেই নামাযের কাতার বেড়ে যাবে আর রমজান গেলেই সব ভেগে যাবে। জামাতে দাঁড়ালেই তাকাব্বুরির পোশাকটি গুটিয়ে নেবে আর বেরিয়ে গিয়েই তা ছেড়ে দেবে। নামাযে দাঁড়ালেই টুপীর ঝাঁপি খালি করে ফেলবে।
তারপর আবার জড়ো করে রেখে দেবে। শবে বরাতের কদর বুঝবে আর শবে কদরের কোনো ফিকির করবে না। ঈদের শপিং আর কুকিং করতে বাজির ঘোড়া ছুটাবে আর গরীবের কাছে শীতের রাতকে বুঝিয়ে দিয়ে লোপ-তোষকে হারিয়ে যাবে। এরই নাম যদি দ্বীনদারী হয় তাহলে দ্বীনকে বুঝার জন্য আবার একটু কষ্ট করাই উচিত হবে।
রমজান পবিত্র মাস।
বন্দেগীর মাস। অপবিত্রতা ও বাগাওয়াতি ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। হোটেল রেস্তোরা খোলা রাখার জন্য অনেক মিছিলও হয়েছে। অনেক হুঁশিয়ারীও উচ্চারিত হয়েছে। অবশেষে হাঁ এর দল আর না এর দল দলে হয়তো কোন আপোষ হয়েছে।
তবে সূরা মুনাফিকুন-এর পবিত্র আয়াতগুলো যথারীতি যথাযোগ্য বান্দাদের জন্য প্রযোজ্য হয়ে আছে। ইরশাদ হচ্ছে: যখন মুনাফিকগণ তোমার নিকট আসে তারা বলে, আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি, আপনি নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসূল। আল্লাহ জানেন যে তুমি নিশ্চয়ই তাঁর রাসূল এবং আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন মুনাফিকগণ অবশ্যই মিথ্যাবাদী। এরা এদের শপথগুলোকে ঢালরুপে ব্যবহার করে আর আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে নিবৃত্ত করে। তারা যা করতো তা কত মন্দ! এটা এইজন্য যে, এরা ঈমান আনার পর কুফরী করছে।
ফলে তাদের হৃদয় মোহর করে দেয়া হয়েছে। পরিণামে এরা বোধশক্তি হারিয়ে ফেলেছে। –আয়াত:১,২,৩।
যে জমীনে মাথা রেখে আমরা দয়াময়কে সিজদাহ করি, তাকে অপবিত্র করার চেতনায় যারা উদ্বুদ্ধ হয়েছে তাদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা মুমিনদের জন্য নিতান্তই অনাকাংখিত আচরণ। হোক পুত্র কিংবা কন্যা, ভাই কিংবা বন্ধু।
হোক প্রতিবেশী কিংবা সহকর্মী, আপনজন অথবা আত্নীয়। যদি তার সাথে সম্পর্ক দুনিয়া ও আখেরাতকে উজাড় করে দেয়, তার সান্নিধ্য দয়াময়ের সান্নিধ্যের প্রতিকূল হয়, তার সাথে ভালবাসা জন্ম-জন্মান্তরের মাবুদ ও মাশুকের ভালবাসার প্রতিবন্ধক হয়, তার বন্ধন যদি ঈমানের বন্ধনকে দুর্বল করে দেয়, তাহলে এমন আপনজনদের অফাদারীকে এক মুষ্টি ছাইয়ের বিনিময়ে হলেও বিক্রি করে দেয়া উচিত।
লেখক পরিচিতি: কামরুজ্জামান লসকর (রহমতুল্লাহি আলাইহি) বাংলাদেশ বিমানের একজন কর্মকর্তা ছিলেন। আফগানিস্তানে সোভিয়েত আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াইকারী বাংলাদেশী মুজাহিদদের আদর্শে তিনি ছিলেন অনুপ্রাণিত। জিহাদে যাওয়ার সুযোগ না পেলেও ধর্মপ্রাণ এই মানুষটি মক্কা-মদীনা আর মুজাহিদদের ভালবাসতেন হৃদয়ের গভীর থেকে।
ঢাকায় থাকাকালে প্রায়ই তিনি আফগানফেরত বাংলাদেশী মুজাহিদদের সংগঠন হরকাতুল জিহাদিল ইসলামী বাংলাদেশের খিলগাওস্থ অফিসে নিয়মিত যেতেন এবং মুজাহিদদের সাথে একসাথে খানা খেতেন। তিনি কিছুদিন মুজাহিদদের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান 'জাগো মুজাহিদ পাবলিকেশন্স'-এর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছিলেন। তিনি তাঁর সবসময়ের কাম্য মক্কাতে ইন্তেকাল করেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।