আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মেয়েরা যেমন হয়(চার্লি চ্যাপলিনের ইতিহাস )

আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক
মানুষ মাত্রই প্রেম করে, প্রেমে পড়ে। প্রেম তো মানুষের জন্যই। কিংবদন্তি কৌতুক অভিনেতা চার্লি চ্যাপলিনও প্রেমে পড়েছিলেন। একবার নয়, একাধিকবার। চার্লি চ্যাপলিন সর্বপ্রথম প্রেমে পড়েছিলেন হেটি নামের এক অপূর্ব সুন্দরীর।

মেয়েটির বাড়ি ছিল লন্ডনেই। ১৯০৮ সালে, ১৯ বছর বয়সী চার্লি দক্ষিণ লন্ডনের এক থিয়েটারে অভিনয় করছিলেন। একই হলে অভিনয় করতে আসত হেটি। নবান্নের ভরা বয়স মেয়েটির। যেন উর্বর ফসলের মাঠ।

টক্টকে চেহারা প্রথম দর্শনেই যেকোনো যুবকের মন কেড়ে নেওয়ার মতো রূপ তার। মন কাড়ল চার্লি চ্যাপলিনের। প্রথম দিনের ঘটনা। একসময় মেয়েটির নাচ শেষ হয়ে যায়। মঞ্চের পর্দা নেমে আসে।

কিন্তু চার্লির কোনো পরিবর্তন নেই। সেদিকে কোনো খেয়াল নেই তার। অবাক চোখে তখনো তিনি সেখানেই ঠায় দাঁড়িয়ে আছেন নিশ্চলভাবে। হঠাৎ একজনের ডাকে সম্বিত ফিরে এলো। অত্যন্ত ব্যাকুল অস্থিরতায় ভুগছিলেন তিনি।

মেয়েটির সঙ্গে কথা বলবেন। আস্তে আস্তে মেয়েটির পাশে গিয়ে দাঁড়ালেন। বুকটা দুরু দুরু করছে। কি করবেন? প্রথম কি কথা বলবেন, তিনি মেয়েটাকে। সাত-পাঁচ ভেবে শেষ পর্যন্ত সাহস সঞ্চয় করে মেয়েটিকে বললেন, খুব সুন্দর নেচেছো তুমি।

কি নাম তোমার? সে উত্তর দিল : হেটি। বুকের ভেতর তোলপাড় শুরু হয়ে গেল চার্লি চ্যাপলিনের। অনেক কথা হলো উভয়ের মধ্যে। কথা থেকে প্রণয়। প্রথম দিনের প্রথম দেখাতেই দু'জন প্রেমে পড়ে গেলেন।

হেটি আর চ্যাপলিন। দেখতে দেখতেই তাদের অন্তরঙ্গতা এত ঘনিষ্ঠ হয়ে গেল যে, কেউ কাউকে একদিন না দেখে থাকতে পারেন না। এক মুহূর্ত দূরে থাকতে ভীষণ কষ্ট হয়। অভিনয়ের কাজে চ্যাপলিনকে দূরে যেতে হয়। কিন্তু সেখানে তার একটুও ভালো লাগে না।

অভিনয়ের ফাঁকে সামান্য অবসর পেলেই তিনি ছুটে যেতেন প্রিয়তমা হেটির কাছে। এমনিভাবে দুটি বছর কাটার পর হঠাৎ একদিন চার্লি চ্যাপলিনকে চলে যেতে হয় আমেরিকায় অভিনয়ের কারণে। প্রিয়তম চার্লিকে বিদায় জানাতে গিয়ে কেঁদে বুক ভাসাল হেটি। নিজেও কাঁদতে কাঁদতে বিদায় নিল চার্লি চ্যাপলিন। ওখানে গিয়ে নিয়মিত খবর রাখতেন তিনি হেটির।

অবশেষে একদিন দেশে ফিরে এলেন চার্লি। কিন্তু তার সে আশা আর পূর্ণ হলো না। শুনলেন হেটির বিয়ে হয়ে গেছে। তাও আবার হেটির নিজের ইচ্ছাতে। ১৯১৮ সাল।

হঠাৎ করে একদিন দেখা হয়ে গেল থিলড্রেডের সঙ্গে। থিলড্রেড হ্যারিস। ষোড়শী সুন্দরী। একজন চলচ্চিত্র অভিনেত্রী। চার্লি চ্যাপলিন তখন শুধু একজন অভিনেতাই নন, একজন চলচ্চিত্র পরিচালকও।

ইতোমধ্যে তার পরিচালিত বেশ কয়েকটি ছবি দারুণ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। চার্লি চ্যাপলিন পরিচালিত একটি ছবিতে অভিনয় করতে এসে তার প্রেমে পড়লেন হ্যারিস। বিয়ে হয়ে গেল তাদের। অত্যন্ত আনন্দে দাম্পত্য জীবন কাটতে লাগল উভয়ের। কিন্তু এ আনন্দ বেশিদিন স্থায়ী হলো না।

হ্যারিস ছিলেন অত্যন্ত বাজে স্বভাবের মেয়ে। চার্লির কাছে সেটা ধরা পড়ল বিয়ের কয়েক মাস পর। হ্যারিস তার স্বামীর চেয়ে অন্য পুরুষদের সংসর্গে কাটাতে পছন্দ করতে লাগলেন বেশি। অনেক চেষ্টা করেও তাকে ফেরানো গেল না। অবশেষে বাধ্য হয়ে স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটালেন চার্লি।

তাদের এই দাম্পত্য জীবন টিকে ছিল মাত্র এক বছর। জীবনের দ্বিতীয় প্রেম থেকেও এমনিভাবে বঞ্চিত হয়ে মানসিকভাবে অত্যন্ত ভেঙে পড়লেন চার্লি চ্যাপলিন। কিন্তু তা সত্ত্বেও তার শিল্পী জীবন থেমে থাকেনি। একটি বিশেষ ধরনের চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য চার্লি কিছু নতুন মুখ খুঁজছিলেন। কাগজে বিজ্ঞাপন দিলেন।

অনেকে আবেদন করলেন কিন্তু কাউকে পছন্দ হলো না চার্লির। হঠাৎ একটি মেয়েকে প্রথম দেখাতেই তার ভীষণ পছন্দ হয়ে গেল। মাথাটা যেন ঘুরে গেল, এমন সুন্দরী মেয়ে কখনো হয়? ১৬ বছরের লেলিটা ম্যাকমারে নামের অপরূপ এ মেয়েটিকে দেখে তিনি যেন পাগল হয়ে গেলেন। কোনো ইন্টারভিউ নয়, লেলিটাকে সরাসরিই নির্বাচিত করে ফেললেন তিনি তার ছবির জন্য। লেলিটাকে তিনি ভালোবাসলেন প্রাণ উজাড় করে।

ভালোবেসে লেলিটার নতুন নাম দিলেন লিটা গ্রে। অল্প সময়ের মধ্যেই উভয়ের ভালোবাসার পরিণতি বিয়েতে সমাপ্তি হলো। কিন্তু এ বিয়ের আনন্দও বেশিদিন স্থায়ী হলো না চার্লির। লিটার চরিত্র ছিল হ্যারিসের মতোই। বরং তার চেয়েও জঘন্য।

মাতাল অবস্থায় উলঙ্গ হয়ে পরপুরুষদের নিয়ে মেতে থাকত সবসময়। আপ্রাণ চেষ্টা করেও লিটাকে এ পথ থেকে ফেরাতে পারলেন না চার্লি। লিটা তার অপকর্মের পেছনে চার্লির অজস্র ধন-সম্পদ দু'হাতে খরচ করতে লাগলেন। শেষ পর্যন্ত দেশের অন্যতম সেরা এই ধনী ব্যক্তিটি প্রায় কপর্দকশূন্য হয়ে পড়লেন। ফলে যা হওয়া তাই হলো।

বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটল। চার্লি চ্যাপলিন মানসিকভাবে আবার ভেঙে পড়লেন। কিন্তু মানুষ হাসানোর কৌতুক অভিনয় ছাড়েননি তিনি। মনটাকে হালকা করতে একসময় বিদেশ ভ্রমণে বেরুলেন চার্লি। ঘুরতে ঘুরতে এক পর্যায়ে বার্লিনে গিয়ে তার পরিচয় হলো পোলা নেগ্রি নামের এক জার্মান অভিনেত্রীর সঙ্গে।

অল্প সময়ের মধ্যে প্রণয়ে রূপ নিল এই পরিচয়। কিন্তু নেগ্রির আসল চেহারা ধরা পড়তে দেরি হলো না চার্লির কাছে। নেগ্রিও ছিল তার সাবেক দুই স্ত্রী হ্যারিস ও লিটার সম-চরিত্রের। সময় থাকতেই নেগ্রির সংসর্গ ত্যাগ করলেন চার্লি, কিন্তু বারবার প্রেমবঞ্চিত চার্লি চ্যাপলিন একটু ভালোবাসা পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠলেন। এ সময় একটি প্রমোদতরীতে ভ্রমণকালে চার্লির পরিচয় ঘটল পলিন লেভি নামের স্বর্ণকেশী এক মহিলার সঙ্গে।

চার্লি চ্যাপলিন তার নিজের ছবি 'মডার্ন টাইমস' এ লেভিকে কাস্ট করলেন নায়িকা হিসেবে। চার্লির উদ্দেশ্য সফল হলো। চার্লির প্রেমে পড়ে গেলেন লেভি। গভীর প্রেম 'মডার্ন টাইমস' মুক্তি পাওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই তাদের বিয়ে হয়ে গেল। কিন্তু দুর্ভাগা কপাল চার্লির।

অল্প দিনের মধ্যেই চার্লি লক্ষ্য করলেন লেভির হৃদয়ে বিন্দুমাত্র প্রেম-ভালোবাসা নেই। এতদিন চার্লির সঙ্গে নিছক অভিনয় করে গেছেন লেভি। আর তা চার্লির অগাধ ধন-সম্পদ প্রতিপত্তি আর সুনাম যশের জন্যই। ভীষণ আঘাত পেলেন চার্লি, শেষ পর্যন্ত বিচ্ছেদে রূপ নিল এ বিয়েটিও। এরপর থেকে প্রেম-ভালোবাসা, বিয়ে-ঘর সংসার সম্পর্কে অত্যন্ত ভীতিগ্রস্ত হয়ে পড়লেন চার্লি চ্যাপলিন।

বিয়ে-ঘর সংসার তো দূরের কথা মেয়ে মানুষের সানি্নধ্যই তার কাছে ভীতিজনক হয়ে দাঁড়ায়। এ ব্যাপারে নিজেকে তিনি সর্বক্ষণ দূরে রাখতে সচেষ্ট থাকলেন। কিন্তু কপালে থাকলে যা হয়, আবার তাই হলো। চলচ্চিত্রের সংলাপ সংগ্রহের জন্য চার্লিকে মাঝে মাঝে যেতে হতো বিখ্যাত নাট্যকার ইউজিন ওলিনের বাড়িতে। ওলিনের অত্যন্ত আদুরে অনিন্দ্য সুন্দরী কন্যা উনা ওলিন।

চার্লিকে দেখে মুগ্ধ হয় উনা। গোপনে চার্লির প্রেমে পড়ে সে। অনেক দ্বিধা-দ্বন্দ্বের পর একদিন সে তার ভালোবাসার কথা চার্লির কাছে প্রকাশ করে। উনার কথা শুনে অপ্রস্তুত চার্লি থমকে যান। না এ কিছুতেই সম্ভব নয়।

ঢের হয়েছে। অনেক দুঃখ-কষ্ট-আঘাত পেয়েছেন তিনি। এ পথে আর নয়। উনার বাবা ইউনিজ চার্লিকে বললেন, আমি সব জানি বাবা, আমার মেয়েকেও সব বলেছি। আমার উনা সে ধরনের মেয়ে নয়।

তুমি দেখে নিও সে তোমার সব কষ্ট ঘুচিয়ে দেবে। হলোও তাই। উনা ওরিনকে বিয়ে করে পরম সুখী দাম্পত্য জীবনের দেখা পেলেন চার্লি। বৈবাহিক জীবনে উনা প্রাণ দিয়ে ভালোবেসেছিলেন চার্লিকে। বিনিময়ে চার্লির কাছ থেকে ভালোবাসা ছাড়া আর কিছুই চাননি তিনি।

উনাকে নিয়ে চার্লির বাকি জীবন কেটে যায় পরম শান্তিতে। শেষ বয়সে চার্লি দুঃখ করে বলেছিলেন, 'আমার জীবনে আরো কয়েক বছর আগে উনা আসেনি কেন?' ****************************** paper থেকে সংগ্রহ।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।