আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এলোমেলো জীবনের সাজানো কথা

অতীতকে খুঁজে ফেরা সময়ের স্রোতে বহমান এই জীবন
গতকাল থেকেই ছেলেটার মনটা ভীষণ খারাপ | কারো সাথেই তার কথা বলতে ইচ্ছা করে না | নিজেকে একাকীত্বের চাদরে ঢেকে রেখে জগতের সাথে চলে তার মান অভিমানের অর্থহীন খেলা |ঘরে বসে থেকে থেকে নানারকম চিন্তাভাবনা তার মাথায় আসে | কিন্তু সে চিন্তাগুলোর কোন অর্থ নেই | চিন্তার সুতাগুলো বড় হতেই থাকে | এর কোন শেষ নাই | মাঝে মাঝে চিন্তাগুলো জট পাকিয়ে যায় | বাস্তবতায় রুপান্তর না হতে পেরে অবাস্তব চিন্তাগুলো তার আপন সত্তাকে প্রবলভাবে নাড়া দিয়ে যায় | অতঃপর হ্যালুসিনেশন | বোবার মত ঘরের দেয়ালের দিকে বিরামহীনভাবে তাকিয়ে থাকা | চোখ ব্যথা হয়ে আসলে ঘুমের কোলে ঢুলে পরা | এভাবেই জীবন বয়ে যায় ...................................................................... ক্রমাগত অসহ্য হয়ে উঠা এই জীবনের ভার বওয়া ছেলেটির কাছে অসম্ভব হয়ে উঠে | সে সিদ্ধান্ত নেয় কিছু একটা করার | ঘর ছেড়ে সে বেরিয়ে পড়ে | বাসস্টেশনে এসে সে নাম না জানা একটা জায়গার উদ্দেশ্যে একটা বাসে উঠে পড়ে | বাস চলে | শহর ছেড়ে দূরে কোথাও | বাসের পিছনের সীটে ছেলেটি চুপ করে বসে থাকে | বাইরের প্রকৃতির দিকে তাকায় সে | একটু একটু করে তার মধ্যে প্রকৃতি তার সহজ সরল রুপে সাড়া ফেলে | গাছের পাতা বাসের জানালা ছুয়ে যায় , তার মাঝে অন্যরকম এক অনুভূতি খেলা করে | বাসটা হঠাৎ করে থেমে যায় | এটাই লাষ্ট ষ্টপেজ | ছেলেটি বাস থেকে নেমে পরে | জায়গাটা অচেনা ,চেনার কথাও না | ছেলেটি এদিক সেদিক তাকায় | বাসটি একটি হাটে এসে থেমেছে | লোকজনের মোটামুটি ভিড় আছে | ছেলেটির হঠাৎ পানির পিপাসা পায় | কাছেই একটা হোটেল দেখে তাতে ঢুকে পড়ে সে | একটা খালি টেবিলে গিয়ে বসে |এখানে তেমন একটা ভীড় নেই | ছোট একটা ছেলে এসে তার কাছে জানতে চায় সে কি খাবে | ছেলেটি চা দিতে বলে | কিছু সময়ের মাঝেই চা চলে আসে | চায়ের কাপ ময়লা , চায়ে দুই - তিনটা পিপড়াও আছে | বাসায় হলে ছেলেটি এই চা কখনোই খেত না | কিন্তু এখন সে নিবিকার চিত্তে চায়ে চুমুক দিল | "ভাইজান কি বেড়াইতে আইছেন ?" , প্রশ্নটা শুনে ছেলেটি চমকে উঠে | সেই চা নিয়ে আসা ছোট্ট ছেলেটা তাকে প্রশ্নটা করেছে | ছেলেটি উত্তরে আনমনে মাথা নাড়ে | ছোট্ট ছেলেটা তখন বলে,"এইদিকে তো তেমন কেও একটা বেড়াইতে আহে না,তয় এই জায়গাটা মেলা সোন্দর | একটা নদী আছে আমাগো | উই যে রাস্তাটা দেখতাছেন না, উইটা ধইরা সোজা চইল্যা যাবেন , নদীটা দেখতে পাইবেন | নদীটা বড়ো ভালা | একবার যাইয়েন কিন্তু উইদিক্যা কইলাম " |এই বলে এর মধ্যে শেষ হয়ে আসা চায়ের কাপ নিয়ে সে চলে যায় | বিল মিটিয়ে ছেলেটি রাস্তায় নেমে আসে | হাটা শুরু করে | মানুষজনের দিকে বেশি তাকায় না সে | মানুষকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় সে মাথা নিচু করে থাকে | হাটতে হাটতে সে বেশ কিছু দূর এসে পড়ে | এদিকটায় তেমন মানুষ নেই | ভালভাবে চারপাশে তাকায় ছেলেটি | সামনেই সে নদীটা দেখতে পায় | তাহলে সে এতক্ষণ অবচেতন মনে নদীর পথেই হাটছিল | কি আশ্চয , খেয়ালই করে নি সে | আস্তে আস্তে নদীর দিকে এগিয়ে যায় সে | নদীর পাড়ে একটা বাধানো ঘাট আছে | ছেলেটি ঘাটে গিয়ে বসে | নদীর পাড়ে অনেক বাতাস | ছেলেটির চুলগুলো এলোমেলো হয়ে যায় | ছেলেটি আপন মনের ভাবনায় মগ্ন হয়ে যায় | সে ভাবে জীবনটা কি অদ্ভুত ! এই জীবনে কোন কিছুই তার ভাল লাগে না , কোন কাজেই সে সফল হতে পারে নাই | জীবনে কিসের যেন এক তীব্র হাহাকার |বুকটা মচড়ে উঠে তার | "বাবা , তোমার এত কষ্ট কেন ? কি হয়েছে , আমাকে বলো " , পাশে থেকে এক অতি কোমল কন্ঠস্বরের আওয়াজে ছেলেটি ফিরে তাকায় | এক বৃদ্ধের কন্ঠস্বর সেটা | খুব সুন্দর চেহারার এক বৃদ্ধ | বৃদ্ধটির চোখের দৃষ্টিতে কোমল সহানুভূতি | সেই চোখের দিকে তাকিয়ে ছেলেটির বুকে জমে থাকা কান্না বের হয়ে আসে | হু হু করে কাদতে থাকে ছেলেটি | বৃদ্ধটি তাকে জড়িয়ে ধরে তাকে,মাথায় হাত বুলায় | বলে , "বাবা , আমি বুঝতে পেরেছি তোমার কষ্ট | বোকা ছেলে কোথাকার | এমনভাবে কেউ কাদে | শুন , জীবনটাকে এত সিরিয়াস্লি নেওয়ার কি আছে ? একে সহজভাবে নে | জীবনে আশা থাকবে , স্বপ্ন থাকবে | কিন্তু স্বপ্ন ভেঙে যাওয়া মানে এই নয় যে স্বপ্ন দেখাটা ভুল ছিল | আবার তুই স্বপ্ন দেখ | তুই পারবি বাছা | জীবনে হতাশ হওয়া মানেই নিজের কাছে নিজের হার মানা | তাই হতাশ হবি না | উঠ বাবা উঠ | মুখটা ধুয়ে নে পানিতে | এবার বাসায় যা | আমার কথাগুলি মনে রাখিস | আর যখনি তোর মন খারাপ হবে , এখানে চলে আসিস | " ছেলেটি ফিরতি পথ ধরে | পিছনে নদীর বুকে সূয ঢলে পড়ে |চারদিকে রক্তিম আভা কেটে গিয়ে আধার ঘনিয়ে আসছে | এরই মাঝে ছেলেটি দৃপ্ত পায়ে হেটে যায় | তার আর মন খারাপ নেই | চোখগুলি তার নতুন স্বপ্নে বিভোর | সে পারবে , সে পারবে জীবনের পথে হাটতে |
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।