---
দেশের সার্বিক পরিস্থিতি অবনতির দিকে। চতুর্দিক থেকে খবর আসছে রক্তক্ষয়ী সংঘাতের। আজ সামুতে ব্লগার অর্ফিয়াস একটি হৃদয়স্পর্শী কবিতা লিখেছেন।
"মা অপেক্ষায়, ছেলে বড় পাশ দিয়ে ফিরবে।
বাবার চোখে স্বপ্ন, কষ্টের দিন বুঝি ফুরোলো বলে।
ছোটবোনটির আশা, ঢাকা ভাইয়ার বাসায় থেকে চালাবে পড়াশোনা।
আর সে? সে বেওয়ারিশভাবে শুয়ে আছে কি অবহেলায়, কি নির্মমতায়। "
এমন একটি কবিতার জন্য অর্ফিয়াসকে ধন্যবাদ জানাই। দেশকে এই সংঘাত সংঘর্ষের দিকে ঠেলে দেবার জন্য কেউ দায়ি করছেন সরকারী দলকে আবার কেউ দায়ি করছেন বিরোধী জোটকে। কিন্তু এই রক্তক্ষয়ী ঘটনাগুলো কি শুধু রাজনৈতিক বিবাদের ফলশ্রুতি? দেশের আপামর জনতা তাই ভাবছেন।
তাদেরকে এটাই ভাবাতে বাধ্য করা হচ্ছে। কিন্তু সত্যি কথা হচ্ছে এ শুধু রাজনৈতিক বিবাদের ফল নয়। এর পেছনে আরো বড় বড় কারণ রয়েছে যা সরকারি ও বিরোধী জোট উভয়-ই এড়িয়ে যাচ্ছে। কারণ পুঁজিবাদী গণতান্ত্রিক সমাজের বাস্তবতা হল এখানে সরকারি ও বিরোধী দলের একটা কমন উদ্দেশ্য থাকে তা হল "এলিট"দের স্বার্থ রক্ষা করা। সংঘাত, সংঘর্ষ, রাজনীতি, কূটনীতি যাই করা হয়, এই এলিট স্বার্থ রক্ষা করার জন্যই।
দেশে জ্যামিতিক হারে বেড়ে চলেছে ধনী আর দরিদ্রের বৈষম্য। তা সুবিধাবঞ্চিত জনতার মধ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছে এক অবচেতন ক্রোধ। ধনী দরিদ্রের এই বৈষম্যের যাতাকলে একবার যে পিষ্ট হয়েছেন সেই বুঝবে এর যাতনা কত নির্মম। খাদ্য, চিকিৎসা, বাসস্থান, শিক্ষা এই মৌলিক অধিকারগুলো সবগুলো একচেটিয়াভাবে ভোগ করছে এলিটরা অর্থাৎ শাইলক নাকের পুঁজিপতিরা। একদিকে চরম বিলাসিতার পরাকাষ্ঠা আর অন্যদিকে মর্মান্তিক দারিদ্রতা দেশটিকে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
প্রান্তিক বৈষম্যের ভয়াবহ শিকার দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ। ক্রমবর্ধমান সংঘাতগুলো সেই বৈষম্যের-ই একটি বিক্ষুব্ধ রূপ। কেউ যদি বলে এসব সরকারি বনাম বিরোধী দলের সংঘাত তাহলে তা হবে একটি মারাত্মক ভুল। অবশ্য এই ভুল চিন্তার নারকোটিকস দিয়ে আমাদেরকে মূল সমস্যা উপলব্ধি থেকে ফিরিয়ে রাখতে চায় দালাল এলিটরা। উঠতি পুঁজিবাদী ও ধনতান্ত্রিক সমাজে এই সংঘাত কখনো এড়ানো সম্ভব না, ক্ষমতার মসনদে যেই থাকুক না কেন।
যখন কায়েমি এলিটদের ছেলেপুলেরা ইউরোপ আমেরিকার শীততাপ নিয়ন্ত্রিত শ্রেণীকক্ষে নিশ্চিন্তে পড়াশুনা করছে তখন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্ররা রক্তক্ষয়ী সংঘাতে নিজের প্রাণ-সম্পদ অকাতরে বিলিয়ে দিচ্ছে। এলিট পুঁজিপতিদের এই ভোগ বিলাস নিশ্চিত করার জন্য আমাদের মূল্যবান জীবনগুলো কিভাবে জলাঞ্জলি দিচ্ছি!
যাদের জন্য এই রক্ত আর সংঘাত তাদের কাছে ঘটনাগুলো সিনেমার স্ক্রিনশটের মতন-ই গুরুত্বপূর্ণ বিনোদন । বিশ্ববিদ্যালয় অথবা কলেজের হোস্টেলে একটি সিট অথবা চাকরীর লোভ দেখিয়ে যাদের হাতে দা, রামদা, কুড়াল, চাপাতি ,গ্রেনেড তুলে দেয়া হচ্ছে আমরা শুধু তাদেরই দেখি আর নিজেদের ভাগ করে ফেলে বিরোধী আর সরকারী জোটে। ধনি দরিদ্রের বৈষম্যের শিকার দিশেহারা মানুষগুলোর উপর সমস্ত দোষ চাপিয়ে দেই। নিজেরা শতধা বিভক্ত হই।
আমাদের বুঝতে হবে আমাদের বিভক্তির পর্দার আড়ালে অন্যতম শয়তানটি হল এই বৈষম্য। যতদিন এই দানবকে ভালমত চিনতে না পারবো ততদিন পর্যন্ত এই সংঘাতের গ্রাফলাইন উপরের দিকেই উঠতে থাকবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।