আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কাঁদালে তুমি মোরে ভালবাসারই ঘায়ে...( কথা ও ছবি)

. আমার নাইবা হলো পারে যাওয়া...
অবাক হয়ে বন্ধ গেটটার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলাম। আলতো হাতের ঠেলাতেই সেটা খুলে গেলো। আহ! এই তো আমার সেই চির-চেনা পথ। তবে অব্যাবহারে কেমন যেন হয়ে আছে। ঝরা-পাতার রাশি।

দেখেই বোঝা যাচ্ছে অনেকদিন এ পথে কেউ পা রাখেনি। গাছ পালা গুলো অযত্নে অবহেলায় কেমন যেন বুনো হয়ে গিয়েছে। চারিদিকে মিষ্টি সুগন্ধ ছড়িয়ে আছে। এ সুগন্ধ আমার চেনা। এজেলিয়া ফুটে আছে।

আমার চুলে, কাধে তার ঝরে পড়া পাপড়ি। লাইলাক গুলো অভিমানী হয়ে আছে। আলতো করে আদর করে দিলাম। মনে হলো রাগ করে আছে ওরা। কত দিন ওদের কেউ আদর করে খবর নেয়নি।

হঠাৎ করেই চোখের সামনে সদর দরজাটা চলে এলো। কোথাও কেউ নেই। চারিদিকে শুনশান। দরজাটাও স্তব্ধ। মনে হচ্ছে বাতাসও স্তব্ধ হয়ে গেছে।

আমার দুচোখ তাকে ব্যাকুল হয়ে খুঁজছে। এখানেই তো থাকার কথা। কোথায় গেলো? পুবদিকে গেলাম। না, ওখানেও ত নেই। কি আশ্চর্য! গোলাপ-গুলো এখনও এমন করে ফুটে আছে কি করে? সমুদ্রে যায় নি তো? সে তো সমুদ্র খুব ভালোবাসতো।

হয়তো ওখানেই গিয়েছে। পায়ে চলা ছোট পথটা দিয়ে এগিয়ে গেলাম। এ পথে কতদিন সে প্রজাপতির মত উড়ে উড়ে গিয়েছে। গাছ-পালার কারনে অন্ধকার হয়ে আছে। গাছগুলো ইচ্ছে মত তাদের শাখা প্রশাখা বাড়িয়ে চলেছে।

কেউ বারন করছে না। এমনটি থাকার তো কথা না। উপরে থাকিয়ে গাছের ফাক দিয়ে ছেড়া ছেড়া আকাশ নজরে এলো। আঁকাবাঁকা পথ পেরিয়ে খাড়ির সামনে এলাম। এখানকার সমুদ্র অনেক শান্ত।

লক্ষী মেয়েটির মত খেলা করছে। আরে! লাল জামা পড়া এ মেয়েটি কে? আর ঐ বাচ্চাগুলো? এই মেয়েতো সে নয়!!! হয়তো কেউ এখানে বেড়াতে এসেছে। তাইবা কি করে হয়? এখানে তো বাইরের মানুষ প্রবেশ করতে পারেনা। আরেকটা আমি আমাকে ভেংচে উঠে। বাইরের কেউ যদি নাই আসতে পারে তবে তুমি কি করে এলে? আমি? আমি তো ওকে ভিষন ভালোবাসি।

নিজের কথা নিজের কানেই ম্লান শোনালো। সে ছিলো অনেক সহজ সরল ফুলের মত একটি মেয়ে। সাজগোজের কোন বাহুল্য নেই। ঠিক যেন এই রডোডেন্ড্রন ফুলটির মত। ভিরু, সংকুচিত।

অচেনা, অদেখা প্রতিদন্দীর কাছে নত-মুখী দুঃখি মেয়েটি সেই কবে থেকে আমার মনের গভীরে স্থান করে নিয়েছে, আমি নিজেও জানিনা। বিষন্ন মনে আবার ফিরে এলাম। বাদাম গাছটি তেমনি দাঁড়িয়ে আছে। কাঠবেড়ালিরা নির্ভয়ে পাতার আড়াল থেকে উঁকি দিয়ে দেখছে। আমাকেও কি ঐ মেয়েটির মত অনাহুত মনে করছে? কিন্তু সেতো অনাহুত ছিলোনা।

এখানেই তো তার ভালবাসার বসতবাড়ি হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু কেনো হলোনা? সে কি সত্যি এখানে নেই? ঐ তো ঐ তো সে আমায় দেখে দৌড়ে আসছে। আমি যে তাকে অনেক ভালোবাসি। সে নিশ্চয়ই জানে সে কথা। আজ তাকে তার নাম জিজ্ঞেসা করবো।

একবারও কেন তার নামটি বল্লো না। সে কি অভিমানে? অভিমানই বা কেনো? ভালোবাসা তো সে পেয়েছে। সে তো হেরে যায়নি ঐ অদৃশ্য সুন্দরের মোড়কে জড়ানো কুহকিনীর কাছে। আজ তাকে নামটি বলতেই হবে। কোথায় গেলো সে? এই তো দেখলাম দৌড়ে আসছিলো আমায় দেখে।

তাহলে? হীম-শীতল ভয় শিরশির করে নেমে গেলো আমার মেরুদন্ড বেয়ে। আমি চিৎকার করে তাকে ডাকলাম। “মেয়ে, তুমি কোথায়? এই দেখো আমাকে, আমি তো তোমার মতই অতি সাধারন”। আমার চিৎকার আমার নিজের কাছেই ফিরে এলো। আমি যেনো দেখতে পেলাম তাকে।

প্রানপনে সে এই প্রাসাদ থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছে। আমি তার পিছু পিছু বের হয়ে এলাম। ছুটছি তার পেছনে। হঠাত দেখলাম সে থমকে দাঁড়িয়ে পিছন ফিরে তাকালো। তার বিস্ফারিত দৃষ্টি আমাকে ভেদ করে চলে গেলো।

সে দৃষ্টি অনুসরন করে দেখলাম পিছনে আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে গেছে। দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। সে আগুনে পুড়ে যাচ্ছে ম্যান্ডারলে প্রাসাদ”। ম্যান্ডারলে রেবেকার সাধের ম্যান্ডারলে। আমার গলা শুখিয়ে গেলো।

চিৎকার করে তাকে ডাকলাম। "অনামিকা কোথায় তুমি? ভয় পেওনা, আমার হাতটি ধরো। কোন সাড়া পেলাম না। স্বপ্ন ভেঙ্গে গেলো। *ছবিসুত্রঃ ইন্টারনেট।


 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।