আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পরকিয়া: আসুন পরিবারকে সময় দেই, এবং নিজেকে সংযত রাখি

নামের সাথে কামের কিছু মিলতো থাকবোই

পর পর দুটি দু:খজনক ঘটনা বিবেকবান মানুষদের বিবেককে ঠিক নাড়া দিয়ে যায়নি, বলা যায় ঝাকুনি দিয়ে গেছে। দুটি ঘটনায় ৩টি মাসুম শিশুর প্রান গেছে। আর দুটি ঘটনাতেই মুল চালিকা শক্তি ছিল পারিবারিক কলহ। যার বলি হয়েছিলো নি:স্পাপ শিশুগুলি। আরেকটু নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে বলতে হয় “পরকিয়া”র বলি শিশু তিনটি।

বিশেষ করে শিশু সামিউলকে হত্যার সাথে যখন তার আপন গর্ভধারীনির(“মা” শব্দটি বললাম না) নাম জড়িয়ে যাচ্ছে তখন সভ্যতা কতটুকু উন্নত হয়েছে তা নিয়ে দ্বিধা জাগতেই পারে। পারিবারিক বন্ধন পৃথিবীর আদিতম দৃঢ় বন্ধন। বাংলাদেশে পৃথিবীর অন্যদেশ অপেক্ষা বন্ধনটি বোধহয় আরো দৃঢ়। একসময় যৌথ পরিবারে একসাথে অসংখ্য লোকের বাস ছিলো। ( কথা প্রসংগে বলতেই হয় আমার ছোট খালুরা ছিলেন ১০ ভাই, ১০ বোন।

তারা একই বাসাতে থাকতেন এবং একই হাড়িতে রান্না হতো। তাদের বাড়িটা ছিলো বিয়ের বাড়ীর মতো )। সময়ের প্রয়োজনে, কাজের চাপে মানুষ পরিবার থেকে আলাদা হওয়া শুরু করেছে, সেই সাথে যোগ হয়েছে কিছুটা স্বার্থপর মানসিকতা। মানুষ দিনে দিনে যৌথ পরিবার থেকে একক পরিবারে চলে এসেছে। আয় এবং ব্যায়ের সময়ের করতে না পারা সংসার জীবনের এক বড় ব্যর্থতা।

সাথে সম্পদ এবং অন্যকে দেখানোর প্রতিযোগিতা, অন্যের দেখে নিজের করার প্রতিযোগিতা যুক্ত হয়েছে। আমি যদি আয় করি ২০০০০ টাকা, তবে আমার ব্যয় হওয়া উচিত সর্বোচ্চ ১৭০০০ টাকা। বাকি টাকা সঞ্চয় করতে হবে। এখন আমি যদি আগে ব্যয় নির্ধারন করি তার পরে আয়ের জন্য চেষ্টা করি তাহলে হয় সময়ের অতিরিক্ত কাজ করতে হবে নতুবা বিপথে যেতে হবে। বর্তমান কর্পোরেট যুগে তরুন কর্মকর্তাদের নানানভাবে প্রলুব্ধ করা হয় অফিসে গরুর খাটুনি খাটার জন্য।

বাহারী ইনকাম, বোনাসসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা। প্রয়োজনে অথবা লোভে পড়ে তরুন সমাজ সেদিকে ঝুকে পড়ে। ফলে একদিকে যেমন সে নিজের পরিবারকে সময় দিতে পারে না, তেমনি অতি মানসিক এবং শারিরিক চাপের কারনে নিজ স্ত্রীর চাহিদাও মেটাতে পারেনা। এরই মধ্যে যদি ২/১ টি সন্তান হয়ে যায় তাহলে দেখা যায় স্বামী স্ত্রীর সাথে একটা ফারাক তৈরী হয়ে যায়। দুজনের দুটি জগৎ তৈরী করে ফেলে।

স্বামীর অবর্তমানে এবং অতি ব্যস্ততার কারনে স্ত্রীরাও থাকেন কষ্টে। আধুনিক নগর জীবনে কোনো সামাজিক বন্ধন না থাকায় দেখা গেলো বছরের চর বছর ধরে পাশাপাশি বাস করা সত্তেও পাশের ফ্লাটের অধিবাসীদের সাথেই কোন পরিচয় থাকে না। ফলে স্ত্রী’রা যান্ত্রিক নগর জীবনে শুরুতে অনিচ্ছা থাকলেও হয়ে পড়েন টিভিমুখী। সকালে ঘুম থেকে উঠার পর থেকে মাঝ রাত পর্যন্ত টিভির রিমোটে তাদের জীবন বন্দী হয়ে পড়ে। দেশের নির্জিব কিছু প্রেমের নাটকে তাদের আর মন ভরে না।

তখন রুচির বদলে যেতে হয় স্টারপ্লাস বা সনি তে। যেখানে মেগা সিরিয়ালের নামে চলে পারিবারিক কলহ, বউ-শাশুড়ী যুদ্ধ এবং পরকিয়া। প্রায় প্রতিটি সিরিয়ালেই পরকিয়াকে একদমই স্বাভাবিক হিসেবে দেখানো হয়। অবৈধ গর্ভজাত সন্তানকে আদর্শ মানুষ হিসেবে দেখানো হয়। একাধিক বিয়ে, নোংরামীকে দেখানো হয় স্বাবাবিকভাবে।

সবচেয়ে বড় কথা সিরিয়ালে কোটি কোটি টাকা যেন আমাদের টাকার কয়েনের মতো। চাইলেই পাওয়া যায়। রাজপ্রাসাদের বাড়ী, বর্নিল কাপড় এবং রাজকীয় জীবন সেখানে স্বাভাবিক হিসেবেই দেখানো হয়। ফলে, যে স্ত্রী সারাদিন রিমোট হাতে এইসবই দেখে বেড়ায় সে তো ঈদ/পার্বনে কুসুম’এর শাড়ী বা কাহানী ঘরঘরকির শাড়ী কিনতেই চাইবে। যে মেয়ে সারাদিন কাসুটি জিন্দেগী দেখবে তার কাছে পরকিয়া বা একাধিক বিয়ে অতি স্বাভাবিক হিসেবেই মনে হবে।

এবার আরেকটি প্রসংগ। অনেক পরিবারকেই দেখা যায় ছেলে বিদেশ যাবে, কাজেই তাকে আগে বিয়ে দাও। যে ছেলে বিদেশ গিয়ে ২/১ বছর থাকবে তাকে এখন বিয়ে দিয়ে কি লাভ? মেয়ে/ছেলেটি ২/১ দিন একসাথে থেকে বছরের বাকিদিন গুলি কিভাবে কাটাবে? একজন মানুষের নৈতিক চরিত্র কোন পর্যায়ে গেলে ২ বছর স্ত্রী বা স্বামী ছাড়া থেকেই কোন অনৈতিক কাজে জড়াবে না? নাকি পরিবার মনে করে, বিয়ে দিয়ে দিলাম, এবার বিদেশে গিয়ে আকাম-কুকাম করো, আর সমস্যা নেই। যে সকল ব্যক্তি কাজের জন্য বছরের পর বছর বিদেশ থাতে তাদের উচিত হয় বউকে সাথে নিয়ে যাওয়া অথবা কাজ শেষে বিদেশ থেকে এসে একবারে বিয়ে করা। ২ বছরে একবার দেশে আসবেন আবার আপনার স্ত্রী পরকিয়ায় জড়ালে তাকেই দুষবেন? শারিরীক চাহিদা কতটুকু গুরুত্বপূর্ন “সামিউল” এর গর্ভধারিনীকে দেখলেই বোঝা যায়।

কথা প্রসংগে তসলিমা নাসরিনের কথা চলেই আসে। তার যে দুইএকটি বই/কলাম পড়া হয়েছে তাতে পদে পদে দেখা যায় তার যৌন জীবনে অপূর্নতার কথা, অসুখী হবার কথা। তার অধিকাংশ বক্তব্যেই ফুটে ওঠে নিজ যৌন জীবনে তৃপ্ত হবার জন্য যা কিছু করা যায় তা করার অধিকারের কথা। সবশেষে: ঘটনা যাই হোক, নিজ পরিবারকে সময় দিন। আন্তরিক ভাবেই।

আপনার কোটি কোটি টাকা কাজে লাগবে না যদি পরিবারে অশান্তি থাকে। অন্যের অর্থের দিকে তাকিয়ে প্রতিযোগিতায় মত্ত হবেন না। নিজের যা আছে তাতে দিয়ে সংসার পরিচালনাকরে সঞ্চয় করুন। অবৈধ এবং অতিরিক্ত অর্থ সংসারে অশান্তি আনবেই। স্ত্রী’রা নিজ স্বামীর সাথে আলোচনার মাধ্যমেই সংসারের খরচ নির্ধারন করে নিন।

পাশের বাসার সন্তান ইংরেজী মিডিয়ামে পড়ে বলে আপনার সন্তানকেও সেখানে পাঠাতে হবে তাতো নয়। অথবা পাশের বাসার ভাবী ঈদে ৩০ হাজার টাকার শাড়ী কিনেছেন বলে আপনাকেও কেন কিনতে হবে? অন্যের দেখে প্রতিযোগিতা বন্ধ করুন। সবার আগে বন্ধ করুন হিন্দী সিরিয়াল গুলো। আমার দৃষ্টিতে একটি পর্ন মুভি একজনের যে পরিমান নৈতিক অবক্ষয় ঘটায়, তার থেকে অনেক দীর্ঘ মেয়াদী এবং সুদুরপ্রসারী ধ্বংসের পথ তৈরী করে এই সিরিয়ালগুলো। আমরা আমাদের পরিবারকে সময় দেই।

নিজ এবং অপরের প্রতি সৎ এবং দায়বদ্ধ থাকি। আর কোনো সামিউলের লাশ দেখতে চাই না। পৃথিবীতে সর্বশেষ আশ্রয়স্থল মায়ের কোল যেন নিরাপদ থাকে। এই শুভ কামনা প্রতিটি অনাগত শিশুদের প্রতি।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.