আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইয়াহু ৩৬০, এবং বকলম ডট কম

পাগল কবি

ইন্টারনেটে আমার ব্লগিংয়ের শুরুটা হয় ইয়াহু ৩৬০ দিয়ে। প্রথম দিকে ব্লগ সম্পর্কে খুব একটা ধারণা ছিলো না। ইন্টারনেটে কোথাও নিজের কবিতাগুলো টুকে রাখার সুযোগ পেয়েই খুশি ছিলাম। তবে ব্লগ যে শুধুমাত্র নিজের লেখা প্রকাশেরই জায়গা না, বরং মূলতঃ একে অপরের সাথে ভাবের আদান প্রদানের এক কেন্দ্রবিন্দু, অন্যের দৃষ্টিভঙ্গির সাথে পরিচিত হবার পাশাপাশি মতামত/আলোচনায় নিজের যুক্তিগুলোও যেখানে উপস্থাপন করা যায়, এটা বুঝতেও তখন খুব বেশি সময় লাগেনি। এদিক দিয়ে ইয়াহু ৩৬০ ছিলো অনন্য।

ব্লগিংয়ের পাশাপাশি সেখানে একে অপরের সাথে বন্ধুত্ব করা, শুধুমাত্র বন্ধুদের বিভিন্ন কর্মকান্ডের আপডেট দেখতে পারা, সর্বোপরি সমমনা অনেকেরই এক হয়ে একসাথে আড্ডা মারার মতো একটা পরিবেশ ছিলো সেখানে, যা পরে অন্য কোন ব্লগিং সাইটেই পাইনি। ইয়াহু ৩৬০-এর নিজস্ব একটা সোশ্যাল নেটওয়ার্ক ছিলো, যদিও সেটাকে আমি ফেসবুক বা অন্য কোন সোশ্যাল নেটওয়ার্কের সাথে তুলনা করবো না। একে আমি বরং ব্লগভিত্তিক সোশ্যাল নেটওয়ার্ক হিসাবেই আখ্যায়িত করবো। এখানে ব্লগ লেখাটাই ছিলো মূল বিষয়। বাকী সব নেটওয়ার্কিং এই ব্লগকে কেন্দ্র করেই।

আমাদের আড্ডাও হতো ব্লগের কমেন্ট সেকশনে একের পর এক মন্তব্য করার মাধ্যমে। কিন্তু ইয়াহুর মতো এতো বড় একটা কোম্পানী এই সাইটের পিছনে এতো লোক খাটিয়েও একে ধরে রাখতে পারলো না। এটা কি বানিজ্যিক কোন কারণে, নাকি টেকনিক্যাল আরও কারণ আছে এর পিছনে, তা জানা হয়নি। তবে শেষদিকে ইয়াহু ৩৬০ বেশ স্লো হয়ে গিয়েছিলো। অনেক ফিচার ঠিকমতো কাজ করতো না।

আমার ধারণা ইয়াহু কর্তৃপক্ষের ধারণার চেয়েও বেশি ব্যবহারকারী নিয়মিত ৩৬০ ব্যবহার করায় এতোজনের চাপ সাইটটি নিতে পারছিলো না। ইয়াহু ৩৬০-কে সেভাবে ডিজাইন করা হয়নি। ফলস্রুতিতে ৩৬০ কে বন্ধ করে এর চেয়েও আরও ভাল সাইট চালু করার ঘোষনা দেয়াই ইয়াহু কর্তৃপক্ষের কাছে সঙ্গত মনে হয়েছিলো। কিন্তু প্রতিস্রুত সেই নতুন সাইট, যা কিনা প্রথমে ইয়াহু প্রোফাইল এবং পরবর্তীতে পালস নামে আত্মপ্রকাশ করে, কোন দিক দিয়েই ইয়াহু ৩৬০-র সেই অভাবটা আর পূরণ করতে পারেনি। ৩৬০ বন্ধ হওয়াতে স্বভাবতঃই ঝুঁকে পড়লাম ফেসবুকের দিকে।

কিন্তু এখানে ব্লগিংয়ের সেই পরিবেশটাই নেই। শুধুমাত্র বন্ধু তৈরী, তাদের সাথে কথাবার্তার আদান-প্রদান, একেবারে বেশি হলে ফটো এলবাম শেয়ার করা, এই ছিলো প্রাথমিক কর্মকান্ড। তারপর ফেসবুকের বিভিন্ন এপ্লিকেশানে একেকবার ঝুঁকে পড়লেও একটানা আকর্ষণ ধরে রাখার মতো কোনটাই ছিলো না। যদিও এখন আমি ফেসবুকের একজন নিয়মিত সদস্য, স্বীকার করতেই হবে যে ফেসবুকেরও নিজস্ব জোরালো এক আবেদন আছে, তার পরেও মনের ভিতরের ব্লগার যেন এতে কোনমতেই তৃপ্ত হতে পারে না। ইতিমধ্যে বাংলা ব্লগিংয়ের বেশ কিছু সাইট স্বমহিমায় আত্মপ্রকাশ করেছে।

তার অনেকগুলোরই পপুলার হতেও বেশি সময় লাগেনি। এখনও নতুন নতুন আরও অনেক বাংলা ব্লগিংয়ের সাইটের উদয় হচ্ছে। সামহোয়ারইন থেকে নিয়ে আরও কিছু ব্লগিং সাইটে আমিও কমবেশি লেখালেখি শুরু করলাম। কিন্তু ৩৬০-র অতৃপ্তিটা যেন কেউই পূরণ করতে পারছিলো না। পপুলার সাইটগুলোতে একটা ব্লগ পোস্ট করার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই সেটা প্রথম পাতা থেকে অন্যান্য পাতায় গিয়ে হারিয়ে যায়।

আমার পরিচিত কোন বন্ধু এক বেলা আগে কোন ব্লগ লেখলেও আমি ঢুকে যে সেটা দেখতে পাবো, বা জানবো, তেমন কোন উপায় অন্তত আমার চোখে পরেনি। ইয়াহু ৩৬০ বন্ধ হবার প্রায় ৩ বছর পরে অবশেষে নতুন এক বাংলা ব্লগিংয়ের সাইট খুঁজে পেলাম, যেটা ইয়াহু ৩৬০-র সেই অভাব পূরণের জন্য অন্তত চেষ্টা করে যাচ্ছে বলে মনে হলো। সাইটটি হচ্ছে বকলম ডট কম (http://www.bokolom.com)। যাদের স্লোগান হচ্ছে "কলম নয়, কী-বোর্ড দিয়ে লেখা"। সাইটটির গঠন বিন্যাস অনেকটা ৩৬০-র মতোই।

এখানে প্রতি সদস্যের জন্য আলাদা প্রোফাইল পাতা আছে, অন্য সদস্যদের সাথে বন্ধুত্ব করা যায়, এবং লগইন করলে শুধু মাত্র বন্ধুদের লেখা ব্লগ এবং অন্যান্য কর্মকান্ডের আপডেট দেখা যায়। ফলে পরিচিত কোন বন্ধু কবে কোন ব্লগ লেখলো সেটা দেখার জন্য প্রত্যেকের ব্লগে ব্লগে গিয়ে ঢু মেরে দেখে আসতে হয় না। আবার বন্ধুদের প্রোফাইলের আলাপচারিতা বিভাগে গিয়ে আড্ডাও মারা যায়। সাইটের নেভিগেশন লে-আউটও অনেকটা সেই ইয়াহু ৩৬০-র মতোই। নতুন সাইট।

তাই এখনও আরও অনেক ফিচার আসা বাকী আছে বলে শুনেছি। তবে মনে হচ্ছে অনেকদিন পর আবার ব্লগিংয়ের নিজস্ব একটা পরিবেশ খুঁজে পেতে যাচ্ছি। সাইটটি অবশ্য এখনও যে কাউকে এর সদস্য হতে দিচ্ছে না। তবে বকলমের যোগাযোগ পাতা থেকে কেউ যদি তার অন্যান্য ব্লগের লিঙ্ক দিয়ে যোগাযোগ করে, আর সেসব লিঙ্কের লেখা পড়ে বকলম কর্তৃপক্ষের মনে হয় যে সেগুলোর ভাষা এবং বিষয় মার্জিত এবং সুস্থ মানসিকতার পরিচায়ক, তবে তাদের বকলমের সদস্য হিসাবে নেয়া হচ্ছে। প্রাথমিক পর্যায়ের এই সদস্যদের পরবর্তী সদস্যের তুলনায় সবসময়ই নাকি অতিরিক্ত সুবিধা দেয়া হবে।

বাংলা ব্লগিংয়ের এতো এতো সাইটের পাশাপাশি সবার মাঝে বকলমও তার নিজস্ব জায়গা করে নিতে পারে কিনা, সেটা দেখারই অপেক্ষায় রইলাম।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.