..
কোন বইটা আমার প্রিয় কেউ যদি জিজ্ঞেস করে, মুশকিলে পড়ে যাব। একবার কে জানি জিজ্ঞেস করেছিল নির্জন দ্বীপে গেলে কোন বই সঙ্গে নেব? আমি উত্তর দিয়েছিলাম-কোন বইই নেব না। কারণ এত বই আমার প্রিয়, কোনটা বেছে নেব?আজকে এমন চিন্তা করতে করতে ভাবছিলাম নিজের পছন্দের কয়েকটা ইংরেজী বই বাছি। দেখুন তো আপনাদের পছন্দের সঙ্গে মেলে কিনা।
শোগান, জেমস ক্ল্যাভেল
উপন্যাসটা অসাধারণ।
প্রথমবার পড়ে বিহ্বল হয়ে গিয়েছিলাম। কাহিনী পটভূমি জাপানে, ১৬০০ সালে। নায়ক ওলন্দাজ জাহাজের ইংরেজ চালক জন ব্ল্যাকথর্ণ দুর্ঘটনায় জাপানের উপকূলে ভেসে আসেন জাহাজের কয়েকজন সঙ্গীসহ। ধৃত হন শোগান কাসিগি ওমির হাতে। পরে হাত বদল হয়ে আসেন লর্ড তোরানাগার হাতে।
ধীরে ধীরে ‘বর্বর’ জন হয়ে ওঠেন শ্রদ্ধাভাজন বিদেশী-জাপানী। বিশ্বাসভাজন হয়ে ওঠেন তোরানাগার; প্রেমে পড়েন বিবাহিতা জাপানী নারীর। তাঁকে আবর্তিত করে ঘটনার জাল ছড়িয়ে পড়ে। প্রেম,ধর্মের বিরোধ, সংস্কৃতির দ্বন্দ্ব, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব- সব মিলিয়ে ১১৫২ পৃষ্ঠার এক অসাধারণ কাহিনী। ক্ল্যাভেলের পরের উপন্যাসের পটভূমিও এশিয়া, নাম তাই-পান।
এই বইটা আর পাইনি।
ছোটবেলায় এটা নিয়ে একটা মিনিসিরিজ দেখেছিলাম টিভিতে। স্পষ্টভাবে কিছু মনে নেই। আপনারা কোথাও যদি পান, দেখে নেবেন।
প্রাইড এ্যন্ড প্রিজুডিস, জেন অস্টিন
এই উপন্যাসের প্রথম লাইনটাই পৃথিবীর সবচাইতে বিখ্যাত কোটেশনগুলোর একটা -It is a truth universally acknowledged, that a single man in possession of a good fortune, must be in want of a wife. However little known the feelings or views of such a man may be on his first entering a neighbourhood, this truth is so well fixed in the minds of the surrounding families, that he is considered the rightful property of some one or other of their daughters.
১৮১৩ সালে উপন্যাসটি প্রকাশকালে ইংল্যাণ্ডে নারীদের পিতৃ সম্পত্তিতে কোন অধিকার ছিলনা, অর্থাৎ বাবার পঞ্চত্ব প্রাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে সম্পত্তি চলে যেত নিকটতম পুরুষ আত্মীয়ের দখলে।
অতএব ধনী স্বামী সংগ্রহই ছিল ভরসা। মিঃ বেনেটের পাঁচ মেয়ে জেন, এলিজাবেথ, লিডিয়া, মেরী এবং কিটিকে নিয়েই প্রাইড এ্যান্ড প্রিজুডিসের কাহিনী আবর্তিত। ভুল বললাম-কাহিনী আসলে প্রথমা দুই কন্যাকে নিয়ে। তাদের প্রতিবেশী হয়ে আসে চার্লস বিংলি এবং ফিটজউইলিয়াম ডার্সি আর কুমারী কন্যাদের মা-বাবাদের মধ্যে সাড়া পড়ে যায় , ঘটনা শুরু হয় তখন থেকে। জেনের সঙ্গে চার্লসের প্রণয়ের পরিণতিতে বাধা পড়ে এলিজাবেথ ও ডার্সির আপাত দূরত্ব এবং প্রেমিকের সঙ্গে লিডিয়ার পলায়নে।
কি করে সমাজের চড়াই-উৎরাই পার হয়ে এলিজাবেথ তার প্রিজুডিস আর ডার্সি তার প্রাইড বিসর্জন দিয়ে ভালবাসার পরিণতি পায়, তাই আছে এই সুখপাঠ্য বইটিতে। আমি এখনো মাঝে মাঝেই এই বইটা পড়ি। মনে আছে, প্রথমবার পড়ার পর মিঃ ডার্সির প্রেমে হাবুডুবু খেয়েছিলাম। মনে পড়ে ছোটভাই বইটা দেখে ঠোঁট উল্টিয়েছিল- মেয়েদের গল্প বলে। পরে ওকেই দেখেছিলাম লুকিয়ে পড়তে।
অ্যাবাউট আ বয়, নিক হর্নবি
সিনেমাটা ভাল না বইটা-এই নিয়েই একটা পোস্ট দেয়া যায়। নিক হর্নবির উপন্যাসটির প্রধান চরিত্র দু’টো-৩৬ বছর বয়স্ক উইল এবং ১২ বছরের মার্কাস। স্বচ্ছল, ভাবনাহীন জীবনযাপন করে উইল, অন্যদিকে মার্কাসকে নিতে হয় আত্মহত্যাপ্রবণ মায়ের দায়িত্ব। ঘটনা পরম্পরায় দুই অসমবয়সীর মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। উইল মার্কাসকে দেখায় জীবনের নতুনতর দিক, কিভাবে কিছুটা স্টাইলিশ জীবনযাপন করতে হয়, কিভাবে নারী মনোরঞ্জক বেশভূষা করতে হয়।
আর মার্কাসের কাছ থেকে উইল শেখে জীবনে স্থির হওয়া। বহুগামী উইলের দেখা হয় রেচেলের সঙ্গে, মার্কাসকে উইল সন্তান বলে পরিচয় দিয়ে নিজের সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যায় অনেকদূর। পরিশেষে উইল একজন দায়িত্বশীল মানুষ হয়ে ওঠে, অপরদিকে মার্কাস নিজ সমবয়সীদের মতই আচরণ করা শুরু করে।
এই কাহিনী নিয়ে হিউ গ্র্যান্ট ও নিকোলাস হল্ট অভিনীত ফিল্মটাও একই রকম উপভোগ্য। হিউ গ্র্যান্টের ক্যারিয়ারের অন্যতম ভাল একটি ছবি, যেখানে তিনি অনেকটাই ছক বাঁধা চরিত্র থেকে মুক্ত।
দ্য কাউন্ট অফ মন্টে ক্রিস্টো, আলেক্সান্দর দ্যুমা
খবরের কাগজে যখন দেখি-বিনা অপরাধে...বছরের জেল। অবধারিতভাবে মনে পড়ে এই বইটার কথা। তফাৎ একটাই, বইয়ের নায়ক এডমন্ড দাঁতে ১৪ বছর পর ফিরে এসে তার বিনা দোষে কারাবাসের হোতাদের উপর প্রতিশোধ নিয়েছিল, আর বাংলাদেশের অসহায় মানুষের কিছু করার থাকেনা। মজার ব্যাপার হল দ্যুমা তাঁর উপন্যাসটির লিখেছিলেন সত্যি ঘটনা নিয়ে। বোনাপার্টের দ্বীপান্তর হবার পর ফ্রান্সে তাঁর নাম নেয়াটাও ছিল প্রায় অপরাধের সামিল।
সেই অপরাধ অজান্তে করে ৩ বন্ধুর ষড়যন্ত্রে দাঁতের নির্জন কারাবাস হয় কুখ্যাত কারাগার শ্যতো দি’ঈফে, যেখানে মৃত্যু না হলে মুক্তি মেলেনা। আরেক বাবার বয়েসী কয়েদীর সাথে আলাপ তাকে নতুন করে চেনায় পরিচিত জগতকে, সত্যিকারের শিক্ষিত হয়ে ওঠে সে। ঐ কয়েদির মৃত্যু তাকে দেয় দু’টো জিনিষ-মন্টে ক্রিস্টো দ্বীপের গুপ্তধনের সন্ধান আর আজীবনের কারাবাসের থেকে মুক্তি। গুপ্তধনের বলে কাউন্ট অফ মন্টে ক্রিস্টো নাম ধারণ করে প্যারিসের উচ্চবিত্ত সমাজে আবির্ভূত হয় এডমন্ড দাঁতে। শুরু হয় তার প্রতিশোধের খেলা।
আমি ভাল করে লিখতে পারলাম না, যাঁরা পড়েননি তাঁদের জন্য দারুণ একটা গল্প।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।