যে মুখ নিয়ত পালায়......। ।
পৌষের কোন এক বিষন্ন বিকেলে রাজি সাহেব বসে আছেন। তার মুখ দেখে মনে হচ্ছে তিনি বড়ই বিষন্ন। ইদানীং আমার ও মন টন বিশেষ ভাল না।
রাজি সাহেব কে গিয়ে বললাম, কেমন আছেন রাজি সাহেব? আপনার গবেষনা তো ভালই জমল।
আলিম আল রাজির গবেষনার রিপোর্ট
তিনিই ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকালেন। তারপর আস্তে আস্তে বললেন, ভাবছিলাম গবেষনা করে কোন ললনা পটাইতে পারিব। কিন্তু আফসোস। পারিলাম না।
মনডায় কয় হিমু হইয়া যাই।
আমি উৎসাহিত হয়ে, বললাম ঠিক বলেছেন। এই জগতে সবচেয়ে উত্তম হচ্ছে হিমুনিজম। আজ থেকে ২৫০০ বছর আগে গৌতম বুদ্ধ বলেছিলেন পাখির মত জীবন ধারন করতে। তখন থেকে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা সারাদিন খালি পায়ে হলুদ পোষাক পড়ে ঘুরে বেড়াতেন।
রাজি সাহেব মনে হল একটু আনন্দিত হলেন। হিমু হবার জন্য পকেট বিহীন হলুদ পাঞ্জাবী জোগাড় করে এক শুভদিন দেখে আমি আর রাজি সাহেব হিমু হয়ে গেলাম। দিনটা ছিল চৈত্রের দ্বিতীয় দিবস। তারপর শুরু করিলাম হাঠা। সারাদিন হাঠিতে হাঠিতে আমাদের অবস্থা প্রায় তামা তামা।
রাত হইয়া গিয়াছে হাঠিতে হাঠিতে। তবুও আমাদের ক্লান্তি নাই। একটা জঙ্গলের পাশ দিয়ে আমরা যাইতেছিলাম। হঠাত আমরা সম্মুখে এক সাধুবাবাকে দেখিতে পাইলাম।
রাজি সাহেব বললেন, মুরাদ সাহেব ওই সাধুবাবা ত অনেকদিন ধরে সাধনা করছেন।
চলেন উনার কাছ থেকে কিছু জ্ঞান অর্জন করে আসি। হিমুদের জন্য জ্ঞান অর্জন করা নিষেধ না।
আমিও বললাম চলেন।
সাধু বাবা প্রকান্ড এক তেতুল গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি আকাশের দিকে হা করে তাকিয়ে আছেন।
আকাশে পুর্নচন্দ্র। জোছনার আলোয় চারদিক উদ্ভাসিত। তেতুল গাছের চিড়লবিড়ল পাতার ফাকে দুধের মত সাদা জোছনা যেন ঢেউ খেলে যাচ্ছে।
আমি কাছে গিয়ে বললাম, বাবা করেন কি?
সাধু বাবা মুখ উপরের দিকে রেখেই জবাব দিলেন, জোছনা খাই।
ব্যাপারটা আমার কাছে আশ্চর্য লাগল না।
হিমুদের আশ্চর্য হতে নেই। বাবার মুখপানে দৃষ্টিপাত করিয় জিজ্ঞাসিলাম, স্বাদ কেমন?
বাবা জোছনা গিলতে গিলতে বললেন, টক টক।
--বাবা টক জোছনা বেশী খাবেন না পেট খারাপ করবে।
সাধুবাবা এবার মুখ নামিয়ে আমাদের দিকে তাকালেন। জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের পরিচয়?
রাজি সাহেব একটু এগিয়ে গিয়ে ঘাড় নাড়িয়ে নাড়িয়ে বললেন, বাবা আমরা মহাপুরুষ।
মহামানব ও বলতে পারেন।
সাধুবাবা চোখ ছোট ছোট করে আমাদের দিকে তাকালেন। তারপর বললেন একটা কাহীনি শোন। বাবু ঈশ্বরচন্দ্র বলেছেন। কোন এক বনে এক ঋষি থাকতেন।
তিনি তেতুল গাছে উল্টা হয়ে ঝুলে ধ্যান করতেন। অনেক বছর ধ্যান করে প্রায় বৃদ্ধ হয়ে পড়েছেন। হটাত এক রাজার ইচ্ছা হল উনার ধ্যান ভাঙ্গাবেন। অনেক চেস্টা করেও ভাঙ্গাতে পারলেন না। পরে রাজ্যে ঘোষনা দিলেন যে ওই ঋষির ধ্যান ভাঙ্গাতে পারবে তিনি তাকে অর্ধেক রাজ্য লিখে দিবেন।
এক মেয়ে এসে বলল, আমি ঋষির ধ্যান ভাঙ্গাব এবং তার ঔরষজাত সন্তানকে তার কাধে চড়িয়ে রাজ্যে নিয়ে আসব। মেয়েটা তার কথা রেখেছিল সে কয়েকবছর পর সাধু কে রাজ্যে নিয়ে আসল তখন সাধুর কাধে ছিল তারই গর্ভজাত ও সাধুর ঔরষজাত পুত্রসন্তান।
আমাদের সাধুবাবা এই পর্যন্ত বলে আমাদের দিকে ভাল করে তাকিয়ে বললেন, গল্পটা শুনে কি বুজলা?
আমি বললাম,বুঝতে পারলাম টক জোছনা খেয়ে আপনার পেটে বদজম হইছে। তয় কোষ্টকাঠিন্য হয় নাই এইটা আশার কথা।
রাজি সাহেব যোগ করলেন, কোষ্টকাঠিন্য হইলেও সমস্যা নাই।
ভাল ওষুধ আছে। আর আপনি চিন্তা করবেন না বস। হিমুরা মায়ামুক্ত। এখন তকলিফ দেন আমরা বিদায় হই।
সাধুবাবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে পুর্নিমার রাতে অনেক্ষন হাঠলাম।
পেঠের মধ্যে ততক্ষনে ইদুর দৌড়ের প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে। এরকম পরিস্থিতিতে তার সাথে আমাদের দেখা। চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিসার দিশা। শুধু চুল না তার পুরোটাই অন্ধকারে ছিল। সে আস্তে আস্তে জঙ্গলের ভিতরের সরু রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছিল।
রাজি সাহেব বলে উঠলেন, এই তো আমার রূপা যায়।
আমি উনার দিকে কঠিন চোখে তাকিয়ে কঠোর ভাষায় বললাম, রাজি সাহেব! বাস্তবে হিমুর অস্তিত্ব থাকতে পারে কিন্তু রূপার অস্তিত্ব নাই। এটা আপনার বুঝা উচিত।
তিনি বুঝলেন কিনা বুঝা গেল না। পেট এ হাত দিয়ে বললেন, ক্ষিধায় মরে যাচ্ছি মুরাদ সাহেব।
আপনি দেখেন কোন কিছুর ব্যবস্থা করতে পারেন কিনা। সকালের ব্যবস্থা আমি করব।
আমি তাড়াতাড়ি বললাম,ঠিক আছে ভাই। আপনি এই গাছের নিচে ঘুমান। আমিই খাবার নিয়ে আস্তেছি।
রাজি সাহেব কে খাবারের কথা বলে ঘুম পাড়িয়ে আমি দৌড়ে চললাম জঙ্গলের ওই মেঠো রাস্তার দিকে। মাথার মধ্যে তীব্র উত্তেজনা। চাদের আলোয় একবার তাকে দেখেছিলাম। সে যে অনিন্দ্য সুন্দরী স্বর্গের অপ্সরী। দূর থেকে হটাত তার ছায়া দেখলাম।
মাথার মধ্যে আউলা গান বাজতে লাগল
“বৃস্টি পড়ে টাপুর টুপুর পায়ে দিয়ে সোনার নুপুর
আকাবাকা মেঠো পথে কোন রুপসী হেঠে যায়
আকাবাকা মেঠো পথে কোন রুপসী হেঠে যায়”
হাঠার স্পিড বাড়িয়ে দিলাম। এক পর্যায়ে দ্রুত দৌড়াতে লাগলাম। কিন্তু মেয়েটার ছায়া শুধু দেখা যাচ্ছে। অবশেষে দৌড়াতে দৌড়াতে এসে দেখলাম একটা ছোট কুড়েঘরের সামনে এসে পড়েছি। মেয়েটা এই ঘরেই ঢুকেছে।
দরজায় টোকা দেয়ার জন্য এগিয়ে যেতেই দেখি আরেকটা ছায়া দাড়িয়ে। বুঝতে দেরী হল না উনি আমাদের রাজি সাহেব। আমরা দুইজন হতভম্ব হয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছি এমন সময় বিকট শব্দে দরজা খুলে গেল। আমরা বিস্ফোরিত নেত্রে তাকিয়ে দেখলাম সেই বুড়ো সাধুবাবা দাড়িয়ে। সাধুবাবা মুচকি হেসে বললেন, আমার মেয়ে লীলাবতিকে দিয়ে তোমাদের একটু বাজিয়ে দেখলাম।
লীলাবতির বিয়ে আগামি সপ্তাহে। অভয়নগরের রাজকুমারের সাথে। তোমাদের দাওয়াত রইল।
পুর্নিমার চাদ পশ্চিম আকাশে হেলে পড়েছে। আমি আর রাজি সাহেব হাঠছি।
হাঠার মধ্যে কেমন যেন জড়তা চলে এসেছে। মনে হচ্ছে পুর্নিমার চাদের আলো নেশা ধরিয়ে দিয়েছে। আমাদের এখন নিজেদের আর হিমু হিমু মনে হচ্ছে না। কোন এক আশ্চর্য কারনে নিজেদের দেবদাস দেবদাস মনে হচ্ছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।