এভাবেই ভালোবাসা পুড়ে পুড়ে যায়..
মেডিসিনের আঁশটে গন্ধে কেমন গুমোট হয়ে আছে ঘরটা । জানালা বলতে যে ফাঁকা টুকু আছে তাও রঙীন কাপড়ে মোড়ানো । ঘরের ভ্যাপসা বাতাসটুকু বের হবার কোন পথই আর খোলা নেই । মিতাকে কালো রাবারের একটা ট্রলিতে শোয়ানো হয়েছে; কোমর বরাবর ঝুলছে ৮০০ ওয়াটের তীব্র আলো । সাদা অ্যাপ্রনে ঢাকা মধ্যবয়সী একজন মহিলা এসে পরনের কামিজ উঠিয়ে তলপেটে হাত রাখলেন ।
এরপর একের পর এক তীর্যকভাবে কিছু প্রশ্ন এসে রিতার বুকে ধাক্কা খেল । মহিলা ডাক্তার নাকি র্নাস ঠিক বোঝা যাচ্ছে না । কিছুক্ষন পর খালার দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেন ,"তিনমাস ”। সাদা চোখে খালা দাঁড়িয়ে থাকলো, ভাঙা ভাঙা গলায় বললো ,"এখন কি করতে হবে?”
-আমি ওষুধ দিয়ে দিচিছ,ভর্তি করিয়ে দিন । রাতে ডি.এন.সি করবো ।
মেডিকেল সায়েন্স সম্পর্কে যদিও মিতার তেমন ধারনা নেই ,তবুও কি করে বাচ্চা পেটে আসে সে গল্প একটু আধটু সে জেনেছে বান্ধবীদের কাছে। কিন্তু কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাস্তবতা তাকে এ রুপ দেখাবে সপ্নেও ভাবেনি। ছোট্ট ভীরু হৃদপিন্ড শুধু বুঝতে পারছে ;ভয়ংকর কিছু ঘটতে যাচ্ছে।
শ্যালোয়ার বুকে ধরে মিতা অপরাধির মতো মাথা নিচু করে বসে আছে । ছোটখালা এটা ওটা নিয়ে ব্যস্ত,কিছুতেই ওর মুখের দিকে তাকাচ্ছে না ।
ওদিকে এমন তেষ্টা পেয়েছে,একটু পানি চেয়ে খাবে সে সাহসো তার নেই । এরি মধ্যে খালা বিভিন্ন জায়গায় ফোন করে করে হয়রান । মিতার বাবার কোন দেখা নেই ঘটনা জানাজানির পর থেকেই ,যত অশ্রাব্য ভাষা একা বয়ে বেড়াচ্ছে মিতার মা। কিন্তু মিতার পাশে এসে বসার মতো মনের জোর তার নেই । মোবাইলের সেটে ধাক্কা খেয়ে একটা বাক্য ফিরে এলো মিতার কানে ,”গু ছড়াবে তোমাদের মেয়ে আর পরিষ্কার করবো আমি! ”
ভালোবাসা এক অদ্ভুৎ তরল পর্দাথ ,তাপ একটু বাড়লেই সহসা উড়ে যায় আকাশে ।
লেবার রুমের শক্ত বিছানায় পড়ে আছে মিতার দেহ । তীব্র আলোর নির্দয় বিচ্ছুরণ এবড়ো থেবড়ো করে দিচ্ছে সমাজের পাপের ফসল টিকে । মোটা সিরিন্জের মাঝ বরাবর বেরিয়ে আসছে পৈশাচিকতার জলোজ্যান্ত স্মাক্ষর । র্দীঘ বিশ মিনিট মিতার জরায়ূর ভিতর চলতে থাকা যন্ত্রগুলো একসময় থেমে যায় । পাপের প্রায়শচিত্তের এক ধাপ সাঙ্গ হয় বুঝি ।
ভোরের আলো একটু একটু করে আভা ছড়াতে শুরু করেছে। বহু দূর থেকে ভেসে আসা মোয়াজ্জিনের কন্ঠ ছুঁয়ে যায় মিতার শরীর ।
ইনজেকশনের মায়া আস্তে আস্তে সরে যাচ্ছে। অসহনীয় যন্ত্রনা নিয়ে মিতা চোখ মেলে । অবাক বিস্ময়ে দেখতে পায় রক্তে ভেসে যাচ্ছে পায়ের হাটু অব্দি ,প্রচন্ড পিপাসা-"পানি খাব” বলেই উঠে বসবার চেষ্টা করে ।
কিন্তু ঝিম ধরা মাথাটা নড়াতে পারেনা একবিন্দু । আয়া এসে হাত রাখে মাথায় ,"এখন না আপু ,বমি হয়ে যাবে । আমিই একটু পর দেব । ”এই প্রথম কোন একজন পরম যত্নে মিতাকে বিছানায় শুইয়ে দেয় । দুচোখের আল বেয়ে গড়াতে থাকে জলের ধারা, মিতা আয়ার হাত খামছে ধরে।
শরীরের যন্ত্রনারর সাথে মনের যন্ত্রনা এক হতে থাকে । ভেতরটা কেবলি শূণ্য হয়ে যায় ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।