জীবন বুনে স্বপ্ন বানাই মানবজমিনে অনেক চাষ চাই
আমার মাকে বাইরে যাওয়ার সময় সব সময় বোরকা পরতে দেখেছি। কখনই তিনি বোরকা ছাড়া বাইরে গেছেন এমন দৃশ্য চোখে পড়েনি।
তার বোরকাটা ছিল অদ্ভুত দেখতে। একটা বড় ঢিলাঢালা আলখাল্লার মতো ছিল মূল অংশটা। আর মাথায় দেয়ার অংশটাও ছিল হাটু পর্যন্ত।
মুখের উপর দেয়ার জন্য ছিল পাতলা ২টা পর্দা। সাধারণত মুখের উপর একটা পর্দা দিয়ে রাখতেন। কিন্তু কোন পুরুষ মানুষের সাথে কথা বলার সময় অপর পর্দাটিও নামিয়ে দিতেন।
উনার বোরকা অনেক বদলেছেন। কিন্তু সব বোরকাই ছিল একই ডিজাইনের।
প্রতিটি বোরকা অবধারিতভাবে ছিল কালো রঙের। কালো রং ছাড়া অন্য কোন রঙের বোরকা হতে পারে এই রকম চিন্তাও কোন দিন করেন নি।
আমি তখন পড়াশোনা শেষ করেছি। চাকুরিতে ঢুকেছি। একদিন মা আমার সাথে কোথায় যাবেন।
রিক্সায় উঠে মাকে বোরকার ডিজাইন সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম - বোরকা এই রকম বিশ্রি দেখতে কেন ?
এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি যা বললেন সেটা মোটামুটি এ রকম - পর্দা করা হয় এই জন্য যে যাতে করে কোন পুরুষ লোক কোন মেয়ের দিকে না তাকায়। সুন্দর পোশাক পরলে তো সেই উদ্দেশ্য ঠিক থাকল না। তাই বোরকা হতে হবে এমন যাতে করে সেটা সুন্দর না দেখায়। এই জন্য বোরকা এই রকম কালো রঙের এবং ঢিলাঢালা। যাতে করে যেই মেয়েটি বোরকা পড়েছে সে দেখতে কেমন সেটা কোনক্রমেই বোঝা না যায়।
মা আরও জানিয়েছিলেন, এই কথাগুলো তাকে ছোটকালে যেই মহিলা কোরান শরীফ শিখিয়েছিলেন, তিনি বলেছিলেন।
যাগগে, মা আমৃতু্্য বোরকা সম্পর্কে এই বিধি মেনে এসেছেন।
বর্তমান ফ্যাশনেবল বোরকা :
১০ বছর আগেও পরিস্থিতি এমন ছিল না। এখন বোরকার সেই বিশ্রী ডিজাইন নাই। হরেক রকম ডিজাইন।
পাকিস্তান, ইরানী, সৌদী - কত কত নাম। আর সেই কালো রঙ এখন নির্বাসনে। লাল, নীল, হলুদ, বেগুনী নানান রঙের বোরকা দেখা যায়। এমনকি বেশির ভাগ বোরকাই এখন ছাপা কাপড়ের। সেই সাথে কাপড়ের ধরণও বদলেছে।
কাপড় এমন পাতলা হয়েছে যে বোরকা ভিতরের পোশাকও মাঝে মাঝে চোখে পড়ে।
বোরকা তার ঢিলেঢালা আলখাল্লা স্বভাব হারিয়েছে। বোরকা এখন বডিলাইন মেপে বানানো হচ্ছে। ইউরোপীয় গাউনের মতো করে শরীরের সাথে সেটে থাকছে বোরকা।
পর্দা ও বর্তমান বোরকা :
আমি যতটুকু জানি, ইসলাম ধর্মে কোথাও বলা নাই বোরকাই পরতে হবে।
সতর ঢাকা বলতে মুখমণ্ডল, দুই হাতের কব্জির পরে এবং দুই পায়ের পাতা খোলা রেখে বাকি শরীরের পুরো অংশ ঢেকে রাখা। পোশাক হতে হবে এমন যেন সেটা পরার পর শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ স্পষ্ট না থাকে। শরীরের গড়ন যেন না বোঝা যায়।
বর্তমান বোরকা এই সব কোন নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা করে না। বরং বোরকা এখন এত আটসাট পরা হয় যে, সেটা পর্দার অন্যতম শর্ত বডিলাইন না দেখা যাওয়া সেই শর্ত মানে না।
তার থেকে অন্যান্য পোশাকেই ভালো পর্দা মেনে চলা যেত। আটসাট অন্যান্য পোশাকের মতো বোরকাও এখন একটা ফ্যাশনেবল পোশাকে পরিণত হয়েছে। তাছাড়া পাতলা কাপড় পরাও পর্দার বরখেলাপ। সেটাও বোরকা তৈরিতে ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে সহজেই বলা যায়, এই জাতীয় ফ্যাশনেবল বোরকা এখন আর পর্দার প্রতীক নয়।
যারা পর্দা করার জন্য বোরকা পরেন, তারাও কেউ জেনে বা কেউ না জেনে এসব বোরকা ব্যবহার করছেন। এতে তো পর্দা হচ্ছে না।
আসলে ব্যাপারটি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা দরকার। যদি পর্দা করতে হয় এমন পোশাক পরতে হবে, যেটা সতর ঢাকে এবং শরীরের বডিলাইন না দেখা যায়। যে কোন পোশাকেই সেটা হতে পারে ।
বোরকায় তো পর্দা হওয়ারই কথা। কিন্তু না বুঝে হাল ফ্যাশন করতে গিয়ে বোরকা পর্দার বিধান মানছে না। ওর চেয়ে বোরকা না পরাই ভালো।
পর্দা করলে পর্দার শর্তগুলো মেনেই করা উচিত। না হলে পর্দা না করাই ভালো।
অনর্থক পর্দার নামে ফ্যাশন করার কোন মানে হয় না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।