পথের সন্ধানে পথে নেমেছি.........
কালো মেঘপুঞ্জ বৃষ্টি হয়ে তপ্ত বসুন্ধরায় ঝরে পড়ুক আর নাই পড়ুক, আজ আষাঢ়, পহেলা আষাঢ়। আষাঢ় মাস তথা বর্ষা ঋতু সাহিত্যের অন্যতম শক্তিমান উপাদান। বর্ষা উপকারী না-কি অপকারী এ নিয়ে অমীমাংসিত বিতর্ক অব্যাহত রয়েছে। এও সত্য যে, বর্ষা ‘কারো জন্য পৌষমাস, কারো জন্য সর্বনাশ'। আর আমরা যদি আষাঢ়কে পৌষমাসের বিবেচনায় নিয়ে আসি, তাহলে প্রথমেই আসে 'কদম ফুল' এর কথা।
এই ফুলটার বাংলায় নাম - কদম, নীপ।
সচরাচর আমরা এই ফুলটাকেই কদম নামে চিনি
বৈজ্ঞানিক নামঃ Neolamarckia cadamba, Anthocephalus cadamba
পরিবার (গোত্র): Rubiaceae (Coffee family)
অন্যান্য প্রজাতিঃ Anthocephalus cadamba, Anthocephalus indicus
অন্যান্য ভাষায় এর নাম: Kadam, kadamba कदम्ब (Hindi), வெள்ளை கதம்பு Vellaikkatampu (Tamil), Katampu (Malayalam), Kaduavalatige (Kannada), Rudrakskamba (Telugu)
বর্ষাকাল কদমফুল ছাড়া কি ভাবা যায়? কদম ফুল সাধারনত আষাঢ়েই ফুটে। "প্রাণ সখিরে ঐ শোন কদম্ব তলে বংশী বাজায় কে?....."
হিন্দু মিথোলজী অনুযায়ী কদম শ্রীকৃষ্ণের প্রিয় গাছ, এজন্যই হয়ত এই গানটা রচিত..... আর রবীন্দ্রনাথের বর্ষাপ্রীতি প্রায় সবারই জানা। বর্ষা, আষাঢ়, বাদল, কদম সব ভালবেসেই কবি গেয়ে উঠেছেন......
বাদল-দিনের প্রথম কদম ফুল করেছ দান,
আমি দিতে এসেছি শ্রাবণের গান॥
মেঘের ছায়ায় অন্ধকারে রেখেছি ঢেকে তারে
এই-যে আমার সুরের ক্ষেতের প্রথম সোনার ধান॥
আজ এনে দিলে, হয়তো দিবে না কাল--
রিক্ত হবে যে তোমার ফুলের ডাল।
এ গান আমার শ্রাবণে শ্রাবণে তব বিস্মৃতিস্রোতের প্লাবনে
ফিরিয়া ফিরিয়া আসিবে তরণী বহি তব সম্মান॥
হলুদ-কমলা রঙের গোল আকৃতির অপরূপ মনকারা এই ফুলে উপরিভাগে থাকে সাদা সাদা চুলের মত অংশ।
ছোট বেলায় কত খেলা করেছি এই ফুল নিয়ে। সাদা চুলের মত অংশটা গালে আলতো করে পরশ ভুলাতে কি যে ভাল লাগত.......... কখনও কখনও পরম মমতায় এর উপরিভাগের সাদা সাদা চুলের মত অংশটি তুলে ফেলে একে টাক করতাম, এরপর আবার এর পরের স্তরের হলুদ ফুলগুলোও তুলে একেবারে এর ভিতরকার সবুজাভ বল আকৃতির ফলগুলো দিয়ে খেলতাম। আমার মনে হয় গ্রামে যারা থেকেছেন বা পড়াশোনা করেছেন তারা প্রায় সবাই এটা করেছেন।
পরিপূর্ন ভাবে ফুল ফুটার পর এর উপরিভাগের সাদা সাদা চুলের মত এবং হলুদ অংশগুলো ঝরে গিয়ে যে অংশটা থেকে যায় ওটাই ফল। কদম পাকলে হলুদ রঙ ধারণ করে।
প্রায় ৮০০০ এর বেশী বীজ একটা কদম ফলে থাকতে পারে। কদমের মাংসল পরিপক্ক ফল বাদুড়ের খুবই প্রিয়। রাতের বেলা এই ফল খাওয়ার জন্য বাদুড়েরা দুরদুরান্ত থেকে উড়ে আসে।
৪০-৫০ মিটার উচু হয়ে থাকে এই কাষ্ঠল বৃক্ষ। এর কান্ড সাধারনত সোজা হয়ে থাকে এবং ডালপালা গুলো এই কান্ড থেকে চারদিকে ছড়ানো হয়।
বানিজ্যিক ভাবে কদমের কাঠ দেশলাই কাঠি তৈরীতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এছাড়া আলসার, পরিপাকতন্ত্রের বিভিন্ন রোগ, ডাইরিয়া, জ্বর , বমি ইত্যাদি নিরাময়ে কদমের ব্যবহার রয়েছে।
বর্ষা, আষাঢ়, বাদল আর কদম কে ভালবাসার নিদর্শন কিসাবে তৈরী করা সুদর্শন কদম ফুয়ারা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।