ইইসমাইল আবহমান গ্রাম বাংলার প্রেক্ষাপটে ‘গিলাফ’ একটি পবিত্র ও সম্মানিত শব্দ। সেই সাথে বাঙালি মুসলমানের ঘরে ঘরে আরো একটি বহুল উচ্চারিত ও অতীব সম্মানিত শব্দ হলো ‘রেহাল’। কারণ বাংলার মুসলমান তাদের পবিত্র ঈমান উনার অনুভূতি হিসেবে ঘরের সর্বোচ্চ তাকে অথবা আলমারির সবচেয়ে উপরের তাকে রেহালের উপরে গিলাফ দ্বারা বেঁধে রাখে তাদের কাছে সবচেয়ে সম্মানিত পবিত্র কুরআন শরীফ। (সুবহানাল্লাহ)
বাঙালি মুসলমান কখনও পবিত্র কুরআন শরীফ বিনা ওযুতে স্পর্শ করে না। পবিত্র কুরআন শরীফ ধরে আগে চুমু খায়।
পড়ার পর আবারো চুমু খেয়ে গিলাফ পরিয়ে রেহালে রেখে দেয়। পবিত্র কুরআন শরীফ উনার প্রতি এই হচ্ছে আবহমান বাংলার মানুষের চিরন্তন অনুভূতি। নিখাঁদ নিগূঢ় ধর্মীয় অনুভূতি।
মহান আল্লাহ পাক উনার কালাম পবিত্র কুরআন শরীফ উনার প্রতি শুধু বাংলার মুসলমানেরই এই সর্বোচ্চ ধর্মীয় অনুভূতি নয় বরং গোটা বিশ্বের সব মুসলমানদেরও একই অনুভূতি। (সুবহানাল্লাহ) যে কারণে কিছুদিন পূর্বে আফগানিস্তানে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে পবিত্র কুরআন শরীফ পোড়ানোর ঘটনায় পুরো দেশ বিক্ষোভে উত্তাল হয়।
১২ জন আফগান শহীদ হন। ২ জন মার্কিন সেনাকে হত্যা করা হয়। নেদারল্যান্ডের রাজধানী হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে (আইসিসি) বারাক ওবামার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়। খোদ ওবামা ২৩শে ফেব্রুয়ারি ২০১২ তে আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের কাছে লেখা এক চিঠিতে ক্ষমা চায়। সারা বিশ্বের মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতির প্রেক্ষিতে ক্ষমা চেতে বাধ্য হয়।
অথচ এই স্পর্শকাতর ধর্মীয় অনুভূতিতে চরম আঘাত দিয়েছে কথিত হেফাজতে ইসলাম নামধারী হেক্বারতে ইসলাম (ইসলাম অবমাননাকারী দল)। তারা গত ৫ই মে বায়তুল মোকাররমে পনের হাজার পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। নাঊযুবিল্লাহ!
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশ করার পরিণাম :
“যখন তাদের কাছে আমার সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করা হয়, তখন আপনি কাফিরদের চোখে মুখে অসন্তোষের লক্ষণ দেখতে পাবেন। যারা তাদের কাছে আমার আয়াতসমূহ পাঠ করেন, তারা (কাফিররা) উনাদের প্রতি মারমুখো হয়ে উঠে। বলুন, আমি কি তোমাদেরকে তদপেক্ষা মন্দ কিছুর সংবাদ দেব? তা জাহান্নাম; মহান আল্লাহ পাক তিনি কাফিরদেরকে এর ওয়াদা দিয়েছেন।
এটা কতই না নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তনস্থল। ” (পবিত্র সূরা হাজ্জ্ব : আয়াত শরীফ ৭২)
লক্ষণীয় : পবিত্র কুরআন শরীফ উনার আয়াত শরীফ শুনে অভক্তি প্রকাশ করলেই তাদের কাফির বলা হয়েছে। তাহলে যে হেফাজতীরা পনের হাজার কুরআন শরীফ পুড়িয়েছে তারা যে কত জঘন্য মুরতাদ তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।
“আর যারা আমার আয়াতসমূহকে ব্যর্থ করার অপপ্রয়াসে লিপ্ত হয়, তাদেরকে আযাবের মধ্যে উপস্থিত করা হবে। ” (পবিত্র সূরা সাবা : আয়াত শরীফ ৩৮)
লক্ষণীয় : যারা আয়াত শরীফকে ব্যঙ্গ করার অপপ্রয়াসে লিপ্ত হয়, তারাই যদি জাহান্নামের আযাবে গ্রেফতার হয়, জাহান্নামে যায়, তাহলে যে হেফাজতীরা পনের হাজার কুরআন শরীফ পুড়িয়েছে তারা কত বড় জাহান্নামে যাবে?
মানুষকে হত্যা করা কুফরী।
কিন্তু হেফাজতীরা শুধু নিরীহ মানুষ, পথচারী, পুলিশ, র্যা ব, বিজিবি ইত্যাদি হত্যা করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি বরং এটাকে তারা জায়িয বলে ও জিহাদ স্বীকৃতি দিয়ে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে প্রকাশ্য মুরতাদে পরিণত হয়েছে। নাঊযুবিল্লাহ!
হেফাজতে ইসলামের তথা রহক্বরতে ইসলামের তা-বে ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকারও ঊর্ধ্বে। এর মধ্যে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ক্ষতির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি-২০০ কোটি টাকা। হেফাজতের সহিংসতা থেকে বাদ যায়নি প্রকৃতিও। পল্টন, গুলিস্তান, বিজয়নগরসহ আশপাশের এলাকায় অন্তত শতাধিক গাছ কাটাসহ পুড়িয়ে দিয়েছে তারা।
গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে সড়ক বিভাজকগুলো।
হেফাজতীরা মূলত এদেশের স্বাধীনতা বিপন্ন করার জন্য কাজ করেছে। অবর্ণনীয় সহিংসতা ও ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে।
হেফাজতীরা মূলত হেফাজতে জামাত। জামাতে মওদুদী, হুজি, হিযবুত তাহরীর, তালেবান, জেএমবি ইত্যাদি সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোরই সমাবেশ।
তারা একে অন্যের দোসর ও সহযোগী শক্তি তথা স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি।
পবিত্র দ্বীন ইসলামের দৃষ্টিতে ওরা হেফাজতে ইসলাম নয় বরং হেক্বারতে ইসলাম বা ইসলাম অবমাননাকারী দল। পবিত্র দ্বীন ইসলামের দৃষ্টিতে ওরা প্রকাশ্য মুরতাদ।
সাধারণ মুসলমানদের স্মরণ রাখতে হবে- কথিত হেফাজতী ইমামের পেছনে নামায পড়লে নামায আদায় হবেনা। তাই এদেরকে ইমামতি থেকে বহিষ্কার করতে হবে এবং ওদের মাদরাসায় যাকাত, ফিতরা দিলে আদায় হবে না এবং কুরবানীর চামড়া দিলে কুরবানীও আদায় হবেনা।
অতএব, কথিত হেফাজতীদের মুরতাদ বলে গণ্য করে সর্বত্র প্রত্যাখ্যান করতে হবে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।