গার্মেন্ট শিল্পে পরিকল্পিতভাবে শ্রমিক অসন্তোষ ও বিদেশি শক্তির এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির অভিযোগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি এনজিওর নিবন্ধন বাতিল করেছে সরকার। গার্মেন্ট শিল্পে অস্থিতিশীলতার জন্য দীর্ঘদিন ধরে সরকার, বিরোধী দল ও ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বিদেশি শক্তির হাত রয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। তবে এই প্রথম কোনো বিদেশি এনজিওর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগে নিবন্ধন বাতিল ও সংস্থাটির সব কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে তাদের সম্পদ জব্দ করা হচ্ছে। এনজিও বিষয়ক ব্যুরো গত ৩ জুন বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটি (বিসিডবি্লউএস) নামে এ সংগঠনটির নিবন্ধন বাতিল করে। নিবন্ধন বাতিলের পর গত মঙ্গলবার এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর পরিচালক (নিবন্ধন) এএম সাইফুল হাসান সংস্থাটির সব সম্পদ ও টাকা জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
এক চিঠিতে ঢাকা জেলা প্রশাসককে সংস্থার নগদ বৈদেশিক অনুদানের অর্থ ও বিদেশি অর্থে তৈরি
স্থাবর ও অস্থাবর সব সম্পত্তি সরকারের দখলে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এছাড়া মার্কেন্টাইল ব্যাংকের মতিঝিলের প্রধান শাখার ম্যানেজারকে বিসিডবি্লউএসের বৈদেশিক অনুদান গ্রহণের হিসাবের লেনদেন বন্ধ রেখে ওই হিসাবে কী পরিমাণ টাকা লেনদেন হয়েছে তার বিবরণী এনজিও বিষয়ক ব্যুরোতে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে গার্মেন্ট শিল্প অধ্যুষিত আশুলিয়া, সাভার, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের বেশ কয়েকটি ফ্যাক্টরিতে বিশৃঙ্খলা ও শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টির ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততার অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জমা দেওয়া গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে বলা হয়, বিসিডবি্লউএস গার্মেন্ট সেক্টরে অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা ছাড়াও পোশাক শিল্প সম্পর্কে নেতিবাচক প্রতিবেদন তাদের ওয়েবসাইট ও ফেসবুকে প্রকাশ এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন শ্রম সংগঠনের কাছে তথ্য পাচার করেছে_ এমন প্রমাণ তাদের হাতে রয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে আরও বলা হয় সংস্থাটির নেতিবাচক তৎপরতার কারণে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হওয়া সত্ত্বেও আমেরিকা ও ইউরোপে পূর্ণ জিএসপি সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
জানা গেছে, বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটি (বিসিডবি্লউএস) ২০০৪ সালের ১৭ এপ্রিল এনজিও বিষয়ক ব্যুরো থেকে নিবন্ধন নেয়। সংগঠনটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক শ্রম সংগঠন আমেরিকান ফেডারেশন অব লেবার অ্যান্ড কংগ্রেস অব ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন (এএফএলসিআইও) বাংলাদেশ শাখা সংগঠন আমেরিকান সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল লেবার সলিডারিটির সহযোগী হিসেবে কার্যক্রম শুরু করে। তারা কর্মজীবী মা'দের শিশুদের পরিচর্যার জন্য ঢাকা জেলার বাড্ডা ইউনিয়ন ও খিলগাঁও থানার রামপুরা ইউনিয়নে কাজ করার অনুমতি নেয়। প্রকল্পটির মেয়াদ ২০০৬ সালে শেষ হয়। কিন্তু এনজিও ব্যুরোর অনুমতি না নিয়েই তারা সাভারের গাজিরচট ও আশুলিয়া এলাকায় শাখা কার্যালয় স্থাপন করে শ্রমিকদের নিয়ে কাজ শুরু করে।
শুরু থেকেই বিসিডবি্লউএস শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টিতে সরাসরি ভূমিকা রেখেছে।
বিসিডবি্লউএসের সাধারণ সম্পাদক বাবুল আক্তার সমকালকে বলেন, আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগ না দিয়েই এনজিও ব্যুরো তাদের নিবন্ধন বাতিল করেছে। বেআইনিভাবে নিবন্ধন বাতিল করায় তারা আইনি পদক্ষেপ নেবেন। বিদেশি অর্থায়নে এনজিও কার্যক্রম পরিচালনার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, সরকারও বিদেশি সাহায্য নিয়ে থাকে। এতে দোষের কিছু নেই বলে তিনি মনে করেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।