আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হুমায়ুন আহমদ, মধ্যাহ্ন এবং দেশভাগ

ওলি
হুমায়ুন আহমেদের লেখার থিম কি ? হুমায়ুন আহমেদের লেখায় আনেক বিষয় ঘুরেফিরে আসে । জোস্না, আতিপ্রাকৃত বিষয়াবলী,প্রেম, বিজ্ঞান, কুসংস্কার, যুক্তি,পরকিয়া, বহুগামিতা তার লেথায় বিভিন্নভাবে এসেছে । বয়সকালে হুমায়ুন আহমেদ আরেক শাদি করেছেন । পাত্রি তার মেয়ের বান্ধবী । এ ঘটনা তার আনেক ভক্তকে হতাশ করেছে ।

কারণ, হুমায়ুন আহমেদ সমাজের যেসব আসংগতির কথা তার লেখায় তুলে ধরার প্রয়াস পেয়েছেন, ভক্তরা হয়ত সেই অসংগতি তার মধ্যে আশা করেনি । কবি ইয়েটস মানুষের অনেক কর্মের স্বিবরোধীতা সম্পর্কে লিখেছেন : Those that I fight I do not hate Those that I guard I do not love; তবে, লেখকরে কাজ হচ্ছে লেখা । তার লেখনীর সমস্ত আদর্শকে যে তার মধ্যে ধারণ করতে হবে এমন দাশখত তিনি দেননি । অনেক ব্লগার হয়ত ভাবছেন আমি হুমায়ুন আহমেদের বিয়ে-শাদির কথা টেনে আনছি কেন, মতলবটা কি ? কারণ আছে বৈকি । লেখক বইটা উংসর্গ করেছেন "মমতাময়ী শাওনকে" ।

পাঠকরা আবার বলবেন না-তো এ হুমায়ুনের বুড়ো বয়সের ভিমরতি । হুমায়ুন শুরূ করেছেন কবিগুরূকে দিয়ে । বইয়ের প্রচ্ছদে রয়েছে রবিঠাকুরের চার লাইন : তুমি জ্যোতির জ্যোতি, আমি অন্ধ আধারে তুমি মুক্ত মহীয়ান, আমি মগ্ন পাথারে ... তংকালিন রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে চমংকার বর্ণনা আছে বইটিতে বেশ কয়েক জায়গায় । প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়কার বর্ণনা এসেছে এভাবে "ব্রিটিশ সিংহ কিছুটা নরম হয়েছে এটা বোঝা যাচ্ছে । প্রখম মহাযুদ্ধ শুরূ হয়েছে ।

ব্রিটিশ সরকারের ভারতবাসীর সমর্থন দরকার । তাদের ভাবভংগি দেথে মনে হচ্ছে, তারা যুদ্ধে জিতলে কিছুটা ছাড় দেবে " । দ্বিতীয় যুদ্দের খণ্ডচিত্র এসেছে বিভিন্ন বর্ণনায় । ফিল্ড মার্শাল রোমেলের সাথে যুদ্ধে জিতে মন্টোগোমারীর পাগলা পানির গ্লাস ঠোকাঠুকর বর্ণনা আছে বইতে । কোলকাতার কিছু মুসলমানের আবেগজনিত শ্লোগান এসেছে এই বইয়ে : কানমে বিড়ি মু মে পান লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান ।

পাকিস্তানের জন্য সাধারণ মুসলমানদের আবেগ প্রকাশ পেয়েছে উপরের শ্লোগানে । এজন্য একটি হাইপোথিসিস আছে, "দ্বি-জাতি তত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তানের জন্মের সুত্র ধরেই বাংলাদেশের জন্ম "। অবশ্য, ভারতের পেটের ভেতর থেকে কেউ বেরোতে পারেনি । বরং সিকিমসহ আনেক ছোট রাজ্য ভারতের পেটের ভিতর ঢুকে গেছে । বইতে সোরোওয়ার্দি সম্পর্কে ধনু শেখের মুখ দিয়ে বলা হয়েছে , তিনি আমাদের কাটাকুটি নেতা ।

হুমায়ুন কি সোরোওয়ার্দির সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দর্শন সম্পর্কে ইজ্ঞিত দিতে চেয়েছেন ? হোসেন শহীদ বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতক দিক্ষাগুরূ । হুমায়ুন আহমেদের সাহসিকতা এক্ষেত্রে প্রশংসনীয় । মধ্যাহ্নের প্রধান চরিত্রগুলো হচ্ছে নিম্নবর্ণিত মানুষগুলো: অম্বিকা ভট্রাচার্য অম্বিকা হচ্ছেন লোভী ব্রাক্ষ্মণ যিনি সুবিধা অনুযায়ী বিধান দেন । জাত-পাতের ভেদাভেদ মেনে চলেন তিনি অস্ভবরূপে । হরিচরণ তার কাছে স্বপ্নের ব্যাখ্যা জানতে চাইলে তার জবাব, "উচু বংশের কেউ যদি দেবদেবী কোলে নেয়া দেখে, তাহলে তার জন্য উত্তম ।

সৌভাগ্য এবং রাজানুগ্রহ । নিম্নবংশীয় কেউ দেখলে তার জ্ন্য দূর্ভাগ্য । সে হবে অপমানিত । রাজরোষের শিকার । তার ভাগ্যে অর্থনাশের যোগ ও আছে ।

" তবে, হরিচরণের ক্ষেত্রে তার কথা ফলেনি । হরিচরণ সাময়িক দূর্ভোগে পড়লেও আখেরে তার ভাল হয় । পক্ষান্তরে, অম্বিকার জীবনই কাটে রাজানুগ্রহ তালাশ করে । জুলেখা জুলেখাকে দেখে ছদ্মবেশী বিপ্লবী শশী মাস্টর কবিতা লেখন: এক জোড়া কালো আখি এত মূল্য তারি... অথচ ভাগ্যের ফেরে এই জুলেখার স্থান হয় নিষিদ্ধ পল্লীতে । বিশ্বের অন্য প্রান্তে তারই সমবয়সী মাদাম কুরি সেসময় নোবেল জেতেন ।

হরিচরণ হরিচরণ হচ্ছেন উপন্যাসের আদর্শ চরিত্র । বিপত্নিক এই লোকটি জাত-পাতের উর্ধে উঠে মানুষের সেবা করেন । এজন্য হিন্দুরা তাকে সমাজচ্যুত করে । তিনি মারা গেলে ধনু শেখের চক্রান্তে তাকে দাহ না করে কবর দেওয়া হয় কারণ শেখ দাবি করে মরার পূর্বে হরিচরণ ইসলাম গ্রহন করেন । জহির জহির সুলেমান মিস্ত্রির পোলা ।

ছোটকালে দিঘিতে ডুবে সে মরতে বসেছিল । হরিচরন পানিতে ঝাঁপিতে পড়ে তাকে উদ্ধার করেন । শশাংক পাল শশাংক পালের পরিণতি হয় বড় করূণ । যে হরিচরণের সাথে তিনি টাকা নিয়ে বিট্রে করেন, সেই হরিচরণই পরবর্তীতে তার জমিদারি কেনেন । ভোগী জমিদারের পিউর সংস্করণ হচ্ছেন শশাংক পাল ।

মাওলানা ইদরিস ইদরিস হচ্ছেন সাধাসিধে ভান মানুষ । কোরানের হাফেজ হতে গিয়ে তিনি কয়েকবার ফেল মারেন । এক সময় তার মধ্যে পাগলামির লক্ষণ দেখা দেয় । ধনু শেখ ধনু শেখের চরিত্র সম্পর্কে এক কথায় বলতে হলে তারই একটি উক্তি যথেষ্ট । যখন তাকে লঞ্চের হিন্দু নামকরণ সম্পর্কে নিবারণ জিজ্ঞেস করেন, তখন সে জবাবে বলে, "বাতাস বুইজ্যা পাল তুলছ্বি ।

হিন্দু যাত্রি বেশি । সেই কারণে হিন্দু নাম । " লাবুস লাবুস হচ্ছে জুলেখার ছেলে । করিম মাওলানা করিম ইদরিসের জায়গায় ইমাম নিযুত্ত হন । শেষের দিকে তিনি মজনুন হয়ে যান ।

শরিফা শরিফ প্রথমে করিমের স্ত্রী ছিল, পরে করিম তাকে তালাক দেয় এবং ধনু শেখ তাকে বিবাহ করে । শরিফা হচ্ছে আতরের নয়া মা, আতর হচ্ছে ধনু শেখের মেয়ে । আতর শরিফাকে তার পিতার হাত থেকে মুত্ত করতে তাকে সেতাবনগরে শরিফার এক ফুফুর কাছে পাঠানোর বন্দোবস্ত করে । কিন্তু, সে পরিকল্পনা ভেস্তে যায় এবং শরিফার স্থান হয় রঙিলা বাড়িতে । শ্রীনাথ শ্রীনাথ বান্ধবপুরে সাম্প্রদায়িক পদাঙ্গা প্রতিরোধ কমিটি করে ।

এজন্য ধনু শেখের নির্দেশে তার লোকজন শ্রীনাথকে মেরে ফেলে । মণিশংকর মনিশংকার শ্রীনাথের অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করে । নমশুদ্রের এক দলকে নিয়ে সে ধনু শেখের দলকে ঠেকিয়ে দিয়ে দাঙ্গা প্রতিরোধ করে । চরিত্র চিত্রণে দক্ষতার পাশাপাশি হৃমায়ুন গণিতের বিভিন্ন বিষয়াবলী নিয়ে এসেছেন উপন্যাসের বিভিন্ন পর্বে । ফিবেনাচ্চি রাশিমালার (১ ১ ২ ৩ ৫ ৮) নিয়মে শিবশংকর যেভাবে হরিচরণের কবর ঘিরে চক্কর দেয় তা ব্যাখ্যা করেছেন ।

পরিশেষে, হুমায়ুন ঐতিহাসিক উপন্যাস লেখায়ও তার দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন । কতিপয় জায়গা ছাড়া তার ফিচকেলি ছিল সমগ্র উপন্যাসে অনুপস্থিত । উপন্যাসটি পড়লে আপনি হুমায়ুনকে স্যালুট দিবেন নিশ্চয় । পূণশ্চ: হুমায়ুন আহমদ শাওনকে বিয়ে করার পর যাযাদি'তে "হুমায়ুননামা" প্রকাশিত হয় । পাঠকদের সুবিধার্থে তা লেখার সাথে স্ক্যান করে সংযোজিত হল ।


 


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।