ধুমপান বর্তমান বিশ্বে সর্বাধিক প্রচলিত এক ধরনের মারান্তক নেশা। বিশেষজ্ঞগণ ধুমপানের নেশাকে বিষপানের তূল্যজ্ঞান করেছেন। ধুমপান থেকে মানুষকে ফিরিযে আনার জন্য নানা প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ধুমপান বিরোধী আইন ও পাশ হয়েছে। যারা ধুমপান করে তারা ধুমপানের এসব ক্ষয়-ক্ষতি জেনে শুনেই পান করে।
আমাদের দেশে অফিস আদালত,যানবাহন ইত্যাদিতে "ধুমপানে বিষপান","ধুমপান থেকে বিরত থাকুন","ধুমপান না করার জন্য ধন্যবাদ" এসব স্লোগান খুব স্পষ্ট করেই লেখা থাকে। কিন্তু এসব স্লোগানের প্রতি মানুষের আস্হা নেই বললেই চলে। কারণ ধুমপান বিরোধী আইনের তেমন প্রয়োগ নেই। আইন অনুযায়ী পাবলিক প্লেসে ধুমপান কারীদের জরিমানা করার কথা কিন্তু কে করবে জরিমানা,ধুমপান কারীদের ধুমপান থেকে বিরত থাকার কথা বললেই তর্ক,বিতর্ক শুরু হয়ে যায়। আর তাই আইনের প্রতি তোয়াক্কা না করেই অনেকে প্রকাশ্যে ধুমপান করছে।
ধুমপায়ীরা ধুমপানের অভ্যাস গড়ে তোলে বিভিন্ন কারণে। যেমন বিড়ি,সিগারেট সস্তা ও সহজলভ্য হওয়ার ফলে সাধারণ শ্রেনীর মানুষেরা সহজেই এগুলো সংগ্রহ করার সুযোগ পায়। ধুমপানের উপকরণ তামাক পাতা দিয়ে তৈরী হয়। এই তামাকের মধ্যে নিকোটিন নামক এক ধরণের বিষাক্ত পদার্থ থাকে। আর সেই নিকোটিন নামক বিষ মানুষ প্রতি টানে গ্রহণ করছে।
এ বিষ মানব দেহে অসংখ্য রোগের জন্ম দিচ্ছে। বিশ্বের চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা একমত হয়েছেন যে,ধুমপান স্বাস্ব্যের জন্য ক্ষতিকর। ধুমপানের কারণে যক্ষা,ক্যান্সার,শ্বাস কষ্ট,হাপানী,ফুসফুসের প্রদাহ,দাতের মাড়ির রোগ,ক্ষুদা মন্দা,উচ্চ রক্তচাপ,মস্তিকে রক্ত ক্ষরণ ইত্যাদি হয়ে থাকে। আবার এসব রোগে আক্রান্ত শিশুরাও ধুমপায়ীদের সন্তান। ধুমপানের ফলে ধুমপায়ীদের স্বাস্থ্য ও শক্তি নষ্ট হয়,নানা প্রকার মারান্তক রোগে তারা আক্রান্ত হয়।
ধুমপান থেকে জনসাধারণকে উদ্বারকল্পে রেডিও,টেলিভিশন,সেমিনার ও পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে ধুমপানের অপকারিতা সম্পর্কে প্রবন্ধ,নিবন্ধ,বিভিন্ন আলোচনা ও প্রামাণ্য অনুষ্টান প্রচার করা হচ্ছে। এমনকি আইন প্রয়োগ করে বিড়ি,সিগারেট ইত্যাদির প্যাকেটের গায়ে "ধুমপান স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর","ধুমপান হৃদরোগের প্রধান কারণ","ধুমপানে মৃত্যু ঘটায়" এসব সতর্ক বাণী মুদ্রীত করে লেখা রয়েছে। গত ২০০৫ সালের ১৩ই মার্চ জাতীয় সংসদে ধুমপান ও তামাকজাত দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন পাস হয়। এ আইনে পাবলিক প্লেসে ধুমপান করলে ৫০ কটাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়। কিন্তু কে করবে জরিমানা? মাঝে মধ্যে পত্রিকায় দেখা যায় প্রকাশ্যে ধুমপানের দায়ে দু,একজনকে জরিমানা করা হচ্ছে।
এ দেশে আইনের কোন অভাব নেই। বিভিন্ন উপলক্ষে বিভিন্ন আইন আছে। ধুমপান বিরোধী আইন থাকলে ও এ আইনের প্রয়োগ নেই বললেই চলে। আর তাই প্রকাশ্যে চলছে ধুমপান। এমন কি ইদানিং বিভিন্ন অফিস পাড়ার কর্মকর্তা,কর্মচারী যারা ধুমপান থেকে বিরত থাকার কথা তারা ও প্রকাশ্যে করছে ধুমপান।
চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে,২০ টি সিগারেটের মধ্যে যে,পরিমাণ নিকোটিন থাকে তা একসাথে কোন মানুষের শরীরে ইনজেকট করা হলে সে ব্যাক্তির মৃত্যু অবধারিত। ধুমপান প্রতিরোধ করতে হলে আমাদের দেশের ধুমপান বিরোধী সংগঠন গুলোর ধুমপান বিরোধী প্রচারনা আরো জোরদার করতে হবে। সমাজে ধুমপানের বিরুদ্বে সচেতন প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তোলতে হবে এবং প্রথমত জনগনের পাশাপাশি সরকারকে এ ব্যাপারে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সরকারী ভাবে মনিটরিং ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তবে একজন ব্যাক্তি ধুমপান প্রতিরোধ করতে তার স্বদিচ্ছাই যথেষ্ট।
কারণ ইচ্ছা থাকিলে উপায় হয়। পরিশেষে একটি কথা বলতে চাই- আসুন সুস্থ,সুন্দর,সমাজ গঠনে ধুমপানের মত মারান্তক নেশাকে পরিত্যাগ করে "ধুমপান মুক্ত দেশ গড়ি"," বাকী জীবনটা সুস্থ দেহে আনন্দে চলি"। এটাই প্রত্যাশা।
লেখক: সাংবাদিক ও শিক্ষার্থী,সদস্য: কানাইঘাট প্রেস ক্লাব
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।