আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছিন্ন মস্তক নিয়ে চাঁদাবাজি: ৩ চাঁদাবাজ গ্রেফতার


চাঁদাবাজি করছিল ওরা তিনজন। ইনসেটে বস্তাবন্দি লাশের ওপর ছিন্ন মস্তক সমকালসমকাল প্রতিবেদক পৈশাচিক! ভয়ঙ্কর। রক্তমাখা ছিন্ন মস্তক নিয়ে রাজধানীর একটি রেস্তোরাঁয় হাজির ঘাতকরা। হলিউডের কোনো হরর কিংবা বোম্বের থ্রিলার ছবির দৃশ্য নয়। খোদ রাজধানী ঢাকায় চাঁদাবাজি করতে যাওয়ার নির্মম বাস্তবচিত্র এটা।

রেস্তোরাঁ মালিক জাহাঙ্গীর আলমের কাছে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে তারা। চাঁদা না দিলে মস্তকটি রেখে তাকে হত্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেওয়া হয়। কিন্তু চাঁদা আদায়ের আগেই পুলিশের হাতে ধরা পড়ে ঘাতক দলের তিন সদস্য। সোমবার প্রকাশ্যে গা শিউরে ওঠা এ ঘটনা ঘটেছে রাজধানীর পুরান ঢাকায়। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার হওয়া ঘাতক দলের সদস্য রোমান, রুবেল (নিহতের নামও রুবেল) ও রনি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।

তারা বলেছে, একটি মোবাইল ফোন নিয়ে দ্বন্দ্বের পরই রুবেলকে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডের পর মস্তক নিয়ে ভয় দেখিয়ে জাহাঙ্গীর আলমের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে তারা। পুলিশ জানিয়েছে, রোববার রাতে পুরান ঢাকার সূত্রাপুর এলাকার জনসন রোডের শাহ কামাল হোটেলে রুবেল (২৫) নামের এক যুবককে জবাই করা হয়। জবাইয়ের পর নৃশংসভাবে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে মস্তক। কামাল হোটেলের ভেতরেই মাটি খুঁড়ে মস্তকহীন লাশ চাপা দেওয়ার প্রস্তুতি নেয় ঘাতকরা।

এক পর্যায়ে তারা মস্তক দেখিয়ে চাঁদাবাজির দুই লাখ টাকা পরিকল্পনা করে তারা। পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘাতক দলের তিন সদস্য রক্তমাখা মস্তকটি একটি ব্যাগে ভরে গতকাল সকাল ১০টার দিকে হাজির হয় ৫৩ জনসন রোডের মীম রেস্তোরাঁয়। ঘাতক রুবেল মস্তকটি দেখিয়ে রেস্তোরাঁ মালিকের কাছে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দিলে মস্তকটি সেখানে রেখে পুলিশে খবর দিয়ে তাকে হত্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে রোমান মস্তকের ব্যাগটি রেস্তোরাঁয় দোতলায় কর্মচারীদের থাকার ঘরে রেখে আসে।

এর মধ্যেই খবর পেয়ে রেস্তোরাঁয় পেঁৗছে তিন ঘাতককে গ্রেফতার করে পুলিশ। দুপুরে কামাল হোটেল থেকে রুবেলের মৃতদেহ, জামা-কাপড়, চাপাতি, কোদাল উদ্ধার করে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের ঘটনা সম্পর্কে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার তওফিক মাহবুব চৌধুরী বলেন, নিহত রুবেল ও ঘাতকরা পূর্বপরিচিত। রুবেলের ব্যক্তিগত অতীত রেকর্ড ভালো নয়। সে মাদকাসক্ত ও স্থানীয় ছিনতাইকারী চক্রের সঙ্গে জড়িত ছিল।

এ ঘটনায় হত্যা ও চাঁদাবাজি আইনে দুটি মামলা দায়ের করা হবে বলে জানান তিনি। ঘাতক দলের আরেক সদস্য পলাতক রকিকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। ঘাতক রোমান পুরান ঢাকার বিশু হত্যা মামলা আসামি। দীর্ঘদিন হাজত বাসের পর সে সম্প্রতি জামিনে বের হয়। হত্যাকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে পুলিশ জানতে পেরেছে, ৭/৮ দিন আগে মীম রেস্তোরাঁর কর্মচারী কবিরের মোবাইল ফোনটি কৌশলে হাতিয়ে নেয় রুবেল।

অনেক অনুরোধের পরও রুবেল মোবাইলটি কবিরকে ফেরত দেয়নি। মোবাইল সেটটি উদ্ধার করতে রুবেলের বন্ধু রোমান ও রুবেলের শরণাপন্ন হয় কবির। এরজন্য তারা কবিরের কাছে এক বোতল মদ কেনার টাকা নেয়। এরপর রুবেলকে মোবাইলটি ফেরত দিতে বলে। রুবেল রাজি না হওয়ায় তাকে হত্যা করা হয়।

ঘাতক রুবেল ও রোমান এক সময় মীম রেস্তোরাঁয় কবিরের সহকর্মী ছিল। স্বভাব ভালো না হওয়ায় এক সময় মালিক তাদের চাকরিচ্যুত করেন। এ ক্ষোভ থেকেই হত্যার পর মস্তক নিয়ে মীম রেস্তোরাঁর মালিকের কাছ থেকে টাকা আদায় ও তাকে হত্যা মামলায় ফাঁসানোর ফন্দি আটে তারা। গতকাল দুপুরে সূত্রাপুর থানা ও ঘটনাস্থল ঘুরে দেখা গেছে, পুরান ঢাকার আদালত সংলগ্ন জনসন রোডের কামাল হোটেল নামক স্থানে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেও সেখানে এখন কোনো আবাসিক হোটেল নেই। ভবনটিতে এখন আইনজীবীদের চেম্বার।

পাশেই মিনারেল ওয়াটার সরবরাহ করার জন্য একটি ঘর রয়েছে। ওই ঘর থেকে বড় জারে মিনারেল ওয়াটার ভরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বাসা-বাড়িতে সরবরাহ করা হয়। ব্যবসা চালায় রোমান, রুবেল, রনি ও রকি। সেখানেই রোববার রাতে ডেকে নেওয়া হয় রুবেলকে। সবাই মিলে মদ্য পান করার পর গভীর রাতে রুবেলকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।

হত্যার পর লাশ গুম করতে সেখানেই মাটি খোঁড়া হয়েছিল। সূত্রাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ নজরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ঘাতক রুবেল, রোমান, রনি ও রকি প্রকাশ্যে পানি সরবরাহের ব্যবসা করলেও কার্যত তারা ছিনতাইসহ নানা ধরনের অপরাধ কর্মকাণে। ডর সঙ্গে জড়িত ও মাদকাসক্ত। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেই তারা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। বিস্তারিত তথ্য উদ্ধারের জন্য আজ মঙ্গলবার রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে তাদের আদালতে পাঠানো হবে।

নিহত রুবেলের মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মিটফোর্ড হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। রুবেলের বাবার নাম আশরাফ আলী। বরিশালের উজিরপুরে তার গ্রামের বাড়ি। সে পুরান ঢাকার ৫০ লাল চাঁন রোডে থাকত।
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।