২০০৬ সালের ২৬ জানুয়ারী জাতীয় নির্বাচনে জয়লাভ করে 'হামাস' ইসমাইল হানিয়ার নেতৃত্বে ফিলিস্তিনে সরকার গঠন করে। যায়নবাদী ইসরাইল হামাস সরকারকে কোনভাবেই মেনে নিতে পারেনি। তাই ইসরাইল ফিলিস্তিনের নতুন সরকারকে নানা বেকায়দায় ফেলার জন্য রাজনৈতিক ও সামরিক চক্রান্তে মেতে উঠে। উপর্যুপরি সামরিক হামলার মাধ্যমে এই সরকারকে উৎখাত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালায় ইসরাইল। কিন্তু হামাস সরকারের মনোবল ভাঙ্গতে না পেরে ২০০৭ সালের জুন মাসে ইসরাইল ফিলিস্তিনের উপর অবরোধ জারী করে।
অবরোধের ফলে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, নির্মাণ সামগ্রী ইত্যাদির সংকট দেখা দেয়। অবরোধের পর থেকে ফিলিস্তিনী জনগণ খোলা আকাশের নীচে অত্যন্ত মানবেতর জীবন যাপন করে যাচ্ছে। অবরোধ আরোপের পর থেকে ইসরাইলের ইশারায় মিশর তার 'রাফা' নামক ফিলিস্তিনি বর্ডার ক্রসিং বন্ধ করে দেয়। যার ফলে ফিলিস্তিনের সাথে বর্হিবিশ্বের যোগাযোগ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়। ২০০৮ সালের ২৩ জানুয়ারী ৭ লক্ষ ৫০ হাজার ফিলিস্তিনি 'রাফা' বর্ডার ক্রশিং এর উপর হামলা মিশরে আশ্রয় নিতে সক্ষম হয়।
ফিলিস্তিনকে এই অবরোধ থেকে মুক্ত করার জন্য বিশ্বনেতৃবৃন্দ কোন কার্যকরী ভূমিকা রাখেনি। তাদের উদ্যোগ শুধু নিন্দা জানানোর মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিল। খোদ জাতিসংঘ এ ব্যাপারে কোন তৎপরতা দেখাতে পারেনি। বরঞ্চ সন্ত্রাসী ইসরাইল ফিলিস্তিনে জাতিসংঘ ভবনের উপর হামলা চালিয়ে জাতিসংঘের কর্মকর্তাদেরকে হত্যা করেছে। এর কোন বিচার করতে পারেনি জাতিসংঘ।
সন্ত্রাসী ইসরাইল তার আজন্ম দোসর আমেরিকাকে সাথে নিয়ে তার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড মেতে আছে।
২০১০ সালের শুরুর দিকে ইসরাইলী অবরোধ ভেঙ্গে ফিলিস্তিনে ত্রাণবাহী জাহাজবহর পাঠানোর একটি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এ উদ্যোগে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সরকার, মানবতাবাদী ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সাড়া দেয়। ২০১০ সালের ২৯ শে মে ৬টি জাহাজ ত্রাণ নিয়ে ফিলিস্তিনের গাজা বন্দর অভিমুখে রওয়ানা হয়। এই জাহাজসমূহের মধ্যে ৩টি তুরস্ক সরকারের, ২টি বৃটেন থেকে এবং বাকী ১টি জাহাজের ত্রাণ সামগ্রীর যোগান দেয় গ্রীস, আয়ারল্যান্ড, আলজেরিয়া ও কুয়েত থেকে সম্মলিতভাবে।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ এ জাহাজবহরের আরোহী হন। ইউরোপিয়, জার্মানী, ইটালী, আয়ারল্যান্ডের পার্লামেন্ট সদস্য এবং তুরস্ক, মিশর, আলজেরিয়া, কুয়েত, জর্দানের পার্লামেন্ট সদস্যরা এতে অংশ গ্রহণ করেন। এ ছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ৭৫০ জন মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিক এতে অংশ গ্রহণ করেন। সন্ত্রাসী ইসরাইল শুরু থেকে এই অবরোধ ভাঙ্গার অভিযানের বিরোধিতা করে আসছে এবং নানারকম হুমকি দিয়ে আসছিল। কিন্তু আয়োজকরা তাদের সিদ্ধান্তে অটল থাকায় জাহাজবহর গাজা অভিমুখে এগিয়ে যেতে থাকে।
৩১শে মে বাংলাদেশ সময় ভোর ৭টার সময় জাহাজ বহর যখন ইসরাইলী সমুদ্র সীমা থেকে ৭০/৮০মাইল দূরে আর্ন্তজাতিক সমুদ্রসীমায় অবস্থান করছিল তখন ইসরাইলী নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী ত্রাণবাহী জাহাজ ও বেসামরিক মানুষের উপর হামলা করে। নিরস্ত্র স্বেচ্ছাসেবক, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও সাংবাদিকদের উপর তারা বোমা হামলা করে, গুলি চালায়। এতে ১৯ জন শাহাদাত বরণ করেন এবং শতাধিক আহত হয়। নিহতদের মধ্যে অধিকাংশ তুরস্কের নাগরিক। ইসরাইলী বাহিনী জাহাজের সকল ত্রাণ লুট করে নিয়ে যায়।
আরোহীদেরকে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে আর্ন্তজাতিক চাপের মুখে অধিকাংশ ব্যক্তিকে ছেড়ে দেয়। কিন্তু শায়খ রায়েদ সালাহসহ আরো কয়েকজন এখনো আটক রয়েছেন।
ইসরাইলের এই সন্ত্রাসী হামলার বিরোদ্ধে বিশ্বব্যাপী নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ এ জরুরী সভা ডেকে এ হামলার নিন্দা জানায়।
পৃথিবীর দেশের রাষ্ট্রপ্রধান এ ব্যাপারে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী রজব উরদুগান এ হামলার তীব্র নিন্দা জানান। এটিকে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তেলআবিব থেকে তুরস্কের রাষ্ট্রদূতকে ফেরত আনেন। কাতারের আমীর এটিকে জলদস্যুবৃত্তি হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
দক্ষিণ আফ্রিকা তেলআবিব থেকে তার রাষ্ট্রদূতেক ফেরত আনে। কুয়েতের আমীর ও সুদানের প্রেসিডেন্ট এর তীব্র নিন্দা জানান। আয়ারল্যান্ড, ইতালী, সুইডেন, স্পেন ইসরাইলের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে তাদের নিন্দাবাদ জানায়। ত্রাণবাহী এই বহরের মুক্তিপ্রাপ্ত আরোহীদের অনেকে জানান তারা অচিরেই অন্য কোন ত্রাণবাহী বহরের সঙ্গী হবেন এবং অচিরেই গাজাকে অবরোধ মুক্ত করে ক্ষান্ত হবেন। এ জন্য তারা তাদের জীবন উৎসর্গ করতেও পিছপা হবেন না।
---------------------------------------------------------------------------------
ছবিটি উইকিপিডিয়া থেকে নেয়া।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।