... সম্প্রতি গোটা আমেরিকার বিভিন্ন স্থান থেকে অন্তত ৮৯জনকে শনাক্ত করা হয়েছে যারা ২২৩ মিলিয়ন ডলারের মিথ্যা বিলিংয়ের সঙ্গে জড়িত। ওয়াশিংটনে অ্যাটর্নি জেনারেল এরিক হোল্ডার ও হেলথ এন্ড হিউম্যান সার্ভিসেস (এইচএইচএস) মন্ত্রী কেথলিন সেবলিয়াস এফবিআই’র রিপোর্টের ভিত্তিতে গত সপ্তাহে এই ঘোষণা দেন। তারা জানান দেশের ৮টি সিটিতে স্বাস্থ্যসেবা প্রতারণা বিষয়ক অভিযান চালিয়ে এইসব প্রতারককে ধরেছে এফবিআই। এদের মধ্যে চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য লাইসেন্সধারী চিকিৎসা বিষয়ক পেশাজীবী রয়েছেন। তবে এখানেই ক্ষান্ত হচ্ছে না কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা।
সারা দেশে চিকিৎসা সক্রান্ত সকল কার্যক্রমকে কড়া নজরদারীর মধ্যে নিয়ে এসেছে এফবিআই।
২২৩ মিলিয়ন ডলারের প্রতারণায় জড়িতরা অনেকেই একেকটি বড় চক্র। তবে কেবল যে এমন বড় চক্রের দিকেই গোয়েন্দাদের নজর তা নয়, অতি সাধারণ একটি চেম্বারকেও তারা নজরদারির বাইরে রাখছে না। এটি একটি সমন্বিত প্রচেষ্টা।
মেডিকেয়ারে বিভিন্ন ধরণের অপরাধমূলক তৎপড়তা ধরা পড়ছে।
এর মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্যসেবায় জালিয়াতির ষড়যন্ত্র, অর্থপাচার ইত্যাদি। পারিবারিক পর্যায়ে প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা থেকে শুরু করে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা, সাইকোথেরাপি, শারিরিক ও পেশাগত থেরাপি, ডিউরেবল মেডিক্যাল ইক্যুপমেন্ট ও অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস সব কিছুর ক্ষেত্রেই জালিয়াতি চলছে।
এফবিআই’র এক রিপোর্টে আদালতের নথির বরাত দিয়ে বলা হয়েছে প্রতারকরা কখনো এমন কিছু চিকিৎসার কথা লিখে দিচ্ছেন যা ওই রোগীর প্রয়োজন নেই। অথবা তারা কিছু চিকিৎসা প্রদানের কথা লিখছেন যা আদৌ রোগীকে দেওয়া হয়নি।
প্র্যাকটিশনার, ফার্মাসিস্ট, সার্ভিস প্রোভাইডার ও স্পেশালিস্ট সবাই কোনো না কোনোভাবে এসব প্রতারণার সঙ্গে জড়িত।
সবশেষ অভিযানে মিয়ামিতে ২৫ জন ধরা পড়েছে যারা ৪৪ মিলিয়ন ডলারের ভূয়া বিল করেছেন। এদের মধ্যে দুই জন নার্স, একজন প্যারামেডিক ও একজন রেডিওগ্রাফারও রয়েছেন। পারিবারিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সেবা, পেশাগত ও শারিরিক থেরাপি, ডিএমই, এইচআভিসহ বিভিন্ন খাতে তাদের এসব প্রতারণা ধরা পড়েছে। ব্যাটন রুজে ধরা পড়েছে ১১ জন। তাদের মধ্যে দুই জন চিকিৎসক রয়েছেন।
এখানে হয়েছে ৫১ মিলিয়ন ডলারের প্রতারণা। হস্টনে একজন নার্স ও একজন সমাজকর্মী ধরা পড়েছে যারা ৮.১ মিলিয়ন ডলারের প্রতারণার সঙ্গে জড়িত। লস এঞ্জলসে ধরা পড়েছে ১৩ জন যাদের বিরুদ্ধে রয়েছে ২৩ মিলিয়ন ডলারের প্রতারণার অভিযোগ। এর মধ্যে তারা ভ’য়া বিল করেছে ৮.৭ মিলিয়ন ডলারের। ডেট্রোইটে ১৮ জনের মধ্যে দুইজন ডাক্তার একজন সহকারী, দুইজন থেরাপিস্টকে ধরা হয়েছে।
এরা মিলে ৪৯ মিলিয়ন ডলারের প্রতারণা করেছেন। ফ্লোরিডার ট্যাম্পায় ৯ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে চার জন রয়েছেন যারা তাদের ক্লিনিক থেকে চিকিৎসা দেওয়া হয়নি অথচ তার নাম করে বিল করে ২.৫ মিলিয়ন ডলার প্রতারণা করেছেন। শিকাগোতে দুই চিকিৎসকসহ সাতজনকে অভিযুক্ত করেছে। আর নিউইয়র্কের ব্রুকলিনে এরই মধ্যে চারজন ধরা পড়েছে।
যাদের মধ্যে দুই জন চিকিৎসক রয়েছেন। এরা ৯.১ মিলিয়ন ডলারের প্রতারণা করেছেন। এছাড়া অপর একটি ঘটনায় আরও তিন জন অভিযুক্ত হয়েছেন। যাদের বিরুদ্ধে ১৫ মিলিয়ন ডলারের অভিযোগ রয়েছে। এরা তিন জনই লাইসেন্স ছাড়াই থেরাপিস্ট হিসেবে কাজ করছে বছরের পর বছর ধরে।
নিউইয়র্কসহ গোটা যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাখাতে রয়েছে বাংলাদেশিদের অবস্থান। কেউ ব্যবসায় জড়িত। কেউ ফার্মাসিস্ট, কেউ নার্স, কেউ বা অন্য কোনো পদে রয়েছেন। তাদের প্রতি এ ধরনের প্রতারণা সঙ্গে জড়িত না থাকার আহ্বান উঠেছে কমিউনিটি থেকেই।
দুই দশকের বেশি সময় ধরে ফার্মেসি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত শাহাব আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, সরকার এখন বিষয়টিতে অত্যন্ত কড়াকড়ি আরোপ করছে।
বাংলাদেশি কেউ এমন প্রতারণার সঙ্গে জড়িত নয় বলেই আমার বিশ্বাস। তবে তারপরেও আমি এই খাতে যারা কর্মরত তাদের প্রতি আহ্বান জানাবো কোনোভাবেই যেনো এমন কোনো ঘটনায় জড়িয়ে না পড়েন।
ওয়েল কেয়ার নামে একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশি আনোয়ার হোসেন বলেন, স্বাস্থ্যখাতে ব্যাপক প্রতারণা চলছে। সরকার বিষয়টিতে কঠোর হলে তার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য সেবাই নিশ্চিত হবে।
সূত্র জানিয়েছে, মেডিকেয়ার স্ট্রাইক ফোর্সের সদস্যরা কেউ রোগী সেজে কেউ রোগীর অভিভাবক সেজে আবার কেউ সরাসরি চিকিৎসক সেজে সব ধরনের
মেডিকেয়ার প্রতিষ্ঠানের কাছে যাচ্ছে।
তাদের ছোট ছোট থেকে অনেক বড় প্রতারণা গোয়েন্দা তৎপরতার মাধ্যমে ধরে ফেলছে। কেউ জানে না, রোগী হয়ে যে ব্যক্তিটি সামনে বসে আছেন তিনি মেডিকেয়ার স্ট্রাইক ফোর্স’র কেউ কি না। অতএব সাধু সাবধান
সুত্র ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।