নিজের সম্পর্কে লেখার কিছু নেই । সাদামাটা ।
পৃথিবীর বিতর্কিত সব ছবিরা……
[ ছবি যাদের দোলা দেয়, শুধু তাদের জন্যে ….. ]
দ্বিতীয় পর্ব
মাদাম এক্স / জন সিংগার সার্জেন্ট
Madame X / John Singer Sargent.
ছবি এঁকে দেশ ছাড়তে হবে এমোন দুর্ভাগ্য হয়তো কপালে লেখা ছিলো জন সিংগার সার্জেন্ট এর । সমাজে অসন্তোষ রূদ্র রূপে জড়ো হতে থাকলেও নিজের নামডাক সোচ্চার করতে একজন শিল্পীর কাছে ভালো একটি “স্ক্যান্ডাল” এর বিকল্প নেই । এটা যেমন সাই সাই করে পরিচিতি লাভের সহজ পথ তেমনি ভবিষ্যতে স্মরনীয় হয়ে থাকাতেও ।
জন সিংগার সার্জেন্ট কি তেমন একটি পথই বেছে নিয়েছিলেন ? কেউ কেউ বলেন, মোটেও নয় । উচ্চাকাঙ্খা ছিলো বটে তবে এমোন করে নয় । রূপমুগ্ধ হয়ে যাকে চিত্রিত করেছেন বিদেশ বিভূঁয়ে নামের আশায় , সে কূহকিনী আশাই তাকে আবার পরবাসী করেছে । শিল্পী হিসেবে নাম হয়েছে সত্য তবে তা কিনতে হয়েছে অনেক দামে । ছাপ লেগেছে “ বিতর্কিত শিল্পী” র ।
ধিক্কারের মেঘ তাকে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে আবাসভূমি থেকে দূরে ।
১৮৮২ সালে মাদাম গ্যত্রেয়্যু কে দেখে রূপমুগ্ধ হয়ে পড়েন সার্জেন্ট । শিল্পী মানুষ , তাই সুন্দরের প্রতি আকর্ষন থাকবেই । প্যারিসের অভিজাত মহলের এই মধূমক্ষিকাকে যদি তুলির আঁচড়ে ধরে রাখতে পারেন ক্যানভাসে তবে আমেরিকা থেকে ভাগ্যান্বেষনে এখানে আসা এই শিল্পীর সুনাম ছড়িয়ে যাবে পুরো ফ্রান্সে, এমোনটাই ধারনা ছিলো তার । এক বন্ধুর মাধ্যমে চিঠি লিখে তিনি এই আশাবাদ রেখেছিলেন যে, মাদাম গ্যত্রেয়্যুর সুন্দরতাকে তিনি সম্মানের সাথে স্মরনীয় করে রাখতে চান তার ছবিতে ।
অপেক্ষা করতে হয়েছে তাকে দু- দু’টি বছর । ব্যতিক্রমী ধরনের সুন্দরী , মাদাম গ্যত্রেয়্যু যখোন সায় দিলেন শিল্পীর অনুরোধে আর হাজির হয়ে গেলেন শিল্পীর ষ্টুডিওতে বার কয়েক; তখোন ক্যালেন্ডারে ১৮৮৩ সাল । সুন্দরী মডেল ভাবছিলেন তিনি ফ্রান্সবাসীর কাছে স্মরনীয় হয়ে থাকবেন তবে নগ্ন হয়ে নয়, পুরো পোষাকেই । আর শিল্পী ভাবছিলেন, এদ্যুয়ার মানে' বিশটি বছর আগে “ অলিম্পিয়া ” এঁকে যে হৈচৈ ফেলে দিয়েছেন তেমন একটা কিছু ঘটিয়ে ফেলবেন । ১৮৮৪ সালে কোন রকমের পারিশ্রামিক ছাড়াই যখোন ছবিটি আঁকা শেষ হলো, প্যারিসে শিল্পীদের প্রদর্শনীতে ঠাই হলো তার ।
গ্যালারীতে, একদম চোখ বরাবর । তবে ঘটে গেছে অন্যকিছু । ততোক্ষনে ছবিটির গায়ে “ বিতর্কিত” তকমা সাঁটা হয়ে গেছে । সমালোচনার মুখে ছবিটির নাম পর্য্যন্ত পাল্টাতে হয়েছে ।
ছবি - “প্যারিসের ষ্টুডিওতে তার স্বপ্নের মাদাম – এক্স এর ছবিতে তুলির শেষ টানে ব্যস্ত জন সার্জেন্ট ।
”
কি নাম ছবিটির ? প্রথমে “Portrait de Mme *** ” এই নাম নিয়ে ছবিটি হাজির হয়েছিলো প্রদর্শনীতে । কিন্তু এক লহমায় দর্শকেরা ছবির মুখটি চিনে ফেলায় যে ঢি-ঢি পড়ে যায় আর তাতে বাধ্য হয়েই নামটি পাল্টে রাখতে হয় নাটকীয় আর রহস্যময় এক নামে - “Madame X “ (মাদাম – এক্স) । ক্যানভাসের উপর তেল রংয়ে আঁকা ৮২- ১/৮ ইঞ্চি বাই ৪৩ - ১/৪ ইঞ্চির একটি পোর্ট্রেট । রত্নখচিত স্ট্রাপ সহ কালো সাটিনের পোষাকে সজ্জিতা এক নারী । অপূর্ব দেহ সৈষ্ঠব আর ক্ষীন তটি নিয়ে মাধুর্য্যপূর্ণ ভঙ্গিতে দাঁড়ানো ।
তার পরিধেয়টি যতো না রেখেছে তাকে আবৃত করে তারও চেয়ে বেশী যেন করেছে অনাবৃত । কাঁধের একটি স্ট্রাপ খোলা । সফেদ চামড়ার জমিনে তার মরালী গ্রীবা, উন্নত কপাল আর বাহুলতা যেন বড় বেশী ফুঁটে আছে রহস্যময় কালো পোষাকের মাঝে । ছবিতে একই সাথে গাঢ় বাদামী রংয়ের উজ্জলতা আর আঁধারির খেলার কাজ , কানের কাছটিতে লাল ছোপের বিপরীতে তার ত্বকের সাদাকে যেন আরো সাদা করে তুলে ধরেছে । কেউ বলেন , “ অভিজাত ফ্যাকাশে” ।
শিল্পী তাকে দাঁড় করিয়েছেন অনবদ্য ভঙ্গিতে - তার শরীর সামনের দিক দৃপ্ত ভাবে আগানো অথচ মুখখানিকে রেখেছেন পাশ ফিরিয়ে । একই সাথে তার দেহ সুষমাকে জাহির আর লুকোনোর চেষ্টা যেন । অথচ এই আধখানি মুখই যে পুরো মুখটির চেয়েও সংবেদনশীল হয়ে উঠেছে ! মাষ্টার পীস, সন্দেহ নেই ।
কিন্তু দর্শক এই রূপ সুষমায় ভোলেননি । ছবিতে নারীটির পরিচয় লুকানোর চেষ্টা করা হলেও তারা আহত হয়েছেন তার আসল পরিচয় জেনে ।
পরিচয় পরিষ্কার , প্যারিসের অভিজাত সমাজের মধ্যমনি, মাদাম ভার্জিনি এমিলি এ্যাভিনো গ্যত্রেয়্যু যার চারিত্রিক বিশুদ্ধতা প্রশ্নবিদ্ধ । আটবছর বয়েসে মা’য়ের হাত ধরে দেশত্যাগী একজন মার্কিন রমনী, ফ্রেঞ্চ ব্যাংকার পীয়েরী গ্যত্রেয়্যুর বিবাহিতা স্ত্রী । প্যারিসে যিনি একদিকে যেমন ডাকসাইটে সুন্দরী অপরদিকে তেমনি বৈবাহিক অবিশ্বস্ততার প্রতীক হিসেবেই পরিচিত । নিজের সৌন্দর্য্য সম্পর্কে যিনি সজাগ এবং তা দেখাতে যার কার্পন্য নেই মোটেও ।
ছবিটি রিয়েলিষ্টিক হলেও একটা দূরাগত যৌনতার আভাস যেন রয়েছে কোথাও ।
দর্শকদের আরো যা অস্বস্তিতে ফেলেছে তা তার ডান কাঁধের খুলে রাখা স্ট্রাপ, ১৯৮৪ সালের আধুনিক প্যারিসবাসীদের কাছেও যা অকল্পনীয় । সমালোচকেরা আরো এগিয়ে বলেছেন, যৌনমিলনের পরপরেই যে ভাবে কান লাল হয়ে যায় তেমন করেই ছবিটিতে তার কান চিত্রিত করা হয়েছে । স্ট্রাপ খুলে ফেলাটাও কি সাজেষ্টিভ ? “লা ফিগারো” ম্যাগাজিনে এক সমালোচক তো লিখেই বসলেন – “ওয়ান মোর ষ্ট্রাগল এ্যান্ড দ্য লেডী উইল বী ফ্রি...” । সব মিলিয়ে যেন প্যারিসের উঁচুতলার একান্ত গোপনীয় কাহিনীটি-ই তুলে ধরেছে ছবিটি ।
ছবিটি তাই প্রত্যাখাত হয়েছে অশ্লীল হিসেবে ।
জনতার চাপে পড়ে বাধ্য হয়েই জন সিংগার সার্জেন্টকে খুলে রাখা স্ট্রাপটিকে ( প্রথম ছবিতে যেমনটি দেখছেন ) আবার আঁকতে হয়েছে । ছবির দুষ্ট ক্ষতটিকে না হয় সারিয়ে তোলা গেলো কিন্তু যা ক্ষতি হবার তা রোধ করা গেলোনা । চিরতরে শিল্পীকে প্যারিস ছেড়ে যেতে হলো লজ্জায় আর অবমানিত হয়ে । শেষতক থিতু হলেন লন্ডনে । সেখানে “ডাঃ পোজ্জি এ্যাট হোম” , “লেডী এ্যাগনিউ অব লাক্ষ্নৌ” , “মিসেস কার্ল মেয়ার এ্যান্ড হার চিল্ড্রেন” ব্রিটিশ এ্যারিষ্টোক্রাসি নিয়ে এই সব ছবিগুলো এঁকে শিল্পী আবার ফিরে পেলেন তার যোগ্য সম্মান ।
যাকে নিয়ে এতো কান্ড তাকেও প্যারিসের অভিজাত সোসাইটি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতে হলো একসময় ।
এক সময়ের বিতর্কিত এই ছবিটি আজ পৃথিবীর সবচেয়ে বেশী পরিচিত পোর্ট্রেটগুলোর একটি । বিনে পয়সায় পৃথিবী দাপিয়ে ঘুরছে ছবিটি এই মিয়্যূজিয়ম থেকে সে মিয়্যূজিয়মে । ছবিটির সুন্দরী শ্রেষ্ঠার প্রতিকৃতি নিয়ে বই আর ম্যাগাজিনগুলোর কভার পেজ হচ্ছে, গ্রিটিং কার্ড উঠেছে বাজারে । এমোনকি স্ক্রিন সেভার পর্য্যন্ত এসে গেছে ।
যে স্ট্রাপটি নতুন করে আঁকতে হয়েছে তার বাঁধনে জন সিংগার সার্জেন্টকে বাধা পড়তে হয়েছে ত্রিশটি বছর । ছবিটি তার কাছেই ছিলো এ দীর্ঘ সময়টুকু । বাঁধন কেটে ১৯১৬ সালের যেদিনটিতে মাত্র ১০০০ ডলারের বিনিময়ে ছবিটি শিল্পী বিক্রি করে দিলেন ম্যানহাটানের “মেট্রোপলিটান মিয়্যূজিয়ম অব আর্ট” এর কাছে সেদিন সার্জেন্ট বলেছিলেন, “ আমার মনে হয় আমি এ পর্য্যন্ত যা এঁকেছি তার মধ্যে এটিই শ্রেষ্ঠ । ” খেদ ভরে এও বলেছিলেন যেন ছবির মডেলের নামটি পাল্টে অন্যকিছু রাখা হয় । তার কথাটি রাখা হয়েছে ।
যে ছবি আর যে স্ট্রাপটি নিয়ে এতো এতো হৈ - চৈ তার দ্বিতীয় একটি অসমাপ্ত ভার্সন আপনি দেখতে পাবেন লন্ডনের “টেট” গ্যালারীতে যেখানে ডান কাঁধের স্ট্রাপটি নেই যেমনটি প্রথমে এঁকেছিলেন জন সিংগার সার্জেন্ট ।
ছবি – ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারীতে ন্যাশনাল গ্যালারী অব লন্ডনে মাদাম – এক্স কে নিয়ে আলোচনার ঝড় ...
লেস দিমোইলিস দ্য’এ্যাভিনো / পাবলো পিকাসো ।
এ্যাভিনোর তন্বীরা (দ্য ইয়াং লেডিজ অব এ্যাভিনো )
.Les Demoiselles d’Avignon - Pablo Picasso
একটি দু’টি নয় পাঁচ পাঁচটি নগ্ন বারবনিতার ছবি । কোনাকৃতি শরীর নিয়ে , কিম্ভুত কিমাকার মুখে সরাসরি তাকিয়ে আছে আপনার দিকে । এর চেয়ে অশ্লীল আর কী হতে পারে ? তবে যিনি এঁকেছেন তার কাছে এটা এক শিল্প, নগ্নতা নয় ।
ভূবনখ্যাত “গোয়ের্ণিকা” ছবির শিল্পীকে বোঝাতে যখোন জামার্নরা বলেন - বাচ্চাশিশুর আঁকা, সেই বাচ্চাশিশুটিই এই অশ্লীল ছবিটির জনক । ছবির ফিগারগুলোকে যিনি তেরাব্যাকা করে আঁকেন সব সময় যার মাথামুন্ড বোঝা ভার সেই শিল্পীই এঁকেছেন এটি, এক এবং অদ্বিতীয় - পাবলো পিকাসো ।
ছবিটি দেখেই দর্শক তো বটেই শিল্প সমালোচকেরাও ক্রোধে অন্ধ হলেন । ছবিটির গায়ে ছাপ লাগলো – Immoral “নীতিবিগর্হিত” ।
পাঁচ পাঁচটি বেবুশ্যা নারী যে ছবিতে অথচ প্রচলিত নারী-মাধুর্য্যের লেশমাত্র নেই যাদের শরীরে বরং আদিম বর্বরতা আর হিংস্রতা যাদের ভঙ্গীতে সেই ছবিকে মেনে নেয়া সহজ নয় মোটেও ।
আট বর্গফুটের তেল রংয়ের ছবিখানি শিল্পী যখোন তার ষ্টুডিওতে উপস্থিত অন্যান্য শিল্পী, গুনগ্রাহী, সমালোচক শিল্প পৃষ্ঠপোষকদের দেখাচ্ছিলেন তখোন প্রচন্ড আকস্মিকতায়, অরুচিতে আর ক্রোধে সমস্বরে আৎকে উঠেছিলেন তারা । একজন বারবনিতার ছবি “শকিং” নাও হতে পারে । কিন্তু তার ভেতরে সামান্যতম সৌন্দর্য্য, দুঃখি একটা ভাব, খানিকটা পরিহাস মোটেও থাকবেনা বরং একগাদা গাছের গুড়ির মতো দাঁড়িয়ে ভাবলেশহীন চোখে তাকিয়ে থাকবে, তা তো “শকিং” হতেই হবে ।
আপনাকে আঘাত করা্র জন্যেই যেন ছবিটি আঁকা হয়েছে । বিখ্যাত শিল্পী অঁরী মাতিস তার প্রতিক্রিয়া জানালেন এইভাবে - “ ত্রিমাত্রিক ছবি আঁকার প্রচেষ্টা করতে গিয়ে এটা পিকাসোর স্রেফ একটা ধাপ্পাবাজী ।
”
শিল্প সমালোচক সালমন লিখেছেন – “ছবির মুখশ্রীগুলো এতো কুৎসিত যে তা আতঙ্ককেও জমাট বাধিয়ে ফেলেছে । ”
“দ্য কিস” খ্যাত শিল্পী গুস্তাভ ক্লীমট এর ভাষায় – এটি যৌনতায় ভরা । অথচ যৌনতার সাথে যার আদৌ কোন মিল নেই ....।
চিত্রশিল্পী দ্যেরাইন পরিহাস ছলে বলেছেন, “হয়তো একদিন দেখবো যে, পাবলো তার এই মহান ক্যানভাসটির পেছনে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে পড়েছেন । ”
আমি, আপনি আর কি বলবো এর পরে ?
১৯০৭ সালে এঁকেছেন পিকাসো ছবিটি ।
পাঁচটি উলঙ্গ নারী । বার্সেলোনার এ্যাভিনো স্ট্রীটের বেশ্যালয়ের পাঁচ গনিকা । প্রতিটি ফিগারেই রয়েছে সন্দেহজনক ভাবে আক্রমনাত্মক ভঙ্গি এবং কেউই প্রচলিত নারীমূর্তি নয় । দু’জনার মুখে রয়েছে আফ্রিকার আদিবাসীদের মুখোশ । সর্বডানে পর্দা টেনে ধরা মূর্তিটি জবরজং গাঢ় রংয়ে আঁকা ।
পাঁচজনের ভেতরে তার মুখখানিই সবচেয়ে বেশী কোনাকৃতির । তাদের স্তন, কনুই সবখানেই যেন জ্যামিতিক আকৃতি দেয়া হয়েছে । আসলে চুড়ান্ত ছবিটি নামানোর আগে পিকাসোকে ১০০টি স্কেচ করতে হয়েছে । হয়েছে এই জন্যে যে, ত্রি-মাত্রিক একটি দৃশ্যকল্পকে ক্যানভাসের দ্বি-মাত্রিক তলে ফুটিয়ে তোলার সমস্যা নিয়ে তাকে খাটাখাটনি করতে হয়েছে প্রচুর । প্রথমদিকের স্কেচগুলিতে ছিলো দু’টি পুরুষ – একজন নাবিক খদ্দের আর অন্যজন মাথার খুলি হাতে মেডিক্যালের ছাত্র ।
হয়তো এটাই বোঝাতে যে, মৃত্যুই পাপাচারের অনিবার্য্য পরিনতি । নাবিকটিকে পরে ছবি থেকে সরিয়ে দিতে হয়েছে । আর ছাত্রটিকে রূপান্তর করা হয়েছে মুখোশ পরিহিত নারীতে, ছবিতে যে পর্দা টেনে ধরে আছে । তাই তার শরীরে নারীর আদলের চেয়েও পুরুষ আদলটাই যেন বেশী ।
আদিমতার (Primitivism) দিকে বিংশ শতাব্দীর আগ্রহ প্রতিবিম্বিত হয়েছে যেন খুবই সহজ একটি ঐক্যতান আর প্রাচীন সংস্কৃতির ছবির ভেতর থেকে পাওয়া শুদ্ধতম ভাবনাগুলোর ছাপ মেখে ।
আদিম চিত্রকরেরা আফ্রিকান এবং পলিনেশিয়ান ভাস্কর্য্য আর মুখোশগুলো থেকে তাদের ছবির প্রেরনা খুঁজতেন । পিকাসোও এটা স্বীকার করেছেন নিজে । স্প্যানিস ইবেরিয়ান ভাস্কর্য্য আর আফ্রিকান মুখোশ ছিলো তার প্রেরনা ।
ইম্প্রেশনিষ্ট এবং পোষ্ট- ইম্প্রেশনিষ্ট সময়কালে তো বটেই ধ্রুপদী শিল্পেও এই ষ্টাইলটিই যেন গায়ে-গতরে বড় হয়ে উঠেছিলো । তাই আপনি দেখবেন ইম্প্রেশনিষ্ট শিল্পী সেজান খুব জোরালো অবদান রেখেছেন ছবি আঁকার “ফ্যভিজম” , “এক্সপ্রেশনিজম” আর “প্রিমিটিভিজম” এইসব ফর্মগুলোতে ।
১৯০৬ সালে পিকাসো হাটলেন সেজানের সেই পথ ধরেই । তাই তার ছবিগুলোতে পাহাড়সম শারীরিক শক্তিগুলো যেন দুমড়ে-মুচড়ে একাকার হয়ে আছে । এই ছবিটি যেন সেজানের আঁকা “গ্রান্ড বাথারস” এর দোমড়ানো-মোচড়ানো মানুষগুলোরই অনুকরন । এমোনটা মনে হলেও যেটা ঘটিয়ে ফেলেছেন পিকাসো তা হলো – বিংশ শতাব্দীর ছবিতে “কিউবিজম” এর যুগান্তকরী অধিষ্ঠান । আর পাশাপাশি উনবিংশ শতাব্দীর আদিমতাকে যেন নিয়ে গেছেন ক্লাইম্যাকসে ।
তাই এই ছবিতে আপনি মুখোশের ব্যবহার দেখতে পাবেন । নারী অবয়বগুলোতে দেখতে পাবেন “কলাম” এর মতো উর্দ্ধমুখীনতা । গোলাপী রংয়ের বিভিন্ন শেড ব্যবহার নগ্নিকাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোকে আলাদা আলাদা করেছে । আর এই সব মিলিয়ে আকৃতিগুলোতে রেখা আর তল ; আয়তন আর গভীরতা ; রং আর রংয়ের বিন্যাস সূত্রপাত করেছে জ্যামিতিক রেখাচিত্র নিয়ে “কিউবিজম” এর । পিকাসো দেখাতে চেয়েছেন , শিল্পে মৌলিকতা এর বর্ণনা বা নৈতিকতার উপর নির্ভর করেনা ।
করে এর বিন্যাস আর শৃঙ্খলা উদ্ভাবনের উপর ।
প্রাথমিক প্রদশর্নীর পরে ছবিটি উনচল্লিশ বছর ধরে প্রায় অদেখা অবস্থায় পড়ে ছিলো । ১৯১৬ সালের পরে এটি চারটি বছর ধরে গোটানো অবস্থায় ছিলো পিকাসোর ষ্টুডিওতে । ১৯২০ সালে জ্যাকুইস ড্যুসেট এটি কিনে নেন । কোথায় ছিলো লুকিয়ে ? জানেনা কেউ ।
১৯২৫ সালে “La Revolution Surrealiste” এ ছবিটির একটি প্রতিকৃতি প্রকাশিত হয় । তারপর থেকেই ১৯৩৭ সাল পর্য্যন্ত পিকাসোর পাঁচ বারবনিতা আর আলোর মুখ দেখেনি । ১৯৩৭ সালে প্যারিসের পেটিট পালাইজ এর প্রদশর্নীতে এটাকে আবার দেখা যায় । ন্যূয়র্ক এর মিউজিঅ্যাম অব মডার্ন আর্টস এর পরপরেই ছবিটিকে কিনে নেন যা তার সংগ্রহে থাকা সব ছবির মধ্যে “প্রাইজড” একটি ছবি হিসেবে দেখতে পাবেন আপনি ।
ছবি নিয়ে যখোন কথা তখোন শেষ কথা কে কি বললেন আপনার নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছে করবে -
শিল্প সমালোচক জন বার্গার ১৯৬৫ সালে প্রকাশিত “দ্য সাকসেস এ্যান্ড ফেলিওর অব পিকাসো” নামের জীবনীগ্রন্থে “লেস দিমোইলিস দ্য’এ্যাভিনো” কে বলেছেন এটি একটি প্ররোচনা যা থেকেই বিশ্বের চিত্রশিল্পে কিউবিজমের জন্ম ।
তারপরেও যে কথা থাকে তাকে একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায়না । বর্তমান কালের চিত্রকলার এতো এতো বীভৎসতা আর ঔদ্ধত্য দেখে দেখে আমাদের শালীনতা এতোটাই ভোঁতা হয়ে গেছে যে, আমরা ছবিটির বীভৎস হিংস্রতাকে একবারেই খাটো করে দেখছি । এটা যারা দেখেছেন তারাই আতংকিত হয়েছেন – এ্যান্ড ইট ওয়াজ মেন্ট টু শক.........”
দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকাতে এই সেদিন ২০০৭ সালে জোনাথন জোন্স লিখেছেন –
শিল্পে মডার্নিজমের বয়স আজ একশো বছর আর পিকাসোর ছবি এ্যাভিনোর তন্বীরা’ র একশো বছর বয়সও ছুঁয়ে গেলো । ১৯০৭ সালে টাইটানিক যখোন ডুবে যাবার অপেক্ষায় - রাইট ভ্রাতৃদ্বয় যখোন তাদের আবিস্কৃত উড়াল জাহাজের প্রচারে য়্যুরোপ সফরে ব্যস্ত – সানফ্রানসিস্কো যখোনও গেল বছরের ভূমিকম্পের ধকল সামলে ওঠেনি – সিনেমার নিউজ রীল যখোন বোয়র এর যুদ্ধের ছবি প্রক্ষেপন করে চলেছে তখোন নৈরাজ্য আর ক্যাবারে নাচের ঝমঝমানির ভেতর প্যারিসের মন্তমার্ত্রে ধংশপ্রাপ্ত সংকীর্ণ এক গলিপথে শিল্পী- লেখকদের নিয়ে ঘরঠাসা একটি ষ্টুডিওতে পঁচিশ বছরের দেশান্তরী এক স্প্যানিস তরুন সৃষ্টি করে চলেছেন মডার্ণ আর্টের জগতে সর্বপ্রথম ও মহান একটি মাস্টারপীসের...”
পিকাসো নিজেও বলেছেন , “ শয়তানের হাত থেকে এটিই আমার প্রথম খোসা ছাড়ানোর ছবি । ”
ভার্জিন অব দ্য রকস / লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি
Virgin of the Rocks / Leonardo da Vinci
ছবির শিল্পীকে কে না চেনেন এক নামে ? আর ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্রটির কাহিনীই বা জানেন না কে ? বলছি ভিঞ্চি আর কুমারী মাতা মেরীর কথা ।
তার জীবনে ছবি আঁকার সারাটা সময় জুড়ে ভিঞ্চি রহস্যময় এক শিল্পী । এখানেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি । একটি নয় , একই নামে ছবি এঁকেছেন দু-দু’টি - “ভার্জিন অব দ্য রকস” । সামান্য হেরফের ছা্ড়াই দু’টো ছবির বক্তব্যই এক । শিশু যেশাসকে আর এক শিশু জন দ্য ব্যাপ্টিষ্ট শ্রদ্ধাভরে সম্মান জানাচ্ছেন ।
বাইবেলে নেই এমোন একটি কাহিনীর উপর ভিত্তি করেই ছবিটি আঁকা হয়েছে । মধ্যযুগীয় ধারনা মতে, মেরীর স্বামী যোশেফ এর হাত ধরে যেশাসের পরিবার যখোন মিশরে পালিয়ে যেতে থাকেন রাজা হ্যারোডের রোষানল থেকে বাঁচতে, তখোন পথমাঝের ঘটনা এটি । বাইবেলের বাইরে এই যাত্রাপথের কাহিনীর অনেক ভার্সন পাবেন আপনি । তার একটি হোল, পথে তাদের সাথে যোগ দেন যেশাসের চাচাত ভাই জন আর জনকে নিয়ে আসেন দেবদূতী উরিয়েল । পাহাড় আর পাথরে ঘেরা সে যাত্রাপথে একটি গুহায় বিশ্রামকালীন সময়ের বর্ননায় তাই এসেছে “রকস” এর কথা ।
বিষয়বস্তু এক হলেও ঘোরপ্যাচ আছে একটু । ভার্জিন অর নট-ভার্জিন ? আর এই ঘোরপ্যাচ নিয়েই তুমুল হট্টোগোল । ছবির গায়ে ছাপ উঠলো “ কন্ট্রোভার্সিয়াল” । তাই-ই নয় আসল ছবি কোনটি এ নিয়েও বোদ্ধাদের তর্ক শুরুতে সুনামীর ঢেউ তুললেও এখোন অনেকটা স্থিত হয়ে এসেছে । ইচ্ছে হলে আপনিও এই তর্কে যোগ দিতে পারেন ।
তর্ক করতে পারেন , আসল ছবিটিতে কি মাতা মেরীকে শুদ্ধভাবে দেখানো হয়েছে, এই নিয়ে ।
ছবি দু’টির একটিকে আপনি দেখবেন ল্যুভর মিউজিঅ্যামের দেয়ালে ঝোলানো । এটিই নাকি প্রথম আঁকা ছবি । আর দ্বিতীয়টি আপনি পাবেন লন্ডনের ন্যাশনাল গ্যালারীতে ।
শিল্পে কন্ট্রোভার্সিয়াল আর নন-কন্ট্রোভার্সিয়াল এর যুদ্ধে জয়ী “নন-কন্ট্রোভার্সিয়াল” ।
ছবির বিষয় বস্তুতে বাইবেলের একটি পবিত্র ধারনা (কনসেপশান) কে তুলে ধরার কথা ছিলো । কুমারী মাতা মেরীর গর্ভে যেশাস ক্রাইষ্টের জন্ম । কথা রাখেননি ভিঞ্চি । ছবি আঁকতে গিয়ে তার স্বভাব মতো একটু গিট্টু দিয়ে রেখেছেন । ছবিতে ধর্মীয় মহামানবদের পবিত্রতা বোঝাতে তার মাথার চারদিকে একটি উজ্জল প্রভার ছটা দেখানোই রীতি ।
এটা আপনারা বিভিন্ন দেবদেবীদের ছবিতেও দেখেছেন । যেমন কৃষ্ণের ছবিতে, যেশাশের ছবিতে । প্রথম ছবিতে ভিঞ্চি মেরীমাতার মাথার চারদিকে কোনও প্রভার ছটা (halos) আঁকেন নি । বেখেয়াল নাকি ইচ্ছেকৃত ? একজন ফিলোসোফার শিল্পী যিনি সকল কাজের কাজীও বটে, তার বেখেয়ালী হবার কথা নয় । সেই পনের-শো শতকে যখোন ক্যাথলিক ধর্মবিশ্বাসে ক্রিশ্চিয়ান মানূষ অটল সেখানে এই ধৃষ্টতা ক্ষমার যোগ্য নয় ।
তাই ছবিটি “বিতর্কিত” ছবির খাতায় নাম লিখিয়ে ফেলেছে । আরেকটি ছবি (দ্বিতীয়টি) এঁকে ভিঞ্চিকে সে ক্ষতি পুষিয়ে দিতে হয়েছে তাই ।
ক্যানভাসের উপরে নয়, ছয় ফুট লম্বা কাঠের প্যানেলের উপরে তেল রংয়ে আঁকা হয়েছিলো ছবি দু’টি । ল্যুভরে যেটি রয়েছে সেটি এখোন ক্যানভাসের উপরে । কেন ? লম্বা ইতিহাস আছে পেছনে ।
দুটোতেই “কমিশন” এর তারিখ দেয়া থাকলেও কোনটি প্রথম আর কোনটি নয় এ নিয়ে সন্দেহ মাথা চাড়া দিয়েছে কারন ছবি দু’টির সম্পূর্ণ ইতিহাস পরিষ্কার নয় । বেশীর ভাগ শিল্প ঐতিহাসিকরাই ল্যুভরে রাখা ছবিটিকেই প্রথম বলেছেন । আঁকা হয়েছে ১৪৮৩ থেকে ১৪৮৬ সালের ভেতরে । এও বলেছেন, এটা ভিঞ্চিরই আঁকা । তাহলে আরো কেউ কি এঁকেছিলেন এটি ? হুম, আরো কেউ মূল ছবিটি না আঁকলেও ছবির পুরো দৃশ্যপটের সাথে জড়িত ছিলেন কয়েকজনই ।
তারপরেও হাইপোথিসিসের শেষ নেই । সাধারন ভাবে এটাই ধারনা করা হয় , ইতালীর মিলানে ১৪৮৩ সালে ছবিটির কমিশনিং হবার কথা ছিলো । কিন্তু তার আগেই ভিঞ্চি গোপনে অজ্ঞাত কারো কাছে ছবিটি বিক্রি করে দিলে চুক্তি পুরন করতে তাকে আর একটি ছবি আঁকতে হয় , যেটা ঝুলছে এখোন ন্যাশনাল গ্যালারীতে । ছবিটির সাম্প্রতিক “রেস্টোরেশান” করতে গিয়ে কনজারভেটরদের এই ধারনা হয়েছে , ছবিটির আংশিক এঁকেছেন ভিঞ্চির সহকারী কেউ । হয়তো !
মিলানের সান ফ্রান্সেসকো গীর্জায় “ইম্যাকিউলিট কনসেপশান” নামের ধর্মীয় ভ্রাতৃসঙের ভজনালয়ের জন্যে মূল ছবিটি আঁকতে ভিঞ্চিকে চুক্তিবদ্ধ করা হয় ।
চুক্তিটি ছিলো ভজনালয়ের জন্যে বেশকিছু কাঠের প্যানেলে ভার্জিন মেরীর ছবি সহ আরো কিছু এ্যাঞ্জেলের ছবি এঁকে দিতে হবে । কিন্তু পরে কাজটিকে দু’টো ভাগে ভাগ করে দেয়া হয় । ঠিক যেন আমাদের দেশের মতো, দলীয় ক্যাডারদের সন্তুষ্ট রাখতে একই কাজ কয়েক ভাগে ভাগ করে কন্ট্রাক্ট দেয়া । এখানেও সম্ভবত তাই ঘটেছে । কারন মূল ছবি আঁকবেন ভিঞ্চি আর মেরীর দু’পাশে আটজন এ্যাঞ্জেলের ছবি করে দেবেন এ্যামব্রোজিও দ্য প্রেডিস এবং কাঠের প্যানেলের কারুকাজ সহ পূনঃসজ্জাকরনের কাজ করবেন ইভাঞ্জেলিষ্টা দ্য প্রেডিস নামেরেএকজন ।
দু’ভাই এরা । কিন্তু যে “ইম্যাকিউলিট কনসেপশান” এর উপর মেরীর ছবি আঁকতে হবে ভিঞ্চি তা খানিকটা এড়িয়ে গেছেন । মেরীকে তিনি এঁকেছেন সাধারন এক নারী হিসেবে । মাথার চারদিকে প্রভার ছটা (halos) না এঁকে ।
কারনটি হয়তো হতে পারে এই – ক্রিশ্চিয়ান চার্চ সব সময়েই এই পবিত্র ধারনা লালন করে এসেছেন যে , ঈশ্বরপূত্র যেশাস কুমারীমাতা মেরীর গর্ভজাত ।
পনের শতকে ফ্রান্সিসকান অর্ডারের অনুসারীরা এই ধারনার মূলকে ঠিক রেখে আর একটু আধুনিক ঘরানার চিন্তা যোগ করতে চেয়েছেন তাতে । বলতে চেয়েছেন, যেশাস সত্যিকার অর্থে কুমারীমাতার গর্ভে জন্মগ্রহন করেননি । বরং মনুষ্যজন্মের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় যেশাসের জন্ম হলেও ঈশ্বর তাকে “ ইমিউন” করেছেন এইভাবে যে, মেরীকে “আদি পাপ” (অরিজিনাল সিন ) থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি দিয়েছেন তিনি । মেরীর কোনও পাপ নেই । স্বর্গ থেকে বিচ্যুত হয়ে এ্যাডাম আর ইভ যে পাপ করেছেন মানুষের মাঝে সেই “আদি পাপ” প্রবাহিত হবেই ।
ঈশ্বর মেরীকে ক্ষমা করে দিয়েছেন যেহেতু ঈশ্বর ক্ষমাশীল । আর যেশাসের জন্ম তেমন হলেও যেহেতু যেশাস ঈশ্বরের দূত তাই মাতা মেরী আর যেশাসকে “ইমপিউনিটি” দেয়া হয়েছে সর্বকালের জন্যে । নেপোটিজম ??? হতে পারে ! তাই মাতা মেরী পবিত্র । আর যেশাসও পবিত্র কুমারীমাতার গর্ভজাত ।
সম্ভবত ভিঞ্চি ফ্রান্সিসকান অর্ডারের এই ধারনাটিকেই তার ছবির মূল প্রতিপাদ্য হিসেবে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন ।
তাই মেরীর মাথার পেছনে উজ্জলপ্রভা আঁকেননি । শিশু যেশাসকে বসিয়েছেন মেরীর থেকে দূরে আর এক এ্যাঞ্জেলের কাছে । মতভেদ থাকলেও প্রচলিত ধারনা, এই এ্যাঞ্জেলটি “ উরিয়েল ” । অঙ্গুলি নির্দেশ করে আছেন আর এক শিশু “জন দ্য ব্যাপ্টিষ্ট” এর দিকে যে আছে মাতা মেরীর হাতের ছায়াতলে । জন দ্য ব্যাপ্টিষ্ট হাত জোর করে প্রার্থনার ভঙ্গিতে যেন শিশু যেশাসের পবিত্রতার কাছে মাথা নত করে আছেন ।
মেরী তাকে আগলে রেখেছেন সস্নেহে । আর শিশু যেশাস হাত তুলে যেন আশীর্বাদ করছেন জন দ্য ব্যাপ্টিষ্টকে । তার মাথার ওপরে মাতা মেরীর হাত এই ডিভাইন মূহুর্তটিকেই যা “আদি পাপ” এর উর্দ্ধে উঠে যেশাসের পবিত্রতার ঘোষনা দিচ্ছে সে দিকেই যেন ঈঙ্গিত করছেন । আর উরিয়েল চেয়ে আছেন দর্শকদের দিকে, পরনে তার উজ্জল পোষাক যা দর্শকদের চোখ টানবে আগে । মেরীর ভার্জিনতাকে এভাবে চিত্রিত করার এই ধারনাটিকেই ক্রিশ্চিয়ান শিল্পবোদ্ধারা মেনে নিতে পারছেন না ।
মেরীকে যেন হেয় করা হয়েছে এখানে । অনেকটা যেন ব্লাসফেমীর ভাব আছে ছবিতে । তাই বিতর্কিত ।
রেগেমেগে “ইম্যাকিউলিট কনসেপশান” ভ্রাতৃসঙের কর্তাব্যক্তিরা ভিঞ্চির পারিশ্রামিক বন্ধ করে দিলেন । নতুন করে আঁকতে বললেন আবার, যেমনটা তারা চান ।
তথাস্তু । কিন্তু পারিশ্রামিক বাড়াতে হবে । কর্তাব্যক্তিরা তা মেনে নিলেন না । হতে পারে , পয়সা উশুল করতে ভিঞ্চি ছবিটা বিক্রি করে দিয়েছেন । মনে করা হয় , ভিঞ্চি ১০০ দ্যুকাতস এর বিনিময়ে ছবিটি বিক্রি করে দেন ফ্রান্সের রাজা দ্বাদশ লুইসের কাছে ।
সম্ভবত যিনি আবার ছবিটিকে উপহার দিয়ে বসেন হলি রোমান সম্রাট প্রথম ম্যাক্সিমিলিয়ানকে । তাই ভিঞ্চিকে আঁকতে হোল দ্বিতীয় আরেকটি । মেরীর মাথার চারধার ঘিরে উজ্জলপ্রভা বসানো হোল । এ্যাঞ্জেল উরিয়েলের হাত নামিয়ে দেয়া হোল । তার চোখের দৃষ্টিকে আনত করা হোল ।
তার বসনের উজ্জলতা হটিয়ে সবুজ মেটে রংয়ের ভাব আনা হোল যাতে দর্শকের চোখ তার দিকে না ফেরে । উজ্জল হোল ছবিটির ক্যানভাস । এবার বুঝি শান্ত হলেন ভ্রাতৃসঙ । প্রথমটির জায়গাতে দ্বিতীয় এই ছবিটি ঠাই পেলো “ইম্যাকিউলিট কনসেপশান” ভ্রাতৃসঙের ভজনালয়ে, যেমোনটা তারা চেয়েছিলেন ।
১৭৮১ থেকে ১৭৮৫ সালের মধ্যে গীর্জা কর্তৃপক্ষ ছবিটি গ্যাভিন হ্যামিল্টন নামের একজনার কাছে বিক্রি করে দিলে হ্যামিল্টন ছবিটিকে ইংল্যান্ড নিয়ে আসেন ।
এরপরে বহু হাত ঘোরা শেষে ন্যাশনাল গ্যালারী ছবিটিকে কিনে নেন ১৮৮০র দিকে । আজতক ছবিটি এখানেই আছে । তারপরেও আজও তর্ক থেমে নেই । তর্ক ছবিটির জন্ম তারিখ নিয়ে, কোন ছবি কার আঁকা তা নিয়ে এবং ছবিতে উচ্চারিত রূপকের ধরন নিয়ে । ২০১১/২০১২ সালে কয়েক মাসের জন্যে ন্যাশনাল গ্যালারীর একই কক্ষে , একই রকম আলোর নীচে ছবি দু’টোকে আনা হয় ।
সম্ভবত জীবনে দু’জনার এই প্রথম দেখা । সেই দেখা থেকে বিতর্কের কারনগুলো আসলেই কি, তা চিত্র বিশেষজ্ঞরা পরিষ্কার করতে পারবেন হয়তো । আমাদেরও সেদিনটির দিকে তাকিয়ে থাকতে দোষ কী ?
( তিন পর্বে সমাপ্ত )
সূত্র / সাহায্য : বিভিন্ন ইন্টারনেট সাইট ।
। ।
পৃথিবীর বিতর্কিত সব ছবিরা…… প্রথম পর্ব । ।
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।