সভ্যতার প্রান্তে দাঁড়িয়ে পিছু ফিরে চলেছি
মনে মনে কিছুটা গর্ব অনুভব করছিলাম এই ভেবে বাংলাদেশ কোন ধর্মান্ধ দেশ না। অনুভবটা মনে গেড়ে বসার আগেই কুঠারাঘাত। ফেসবুক বন্ধ। কেন বন্ধ? নানা মুনির নানা মত গতকাল সবাইকেই ধুম্রজালে আবদ্ধ করে রেখেছিল। এখনো মানুষ জানেনা আসলে কেন ফেসবুক বন্ধ হোল?
যাই হোক ধরে নিচ্ছি আমাদের প্রবল সক্রিয় ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত করেছে নাকি ফেসবুক।
কিভাবে করলো আমি জানিনা। ২০ তারিখে রাসুল [সা:] কে নিয়ে যে কার্টুন আকার প্রতিযোগিতা সম্বলিত যে পেজ বানানো হয়েছিল সেটা ২৪ তারিখেই ফেসবুক কর্তৃপক্ষ সরিয়ে নিয়েছে। আমার প্রবল সেন্সেটিভ ধর্মিয় অনুভুতিতে সেটা আঘাত হানলো তার ৫ দিন পরে। কি বিচিত্র। কি বিচিত্র।
আমাদের আমিনি হুযুর ব্যপারটি টের পেয়েছেন একটু দেরি করে। তার বলিষ্ঠ হুঙ্কারে সরকার নাকে খত দিয়ে ফেসবুক বন্ধ করে দিল এবং বরাবরের মত ডেনিস এম্ব্যাসি বন্ধের হুমকি এবং দাবি !!!!! । বাংলাদেশে আর কারো ধর্মিয় অনুভুতিতে আঘাত লেগেছে কিনা আমার জানা নেই, ব্লগগুলোতে যারা দিনভর জাত গেল, ধর্ম গেলো বলে চিল্লায় তাদের অনুভুতিতেও দেখলাম আঘাত লাগলোনা। এখন একটা ব্যাপার পরিস্কার বাংলাদেশে ১০ লাখের মত ফেসবুক ইউসারদের সম্মিলিত অনুভুতিও আমিনির একার অনুভুতির থেকে দুর্বল। আমরা ধন্য এমন অনুভুতি সম্পন্ন সম্পদ আমাদের আছে বলে।
বাংলাদেশে কয়টা পত্রিকার সার্কুলেশন সঙ্খ্যা ১০ লাখ? কোন চ্যানেলের দর্শক ১০ লাখ? নামকাওয়াস্তে এসব পেপারপত্রিকা, টিভি বন্ধ হলে আমাদের অনুভুতি শিরশীরিয়ে ওঠে, তার থেকে ১০০ গুন শক্তিশালী এই মাধ্যম টি বন্ধ হওয়ায় আমরা যথারিতী অনুভুতির দরজায় খিল ঠুকে দিয়েছি। আজ কোন বিরোধি দল বলেনা এটি একটি কালো দিন। আজ মানুষের বাক স্বাধীনতা কেড়ে নেবার দিন। অথচ এই ফেসবুককে আমরা ব্যাবহার করেছি জব্বারের একচেটিয়া ব্যাবসার বিরুদ্ধে, যুদ্ধপরাধের বিরুদ্ধে প্রচারনায়, মুমুর্ষ রোগির জন্য রক্ত সংগ্রহে।
তথ্যর অবাধ প্রবাহ যেকোন অন্যায় রুখে দিতে পারে।
গতকালের কালেরকন্ঠে দেয়া তথ্য অনুযায়ি বাংলাদেশের টোটাল ফেসবুক ইউসারদের ৫০ ভাগ হচ্ছে ১৮-২৪ বয়সি তরুন। এই বিশাল জনগোষ্ঠিকে যদি তথ্যোর এই প্রবাহ থেকে বিচ্ছিন্ন করা সম্ভব হয় তাহলে আমিনীদের আর চিন্তা থাকেনা। বাংলাদেশকে তালেবানীকরনে তারা আরেকধাপ এগিয়ে যাবে আর কি। এরাই একদিন মিছিল করেছিল ১৯৯৭ সালের দিকে 'বাংলা হবে আফগান'। সেন এর তত্ত্বমতে, তথ্যের প্রবাহই পারে দুর্ভিক্ষের মত মহামারী থেকে রক্ষা করতে।
দীর্ঘদিন এই প্রবাহ বন্ধ রাখতে পারলে এক সামাজিক দুর্ভিক্ষ আমাদের নিশ্চিতভাবেই পীড়ন দেবে অদুর অথবা সুদুর ভবিষ্যতে। তথ্যপ্রবাহের এই সুত্রটা কাটা পড়ায় আজ আমিনি, মুজাহিদ গোষ্ঠির মত খুশি মনে হয় আরে কেউ নেই।
এই সুজোগে আমাদের পাকিজাত সারমেয় গুলো পাকিস্তানের http://www.millatfacebook.com এর সাড়ম্বরে প্রচার করে যাচ্ছে। Click This Link সে সাথে ভিনগ্রহীয় সব যুক্তির অবতারনা:
- ফেসবুকে যুব সমাজ উচ্ছেন্নে যাচ্ছে
- ছেলেপেলে লেখাপড়া করছে না
- লোকজন পরকিয়াতে জড়িয়ে পড়ছে ইত্যাদি ইত্যাদি
Click This Link
আসলে এইসব পড়লে মনে হয় দেশ আগে কোন উচ্চিন্নে যাওয়া ছেলেপেলে, পরকিয়া ইত্যাদি ইত্যাদি ছিলনা। আমি আমিনি গংদের চিনিনা।
কেউ কি তাকে http://www.millatfacebook.com সম্পর্কে দয়া করে একটু বলবেন। তাহলে সাম্নের শুক্কুরবারে হয়ত উনি দাবি তুল্বেন সবাই যেন ওইটা ইউজ করে এবং সরকার যেন ওটা ব্যাবহার বাধ্যতামুলক করে।
খুব ছোট্ট পর্যবেক্ষন:
- আমরা সব সময়ই জ্ঞাতসারে হোক অজ্ঞাতসারে হোক পাকিদের অনুসরন করি
- পাকিস্তান টেলেভিষন = বাংলাদেশ টেলিভিষন
- পাকিস্তান রেডিও = বাংলাদেশ রেডিও
- সামরিক শাষনের ঐতিহ্য
- রাজনৈতিক ঐতিয্য [আওমিলীগ, জামাত, মুস্লিম লীগ]
- জাতীয় স্লোগান [জিয়ে পাকিস্তান = জয় বাংলা, পাকিস্তান জিন্দাবাদ = বাংলাদেশ জিন্দাবাদ]
- সেনাবাহিনীর ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান হওয়া
- ক্রিকেটে চরম আভ্যন্তরিন কোন্দল এবং অধারাবাহিক পারফরমেন্স
এই যখন অবস্থা তখন পাকিস্তান বন্ধ করছে, আমরা কিভাবে চুপ থাকি? জাতিয় ইজ্জত কা সাওয়াল। আমদের ধনুর্ভাঙ্গা পন কুপমুন্ডকতায় আমরা না পাকিরা আগানো সেটা প্রমান করা বিশ্বের সামনে। সফলতা কামনায়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।