'কিছু মাতাল হাওয়ার দল... শুনে ঝড়ো সময়ের গান... এখানেই শুরু হোক রোজকার রূপকথা... / কিছু বিষাদ হোক পাখি... নগরীর নোনা ধরা দেয়ালে কাঁচ পোকা সারি সারি... নির্বান নির্বান ডেকে যায়...' প্রথম দৃশ্যঃ
মঞ্চঃ ফেসবুক। চারিদিকে আলো আধারীর খেলা। অনলাইনে বসে আছে দুই সৈন্য। একজনের নাম বশির, আরেকজন রহিম। চ্যাট করছে দু-জন।
রহিমঃ ধ্যাৎ! পোক করছে আর করছে! সকাল সন্ধ্যায় রাতে এক লহমা বিরাম নেই। পোক করতে করতে আমাকে পাগল বানিয়ে ফেলেছে। তবুও থামে না মারাঠার ফেসবুক ফ্রেন্ডরা।
বশিরঃ ওদের সাথে আমরা যুদ্ধে পারি না। ওরা পোক করে তো মশকরা করবেই।
রহিমঃ তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। কুঞ্জপূরের লড়াইতে হেরে তোমার বিবেচনা লোপ পেয়েছে। একটা যুদ্ধে হেরে আমাদের তেমন কোন ক্ষতি হয়নি।
বশিরঃ আলবৎ ঠিক। আমরা এর প্রতিশোধ নেবো।
মারাঠাদের সবগুলো একাউন্ট আমি রিপোর্ট করে বন্ধ করেই ছাড়বো।
রহিমঃ তবে আমি আরেকজনের জন্য অপেক্ষা করবো।
বশিরঃ কে সে?
রহিমঃ ইব্রাহীম কার্দি। বেঈমান! আমাদের হয়ে গোলামী করের দস্যু পেশোবার। গতবার রিপোর্ট করে আমার ছোট ভাইয়ের ফেসবুক একাউন্ট ব্যান করিয়েছিলো।
আমার দিলের টুকরো ভাইয়ের একাউন্ট। কি সুন্দর প্রোফাইল পিকচার ছিলো তার! তার ঐ একাউন্টে ৫০০ জনের বেশি মেয়ে ফ্রেন্ড ছিলো।
দ্বিতীয় দৃশ্যঃ
ইব্রাহিম কার্দি-র ওয়ালে একটি ছবি।
সেখানে তার কমেন্টঃ একি! আমার একাউন্টে কে তোমার ছবি আপলোড করেছে! জোহরা!! জোহরা!! কে এই ছবি দিয়েছে? দ্বিপ শিখায় রক্তাক্ত হয়ে সর্বাঙ্গে ফুলের সৌরভ মেখে তুমি বিজয়নীর হাসি হাসছো। কিন্তু ও মধুর হাসির আড়ালে তুমি ফটোশপের কাজ লুকাতে পারোনি।
মর্মান্তিক ভুল করেছো। আমি তোমার ছবি আপলোড করিনি।
চ্যাটে নকঃ
জোহরাঃ hi। কার্দিঃ হেলো! তুমি নক করেছো জোহরা! আমি জানতাম তুমি নক করবে। আমার
প্রতিক্ষা ব্যার্থ হতে পারে না।
জোহরাঃ আমিও জানতাম আমি নক করবো।
কার্দিঃ কতোদিন তোমার সাথে চ্যাট করিনা! বিরহে এখন আমি অনলাইনই হই না।
জোহরাঃ এতো ভালোবাসো আমাকে?
কার্দিঃ পরীক্ষা করতে এসেছো?
জোহরাঃ নাহ, তোমাকে নিয়ে যেতে এসেছি।
কার্দিঃ lolz
জোহরাঃ তুমি আমাদের দলে যোগ দাও।
কার্দিঃ তুমি উন্মাদিনী।
তুমি রমনী এবং উন্মাদিনী। আমি যাবো না। বরং তোমার পাসওয়ার্ড নিয়ে তোমাকে আমাদের দলে রেখে দেবো।
জোহরাঃ lolz. হ্যাকিং এর যে শিক্ষা তোমার কাছে পেয়েছি তাকে এতো অবহেলা করোনা। জোহরা বেগমের পাসওয়ার্ড চুরি করবে সে ক্ষমতা তোমার নেই।
কার্দিঃ জোহরা!
জোহরাঃ আমাকে আর ডেকো না। না না না।
কার্দিঃ তাহলে এলে কেনো?
জোহরাঃ পোড়া শরীর ভার্চুয়াল বাধা মানে না।
কার্দিঃ আমাদের কি আর দেখা হবে না?
জোহরাঃ হয়তো এমন সময় তোমার প্রোফাইলে আসবো যখন তুমি আর ইন্টারনেট ব্যাবহার করবে না। যখন তুমি আর আমার ফ্রেন্ডলিস্টে থাকবে না।
যতোবারই তোমার প্রোফাইল পিকচার দেখতে চাচ্ছি ততোবারই ফেসবুক বলছে "you no longer
in kardii's friendlist ফ্রেন্ডলিস্ট। bye. keep f9.
জোহরা অফলাইন হয়ে যাবে, কার্দিকে ফ্রেন্ড লিস্ট থেকে ডিলিট করবে।
তৃতীয় দৃশ্যঃ
মঞ্চে গ্রুপ চ্যাট করছেন সুজা, নজীব
নজীবঃ এ অর্থহীন প্রতিক্ষা।
সুজাঃ কোন কিছুই অর্থহীন নয়। সব কিছুর পেছনে coz থাকে।
নজীবঃ সুজাউদ্দৌলা এখনই মারাঠাদের বিরুদ্ধে ফেসবুক যুদ্ধে নামতে চান না। আমার পক্ষে অনির্দিষ্ট কাল অপেক্ষা করা সম্ভব নয়। এই মাস পরে আমি কিছুদিনের জন্য ফেসবুক একাউন্ট ডি-একটিভ করবো।
সুজাঃ মানুষ মরে গেলে পচে যায়। বেচে থাকলে ফেসবুক একাউন্ট ডিএকটিভ করে।
কারণে অকারণে ডি একটিভ করে।
হঠাৎ দলে চ্যাটে যোগ দিলেন অযোধ্যার প্রধান আবদালী।
নজীবঃ এসে পড়েছেন সাদা নীল ফেসবুকের অন্যতম সেলিব্রিটি অন্তর্যালের অধিপতি আহমদ শাহ আবদালী দ্যা কিং।
সুজাঃ যার ফেক একাউন্ট ২০০ টি।
নজীবঃ যার প্রতিটিতে ফ্রেন্ড সংখ্যা ১০০০ এর বেশি।
সুজাঃ যার স্ট্যাটাস কমেন্ট আর লাইকে ভরে যায়।
নজীবঃ স্বাগতম আপনাকে। wc.
আবদালীঃ মনে মনে স্থির করেছি আমরা আর প্রতিক্ষা করবো না। আমার সব ফ্রেন্ডকে বলে দিয়েছি। তারা হাই স্পিড নেট নিয়েছে।
মারাঠাদের একাউন্ট রিপোর্ট করতে তারা প্রস্তুত।
নজীবঃ আপনার হুকুমের জন্য আমরা অপেক্ষা করছিলাম। শত্রু সেনা নিধনের জন্য সবাই অস্থির।
সুজাঃ কতোরাত না ঘুমিয়ে ফেসবুকে চ্যাট করেছি। এখন তো এসেছে সেই সময়।
এবার হবে রিপোর্ট।
চতুর্থ দৃশ্যঃ
গ্রুপ চ্যাট।
আবদালীঃ আজ আমরা জয়ী। ফেসবুক থেকে সমস্ত মারাঠা সৈনিকের একাউন্ট ব্যান করিয়েছি।
সুজাঃ এই রনাঙ্গনে জয়ী হওয়ার সব কৃতিত্ব প্রাপ্য আপনার আর আপনার ফেক একাউন্টের।
নজীবঃ আপনার পরাক্রমা ফেসবুকে সুবিদিত।
আবদালীঃ যা যা দেখেছি তা অবর্ণনীয়। আমার সব একাউন্ট অনলাইনে। মারাঠারা
পাত্তাই পাচ্ছে না। কেউ পালাচ্ছে, কেউ একাউন্ট ডি একটিভ করছে কেউ ব্যান
খাচ্ছে।
কার সাধ্য এদেরকে খোজে বের করে এখন?
সুজাঃ ইব্রাহীম কার্দীর কি অবস্থা?
আবদালীঃ তিনি ইন্টারনেট কানেকশন বিচ্ছিন করে চলে গেছেন। তাকে আর আমরা অনলাইনে দেখিনি।
সুজাঃ জোহরা এখনই এসে পড়বে। আমি তাকে কি জবাব দেবো?
আবদালীঃ বলবেন কার্দি ইন্টারনেট বিল না দেয়ায় তার নেট কানেকশন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
পঞ্চম দৃশ্যঃ
কার্দির ওয়ালে লিখেছেন জোহরাঃ
তুমি কেনো ইন্টারনেট কানেকশন বিচ্ছিন্ন করে দিলে? :'( কেনো? Why? আমি এতো কষ্টের আগুনে পুড়ে মনের বিষে জরজর হয়ে এতো হাই স্পিড ইন্টারনেট নিয়ে তোমাকে আবার ফ্রেন্ড ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছিলাম।
তুমি এক্সেপ্ট করেই অফলাইন হয়ে গেলে!
আমি এতো চিৎকার করে ডাকলাম তবু তুমি শুনলে না! যাবার আগে অন্তত পাসওয়ার্ডটা তো দিয়ে যেতে পারতে! :'( :'(
সুজা কমেন্টেড অন জোহরা'স ওয়াল পোস্টঃ যিনি প্রকৃত ফেসবুকার, বীর ফেসবুকার তিনি কখনো কাউকে তার পাসওয়ার্ড দেন না।
ছোট ফেসবুককে অবহেলা করে তিনি রিয়েল লাইফকে আলিঙ্গন করেছেন। তিনি শান্তিতে থাকুন।
সমাপ্ত।
ডিসক্লাইমারঃ এই লেখাটা লিখেছিলাম গত সেপ্টেম্বর মাসে।
"ফাটক" এর সাথে। দুটোই লিখেছিলাম একটা ফান ম্যাগাজিনের-র জন্য। ফাটক ছাপা হয়েছিলো সেপ্টেম্বর মাসেই। আর এটা ছাপা হওয়ার কথা ছিলো তার কিছুদিন পরে। কিন্তু তখন ফেসবুকে আরেকজন একই নামে একটি লেখা প্রকাশ করে ফেলেন।
যার ফলে এটা আর ম্যাগাজিনে-তে ছাপা হয়নি।
"রক্তাক্ত প্রান্তর নাটকের ফেসবুক ভার্সন" নামের যে লেখাটি ফেসবুকে আছে ওটা এবং এটা সম্পূর্ণ আলাদা। দুটার লেখকই আসলে মৌলিক লেখাই লিখেছেন। কাকতালীয়ভাবে দুজনেরটা মিলে গেছে।
এর আগে ব্লগস্পট ব্লগে প্রকাশিত।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।