আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ব্রায়ান হো'র কাছে নজরুলের অগ্নিবীনা



১.জানলা ভরা রিভার থেমস ওয়ার প্রটেস্টার ব্রায়ান হো কে গ্রেফতার করা হয়েছে। এখবরটি শোনার ও তাকে টেনে হিচড়ে ধরে নিয়ে যাবার দৃশ্যটা দেখার পর থেকে মনটা খারাপ হয়ে আছে। কোনভাবেই ভালো করতে পারছিনা। মাঝে মাঝে মন খারাপ হলে জানলার দিকে তাকিয়ে আকাশ দেখার চেস্টা করি। এ আমার পুরানা অভ্যাস।

সেটা দিন হোক অথবা রাত। আর প্রবাস জীবনে মন খারাপ নৈমিত্তিক ব্যাপার। অভ্যাস বসত প্রায়ই আমি জানলা ধরে তাকিয়ে থাকি। আমার ঘরের জানলা দিয়ে তাকালেই থেমস নদী দেখা যায়। মন খারাপ হলেই জানলা ধরে বাইরে তাকাই।

থেমসের দিকে চোখ গেলে ঠায় বসে থাকি। আমি প্রায় প্রতিদিনই থেমসের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করি। উপভোগ করি তার দু'পাশের মানুষের তৈরি অনুপম সৌন্দর্য। সুন্দরকে কেনা ভালোবাসে। আমি সেই সৌন্দর্যকে কে পূজা করি।

হয়তো তাই মাঝে মাঝে স্লোন স্ট্রীট ধরে হেঁটে চলে যাই থেমসের পাড়ে। পাতানো চেয়ারে বসি, ভাবি আমার ও নদীর পার্থক্য। চলে যাই দূর দিগন্তের অজানায়। রাতের সুনসান নিরবতায় মনে হয় কোন দিন যেনো মৃত্যই না হয়। আবার কখনো মনে হয় জন্মই হয়নি বিঝি এ পৃথিবীতে।

তারপর হাঁটি, হাঁটি চেলসী ব্রীজের উপর দিয়ে। ব্রীজের মনোরম আলোক সজ্জা আমাকে চমকে দেয়। নিজেই প্রশ্ন করি নিজেকে শত বছরের প্রাচীন এই ব্রীজটিতে আমার কোন স্বত্ব আছে কিনা?? কেবলই মনে হয়আমদের টাকায় তৈরি তোমাদের এই তিলোত্তমা নগরী লন্ডন। টের পাই আমার হৃদয় থেকে একটা স্ফুলিঙ্গ বেড়িয়ে আসতে চায়। কে যেনো সুকান্তের দিশলাই কাঠি নিয়ে এগিয়ে আসছে আমার ভেতরটা জ্বালিয়ে দিতে।

বিদ্রোহের আগুন। দূর্বীনত আমি তিতুমীরের মতো বাঁশের কেল্লা থেকে বেরিয়ে আসতে চাই, যাবতীয় শোষনের বিরুদ্ধে। আভিজাত্যের আলখেল্লায় মোড়া বিলেতবাসীকে জানিয়ে দিতে চাই, কোন কালেই তোমরা সভ্য ছিলেনা। লুটপাট যাদের পেশা তাদের তুলনা কেবল প্রস্তর যুগের গুহাবাসীদের সাথেই হতে পারে। আমার ইচ্ছে করে তিতুমীরের মতো একটা বাঁশের কেল্লা বানাতে পার্লামেন্ট স্কয়ারে।

আর ব্রায়ান হো'র মতো নয় বছর, সুদীর্ঘ নয় বছর ধরে ফিরিস্তি দিই ২০০ বছর শোষনের, আর উদাত্ব আহ্বান জানাই ক্ষমা প্রার্থনার জন্য। নজরুলের মতো কবিতায় প্রতিবাদ করি সকল শোষনের বিরুদ্ধে। ২.সভ্য পৃথিবী'র স্বরূপ আজ পৃথিবী বদলে গেছে। বদলে গেছে সব কিছুই। আসলেই কি বদলে গেছে? নাকি শক্তি'র রূপান্তর সূত্রের মতোই ব্যাপারটা।

খোলস পাল্টেসে মাত্র। মানুষ কি সত্যিই মানুষ হতে পেরেছে? আজ বদলে গেছে অমানুষ হওয়ার ধরন। চিন্তা-চেতনা প্রসারের মাধ্যমেই সেই শোষক সমাজ পৃথিবীতে আধিপত্য বিস্তার করছে। প্রকৃত অর্থে রাজ্যবিস্তার হচ্ছে মধ্যযুগীয় কায়দায় দেশ দখলের চেয়ে অনেক বেশী। মানুষ এখন ভাত না খেয়ে গ্লোবালাইজেশন খায়।

ক্লাইমেট চেঞ্জ বিষয়ক সামিটে মিলিয়ন পাউন্ড খরচ করে সামারি তৈরী হয় অশ্ব ডিম দিয়ে। আমরা বাহবা দেই। মানুষ পারমনবিক বোমার অভিশাপ বুঝেনা, বুঝে টেররিস্ট। বুঝেনা সবার উপরে মানুষ সত্য, অনুমান করার চেস্টা করে এ নামটার মধ্যে টেররিজম আছে কিনা? আজ পৃথিবী দুই ভাগে বিভক্ত এক ভাগ টেররিস্ট আর অন্য ভাগ আ্যন্টি টেররিস্ট। মানুষের স্বপ্ন গুলোও বোধহয় দু'ভাগে বিভক্ত হয়ে পরছে।

আমার প্রিয় বাংলাদেশ যার বাতাসে আমি লালিত, বেড়ে উঠেছি এবং নিঃশ্বাস নেয়া সেই বাংলাদেশও আজ দু ভাগে বিভক্ত হয়ে যাচ্ছে। আমার সোনার দেশের সোনার মানুষগুলোকেও বিভক্ত করার চেস্টা হচ্ছে, চলছে। তমসাবৃত জাতির প্রচ্ছদ প্রচ্ছন্ন নিদ্রায় নিদ্রিত মানুষ, পুরুষ। ৩.আমার দেশের মাটির গন্ধে.... চেলসী ব্রীজের সাথে আমার প্রিয় কীন ব্রীজের কোনই মিল নেই। শানে শাওকাতে চেলসী ব্রীজ এক প্রাসাদপ্রতীম, নির্মান শৈলীতে আছে দক্ষ কারুকাজ, রক্ষনাবেক্ষন নিয়ে কোন প্রশ্ন করার সুযোগ নেই।

সে তুলনায় সিলেটে'র কীন ব্রীজ চলাচলের অনুপযোগীই বলতে গেলে। তবুও কেনো যে মনটা কেঁদে উঠলো আপনার জন্য, নদী সুরমা, সুরমা আমাকে করে দিলো এলোমেলো। ইন্টারনেট রেডিওতে শুনতে পেলাম আমার দেশের মাটির গন্ধে ভরে আছে সারামন, শ্যামল কোমল পড়শ ছাড়া যে নেই কিছু প্রয়োজন.... টপ টপ করে চোখ থেকে পানি পড়ছে, কখোন যে কেঁদে ফেলেছি বুঝতেই পারিনি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.