বলবার আছে অনেককিছুই। কাউকেই বলিনি। আজ বলবো বলে খুলে নিয়ে বসেছি স্মৃতির ঝাঁপি।
সপ্তমাচর্যের পরেও আরো কিছু আশ্চর্য ব্যাপার থেকে যায়! কেউ কেউ সেসব আশ্চর্যগুলোকে অষ্টমাচার্য বলেন। আমারো ব্যক্তিগত তালিকায় কিছু আশ্চর্য বস্তু আছে।
এর একটি আসিফ ভাই। প্রথম যখন শুনি, বিশ্বাস করিনি। ধূর বলে উড়িয়ে দিয়েছি। আরেকদিন শুনলে, ভ্রুঁ কুঁচকে তাকাই। তাকানোর মধ্যেই প্রশ্ন ছিল: এটা কী করে সম্ভব? বাংলাদেশে জনসভায় লোক আনার জন্য টাকা দিতে হয়।
বক্স অফিস হিট সিনেমায়ও কয়েক শো পরে সিট ফাঁকা পড়ে থাকে। আর তার বক্তব্য শুনতে কিনা অডিটোরিয়াম পূর্ণ হয়। তাও আবার বিজ্ঞান বক্তৃতা। তাই কখনো বিশ্বাস হয়নি। কিন্তু একবার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে গিয়ে ব্যাপারটা টের পাই- ‘ইতিহাসে বিজ্ঞান’ বক্তৃতা অনুষ্ঠানে।
তারও আগে অবশ্য আসিফ ভাইয়ের সাথে পরিচয় হয়েছে। পরিচয়ে জেনেছি, মানুষ এমন হতে পারে। অসম্ভব স্বপ্নবান মানুষ তিনি। বিজ্ঞান নিয়ে স্বপ্ন দেখেন। স্বপ্ন দেখেন, একটি বিজ্ঞানমুখী জনগোষ্ঠী গড়ে তোলার।
সেজন্য বিজ্ঞান বক্তৃতা দিতে স্কুলে স্কুলে ঘুরে বেড়ান তিনি। এমনকি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ল্যাপটপ-প্রজেক্টর নিয়ে ছুটে যান।
আসিফ ভাইয়ের আগে পিছে কিছু নেই। আসিফ নামেই পরিচিত। পেশাদার বিজ্ঞান বক্তা তিনি।
বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে কেউ যে বক্তৃতা দেয়াটাকে পেশা হিসেবে নিতে পারেন, আসিফ ভাইয়ের সাথে পরিচয় না হলে জানতে পারতাম না। কিন্তু তিনি সেই দুঃসাহসটা দেখিয়েছেন। দুঃসাহস না বলে তাকে পাগলামী বলায় শ্রেয়। প্রগতিবিমুখ একটি সামাজিক কাঠামোর ভেতরে জ্ঞানকে গন্তব্য ধরে নিয়ে এই পাগলামীতে নেমে পড়েছেন। এবং এ কাজে আছেন দেড় যুগ ধরে।
মনে পড়ে, বছর পাঁচেক আগে একবার শীতলক্ষ্যা নদীর পারের কথা। ততদিনে অবশ্য স্টিমারের অহরহ ভেঁপু নেই। জুট কোম্পানিগুলোর নিরন্তর কোলাহল নেই। তবে জলের কুলুকুলু বয়ে চলা ঠিকই ছিল। সেই বয়ে চলা জলের পাশে বসে এক পড়ন্ত বিকেলে তার কথা শুনি আমি।
আসিফ ভাই তার বিজ্ঞানভিত্তিক সভ্যতার স্বপ্নের কথা বলতে বলতে চলে যান, ২ হাজার ৬০০ বছর আগের আয়োনীয় সভ্যতায়। সেখানকার পদ্ধতিগত বিজ্ঞানের প্রথম সংগ্রাম শুরুর গল্প শোনান। থেলিস, পিথাগোরাস, ডেমোক্রিটাস, অ্যানাক্সোগোরাস থিওডোরাস, আলেক্সান্দ্রিয়ার কথা বলেন। আমি বিজ্ঞানের মানুষ নই। এত কিছু বুঝি না।
তার কথায় শুধু হা হু করে যাই।
আমি কখনো বিজ্ঞান নিয়ে কিছু লিখিনি। বিজ্ঞান নিয়ে লিখবো সেই যোগ্যতা আমার নাই। তবে তার কি কারণে যেন বিশ্বাস, আমি লিখতে পারবো। সেজন্য তার বিজ্ঞান-সংস্কৃতি বিষয়ক লিটলম্যাগ ‘অফিয়াকাস’-এ লিখতে বলেন।
‘মহাবৃত্ত’ বলে বিজ্ঞান পত্রিকায় লিখতে বলেন। আবার বন্যা আপাকে পরামর্শ দেন, ডারউইন সংখ্যার জন্য আমার লেখা নিতে। তার পরামর্শ শুনে বন্যা আপা সুদূর আমেরিকা থেকে আমাকে মেইল পাঠান। মেইল পেয়ে আমি আমার অক্ষমতা নিয়ে নিশ্চুপ বসে থাকি। তারপর একদিন আসিফ ভাইয়ের দেখা হলে, লেখা না দেয়ার জন্য বকাবকি করেন।
আমি মাথা চুলকাই।
আজকে এতকিছু বলা, তার কারণ যে সংগঠনের মাধ্যমে দেশে বিজ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেয়ার পথে এগিয়ে চলছেন, সেই ডিসকাশন প্রজেক্ট-এর আঠারোতম বার্ষিকী। ডিসকাশন প্রজেক্টের মাধ্যমে আসিফ ভাইয়ের স্বপ্ন- মুক্ত চিন্তার স্ফুরণ ঘটুক দেশ জুড়ে। সবাই প্রশ্ন করতে শিখুক। মানব প্রজাতির উদ্ভব কিভাবে কিংবা আমরা কোথা থেকে এসেছি।
আমাদের গন্তব্যই বা কোথায়। মহাবিশ্বের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র আমাদের যে অবস্থান তাও জানুক জ্ঞানের মাধ্যমে। আমরা জানি, আসিফ ভাইয়ের এই পথচলা খুব কঠিন। এ ধরনের বিজ্ঞান কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য যে ধরনের অর্থ সহযোগিতার প্রয়োজন হয়, তার কিছুই পান না তিনি। এ নিয়ে দুঃখ আছে।
সে দুঃখ করেনও প্রকাশ্যে। তবে তার জন্য কাজ থামিয়ে রাখেন নি। স্বপ্নকে সমাপন করেন নি নিয়তির হাতে। তাই বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে, দূরে একদিন স্বাতী তারা জেগে উঠবেই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।