লেজী ফেলোর একটি চমৎকার পোষ্টে (এটা একটা মানবিক পোস্ট, রাজনৈতিক না) কমেন্টস করতে গিয়ে আমার এই লেখাটা শুরু করেছিলাম । সময়ের অভাবে পরে ফেইসবুকেই কমেন্টস করি এবং যথারীতি লিখাটাও সময়মত আর পোস্ট করা হয়ে উঠে নাই | অন্যের ব্লগে কমেন্টস করার নূন্যতম যো্গ্যতার যে শর্ত বিধি আরোপ করা হয়েছে যদিও তাতে এক প্রকারে আমাদের চারিএিক দৈন্যতাই প্রকাশ পায় কিন্তু তারপরও ব্যাপারটা মোটেও অনভিপ্রেত মনে হয়নি। কারণ অপ্রিয় এবং দুঃখজনক হলেও সত্য ,আমরা জাতি হিসেবে এখনও ততটা সভ্য হতে পারি নাই।
যাইহোক মূল প্রসঙ্গে আসা যাক। এই দৃশ্যটা আমি প্রায়ই দেখি।
সেদিনও দেখলাম। দুই পথচারী একে অপরকে অতিক্রম করছে । দুজনের সাথেই তাদের দুই পোষা কুকুর । একজনের কুকুর বিশালদেহী আর অপরজনেরটা বেশ খর্বাকৃতির । দুই মুনিব কাছাকাছি আসা মাত্রই দুই কুকুর ঘেউ ঘেউ করে একটি অন্যটির উপর আক্রমন করার উপক্রম ।
যদিও আকার আয়তনে একটি আরেকটির তিনভাগের এক ভাগও হবে কিনা সন্দেহ । কিন্তু ভাবখানা এমন যেন দুই কুকুর ই সমানে সমান | এটা হয়ত কুকুরের জাতির সহজাত ধর্ম । ভিন্ন ভিন্ন মুনিবসমেত তারা সমগোএীয়দের দেখলে একে অপরের উপর ঝাপিয়ে পড়তে চায় । কুকুরের ভাষা বুঝি না । জানিনা ,এটা কি এটা তাদের সমগোএীয়দের মধ্যে ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ,নাকি তাদের মুনিবদের সন্তুষ্টির জন্য নিজেদের জাহির করার প্রয়াস ,নাকি অন্য কিছু !
কিন্তু এই ব্যাপারটার সাথে বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ আর তাদের একনিষ্ঠ কর্মীদের বিশেষত ছাত্র এবং যুব সম্প্রদায়ের একটি অভিনব সাদৃশ্য পাওয়া যায় !ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক দলের মানে সরকারী আর প্রধান বিরোধী দলের দুই গ্রুপ একসাথে হলেই তারা একে অন্যের অপর ঝাপিয়ে পড়ে | কিন্তু কুকুরের মুনিবদের মত রাজনৈতিক নেতানেএীরা তাদের কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না |ফলশ্রুতিতে জীবন সংগ্রামী জনতার প্রায়শই দেখতে হচ্ছে গ্রুপে গ্রুপে সংঘর্ষ ,দেখতে হচ্ছে এক ছাএ অপর এক ছাএকে কোপানোর মত জঘন্য আর অমানবিক দৃশ্য ।
আমরা কুকুরদের ভাষা যেমন বুঝি না ,তেমনি রাজনৈতিক নেতা-নেএীদের কর্মকান্ডও বুঝতে পারিনা । তারা কি আসলেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না , নাকি নিয়ন্ত্রণ করতেই চায় না ! উপরন্তু একই মুনিবের একাধিক কুকুরাও রাস্তায় হয়ত অন্তত নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করেনা । কিন্তু আমাদের ছাএরা তাও করতে লজ্জাবোধ করে না । এরা কি আসলেই ছাএ নাকি ছাএ নামধারী শুধুই নোংরা রাজনৈতিক কর্মী ,নাকি আমাদের দেশপ্রমী রাজনীতিবিদদের রাজনৈতিক শিকার ।
দেশের স্বাধীনতার পেছনে আমাদের ছাত্র রাজনীতির এক গৌরবময় ভূমিকা ছিল |কিন্তু স্বাধীনতাওোর ছাত্র রাজনীতি আর একাওরের ছাত্র রাজনীতির মধ্যে যোজন যোজন দুরত্ব | বর্তমান ছাত্রদের রাজনৈতিক কর্মকান্ড কতটুকু দেশের স্বার্থে আর কতটুকু রাজনৈতিক দলগুলোর স্বার্থে তা আমাদের কাছে এখন দিবালোকের মতই পরিষ্কার ।
যে ছাত্ররাজনীতি এক ছাত্র অন্য ছাএকে কোপানোর অনুপ্রেরনা যোগায় ,তার প্রয়োজনীয়তা কতটুকু তা আমাদের রাজনীতিবিদরাই ভালো জানেন । ছাত্রদের শক্তি ও বল এখন রাজনৈতিক প্রতি হিংসায় ব্যবহারের জন্য দারুন এক অস্ত্র । কিন্তু এই অস্ত্র ব্যবহারের কূফল হয়ত আজকের রাজনীতিবিদরা দেখতে পাবে না কিন্তু দেশের পরবর্তী প্রজন্ম এর জন্য যে চরম মূল্য দেবে তাতে কোনো সন্দেহ নাই | মেধাবী আর প্রকৃত ছাত্ররা এখনি আর দেশের নোংরা রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত করতে চায় না নিজেদেরকে । হয়ত এমন দিন আসবে যখন এই লেজুর সর্বস্য রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত কর্মীরাই (যারা শুধুই নামধারী ছাত্র আসলে ) একদিন রাজনৈতিক উত্তরধিকারী হয়ে দেশের চালক হিসাবে সংসদে যাবে আর প্রকৃত ছাত্ররা সবাই দেশান্তরি হবার চেষ্টা চালাবে |অন্তত দেশ নিয়ে ভাববার মত মনমানসিকতা তাদের আর থাকবে না |
স্বাধীনতার পর চল্লিশ বছরের কাছাকাছি দেশ । নিজেদেরকে পুরো না হোক আংশিক সভ্য করে তোলার মত সময় আমাদের হয়ে গেছে ।
এভাবে জাতি হিসাবে আমাদের নিচে পড়ে থাকার দায় ভার কী নেবে ? এভাবে চলতে থাকলে স্বাধীনতার জন্য নিবেদিত প্রাণগুলো অচেরেই বলতে শুরু করবে এমন একটি দেশের জন্য আমরা প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিলাম ?কে জানে হয়ত বা কেউ কেউ বলছে ও ! আমাদের দুই নেত্রী আর অসংখ্য রাজনীতিবিদ যারা স্বাধীনতার নামে মুখে ফেনা তুলে ফেলেন তাদের কি এমন আশঙ্কার ভয়ে কখনই মধ্যরাতে ঘুম ভাঙ্গে না ?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।