কথা বলতে বলতে হাই উঠলো ওর। মুখটা হা করে পুরো হাইটা তুলতে পারলো না ও। `উফ' বলে দুই হাতের তালু দিয়ে মুখটা চেপে ধরে কোনমতে হাইটা সামলে নিলো ও। জিজ্ঞেস করলাম, `কোন সমস্যা হলো শাশ্বত?' কষ্টের ছাপটা এবার ওর চেহারায় স্পষ্ট হয়ে উঠলো। বললো, `ডান পাশের চোয়ালটা একদম শক্ত হয়ে গেছে ভাই।
কোন কিছু চিবোতে পারি না, মুখটা বড় করে হা-ও করতে পারি না। ' উত্তরটা শুনে অজানা শঙ্কায় মনটা কেঁপে উঠলো। এভাবে কি তবে একসময় কথা বলা বন্ধ হয়ে যাবে ছেলেটির?
বলছিলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শাশ্বত সত্য'র কথা। আমাদের শাশ্বত'র কথা। অবশ্য এখন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ ছাপিয়ে শাশ্বত হয়ে গেছে দেশের সবার।
এই ব্লগের অনেকেই হয়তো চিনতে পারছেন শাশ্বতকে। ১৯৯৮ সাল থেকে মরনব্যাধি অ্যানকাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস ক্রমেই ক্ষয়ে ফেলছে ওর শরীরের সমস্ত হাড় আর হাড়জোড়গুলো।
শাশ্বতকে নিয়ে যারা এই ব্লগে বহুবার ভালোবাসার কান্নায় ভেসেছেন, ওর বর্তমান অবস্থা জানলে হয়তো আঁতকেই উঠবেন তারা। অন্যরাও বাদ যাবে না শঙ্কা থেকে। গতকাল (১০.০৫.২০১০) দুপুরে ওর বাসায় গিয়েছিলাম।
ওর শারীরিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে শত অভাবেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছাকাছি কাজলার অক্ট্রয় মোড়ে বাসা ভাড়া নিয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক অরুণ সত্য আর একমাত্র পুত্রসন্তানের জন্য দিন দিন দুশ্চিন্তার অন্ধকারে ডুবে যাওয়া মা শিখা সত্য। শাশ্বতর অকৃত্রিম বন্ধু রুপম বাসার দরজায় নক করতেই ভেতর থেকে শাশ্বতর গলা ভেসে উঠে-`মা, দ্যাখো তো কে যেন এসেছে?' মা কাছেপিঠে হয়তো ছিলেন না। রুপম আরেকবার কড়া নাড়তেই যেন তেঁতে উঠে শাশ্বত-`কেউ কি বাসায় নাই? কে যেনো ডাকছে এতক্ষণ ধরে?' একটু পরে ঘরের পর্দা ঠেলে হুইল চেয়ারে বসা একজোড়া পা চোখে পড়লো আমার। পদা সরতেই ওর মলিন মুখ। শাশ্বতকে ক্র্যাচ ছাড়ানোর শপথে কাজে নেমেছিলাম আমরা।
সেই ওকে হুইল চেয়ারে দেখবো ভাবি নি। কড়া নাড়ার শব্দের বিছানা ছেড়ে একাই চলে এসেছে ও। পেছন পেছন ছুটে এসেছেন মা। দেরিতে দরজা খোলায় তখনো চেহারায় বিরক্তির ছাপ শাশ্বতর।
অনেক কষ্টে হুইল চেয়ার থেকে বিছানায় গেলো শাশ্বত।
আমার দিকে তাকিয়ে বলল, `সুজন ভাই আপনার চেহারা এত নষ্ট হয়ে গেল কেন?' আমি কোন জবাব দিলাম না। শাশ্বতকে এভাবে দেখার কোন কল্পনাই ছিল না আমার। সর্বশেষ মাস দুয়েক আগে ওকে ক্র্যাচ হাতে দেখেছিলাম। বললাম, `আমার কথা বাদ দাও, তুমি কেমন আছ?' বেশ মলিন সুরে বলল, `ভালো নেই, সুজন ভাই। ' জানলাম, কয়েকমাস হলো ওর হাঁটাচলা বন্ধ হয়ে গেছে।
ফুলে গেছে হাঁটু। দিনরাত কোন সময়েই দুচোখ জুড়ে নেই একফোঁটা ঘুম। হিপজয়েন্টের হাড়গুলো আগের চেয়ে নড়বড়ে হয়ে গেছে। গত শনিবার (০৮.০৫.২০১০) পরীক্ষা করে দেখা গেছে ওর শরীরে রক্তের হিমোগ্লোবিসন কমে গেছে, অস্বাভাবিকভাবে কমে গেছে রক্তচাপও। প্রতিদিন একটি করে ইঞ্জেকশন দিতে হচ্ছে ওকে।
খেতে হচ্ছে দিনে প্রায় ১৮টি ওষুধ। এছাড়া প্রতি বৃহস্পিতবার ওকে খেতে হয় একটি করে ওরাল কেমোথেরাপির ওষুধ। সব মিলিয়ে একবাক্যে বলতে পারি-একমদই ভালো নেই আমাদের শাশ্বত।
খুব অল্প কথায় লিখে ফেলা গেলো শাশ্বতর বর্তমান অবস্থা। কিন্তু ওর আর ওর পরিবারের কষ্টের বোঝা যে দিনদিন ভারি হয়ে উঠছে তা বোঝানোর মত শব্দ আমার জানা নেই।
শুধু ওর মায়ের কথাটা কারে বাজছে- `বাবা আমি তোমাদের কাছে এখনো দাবি করছি আমার ছেলেকে বাঁচাও তোমরা। ও হাঁটতে না পারুক, শুধু বেঁচে থাকার মতো সুস্থ্য করে দাও, বাবা। '
আজ আবার আপনাদের সামনে দাঁড়িয়েছি আমরা। ওর চিকিৎসা বাবদ এখনো যে ২৫ লাখ টাকা দরকার তার জন্য সহায়তা দরকার আপনাদের সবার। একটি কনসার্ট যদি আমরা করতে পারি তাহলে একটি বড় অঙ্কের টাকা হয়তো আসবো।
পাশাপাশি আপনাদের সহায়তা আবার সাহস জোগাবে আমাদের, জোগাবে অর্থও। প্লিজ, আমরা হারতে চাই না।
বলতে খুব কষ্ট হচ্ছে, তবু বলি। শাশ্বত সেদিন ওর মাকে বলেছে, `মা টাকা তো আর জোগাড় হলো না। আমি তো আর বাঁচবো না।
মারা যাবার পর লাশটি প্রথমে আমার সাংবাদিকতা বিভাগে নিয়ে যাবে। তারপর অন্য কোথাও। ' গতকাল কথাগুলো আমাকে জানাতে গিয়ে চোখের পানি আর ধরে রাখতে পারেন নি মা। পারি নি আমিও। হয়তো চোখের কোন ভিজে উঠেছে আপনাদেরও।
জোর গলায় কিছু বলতে পারি নি দুখিনী মাকে। মনের ভেতর শুধু প্রশ্ন জাগে-কীসের দিকে এগুবে শাশ্বত-মৃত্যু নাকি জীবন? মনে মনে শুধু বলি-লাশ হয়ে নয়, ক্র্যাচ হাতে নয়-মতিহারের সবুজ চত্ত্বরে নিজ পায়ে দাঁড়ানো শাশ্বতকে দেখতে চাই আমরা। আসুন না সবাই মিলে আবারো এই স্বপ্ন পূরণের লড়াইয়ে নামি। আসবেন? প্লিজ...
শুরুর কথা : ২০০৮ সালের মে মাসে গণযোগাযোগ এ সাংবাদিকতা বিভাগ শাশ্বতকে বাঁচাতে শাশ্বত চিকিৎসা সহায়তা কমিটি গঠন করে। সেসসময় এই ব্লগে ওকে বাঁচানোর আহ্বান জানাই আমি।
তাতে মেলে অভূতপূর্ব সাড়া। ব্লগাররা একটি ছাদের নিচে দাঁড়িয়ে জোগাতে থাকেন শাশ্বতকে বাঁচানোর অর্থ। পাশাপাশি বিভাগের শিক্ষক আর ছেলে-মেয়েরাও চষে বেড়াতে থাকে পথ-ঘাট। সবার লক্ষ্য একটাই-শাশ্বতকে বাঁচাবই।
২০০৮ সালের অক্টোবর-নভেম্বর নাগাদ শাশ্বত'র তহবিলে প্রায় ১৫ লাখ টাকা জমা পড়ে।
এর মধ্যে সেসসময় সামহয়্যার ইন ব্লগের ব্লগারদের কর্মতৎপরতা আমাদের জোগান দিয়েছিলো ৪ লাখ ৮২ হাজার টাকা।
২০০৮ সালের শেষ নাগাদ চিকিৎসার প্রথম পর্যায় শুরু করতে ভারতের ভ্যালোরে নিয়ে যাওয়া হয় শাশ্বতকে। সেখানে ওর ঝুড়ঝুরে হয়ে যাওয়া হাড়গুলোকে অপারেশনের জন্য কিছুটা সবল করতে দেয়া হয় ৪টি ইঞ্জেকশন (ইনফ্লিক্সিম্যাব রিকম্বিন্যান্ট) সহ আরো কিছু চিকিৎসা। বেশ সফলতার সঙ্গেই প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ করে ২০০৯ সালের শুরুতে দেশে আনা হয় শাশ্বতকে। ভ্যালোরের চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন, ২০০৯ সালের নভেম্বরের মধ্যেই শাশ্বতর নষ্ট হয়ে যাওয়া দুটে হিপ জয়েন্ট বদলানোর অপারেশন অবশ্যই করাতে হবে।
কিন্তু এরপর আর তেমন একটা এগুতে পারি নি আমরা।
ওর নষ্ট হয়ে যাওয়া দুটো হিপ জয়েন্ট আর হাঁটুর জয়েন্ট বদলানোসহ তখন (২০০৯ সালের শুরুতে) ওর চিকিৎসার পরবর্তী খরচ দাঁড়ায় প্রায় ২৫ লাখে। আর ওর প্রথম পর্যায়ের চিকিৎসা শেষে ওর সহায়ত তহবিলে তখন আর ২ লাখ টাকার বেশি নেই। আবারো মাঠে নামি আমরা। টার্গেট নিই কনসার্ট করার একাধিকবার উদ্যেগ নিলেও বারবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অনির্ধারিত ছুটির ফাঁদে পড়লেই আমরা সফল হই না।
এরইমাঝে ওর বেঁচে থাকার তাগিদে আরো প্রায় দেড়লাখ টাকা খরচ করে ভারত থেকে ওর জন্য বোনিস্টা (প্যারাথাইরয়েড হরমোন) নামের ইঞ্জেকশন আনা হয়েছে। আজ (১১.০৫২০১০) জানা গেলো ওর চিকিৎসা তহবিলে আর মাত্র ৫০ হাজার টাকা রয়েছে।
সহায়তা পাঠনোর ঠিকানা:
১.
শাশ্বত চিকিৎসা সহায়তা
অ্যাকাউন্ট নম্বর: ৩৪২৬০৪৯৮, অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড,
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা, রাজশাহী।
২.
Saswota Chikitsa_Sohayota' AC no: 135-101-33705, Swift Code: DBBL BD DH 100, Dutch-Bangla Bank Lomited.
ব্লগ কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ সবার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য কিছু সময় পোস্টটি স্টিকি করা যায় কি না-দয়া করে বিবেচনরা করবেন।
মুল লেখাটার লিংক
এখানে
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।