বাংলায় কথা বলি,বাংলায় লিখন লিখি, বাংলায় চিন্তা করি, বাংলায় স্বপ্ন দেখি। আমার অস্তিত্ব জুড়ে বাংলা ভাষা, বাংলাদেশ।
জে আই সাগরের ব্লগ থেকে নেয়া মূল গল্পটি :
"হয়তে অনেকেই জানে, তবুও লিখছি, শুনেছিলাম আর মনে লালন করি সযতনে সব সময়"
এক সুন্দরী স্ত্রীর ভালবাসায় উম্মাদ হল । তাকে বার বার ভালবাসি বলেও বিশ্বাস করাতে পারেনা। একদিন বলল সত্যিই তোমাকে পৃথিবীর সব কিছুর চাইতেও বেশি ভালবাসি।
যথা উত্তর করল প্রিয়তমা স্ত্রী... কী প্রমান দেবে। প্রতি উত্তর তুমি যা বল। ঠিক আছে যদি তুমি সত্যিই আমাকে ভালবাস তবে তোমার মায়ের কলিজা এনে দেখাও। উম্মাদ হয়ে চলে গেল মায়ের কাছে। মা'কে হত্যা করল।
এবং কলিজা খুলে হাতে নিয়ে তীব্র গতিতে ছুটল ভালবাসার প্রমান করতে। হঠাৎ পাথরের সাথে হোচট খেয়ে বলল.. উহ! মা! মায়ের কলিজা থেকে আওয়াজ এল বাবা তুই ব্যথা পেয়েছিস। কর্ণপাত না করে মেয়েটির কাছে গিয়ে বলল এই নাও আমার মায়ের কলিজা। মেয়েটি তখনি বলে উঠল যে ছেলে আমার ভালবাসার প্রমান দিতে নিজের মাকে হত্যা করে, কি করে মেনে নেব যে অন্য কারো ভালবাসা প্রমান করতে সে আমাকে হত্যা করবেনা। এই বলে তাকে ফিরিয়ে দিল, ব্যর্থ হয়ে অবশেষে সত্যিকারের পাগল হয়ে গেল।
“ মা'কে নিয়ে লিখতে গেলেই মনে পড়ে যায় সেই ছেলেটির কথা, যে প্রিয়তমাকে উপহার দেবে বলে মা'র হৃৎপিন্ডটা ছিড়ে নিয়ে যাচ্ছিলো। পথে হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলে মা'র হৃৎপিন্ড বলে ওঠে - "বাবা, ব্যাথা পেলি?"
অন্য সবার মতো এই অংশটুকু পড়ে ধাক্কাটা আমিও খেলাম। সেই পুরাতন বউ-শ্বাশুড়ী কলহের পরিনিতিতে উপন্ন গল্প । যে গল্পে কোন এক যুবকের প্রিয়তমা কে অনেক নিষ্ঠুর আর হিংস্র দেখানো হয়েছে। সেই নারী তার প্রেমিক প্রবর কে বলেছে যে তার মায়ের হৃৎপিন্ড কেটে নিয়ে আসতে পারলে সে বুঝতে পারবে যে যুবকটি সত্যি সত্যি তাকে ভাল বাসে!
এ কেমন গল্প? কেন একটি নারীকে বড় করতে গিয়ে অন্য একটি নারীকে খাটো করা!? অশিক্ষিত আর কুসংস্কারাচ্ছন্ন গ্রামাঞ্চলে যুগ যুগ ধরে চলে আসা এই গল্পটিকে আর কেউ ব্যবহার করবেন না, প্লিজ! এটা কোন ভাল উদাহরণ হতে পারেনা।
এক জন মা যেমন তার সন্তানকে অনেক ভালবাসেন তেমনি সন্তানও তার মাকে কম ভালবাসে তা মনে করার কোন কারণ নাই। মমতার অসীম বাধনে বাধা তাদের সম্পর্ক।
এক জন পুরুষের জীবনে দুই জন নারী আসেন। দুই জনই আসেন অনেক নিবিড়ভাবে কিন্তু সম্পূর্ণ দুটি ভিন্ন রূপে, ভিন্ন পরিচয়ে। কারো সাথেই কারো তুলনা করা উচিত নয় বলে আমি মনে করি।
এক জন পুরুষের জীবনে মা যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি তার কাছে তার স্ত্রীও অনেক গুরুত্বর্পূণ। কেবল মাত্র নির্বোধ ব্যক্তিরাই এই দুই জনের তুলনা করে। মায়ের স্থান মায়ের কাছে। স্ত্রীর স্থান স্ত্রীর কাছে। তাই অহেতুক তুলনা করে এই দুই জন রমনীর মাঝে বিভেদের দেয়াল তুলে দেয়াটা অসমীচীন বলেই আমার কাছে প্রতীয়মান হয়।
আজ যিনি স্ত্রী ,ক'দিন পরেই তিনি মা হবেন। তিনি তার সন্তানের জন্য অপার মমতা বক্ষে লালন করবেন এটাই স্বাভাবিক। এ কজন নারী একই সাথে কন্যা, জায়া, জননী। খাটো করবেন কাকে?
লোক মুখে প্রচলিত একটি গল্পের রেশ ধরে তাই মাকে বড় দেখাতে গিয়ে প্রিয়তমা তথা স্ত্রীকে খাটো দেখানোর মাঝে কোন কৃতিত্ব আছে বলে আমি মনে করি না। এক জন পুরুষ যেমন তার মাকে ভালবাসে তেমনি তার প্রিয়তমা স্ত্রীকেও ভালবাসে।
এই ভালবাসাকে খাটো করে দেখার কোন কোন সুযোগ নেই। সুযোগ নেই দুই রমনীর মাঝে বিভেদের দেয়াল তুলে দেয়ার। আজ যে প্রিয়তমার আসনে কাল সে স্ত্রী হবে। পরশু সে মা হবে। এই ভাবেই তো যুগ যুগ ধরে চলছে পৃথিবী।
চলবে আজীবন।
আমি বিশ্বাস করি না কোন মেয়ে তার প্রিয়তমাকে তার ভাল বাসা পরীক্ষা করার জন্য তার মায়ের হৃৎডপিন্ড কেটে বের করে নিয়ে আসতে বলবে। আমি আরো বিশ্বাস করি না যে, এমন কোন কুপুত্র নেই যে একটি মেয়ের কথায় ভালবাসা প্রমাণ করার জন্য তার জন্মদাত্রী মাতার হৃৎপিন্ড কেটে বের করে নিয়ে ঐ মেয়েকে উপহার দিবে। ভালবাসা কি এতোই ঠুনকো যে এই ধরনের নিষ্ঠুরতার মধ্যে দিয়ে তার প্রমাণ দিতে হবে? ভালবাসা প্রমাণ দেয়ার বিষয় নয়। একান্তই অনুভবের একটি বিষয়।
এই অনুভূতি সবার মাঝে থাকতে হবে। শুধু শুধু কেবল মেয়েদের দোষ দিয়ে বাহাদুরী দেখিয়ে কি লাভ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।