আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পাঁচটার ট্রেন কয়টায় ছাড়ে



ম্যাচের কাঠির মতো সোজা হয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। লাইনে বেলাইন হলেই মুশকিল। জ্যামে আটকা পড়া গাড়ির মতো লাইন একটু একটু করে কাউন্টারের দিকে এগুচ্ছে। আমার সামনে যিনি ছিলেন তিনি সিরিয়াল পাওয়া মাত্র কাউন্টারের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে দিলেন। পারলে মাথাটাও ঢোকাতেন কিন্তু সেটা সম্ভব নয়।

বেচারা মাথা হেলিয়ে এক চোখ বন্ধ করে কাউন্টারের ওপাশটায় উঁকি দিয়ে বললেন, : ভাই আম্বিয়া বুর একটা টিকিট দ্যান। : ট্রেন তো আম্বিয়া বু যায় না। ওপাশ থেকে স্টেশন মাস্টারের গলা শোনা গেল। রোবট টাইপের গলা। : ছোরি ভাই! আম্বিয়া বু মানে বুবুর জন্য একটা টিকিট দ্যান।

বেচারা টিকিট নিয়ে সরতেই আমার পালা। এক পা এগিয়ে এসে কাউন্টারে হাত ঢুকিয়ে দিতেই পুনরায় রোবট গলা শোনা গেল, : কই? : টঙ্গি। কিন্তু আজ মনে হয় ট্রেন লেট। পাঁচটার ট্রেন কয়টায় ছাড়বে? : চারটা ষাট মিনিট। বুঝলাম রোবটের সাথে কথা বলে লাভ নেই।

টিকিট হাতে নিয়ে প্লাটফর্মে এসে দাঁড়ালাম। পাঁচটা টপকে ঘড়িতে এখন পাঁচটা পাঁচ। অথচ ট্রেনের দেখা নেই। অপেক্ষমান যাত্রীদের মধ্যে কেউ কেউ মানিব্যাগের চিপা থেকে ত্যানাত্যানা দুই টাকার নোট বের করে বাদাম কিনে চিবুচ্ছে, কেউ বসে ঝিমুচ্ছে, কেউ রস মাখিয়ে বলছে, অনেকেই তা শুনছে, শুনে কেউ হাসছে, হাসতে হাসতে অনেকে ফাঁসছে(মানিব্যাগ গেল কই!), ফাঁস খেয়ে কেউ তাই ঘামছে। আর যারা ঘামাঘামিতে নেই, স্টেশনের আপেল-কমলা দামাদামিতে নেই, মালামাল টানাটানিতে নেই, রাজনীতির চাপাচাপিতে নেই তারা জানাজানিতে ব্যস্ত।

অর্থাৎ তারা পড়ছে। এ ধরনের পাঠক সাধারণত পত্রিকার প্রথম পাতা থেকে শুরু করে পাত্র চাই বিজ্ঞাপনের পাতাও পড়েন। সে তুলনায় বলেন কম। তারপরও রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি, রাষ্ট্রনীতি, দুর্নীতি, সুনীতি বারো ভাজা আলোচনায় পুরো প্লাটফর্ম গমগম করছে। আমি তিতিবিরক্ত হয়ে বসে আছি।

এমন সময় আম্বিয়া বুর সাথে দেখা হয়ে গেল। বুবুর পাশে সেই ভদ্রলোক। সম্ভবত বুবুকে ট্রেনে তুলে দিতে এসেছেন। এখন ট্রেনের বাবা মা তুলে গালাগাল করছেন। কারণ ট্রেনের তখনও দেখা নেই।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।