বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজীনাকে ই-মেইলের মাধ্যমে চিঠি পাঠিয়েছেন। আর এ চিঠিটি তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়। আজ বুধবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি তাঁর দপ্তরে সাংবাদিকদের কাছে এ মন্তব্য করেছেন।
অন্যদিকে, সকালে আমেরিকান সেন্টারে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ড্যান মজীনার কাছে চিঠি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। তিনি এ বিষয়ে পাটমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দিয়েছেন।
মজীনাকে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে চিঠি দিয়ে কূটনীতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘিত হয়েছে কি না, জানতে চাইলে দীপু মনি বলেন, ‘গণমাধ্যমে প্রকাশের আগে চিঠির বিষয়ে অবহিত ছিলাম না। চিঠিটি তিনি (বস্ত্রমন্ত্রী) ব্যক্তিগত ই-মেইলের মাধ্যমে পাঠিয়েছেন। এটি কোনো সরকারি প্যাডে পাঠানো হয়নি। ’
তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বাদ দিয়ে এভাবে চিঠি দেওয়াটা কূটনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘন কি না, সে বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
চিঠির ব্যাপারে মন্তব্য নেই মজীনার
‘এ ব্যাপারে আমার কোনো মন্তব্য নেই।
এ ব্যাপারে তাঁরই (পাটমন্ত্রীর) মন্তব্য নিন। তিনিই জানেন কী বলতে চাইছেন। আমার সেটা জানার কথা নয়। যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেড ইউনিয়ন নিয়ে মিথ্যা তথ্য দেওয়া হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে ৫০টি অঙ্গরাজ্য রয়েছে।
এসব রাজ্যের সবগুলোতেই ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার রয়েছে। তবে সামগ্রিকভাবে তাজরীন ও রানা প্লাজার ঘটনাগুলো খুবই বীভত্স। তাজরীন ফ্যাশনের অগ্নিকাণ্ড আর রানা প্লাজার ভবনধস সবচেয়ে কালো অধ্যায়। ’
সেই চিঠি
তৈরি পোশাকশিল্পে ট্রেড ইউনিয়ন থাকার বিষয়ে একটি পত্রিকায় প্রকাশিত বক্তব্যের সূত্র ধরে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজীনাকে গত সোমবার চিঠি পাঠান বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী।
চিঠিতে পাটমন্ত্রী বলেন, ‘আমি সত্যি হতবাক তৈরি পোশাকশিল্পে ট্রেড ইউনিয়ন চালুর বিষয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের ওপর সরাসরি চাপ সৃষ্টি, তাঁর কূটনীতিক শিষ্টাচার এবং পদমর্যাদার সাথে সামঞ্জস্য কি-না।
বরং তাঁর মন্তব্য দেশের সরকারের প্রতি অনধিকার চর্চাপ্রবণ, পীড়াদায়ক এবং উসকানিমূলক বলে মনে হতে পারে। বর্তমানে আপনার নিজের দেশ যুক্তরাষ্ট্রের কয়টি অঙ্গরাজ্যে উত্পাদনশীল শিল্পে ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার রয়েছে? ট্রেড ইউনিয়ন থাকা না-থাকা অপরিহার্যভাবে একটি দেশের সরকারের অভ্যন্তরীণ বিষয়। ’
সুলতানা কামালের বক্তব্যে হতাশা
সম্প্রতি জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের শুনানিতে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুম নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য হতাশাজনক বলে মন্তব্য করেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল।
এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে দীপু মনি বলেন, ‘এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। কারণ, জেনেভায় মানবাধিকারবিষয়ক শুনানিতে বক্তৃতা দেওয়ার পর তিনি (সুলতানা কামাল) আমাকে জড়িয়ে ধরে অভিনন্দন জানান।
আমি জানি না এরপর এমন কী ঘটেছে তিনি এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। ’
জিএসপি নিয়ে মার্কিন মনোভাব ইতিবাচক
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পণ্যের অগ্রাধিকারমূলক বাজার-সুবিধা (জিএসপি) প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দীপু মনি বলেন, ‘জন কেরি ও মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে আলোচনায় জিএসপির ব্যাপারে তাঁদের ইতিবাচক মনোভাব পেয়েছি। শ্রম আইন সংশোধনসহ পরিস্থিতির উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট সবাই মিলে যত দ্রুত সম্ভাব্য পদক্ষেপ নিতে পারব, সেগুলো আরও দৃশ্যমান হবে। তখন তাঁদের বোঝাতে আমাদের সুবিধা হবে।
আমরা চাই জিএসপি-সুবিধা অব্যাহত থাকুক। ’ তবে তিনি স্বীকার করেছেন, জিএসপির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এখনো উদ্বেগ রয়েছে।
মন্ত্রিসভার অনুমোদন ছাড়া টিকফা নয়
সম্প্রতি ওয়াশিংটন সফরের সময় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতার রূপরেখা চুক্তি (টিকফা) নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির সঙ্গে তাঁর আলোচনা হয়নি বলে উল্লেখ করেন দীপু মনি। টিকফা কবে সই হবে, জানতে চাইলে দীপু মনি বলেন, মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর চুক্তিটি সই হবে।
সংলাপ নিয়ে বিরোধী দল বিভ্রান্তির সৃষ্টির চেষ্টা করছে
সংলাপের ব্যাপারে বিরোধী দল বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছে, অভিযোগ করে দীপু মনি বলেন, সংলাপ নিয়ে তারা সমস্যার সৃষ্টি করছে।
মনে হচ্ছে তারা নির্বাচন বর্জনের চিন্তা করছে। এ জন্য তারা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে।
রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে বিনিয়োগকারীরা উত্সাহ হারাচ্ছেন। সম্প্রতি বিভিন্ন দেশের পক্ষ থেকে এমন অভিমত দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে দীপু মনি বলেন, ‘আমি মনে করি না বিদেশি বিনিয়োগ বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ কমেছে।
তাদের উত্সাহ বরং আগের চেয়ে বেড়েছে বলেই আমি মনে করি। বিনিয়োগের প্রবণতার পরিসংখ্যানের দিকে চোখ রাখলেই আমরা এটা বুঝতে পারব। ’
সুখরঞ্জন বালির ব্যাপারে তথ্য নেই
আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের সামনে থেকে অপহূত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের সাক্ষী সুখরঞ্জন বালি কলকাতায় কারাবন্দী কি না, সে ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে তথ্য নেই।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘এ ব্যাপারে কলকাতায় বাংলাদেশ উপহাইকমিশনের কাছে জানতে চেয়েছি। তাদের কাছে জেনেছি, কলকাতায় বাংলাদেশের ১৩০ জন কারাবন্দী রয়েছে।
তাদের মধ্যে উল্লেখিত ব্যক্তি রয়েছেন কি না, জানতে পারিনি। কলকাতায় কারাবন্দীদের তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে রয়েছে। ’।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।