কালের সাক্ষী
ল্যাবএইডের চিকিৎসায় সুস্থ হয়েও হাসপাতালের পাওনা টাকা পরিশোধ করতে না পারায় রিলিজ নিতে পারছেন না ফাতেমা বেগম । সমকাল
নাহিদ তন্ময়
কিডনি রোগে আক্রান্ত বিধবা মায়ের চিকিৎসা করাতে ল্যাবএইড হাসপাতালে গিয়ে মহাবিপাকে পড়েছেন সন্তানসম্ভবা লতা। গত ১৩ এপ্রিল মা ফাতেমা বেগম অসুস্থ হয়ে পড়লে এক প্রতিবেশীর সহায়তায় রাত সাড়ে ৩টায় মাকে ভর্তি করান ল্যাবএইড হাসপাতালে। বিপুল অঙ্কের হাসপাতালের বিল দিয়ে মাকে ছাড়িয়ে নিতে না পেরে নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন লতা। কারণ প্রথম ৩ দিনে হাসপাতালের বিল হয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
কিন্তু ফাতেমা বেগমের মেয়ে লতার পক্ষে এত টাকা পরিশোধ করা সম্ভব নয়। ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করে মাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে তিনি ব্যর্থ হন। এরপরও হাসপাতালের ৬৫২ নম্বর কেবিনে কেটে গেছে ১৪ দিন। এদিকে পাওনা টাকার অঙ্ক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখে। নিরুপায় লতা বাধ্য হয়ে মাকে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য নিজের অনাগত সন্তান বিক্রির প্রস্তাব করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে।
তাতেও রাজি হয়নি কর্তৃপক্ষ। পুরো টাকা পরিশোধ করলেই মুক্তি পাবেন ফাতেমা বেগম। অসুস্থ মাকে হাসপাতালে এনে মানসিক চাপে নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন সন্তানসম্ভবা লতা। ফাতেমা বেগমের মেয়ে লতা সমকালকে জানান, গত ১৩ এপ্রিল রাত সাড়ে ৩টায় অসুস্থ মাকে তিনি ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি করান। ৩ দিনেই তার মা সুস্থ হয়ে ওঠেন।
জানতে পারেন ৩ দিনে মায়ের চিকিৎসা খরচ বাবদ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু এত টাকা না থাকায় ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করে মাকে বাসায় ফিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন লতা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সাফ জানিয়ে দেয়, পুরো টাকা পরিশোধ না করা হলে রোগীকে ছাড়া হবে না। এরপর তার
মাকে হাসপাতালের ৬৫২নং কেবিনে পাঠানো হয়। এখনও ওই কেবিনেই আছেন ফাতেমা বেগম।
লতা আরও জানান, অনেক কষ্টে তিনি ৫০ হাজার টাকা সংগ্রহ করে মাকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রাজি না হওয়ায় দিন দিন তার বিল বেড়ে ৩ লাখ টাকায় পেঁৗছেছে। নিরুপায় লতা এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে একটি কিডনি বিক্রির প্রস্তাব করেন। তাতেও রাজি হয়নি কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ তিনি হাসপাতালের পরিচালকের সঙ্গে দেখা করে নিজের অনাগত সন্তানের বিনিময়ে মাকে ফেরত চান।
এ সময় তিনি পরিচালকের কাছে বৃদ্ধ মাকে ছেড়ে দিয়ে তাকে আটকে রাখার অনুরোধ করেন।
লতা জানান, তার বাবা ফকরুল ইসলাম ১৭ বছর আগে মারা যান। এরপর থেকে বাবার রেখে যাওয়া ডিপোজিটের টাকা এবং চাচাদের সহযোগিতায় তারা তিন বোন-মাসহ গুলশান ২নং রোডের ২৫নং বাড়িতে বাস করেন। মেজো বোন গত মাসে ইতালি গেছেন। ছোট বোন স্থানীয় একটি স্কুলে দশম শ্রেণীতে পড়ে।
গত বছর ফেব্রুয়ারিতে বরিশালের ঝালকাঠি এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রহমানের সঙ্গে লতার বিয়ে হয়। বিয়ের পর স্বামী মিজান যৌতুক হিসেবে সরকারি চাকরি জোগাড় করে দেওয়ার দাবি জানায়। কিন্তু সরকারি চাকরি জোগাড় করে দিতে না পারায় গত ৪-৫ মাস মিজান তার খোঁজ-খবর নিচ্ছে না। আগামী মাসে তার সন্তান ভূমিষ্ঠ হবে। এরই মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েন তার মা।
মাকে হাসপাতালে রেখে বাসায় থাকতে পারছেন না। আর এ কারণেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত মাকে ছেড়ে দিয়ে তাকে আটকে রাখার অনুরোধ করেছেন। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর হাসপাতালের পাওনা টাকার বিনিময়ে তিনি সন্তান দিয়ে যাবেন, তাতেও সম্মত হয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এ ব্যাপারে ল্যাবএইডের মিডিয়া কো-অর্ডিনেটর মেজবাহ কামাল সমকালকে জানান, লতার অভিযোগ ভিত্তিহীন। প্রথম দিকে ফাতেমা বেগমকে আইসিইউতে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
পরে ফাতেমা বেগমের দুই ছেলে ইংল্যান্ডে থাকেন_ এমন তথ্য দিয়ে তারা হাসপাতালের কেবিন নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। হাসপাতালের বিল সম্পর্কে তাদের প্রতিনিয়ত জানানো হতো। প্রথম দিকে তারা একসঙ্গে সব টাকা পরিশোধ করবেন বলে জানালেও গত সোমবার জানান, তাদের কাছে অত টাকা নেই। ফাতেমা বেগমের পরিবার মিথ্যা তথ্য দিয়ে সবাইকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন বলেও দাবি করেন মেসবাহ কামাল। ল্যাবএইড প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি বলেও তিনি জানান।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।