ঢাকায় নতুন আসছি। বন্ধু বলল, ' চল। তোরে ঢাকা শহর ঘুরিয়ে নিয়ে আসি। ' ঢাকা মানে ঢাকা। গাজীপুর, জয়দেবপুর নয়।
যেখানে ট্রাফিক জ্যাম, কানঝালা করা গাড়ির বিকট হর্ণের শব্দ, দমবন্ধ বিষাক্ত বাতাস নেই। হ্যা, এমনি এক ঢাকা। সবুজ লেক, গাছে ঢাকা প্রকৃতি, ভ্রমণপিয়াসুদের ভীড়, স্বাস্থ্যসচেতন অথবা ডায়াবেটিস সচেতন মানুষের কর্মব্যস্ততা, সংস্কৃতিপ্রেমীদের সংস্কৃতি চর্চা; সবমিলিয়ে আমার দেখা সে এক অন্য ঢাকা। সেই সাথে শোভাবর্ধণকারী ধানমন্ডির লেক জুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আড়ালে-আবডালে জনসম্মুখে লেকের প্রাণভোমরা অগণিত কপোত-কপোতিদের দল। মন দেওয়া-নেওয়া, মান-অভিমান; সব এক একটা জীবন্ত পান্ডুলিপি।
আলিঙ্গনাবদ্ধ জুটিগুলোকে দেখে মনে হয় স্বর্গীয় প্রতি মূর্তি। আহ্, এদের প্রেমের দৃশ্য দেখেও শান্তি। বন্ধু ফোরন কাটে,'জীবন তো কিছু করতে পারলি না। দেখ; দেখে যদি কিছু শিখতে পারিস। ' আমি আর কি শিখতে পারলাম।
আমার থেকে ধানমন্ডি লেকের বাদামওয়ালারা ঢেড় বেশি শিক্ষিত ! কী অবিলিলায় তারা কপোত-কপোতিদের ভালোবাসাবাসির মাঝে উপস্থিত হয়। 'স্যার বাদাম লিবেন, বাদাম। ' বাদাম বিক্রি হউক অথবা না হউক বিনা টিকিটে এতো কাছ থেকে ধানমন্ডি লেকের প্রেমলীলা দেখার সৌভাগ্য একমাত্র বাদামওয়ালাদের ভাগ্যেই জোটে। বাদামওয়ালাদের এই অবাধ স্বাধীনতা বুকের ভিতর চেপে রাখা ইর্শাটা জেগে ওঠে। ইশ, আর কিছু না হোক অন্তত বাদামওয়ালাও যদি হতে পারতাম!
প্রকৃতির নিয়মে ত্রস্তপায়ে ধানমন্ডি লেকে সন্ধ্যা নেমে আসে।
দিনের আলো কমার আনুপাতিক হারে কপোত-কপোতীদের সংখ্যা বেড়ে চলে। আরো বেশি তারা আলিঙ্গনাবদ্ধ। (একেই হয়তো বলে প্রেমের উদ্যম প্রকাশ। ) বেড়ে যায় বাদামওয়ালাদের ব্যস্ততা। কেবল আমাদের মতো ভবঘুরেরাই কোন কাজ খুঁজে পাই না।
ইচ্ছা হয় না, তবুও ফিরে যেতে হয় হতচ্ছাড়া যান্ত্রিক নগরে। যানজট, বিদ্যুৎ,পানি, বাসস্থান, ক্যারিয়ার, প্রতিনিয়ত হাজারো সমস্যা। তারও মাঝে কোন এক ক্লান্ত মুহুর্তে হঠাৎ ভেসে ওঠে বুক পকেটে জমিয়ে রাখা একটা স্বপ্ন, 'স্যার বাদাম লিবেন, বাদাম। '
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।