রাত তখন ১টা হবে । ডিজি-টাইল এর কল্যানে অন্ধকার আর গরম নিত্যসংগী। এই গরমে যেহেতু ঘুমানোও দায়, তাই সময়টা মুভি দেখে কাটাই। আজকের মুভি "প্যারানরমাল এক্টিভিটি" । শেষ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে হরর মুভি দেখে ভয় পেয়েছিলাম ।
তাও আজ থেকে ৪/৫বছর আগের কথা । মুভিটা ছিল "The Exorcist" । এর পর যতই হরর মুভি দেখেছি কেন জানি ভয় লাগেনাই, বরং মাঝে মাঝে ভ্যাম্পায়ার এর মুভি দেখে হাসি পেয়েছে । যা হোক, যা বলছিলাম ।
"প্যারানরমাল এক্টিভিটি" মুভিটার গাঁথুনি চমৎকার আর কুশিলবদের অভিনয় এতটাই জীবন্ত আর প্রানবন্ত ছিল যা দর্শককে বোকা বানানো আর ভয় পাইয়ে দেবার জন্য যথেষ্ট ।
মুভি দেখে শেষ করার পর আমি নেট এ খুজতে লেগে গেছি যে আসলেই কি কাহিনীর চরিত্রগুলোর মৃত্যু হয়েছে কিনা বা কাহিনী আসলেই সত্যি কিনা । সিনেমার শুরুতে একটা মেসেজ পুরা মুভির চিত্রই পালটে দিবে । মুভির প্রধান ২টি চরিত্র 'মিকা' এবং 'ক্যাথি', তারা ৩বছরের অধিক সময় ধরে একত্রে বসবাস করছে । তাদের বাড়িটাও দেখার মত । কিন্তু সমস্যা অন্যখানে ।
ছোটবেলা থেকেই ক্যাথির পিছনে পিছনে একটা অশরীরী আত্মা ঘুরে বেড়াচ্ছে । সে বিভিন্ন বয়সে কয়েক জায়গা পরিবর্তন করেও একি সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে । তার মানে সেই অশরীরী আত্মা ক্যাথির সাথে সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছে । পুরা মুভিটায় ৩য় চরিত্রের কাজ করেছে আরেকটি মুভি ক্যামেরা । ক্যাথির সংগী 'মিকা' ওই অশরীরী আত্মার কার্যক্রম বা চলাফেরা, শব্দ বুঝার জন্য ১টা মুভি ক্যামেরা দিয়ে সবসময় ক্যাথি কে ভিডিও করতে থাকে ও দিনের বেলা সেগুলা নিয়ে পর্যবেক্ষন করে ।
রাতে ঘুমানোর আগে সেই ক্যামেরা তাদের শোবার রুম এ সেট করে রাখে, এমন কি বাথরুমেও । তবে আশ্চর্য হবার বিষয় এই যে পুরা মুভিটাই ভয় পাবার মত কোন দৃশ্যই নাই কিন্তু আপনাকে সবসময় আকর্ষন করা আর ভয় পাবার মত বিষয় পুরোপুরি বিদ্যমান ।
তো প্রথম কয়েক রাত নির্বিঘ্নভাবেই কেটে যায় । কিন্তু তারপর আস্তে আস্তে ঘটতে থাকে বিপত্তি । অশরীরী আত্মার আগমন ঘন ঘন হতে থাকে ।
রাতে বিভিন্ন রকম শব্দ করে । ক্যাথি কে মোহাচ্ছন্ন করে ঘর থেকে বাহিরে নিয়ে যায় । ক্রমেই ক্যাথির জীবন বিপর্যস্ত হতে থাকে । এর মধ্যে ওইজা বোর্ড এ অশরীরী আত্মা কোন একটা বার্তা রেখে যায় । কাহিনী টানটান উত্তেজনা ।
আমার নড়াচড়াও প্রায় বন্ধ । বিদ্যুৎ চলে যাবার পরে মোম বা চার্জার কোনটাই জ্বালানো হয়নি । হঠাৎ রুমের মধ্যে কেমন জানি শব্দ করে উঠলো । আমিতো প্রমাদ গুনলাম । সিনেমার আত্মা কি আমার রুম এ চলে আসলো কিনা বা হেঁটে বেড়াচ্ছে কিনা ।
সিনেমা থামিয়ে দিয়ে শিরদাড়া খাড়া করে টানটান উত্তেজনা নিয়ে ল্যাপ্টপ কোল থেকে রেখে উঠে বিছানায় বসলাম । শব্দটা আবার আসছে । কিন্তু বুঝতে পারছিনা কিসের শব্দ । যদিও ভুতের ভয় নাই, তবুও মনের মাঝে কেমন জানি খচখচ করছিল । উঠে গিয়ে যে দেখবো বা চার্জার জ্বালাবো সেটাও করতে পারছিলাম না ।
এমন সময় সব রহস্য আরও ঘনীভুত করে ডিজিটাইল বিদ্যুৎ চলে আসলো ।
রহস্য ঘনীভূত এই কারনেই বললাম যে বিদ্যুৎ আসার পর দেখলাম আমার রুম এ একটা ব্যাটম্যান মানে বাদুর বা চামচিকা উড়াউড়ি করছে । এটাই এতখন শব্দ করছিল । সিনেমার ভৌতিক আবহ, সেই সাথে রুম এ বাদুর !! হরর বা ভ্যাম্পায়ার সম্পর্কিত সব সিনেমাতেই বাদুরের ছড়াছড়ি । আমি হাসবো নাকি কাঁদবো বুঝতেছিনা ।
এর মধ্যে সেটার উড়াউড়ি থেকে বাঁচার জন্য আমাকে রুমের এইমাথা থেকে ঐ মাথা দৌড়াদৌড়ি করতে হচ্ছে । এত বয়স হয়েছে এখনও কেন তেলাপোকা, মাকড়সা, বাদুর/চামচিকা এগুলার ভয় কাটেনাই সেটাই বুঝলাম না ।
যা হোক ফ্যানের কল্যানে বেশীখন দৌড়াদৌড়ি করতে হয়নাই । ভ্যাম্পায়ার বেটা ফ্যান এর আঘাতে সামান্য আহত হয়ে সাময়িক ধরাশায়ী । রহস্য এখানেই শেষ ।
শুরু হলো "প্যারানরমাল এক্টিভিটি" ও আমার আমার ভৌতিক অতিথির ফটোশেসন ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।