আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভারতীয় ছায়াছবি আমদানির সিদ্ধান্তে চলচ্চিত্রাঙ্গনে ক্ষোভ : রাজ্জাক, চাষী নজরুল, গাজী মাজহার, মৌসুমী ও শাকিব খান বললেন এর বিরুদ্ধে আমরা রাস্তায় নামব



ভারতীয় ছায়াছবি আমদানির সিদ্ধান্তে চলচ্চিত্রাঙ্গনে ক্ষোভ : রাজ্জাক, চাষী নজরুল, গাজী মাজহার, মৌসুমী ও শাকিব খান বললেন এর বিরুদ্ধে আমরা রাস্তায় নামব : এফডিসিতে আজ বিক্ষোভ বাংলাদেশে ভারতীয় চলচ্চিত্র আমদানি ও প্রদর্শনের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এর ফলে ভারতীয় চলচ্চিত্র বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহগুলোতে প্রদর্শিত হবে। বাণিজ্যমন্ত্রী লে. কর্নেল অবসরপ্রাপ্ত ফারুক খান গত শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে এই ঘোষণা দেন। সংবাদ সংস্থা এএফপিকে বাণিজ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, এদেশে ভারতীয় ছবি আমদানি ও প্রদর্শনের যে নিষেধাজ্ঞা ছিল তা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। সুতরাং অচিরেই দেশীয় সিনেমাহলগুলোতে ভারতীয় চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা যাবে।

এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আজ এফডিসিতে বিক্ষোভ সমাবেশ এবং আগামীকাল মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছেন সর্বস্তরের চলচ্চিত্র কর্মী। মহাসমাবেশ শেষে একটি প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করবে বলে প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতির সূত্র জানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার পর পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে সূত্র জানায়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শনের জন্য ভারতীয় চলচ্চিত্র আমদানির সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চলচ্চিত্র প্রযোজক, পরিবেশক ও শিল্পী সমিতি এবং চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বরা। নায়করাজ রাজ্জাক, চলচ্চিত্র পরিচালক চাষী নজরুল, চিত্রাভিনেত্রী মৌসুমী, চিত্রাভিনেতা শাকিব খান ও শহিদুল ইসলাম খোকন বলেছেন, এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে তারা রাস্তায় নামবেন।

বেশ কিছুদিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল, এদেশে ভারতীয় চলচ্চিত্র প্রদর্শনের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কয়েক দফা তথ্যমন্ত্রী এবং বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকও করেছেন চলচ্চিত্র স্বার্থরক্ষা কমিটি এবং প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতির নেতারা। বৈঠকে চলচ্চিত্রের নেতাকর্মীদের ভারতীয় ছবি প্রদর্শনের অনুমতি না দেয়ার বিষয়ে আশ্বস্ত করেছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী। তথ্যমন্ত্রী চলচ্চিত্র নেতাদের বলেছিলেন, তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। ভারতীয় ছবি এদেশে চলবে না বলে তিনি তাদের আশ্বস্ত করেছিলেন।

কিন্তু গত শনিবার বাণিজ্যমন্ত্রীর মন্তব্যে হতবাক হয়েছেন সিনেমাঅলারা। সিনেমার মাদার অর্গানাইজেশন হিসেবে খ্যাত বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির সভাপতি গাজী মাজহারুল আনোয়ার বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রী নিজেই আমাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, ভারতীয় চলচ্চিত্র এদেশে প্রদর্শন করতে দেয়া হবে না। কিন্তু এই আশ্বাসের পর হঠাত্ তিনি কেন এমন ঘোষণা দিলেন বুঝতে পারছি না। ভারতীয় চলচ্চিত্রকে অপসংস্কৃতি বলে আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, আমারা কোনোভাবেই এদেশে অপসংস্কৃতিকে প্রবেশ করতে দেব না। প্রয়োজনে রাস্তায় নামব।

চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি শওকত জামিল বলেন, অবৈধ ভিডিও পাইরেসিরোধে সরকারের কোনো পদক্ষেপ নেই, অথচ ভারতীয় ছবি আমদানিতে আগ্রহ দেখে হতাশ হয়েছি। যেভাবেই হোক এদেশে ভারতীয় চলচ্চিত্র প্রদর্শন রুখতে হবে। আর এজন্য আমারা সবাই ঐক্যবদ্ধ। চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি মিজু আহমেদ বলেন, প্রয়োজনে জীবন দেব, তবুও আমাদের এই শিল্পকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র মেনে নেব না। নায়করাজ রাজ্জাক আমার দেশকে বলেন, আজ থেকে বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু।

প্রয়োজন হলে আমরা রাস্তায় নামব। তারপরও সরকারের এই সিদ্ধান্তকে কোনোভাবেই মেনে নেব না। বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালক শহীদুল ইসলাম খোকন বলেন, এদেশে এখন পর্যন্ত সরকার একটি ভালো ল্যাব, ক্যামেরা, লাইট, এডিটিং, সাউন্ড সিস্টেমের ব্যবস্থা করতে পারেনি। পারেনি ভিডিও চোরদের রুখতে। আমাদের দেশে একটি সার্কেল ট্রলি কিংবা রিভার্স টেলিসিন মেশিন আসেনি।

সর্বোপরি সিনেমাহলের পরিবেশ ভালো করার জন্য সরকারের কোনো পদক্ষেপ নেই। সেন্সর নীতিমালা আর চলচ্চিত্র নীতিমালা তৈরি করতেই সরকার এখনও ব্যর্থ। এসব আমাদের দেয়ার পর যদি আমরা মানসম্পন্ন ছবি নির্মাণ না করতে পারতাম তাহলে ভারতীয় চলচ্চিত্র আমদানির বিষয়ে আলোচনা করা যেত। সরকার আগে আমাদের চলচ্চিত্রের কারিগরি সুবিধা, সিনেমাহল ও সেন্সর সুবিধা ভারতীয় সমমানের করুক তারপর ভারতীয় চলচ্চিত্রের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করবে। ঢাল-তলোয়ার ছাড়া আমাদের যুদ্ধে নামিয়ে দেয়া মানে মৃত্যুর দিকে ঢেলে দেয়া।

এমন সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই মানা যায় না। একুশে পদক এবং একাধিকবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের যে সাংস্কৃতিক চুক্তি রয়েছে, তাতে দু’দেশের সংস্কৃতি আদান-প্রদানের বিষয়টি রয়েছে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশে কেবল ভারতীয় চলচ্চিত্র চলবে, সেদেশে আমাদের চলচ্চিত্র চলবে না—এটা কোন ধরনের সিদ্ধান্ত? কিছুদিন আগেও ভারতে বাংলাদেশের স্যাটেলাইট চ্যানেল দেখা যেত। ওখানে আমাদের দেশের অনেক চ্যানেলই জনপ্রিয় ছিল। কিন্তু হঠাত্ করেই সেদেশের সরকার বাংলাদেশী সব চ্যানেল ভারতে প্রদর্শন বন্ধ করে দিয়েছে।

এ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের কোনো ভাবাবেগ নেই। সবচেয়ে বড় কথা কোনোভাবেই একতরফাভাবে এদেশে ভারতীয় ছবি প্রদর্শন করতে দেয়া যাবে না। নায়িকা মৌসুমী বলেন, এটা এক ধরনের ষড়যন্ত্র। ৩৮ বছর পর এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার কোনো মানে হয় না। কেন আমাদের সিনেমা দেখতে দর্শক সিনেমাহলে আসছে না—এ নিয়ে সরকারের দায়িত্বশীল কোনো মহল আজ পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে কোনো বৈঠক করেনি।

কেন আমরা ভারতীয় চলচ্চিত্রের সমমানের চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে পারছি না, আমাদের সমস্যা কোথায়—এসব নিয়ে সরকার কোনো দিন কারও কাছে কোনো প্রশ্ন করেনি। আসলে ক্ষমতাসীন সরকারের কিছু প্রভাবশালী মানুষ নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য এমন হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এমন সিদ্ধান্ত মেনে নেয়ার কোনো যুক্তি নেই। সময়ের সেরা নায়ক শাকিব খান বলেন, আসলে কিছু প্রেক্ষাগৃহ মালিকদের চক্রান্তের ফসল আজকের এই সিদ্ধান্ত। তারা নিজেদের সিনেমাহলের পরিবেশ ভালো না করে সিনেমার ওপর দোষ চাপিয়ে দিয়ে আমাদের শিল্পকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করছে।

সরকারের চিহ্নিত একটি মহলের সঙ্গে যোগসাজশে সিনেমাহল মালিকরাই ভারতীয় চলচ্চিত্র প্রদর্শনের জন্য ৩৮ বছরের সিদ্ধান্তকে বাতিল করেছে। যে করেই হোক এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে। তা না হলে আমাদের দেশে অপসংস্কৃতি চরম আকার ধারণ করবে। এমনিতে অনেক কষ্ট করে আমরা অশ্লীলতা থেকে সরে এসেছি। এখন ভালো চলচ্চিত্রের সংখ্যা বেড়েছে।

দর্শকও সিনেমাহলমুখী হচ্ছে। ঠিক এমন সময় এমন একটি সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। গত শনিবার বাণিজ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পর গতকাল এফডিসিতে হাজির হয়ে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেন নায়করাজ রাজ্জাক, সোহেল রানা, আলমগীর, ফারুক, ওয়াসিম, ডিপজল, মৌসুমী, রুবেল, মিজু আহমেদ, চাষী নজরুল ইসলাম, আমজাদ হোসেন, গাজী মাজহারুল আনোয়ার, শাকিব খান, অপু বিশ্বাস, পূর্ণিমা, ফেরদৌস, রিয়াজ, শহীদুল ইসলাম খোকন, কাজী হায়াত্, শওকত জামিল, শাহ আলম কিরণ, আমিন খান, শরিফ উদ্দিন খান দিপু, শামসুল আলম, খোরশেদ আলম খসরু প্রমুখ। উল্লেখ্য, ১৯৭২ সালে ভারতীয় চলচ্চিত্র আমদানি এদেশে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এই ঘোষণার ৩৮ বছর পর ক্ষমতাসীন সরকার ভারতীয় চলচ্চিত্র আমাদানি ও প্রদর্শনের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিল।

তথ্য সূত্র : দৈনিক আমারদেশ , ২৬.০৪.২০১০

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.