ভাঙ্গতে পারবে না আমি ভঙ্গুর নই। ছুঁতে পারবে না কভু যদি ক্ষিপ্র হই।
৫০,০০০ কোটি টাকা খরচ করে ময়মনসিংহের ত্রিশালে বঙ্গবন্ধু বিমান বন্দর করছে আমাদের আওয়ামী লীগ সরকার। এটা নাকি নির্বাচনী ইশতেহারায় ছিলো। আমাদের আগের দরকারী ইশতেহারা গুলো গেলো কই খালামনি?? আর কত জ্বালাবেন আমাদের? আমাদের দেশে কি বিমানে ট্রাফিক জ্যাম লেগে যায়? এই বিমান বন্দরের আগে আমাদের কি কি দরকার ছিলো?
দেখেছেন আমরা কেমন ভাঙ্গা রাস্তায় চলি? দেখেছেন আমাদের কোনো গ্রাম্য পথ আষাঢ় মাসে কেমন কর্দমাক্ত হয়? দেখেছেন দেশের ৮০ ভাগ মানুষ কিভাবে চলে ঐসব রাস্তায়? দেখেছেন কোনো কৃষক মাথায় ২ মন ওজনের ধানের বস্তা নিয়ে কত ঘাম ঝরিয়ে ঐসব রাস্তা পাড়ি দেয়? দেখেছেন কখনো কোনো ব্যাস্ত সড়ক নদীতে গিয়ে কিভাবে থেমে গেছে? ছোট্ট একটা ব্রীজের অভাবে মানুষ কত অসহনীয় যন্ত্রনায় ভোগে? আপনি কিন্তু তাদের টাকা দিয়ে বিমান বন্দর বানাচ্ছেন।
দেখেছেন আমরা কিভাবে বাদুরের মত ঝুলে গাড়ীতে চলি? দেখেছেন আমরা কতক্ষণ ট্রাফিক জ্যামে আটকে থাকি? ভেবে দেখেছেন দেড় কোটি মানুষের ঐ ঢাকা শহরে কতগুলো রাস্তা দরকার আর কতগুলো আছে? দেখেছেন কখনো কত মা সন্তান হারা হচ্ছে প্রতিদিন কোনো ট্রাফিক রুল নেই বলে? আপনি কিন্তু তাদের টাকা দিয়ে বিমান বন্দর বানাচ্ছেন।
ভেবে দেখেছেন বুড়িগঙ্গার তলদেশের ১০ হাত গভীর পলিথিনের স্তর কিভাবে পরিষ্কার করবেন? ভেবেছেন কি কখনো নদীগুলোতে পলি জমে তাদের গভীরতা হারিয়ে প্রতি বছর বন্যার প্রকোপ কিভাবে বাড়াচ্ছে? বন্যা কবলিত মানুষগুলি ক্ষুধার যন্ত্রনায় কিভাবে ত্রানের জন্য হাহাকার করে দেখেছেন? চিন্তা করুন তো একটা মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ কতটা লজ্জা বিসর্জন দিয়ে ঐ ত্রানের জন্য ছুটে যায়? আর আপনারা ঐ ত্রান দিতে যান আর ভিডিও করেন প্রচারের জন্য। ভেবেছেন কি ফি বছর কত মানুষ নদী ভাঙ্গনের মুখে পড়ে হারাচ্ছে তাদের ঘর বাড়ী। আপনি কিন্তু তাদের টাকা দিয়ে বিমান বন্দর বানাচ্ছেন।
দেখেছেন কি আমরা রাতে কেমন ছটফট করি গরমের নির্মম নিষ্ঠুরতায়? দেখেছেন কি আমাদের সন্তানগুলো অন্ধকারে মোমবাতীর আলোয় কিভাবে পড়াশুনা করে? নিজে কিম্বা নিজের স্বামীকে কখনো হাতপাখার বাতাস খাইয়েছেন ঘন্টার পর ঘন্টা? সারারাত নির্ঘুম থাকার পর পরের দিন কত কষ্ট হয় কাজ করতে ভেবে দেখেছেন এক সেকেন্ড? আপনি কিন্তু তাদের টাকা দিয়ে বিমান বন্দর বানাচ্ছেন।
দেখেছেন কখনো রাস্তায় লাইন দিয়ে কলস হাতে ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে থাকা নিস্পাপ জীর্ণ পোষাক পরা ব্যাস্ত মানুষগুলিকে? পানির অভাবে গোসল না করে এই গরমের দিনে একটি দিন পার করেছেন জীবনে? মাথায় করে কাঁধে করে পানি বহন করতে কেমন কষ্ট হয় ছোট্ট শিশুগুলির কল্পনা করার মস্তিক আল্লাহ দিয়েছেন আপনাদের? আপনি কিন্তু তাদের টাকা দিয়ে বিমান বন্দর বানাচ্ছেন।
দেখেছেন কখনো ষাটোর্ধ মানুষগুলিকে পেটের তাড়নায় চৈত্রের দুপুরে রিক্সা চালাতে? কল্পনা করুন তো দিনে তারা কত টাকা আয় করে? দেখেছেন তারা কেমন জায়গা রাত্রি যাপন করে? আপনি কিন্তু তাদের টাকা দিয়ে বিমান বন্দর বানাচ্ছেন।
রাস্তায় শুয়ে থাকা মানুষগুলির কথা ভেবেছেন জীবনে? বস্তার বিছানা আর ইটের বালিশ কল্পনা করুন তো? কোনোদিন কল্পনা করেছেন এমন জীবন যদি আপনার হতো? সেটা করবেন কেনো ওরা তো মানুষ না, মানুষ শুধু আপনারাই। এটা ওদের প্রাপ্য, ওদের দেখার জন্য তো সয়ং বিধাতা আছেন। বিধাতা আছেন এটাই ওদের মনের শান্তি, তিনি সুবিচার করবেনই।
মানুষ তো তারাই, যারা দেখেও না দেখার ভান করতে পারে, শুনেও না শোনার ভান করতে পারে। মিথ্যা প্রতিশ্রুতি, আর মিথ্যা বুলি আওড়াতে পারে।
আর কতো বকর, ফারুক কে লাশ হতে হবে? ছাত্ররাজনীতি কি বন্ধ করা মোটেও সম্ভব নয়? ক্যাম্পাসের এই রাজনীতির নোংরা মুখ দেখেও না দেখার ভান আর কতদিন করবেন? ক্ষমতার এতো লোভ কেনো? মরলে কি ক্ষমতা সাথে নিয়ে যাবেন?
চোখে আর কতকাল রঙ্গীন চশমা দিয়ে থাকবেন? রাস্তাঘাটে মিছিল মিটিং এ রামদা, চাপাতি, বন্দুক হাতে ওদের সনাক্ত করে শাস্তি দেয়া কি উচিৎ না? নিজের দলের হলেও যদি ওদের শাস্তি দেন, তাতে আপনার জনপ্রিয়তা বাড়বে, এটা বুঝবেন কবে? সন্ত্রাস নির্মূল করতে চেয়েছিলেন, সেটা কি করেছেন নাকি আরো বেড়েছে?
আরো অনেক কিছু আছে যেগুলো সবার আগে করা উচিত আমাদের। আপনাদের মুখে আসলে অদৃশ্য মুখোশ, আমাদের রক্ত-মাংসের চোখে সেগুলো অবলোকন করা সম্ভব না। বারবার ভোট দিতে যাবো আর বারবার প্রতারিত হবো।
আপনাকে ভোট দিই আপনার বাবার সেই পশম খাড়ানো ভাষণ শুনে। ওনাকে ভোট দিই ওনার স্বামীর সুনাম শুনে। আপনারা কি করছেন? আপনাদের কেনো ভোট দিবো আমরা? শুধু একটা জিনিষ শিখেছেন, অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপানো। আগের সরকার এটা করে গেছে। আমরা দেখতে চাই আপনারা কি করলেন।
৫০,০০০ কোটি টাকা দিয়ে দেশে কত কিছু করা যেতো ভেবে দেখেছেন কখনো? আমাদের কি সত্যিই এই বিমান বন্দর না হলেই নয়? হিসাব করে দেখুন তো কত একর জমি লাগবে এই বিমানবন্দর বানাতে? এহেন ঘনবসতিপূর্ণ দেশে আমাদের কি জায়গা নষ্ট করার বিলাসিতা মানায়? এটাই যদি ইচ্ছা ছিলো জিয়া বিমানবন্দরকে মুজিবের নামে করে দিতেন। জিয়ার নাম রাখতে চান না আবার মুজিবের নাম ও দিতে পারছেন না, এজন্য নতুন এ বিমান বন্দর তৈরির জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন এটা জনগন বোঝে না? আপনি কি মনে করেন এগুলো করে সচেতন নাগরিকের মন পাবেন? এসব করে বঙ্গবন্ধুকে আপনি আরো অশ্রদ্ধার পাত্র বানাবেন জনগনের কাছে।
কি পাপ করেছি আমরা?? আপনাদের ভোট দেয়াই কি আমাদের পাপ? নাকি বাংলাদেশে জন্মগ্রহন করাই আমাদের পাপ? দিন আমাদের যন্ত্রনা দিন। তার পরও আমরা আপনাদের সুনাম করি, সাপোর্ট করি। কারণ আমরা অতি অল্পেই সন্তুষ্ট হতে পারি।
তার পরও তো আমরা বেঁচে আছি। সেই ডাকাতের খপ্পরে পড়া নিরীহ গোবেচারার মত বলি "সেও ভালো সব নিলেও আমার আন্ডারওয়ারটা তো নেয় নি, কমপক্ষে ইজ্জতটা তো বাঁচলো"।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।