যখন বিকাল হতে থাকে, হতে হতে সূর্যটা ঢলে পড়ে, পড়তে থাকে
ময়লা একটু কম মনে হলো। এয়ারপোর্ট থেকে শহরে ঢোকার রাস্তা কর্ণফুলি ঘেসে, একটু শহরের বাইরে বলে প্রথমে ভাবলাম। কিন্তু হোটেল সেন্ট মার্টিন পর্যন্ত এসে মনে হলো শহরের ভেতরে, ফুটপথে ময়লা আসলেই কম। ঢাকায় যেমন ফুটপথের দেখা মেলা ভার, চট্টগ্রামে অবস্থা ততটা শোচনীয় নয়। এরপরে হোটেলে নাস্তাটাস্তা সেরে যখন ওআর নিজাম রোডে আশার আলো সোসাইটিতে গেলাম, সেটা একদম শহরের ভেতরেই, পরিচ্ছন্নতা যে ঢাকার তুলনায় অনেক বেশী এক প্রকার নিশ্চিত হওয়া গেলো।
তবে ধুলো আছে, এটা থেকে মুক্তি মেলা বোধহয় কোনো শহরে সম্ভব না।
চট্টগ্রামে এসে প্রথম একদল এইচআইভি পজেটিভের সাথে পরিচয় হলো। আমার জন্য বিষয়টা খুবই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মত। এইচআইভি পজেটিভদের একটা মাসিক সভা ছিল আজ, সেখানে তাদের প্রয়োজনীয় এন্টিরেট্রোভাইরাল ড্রাগ (এআরভি) দেয়া হয় বিনামূল্যে। এছাড়া প্রয়োজনীয় আরো কিছু মেডিসিন।
যেটা বুঝলাম এইচআইভি যাদের আছে তাদের ডায়রিয়াজনিত সমস্যা অহরহ দেখা দেয়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবার জন্যই এটা ঘটে।
আজকে যে সমস্ত রোগীদের সাথে পরিচয় হলো তাদের মধ্যে ১৫ বছর বয়সী একজন কিশোরী ছিলো, যার বাবামা দুজনই এইডসে মারা গেছে। কিছুদিন হলো তারও এইচআইভি পজেটিভ ধরা পরেছে। শীঘ্রই তার এআরভি সেবন করতে হবে।
এসমস্ত রোগীদের বিনামূল্যে আশার আলো নামে একটা এনজিও ক্লিনিক্যাল সেবা থেকে শুরু করে নানাবিধ জীবন দক্ষতা উন্নয়নমুখী ট্রেনিং দিয়ে আসছে বিনামূল্যে। এছাড়া আক্রান্তর পরিবার, গ্রামে এইডস রোগীদের বিষয়ে বৈসম্যমূলক আচরণ পরিহারে নানামুখী সচেতনতামূলক সভাও করে থাকে সংস্থাটি। উল্লেখ্য এই সংস্থাটি এইচআইভি পজেটিভ মানুষদের উদ্যোগে গঠিত হয়েছে এবং বাংলাদেশে মাত্র এমন তিনটা অর্গানাইজেশন আছে যারা সরাসরি এইচআইভি পজেটিভদের বিনামূল্যে এই সেবা দিয়ে থাকে। সংস্থাগুলো বিভিন্ন ডোনার এজেন্সীর কাছে থেকে প্রয়োজনীয় ফান্ড সংগ্রহ করে থাকে।
বলছিলাম শহর পরিচ্ছ্ন্নতার কথা, কিন্তু বলে ফেললাম কিছু ভিন্ন প্রসংগও।
সন্ধ্যায় বিশ্বজিত দা এসেছিলেন - কাকতালীয়ভাবে উনি কক্সবাজার থেকে ঢাকা ফেরার পথে আজকে চট্টগ্রাম থামলেন। হোটেলের বারে বসে এক পিচ করে হ্যানিকেন মারলাম দুজন। কিন্তু বিল দেখে মাথায় হাত, একটা বিয়ারের দাম ৩৯৫ টাকা! এই দেশে হিরোইনের চেয়ে বিয়ারের দাম বেশী - যা সহজলভ্য তাই তো মানুষ খাবে! নেশাখোরের সংখ্যা কমবে কিভাবে? রাতে এমএফসি নামে একটা ফাস্টফুডের দোকানে খেলাম। এখানের কেএফসিতে মুরগী সাপ্লাই দেয় এমএফসি যাদের সেই কোম্পানীর বেস্ট নামে একটা ফ্রোজেন কোম্পানী। এবং কোয়ালিটিতে ঢাকা কেএফসির তুলনায় নাকি জঘন্য।
অবশ্য শোনা কথা। দুপুরে খেয়েছিলাম মেরিডিয়ান নামে একটা রেস্টুরেন্টের বুফেতে। গরুর মাংসটা ছিলো হেভি।
আগামীকাল বিকাল পর্যন্ত থাকবো। রিফাত ভাইয়ের সাথে দেখা করার একটা চানস নেবো।
আরেকটা জিনিস বলা হলো না। সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিং বা সিআরবি নামে একটা আবাসিক এলাকা আছে টাইগার পাস থেকে ডানে যে রাস্তা গেলো তার লাগোয় পাহাড়ের চুড়ায়। সেখান থেকে শহরটা দেখা যায় চমৎকার। আমরা যখন সেখানে গেলাম তখন একটু ঝড়ো হাওয়া বইছিলো, হালকা বৃষ্টি। রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজারের বাসার পেছনে দাড়িয়ে চট্টগ্রাম শহর দেখার অভিজ্ঞতা অনন্যসাধারণ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।