আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কোজাগর



ফিনফিনে বৃষ্টির ভেতর তার ছোট্ট লাগেজটি টানতে টানতে হন্তদন্ত হয়ে সে যখন ট্রেনের দরজায় তখনই ষ্টার্টার সিগন্যালটি সবুজ হলো। গার্ডের হুইসেল ও তার হাতে ঝোলানো হাত-সিগন্যালটি দুলতে লাগলো। ধীরে ধীরে সচল হলো আন্তঃনগর ট্রেন তূর্ণা নিশীথা। সে যখন ফোর বার্থের কেবিনে ঢুকলো তখন হাফ সামলানোর কসরত করছে। ধাতস্ত হয়ে সে তার সহযাত্রীদের দিকে তাকাল।

তিনজন থাকার কথা কিন্তু আছে দুজন। মেজাজটা খিঁচড়ে গেল। নিশ্চয়ই রাস্তায় উঠবে। অনেকবারই হয়েছে এরকম। অনেক কষ্টে ঘুমটা শুধু লেগে এসেছে,তখনই দরজায় ঠকঠক।

একজন ব্যস্ত যাত্রী। লাইট জ্বালানো। বিছানা-টিছানা করার খ্যাচর-ম্যাচর আওয়াজ। হাঁচড়ে-পাঁচড়ে উপরের বার্থে ওঠা। তারপর একটি স্যরি! মাঝ থেকে ঘুমটাই মাটি।

লোকটি মধ্যবয়স্ক। জুলফিতে শাদা উঁকি দিচ্ছে। পৃথুল শরীর। চোখে ভারী ফ্রেমের চশমা। পাজামা-পাঞ্জাবীতে মানিয়েছে বেশ।

মলাট লাগানো একটি বইয়ের ভেতর নিমগ্ন। সুশীল সুশীল ভাব। লোকটি অয়নের দিকে একবার তাকিয়েই আবারো নিমগ্ন হলো বইয়ের ভেতর। অপরজন এতোক্ষণ সজাগ থাকলেও বিছানা না করেই হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। উজ্জ্বল বাদামী চেহারার সাথে মানানসই মভ রঙয়ের কামিজ সালোয়ারে বেশ মানিয়েছে।

কামরার ফিকে আলোয় এক ধরণের আভিজাত্যের জেল্লা ছুঁয়ে আছে তাকে। অনুমিত হয় বয়স আঠারো থেকে কুড়ি। অয়ন মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকলো। পরক্ষণেই খেয়াল হলো এভাবে তাকিয়ে থাকার মধ্যে কোথায় যেন একটা হ্যাংলামি ও তার ব্যক্তিত্বের সাথে মানানসই হচ্ছে না। সে তার চোখ সরিয়ে কাচ নামানো জানালার দিকে তাকিয়ে থাকলো।

ট্রেনটি এখন স্পীড রেসটিকশন এরিয়া অতিক্রম করছে। গতিবেগ ১৬ কি.মি/ঘন্টা। সে জানালার কাচ উঠিয়ে বাইরে তাকাল এবং অসম্ভব মুগ্ধ হয়ে গেল। সারা চরাচর ভেসে যাচ্ছে জ্যোস্নায়। এতক্ষণ যে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ছিল তাও কখন জানি থেমে গেছে লক্ষই করেনি সে।

তবে হাওয়ায় ঈষৎ ভেজা আমেজ। স্নিগ্ধ জ্যোস্নার জেল্লার দিকে তাকাতে তাকাতে তার হঠাৎ-ই মনে হলো আরে এখন তো আশ্বিন। আর,আর আজ তো পূর্ণিমা। তাকাবনা তাকাবনা করে নিজের অজান্তেই আবারো চোখ গেল ঘুমন্ত মুখটির দিকে। নিঃসন্দেহে একটি আকর্ষণীয় মুখ।

মাদকতাময়। অদ্ভুত এক আকর্ষণ লেপ্টে আছে অবয়বে। তার তীক্ষ্ণ নাকে,ঈষৎ ডিম্বাকৃতি চিবুক ও স্ফুরিত গোলাপী ঠোঁটে। মেয়েটি হঠাৎ দুহাত উপরে তুলে আড়মোড়া ভাঙলো। আর অয়ন তার ভেতরের সমস্ত প্রতিরোধ শক্তিকে তছনছ করে ভাঙতে ভাঙতে দেখলো মেয়েটির ভরাট স্তন দুটির অবয়ব।

মুহূর্তের ভেতরে কোথা থেকে এক অজানা কামনার ভাপ তার চোখ কান লাল করে তুললো। এগারটার ট্রেন। প্রথম শ্রেণীর কেবিনে চারজনই যাত্রী থাকবে। স্লিপিং বার্থ। মেয়েটি নিশ্চয়ই নিচের বার্থে শোবে।

সুশীল ভদ্রলোক সম্ভবত মেয়েটির বাবা, কিন্তু বাবা কি? যা-ই হোক, ভদ্রলোক ধরেই নেয়া যায় উপরের বার্থ শোবে। সে ক্ষেত্রে এ পাশের নিচের বার্থটি তো তারই। ভেতরে ভতরে উল্লাস বোধ করলো অয়ন। ট্রেনটি এখন মোটামুটি দ্রুতই চলছে। কিন্তু ঝাঁকুনি ও ঈষৎ দুলুনি মাঝে মাঝেই মেজাজ খারাপ করে দিচ্ছে তার।

তবে কাচ তোলা থাকায় বাইরের ঠান্ডা বাতাস ঢোকায় ফ্যানের বাতাস অসহ্য লাগছিল না। তবু সে নেট-জানালাটি ফেলে দিল। আচ্ছা ভদ্রলোক কি মেয়েটির বাবা? বাবা হলে এ কি রকম বাবা, একবারও মেয়ের দিকে তাকানো কিংবা কথা বলা কোনোটাই করছেনা। মুখের উপর বইটা ধরে আছে তো আছেই। পরিস্থিতি অন্যরকম হলে অয়ন এতক্ষণে শুয়ে পড়তো, কিন্তু এখন সে প্রাণপণে চাইছে সজাগ থাকতে।

কিন্তু কেন? সে কি আশা করছে? (চলবে)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।