আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশ ও জার্মানির জনপ্রতিনিধি: একটি অভিজ্ঞতা



জাহাঙ্গীর আলম আকাশ: গণতন্ত্রের মূলকথা হলো জনগণ, জনগণ এবং জনগণ। জনগণের শাসনই হলো গণতন্ত্রের আসল রূপ। মুক্ত, অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাই গণতন্ত্রের চালিকাশক্তি। কাজেই জনগণই আসল নিয়ামক গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায়। এ সম্পর্কে আমেরিকার স্বনামধন্য প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের বাণীটি স্মর্তব্য।

ছোট্ট একটি বাক্যে গণতান্ত্রিক সরকারের এত সুন্দর একটি ব্যাখ্যা বিরল : : “Government by the people, for the people and of the people.” বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই এখন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত। তবে ইউরোপে এটা সবচেয়ে শক্তিশালী এবং কার্যকর। ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গিতেও ইউরোপেই খৃস্টজন্মেরও ৪-৫শ' বছর আগে এরিস্টটল, প্লেটো প্রমুখ দার্শনিকরা গ্রিসে প্রথম গণতান্ত্রিক প্রশাসনের রূপরেখা দিয়েছিলেন। গণতান্ত্রিক ও অর্থনৈতিক দুটি মাত্রাতেই এখন ইউরোপে জার্মানি আর সুইজারল্যান্ডের অবস্থান শীর্ষে। সামগ্রিকভাবে আমেরিকা এখন ইউরোপের নিচে চলে এসেছে।

আর সবচেয়ে খারাপ অবস্থা এশিয়া ও আফ্রিকায়। বিশেষ করে বাংলাদেশের অবস্থা খুবই শোচনীয়। ব্যক্তিগতভাবে আমি কোন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ বা সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী নই। তৃতীয় বিশ্বের একটি উন্নয়নশীল দেশ, বাংলাদেশের আমি একজন সাধারণ নাগরিক। আজকের এই লেখায় ইউরোপ এবং এশিয়ার গণতন্ত্রের অবস্থা নিয়ে কিছু কথা বলতে চাই।

জার্মানি এবং বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অবস্থা এবং সমপ্রতি এখানকার জনপ্রতিনিধি বিষয়ে আমার একটা ছোট্ট অভিজ্ঞতা হয়েছে। এই দুই দেশের রাজনীতি বিশেষ করে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি নিয়ে একটা তুলনামূলক আলোচনা করার ইচ্ছে থেকেই এ লেখাটির অবতারণা। ইউরোপের বড় ও সমৃদ্ধ দেশ জার্মানির গণতন্ত্র বা জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে আমাদের কী শিক্ষণীয়? কিংবা বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও জনপ্রতিনিধিরা এই দেশ থেকে কী ধরনের অভিজ্ঞতা নিজ দেশের কাজে লাগাতে পারেন? এটার একটা সংক্ষিপ্ত আলোচনা করব আমি। আইনের শাসন, গণতন্ত্রের চর্চার অভাব ও অসুস্থ রাজনীতির শিকার বাংলাদেশের সিংহভাগ সাধারণ মানুষ। একজন পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে আমি নিজেও এই অন্ধকার দিকটির শিকার।

অনেক যন্ত্রণা আর নিপীড়নের পর আমি বাধ্য হয়েছি দেশ ছাড়তে। বলতে গেলে আমি নিশ্চিত মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসতে পেরেছি। সে প্রসঙ্গে যেতে চাই না। মূল আলোচনায় আসা যাক। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার মূল তিনটি ভিত্তি।

এগুলো হলো আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ আর প্রশাসন। একটি আরেকটির ওপর নির্ভরশীল। পরস্পর পরস্পরকে সমন্বয় করেই গণতন্ত্র সচল থাকে। তিন বিভাগকেই একই উদ্দেশে কাজ করে যেতে হয়। আর সেটি হলো_ জনকল্যাণ এবং জনসেবা।

একটি বিভাগ আরেকটির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। আর এই তিনটি প্রতিষ্ঠানের অন্তত দুটিকে যথাযথভাবে চালানোর মূল দায়িত্বটি থাকে রাজনীতিবিদদের ওপর। জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত রাজনীতিবিদরাই গণতন্ত্রের ধারক, বাহক ও রক্ষক। গণতান্ত্রিক অধিকার জনগণ তখনই পাবেন যখন উপরোক্ত তিনটি প্রতিষ্ঠান সঠিকভাবে চলবে বা কার্যকর থাকবে। কিন্তু এশিয়ায় বিশেষত আমাদের প্রিয় বাংলাদেশে এর একটিও কার্যকর আছে বলে মনে হয় না।

থাকলে তো আর দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির এত অবনতি ঘটত না। বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের জন্য মানুষ কষ্ট পেত না সেখানে। রাজনৈতিক হানাহানি, হিংসা-বিদ্বেষ থাকত না। জনগণের স্বার্থ ও দেশের স্বার্থটাকেই বড় করে দেখত সব রাজনৈতিক দলের নেতা ও কর্মীরা। সমপ্রতি জার্মান কেন্দ্রীয় সরকারের একজন এমপির সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছে।

কী করে বাংলাদেশের মানবাধিকার উন্নয়নে তথা নিপীড়িত, নির্যাতিত মানুষদের সাহায্য করা যায়, মূলত সে বিষয়ে তিনি আমার সঙ্গে কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করেন। গত ডিসেম্বরে হামবুর্গ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে তার পক্ষে রাইনহার্ট স্টুট আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলেন। ক্লিমকে জার্মানির ক্ষমতাসীন শক্তিশালী ও জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নের (সিডিউ) একজন নেতা। তার সঙ্গে আমার দু'দফার বৈঠকের সর্বশেষটি হয় গত ১ এপ্রিল। এ প্রসঙ্গটি আলোচনা করা কেন জরুরি? ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছাড়া ইউরোপ বা জার্মানিতে এপয়েন্টমেন্ট (সাক্ষাৎ বা বৈঠকের জন্য ডেট নির্ধারণ করা) ব্যতীত কেউ কারও কাছে যান না।

সাধারণত আগেভাগে সময় না নিয়ে (অপরিচিত) কেউ কাউকে অযথা বিরক্ত করেন না। ইউরোপের এটা একটা শক্তিশালী সামাজিক ও প্রশাসনিক নীতি বা রীতি বলা যেতে পারে। যা হোক আমার সঙ্গে তার সর্বশেষ সাক্ষাতের জন্য এমপি মহোদয়ের সেক্রেটারি আমার সঙ্গে কথা বললেন। সাক্ষাতের দুই সপ্তাহ আগে একটা তারিখ, স্থান ও সময় নির্ধারিত হলো। কিন্তু পরবর্তীতে সাক্ষাতের স্থান পরিবর্তন হলো।

সেটাও বৈঠকের দু'দিন আগে। সময় নির্ধারিত ছিল ১ এপ্রিল সকাল সাড়ে ১০টা। এখানকার নিয়ম-রীতিগুলো কিছুটা বুঝে গেছি ইতোমধ্যে। তাই নির্ধারিত সময়ের অন্তত ১৫ মিনিট আগে পেঁৗছে গেলাম হামবুর্গের বিখ্যাত ক্যাফে বার আলস্টার প্যাভিলিয়নের সামনে। ঘড়ির কাঁটায় সময় সকাল ১০টা বেজে ২৪ মিনিট।

মি. ক্লিমকে এসে গেলেন। আমরা প্যাভিলিয়নের ভেতরে প্রবেশ করলাম। সেখানে গিয়ে দেখা গেল কোন বসার জায়গা খালি নেই। আমরা উভয়ে অপেক্ষা করলাম। কিছু সময়ের মধ্যে দু'টি আসন খালি হলে আমরা সেখানে গিয়ে বসলাম।

এতক্ষণে নিশ্চয়ই আপনারা আঁচ করতে পেরেছেন কেন উপরোক্ত প্রসঙ্গটি এখানে বিবৃত করলাম। এখন আসি বাংলাদেশের একজন এমপির কথায়। এই ক্যাফে বারে একজন ক্ষমতাশালী এমপির যে আচরণটা লক্ষ্য করলাম আমরা, এটা কী আমরা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কল্পনা করতে পারি? বাংলাদেশে হলে কী হতো? এমপি সাহেব হোটেলে বা বারে এসেছেন। আসন ফাঁকা নেই বলে তিনি অপেক্ষা করবেন? এটা কী হয় নাকি? তিনি জনগণের প্রতিনিধি। তার মানে তো গোটা দেশটাকে, দেশের নিয়ম-কানুনকে কিনে ফেলেছেন তিনি।

ভাবটা তো এমনই লক্ষ্য করা যায় বাস্তবে। আসন না থাকলে, বসা অতিথিদের উঠিয়ে দিয়ে হলেও রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ, এমপি মহোদয় ও তার সাঙ্গপাঙ্গকে দ্রুত একটা জায়গা করে দিয়ে কৃতার্থ হবেন এবং এমপিকে বসার জায়গা না দিতে পারার জন্য তার রোষাণল থেকে নিজেকে বাঁচাবেন! মনে রাখতে হবে, ক্লিমকেও স্থানীয় একজন এমপি এবং সবাই তাকে চেনে। কিন্তু এখানে তার জন্য কোন অতিরিক্ত সমাদর করা হলো না। ম্যানেজার তো দূরের কথা রেস্টুরেন্টের কোন বেয়ারাও দৌড়ে এসে তাকে আপ্যায়ন বা সালাম করলেন না। বসা অতিথিদের মধ্যে যারা তাকে চেনেন, তারাও কেউ তাকে বিশেষ কিছু বললেন না, আদাব সালাম জানানো ছাড়া।

বাংলাদেশের কোন এমপি নির্ধারিত সময়ে কোথাও পৌঁছেন কী কখনও? মি. ক্লিমকে এপয়েন্টমেন্ট করার সময়ই বলেছিলেন যে, আমাদের আলোচনা হবে আধা ঘণ্টার জন্য। কী চমৎকার সময় জ্ঞান। ঠিক যখন ২৭ মিনিট সময় অতিক্রান্ত হতে চলেছে তিনি স্মরণ করিয়ে দিলেন আমাকে। ২৯ মিনিটের মাথায় জানালেন আমাদের সময় শেষ। আমরা এখন উঠি।

বাংলাদেশের একজন এমপি সাধারণ মানুষকে কখনও তার বেঁধে দেয়া নির্ধারিত সময়ে কোথাও পৌঁছেছেন এমনটা আমার অভিজ্ঞতায় নেই। জার্মানি বা ইউরোপে একজন রাজনীতিক নেতা, মন্ত্রী-মিনিস্টার এবং একজন সাধারণ মানুষ তাদের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। এখানে রাজনীতিবিদদের মধ্যে বা সরকারি উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার মধ্যে ক্ষমতার কোন বাহাদুরি নেই। জনগণকে এখানে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়। জনগণের চাওয়া-পাওয়া বা সুবিধা-অসুবিধার প্রতি রাজনীতিকদের তীক্ষ্ন দৃষ্টি।

আর বাংলাদেশে ঠিক তার উল্টো। কখনই জনগণের কোন মতামতের তোয়াক্কা করেন না তারা শুধু ভোটের সময় ছাড়া। আইন প্রণেতা বা এমপিদের কাজ বাংলাদেশ, জার্মানি বা অন্যান্য দেশে সর্বত্রই মোটামুটি এক। রাস্তা-ঘাট, স্কুল-কলেজ নির্মাণ, জনকল্যাণ, সামাজিক কাজকর্ম, উন্নয়ন, সংস্কার, আইন প্রণয়ন। এসবই এমপিদের মূলত প্রধান কাজ।

জার্মানিতে কোন আইন পাসের আগে জনগণের মতামত অপরিহার্য। যেমন সংসদে কোন আইন প্রণয়ন বিষয়ে আলোচনা উঠল। সঙ্গে সঙ্গে এমপি তার নির্বাচনী এলাকায় চলে যাবেন। আইনটি সম্পর্কে সভা-সমিতি ও দেখা সাক্ষাৎ করে তার ভোটারদের ব্যক্তিগতভাবে বিস্তারিত জানাবেন। জনগণ যদি মনে করেন যে আইনটি ভালো বা মঙ্গলজনক, তাহলে তারা তার পক্ষে মত দেবেন।

আর যদি মনে করেন এই আইনটি জনকল্যাণমূলক (অন্তত তাদের এলাকার জন্য) নয় তাহলে তার বিপরীতে মতামত জানাবেন। জনগণ না চাইলে একজন এমপি তার পার্টির সিদ্ধান্তের বিপক্ষেও দাঁড়িয়ে যান। পার্লামেন্টে তিনি তার এলাকার ভোটারদের দাবির কথা মনে রেখে নিজের দলের বিরুদ্ধে এবং সরকারের বিরুদ্ধে ভোটদান করেন বা নিরপেক্ষ থাকেন। এটাই এখানকার রাজনীতির সংস্কৃতি। এর জন্য দলীয়ভাবে তাকে কোন জবাবদিহি করতে হয় না।

তার দায়বদ্ধতা আগে জনগণের কাছে, পরে আসে তার রাজনৈতিক দল। বাংলাদেশে যদি এমন হতো! আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো জার্মান পার্লামেন্টে বিভিন্ন কমিশন আছে। যে ধরনের কমিশন বাংলাদেশসহ পৃথিবীর সব গণতান্ত্রিক দেশেই আছে। জার্মানির গুরুত্বপূর্ণ তিনটি কমিশন হলো সংসদ সদস্যদের আর্থিক বিষয়াদি যাচাই-বাছাই সংক্রান্ত, দেশরক্ষা এবং গোয়েন্দা বিভাগ। এসব কমিশনের প্রধান বা সভাপতি নির্বাচন করা হয় বিরোধীদল থেকে।

ফলে সরকারি দলের নয় ছয় করার কোন সুযোগ নেই। অবশ্য এখানে কেউ নয় ছয় করেনও না। বাংলাদেশে এমনটা লক্ষ্য করা যায় না। বাংলাদেশে বিরোধীদলের সংসদ সদস্য কোন কমিশনের প্রধান হলেও দুর্নীতি বা অনিয়মের বেলায় চোরে চোরে মাসতুতো ভাই। আমাদের অবস্থাটা এমনই।

ব্যক্তিগত ও দলীয় স্বার্থ এবং জণকল্যাণ ও নীতি, এ দুটি বিষয়ের মধ্যে আমরা কখনই পার্থক্য করতে পারি না। আর মানবাধিকারের কথা কী বলব? এখানে একজন দাগি অপরাধীকে আপনি করে বলা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের সময় ভদ্রভাবে ও শান্ত মস্তিষ্কে প্রশ্ন করা হয়। ডিটেনশনকালে তার ব্যক্তিগত চাহিদাগুলোও যথাসম্ভব মেটানো হয়। নির্যাতনের তো প্রশ্নই ওঠে না।

বাংলাদেশে এই চিত্রটি কঠিন দুঃসহ এবং ভয়াবহ। এটা বাঙালি মাত্রেই ভালোভাবে জানেন। এ ব্যাপারে বিস্তারিত আর বলার কিছু আছে বলে মনে করি না। জার্মানির জনপ্রতিনিধিরা মানবাধিকার বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন এবং জ্ঞান রাখেন। এ বিষয়ে তাদের আছে অনেক পড়াশোনাও।

বাংলাদেশের ক'জন জনপ্রতিনিধির মানবাধিকার জ্ঞান আছে তা বলা মুশকিল। আবার মানবাধিকার জ্ঞান থাকলেও ক'জনই বা তার বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করেন? সংখ্যাগত পরিমাণ খুব বেশি না। সর্বশেষ একটা বিষয়ে আলোচনা করতে চাই। সংবাদপত্রের ভাষ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে এখন সর্বত্রই বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের জন্য এক হাহাকার চলছে। অথচ মন্ত্রী, কূটনৈতিক, এমপিপাড়ায় এবং ক্যান্টনমেন্টে কিন্তু বিদ্যুৎ থাকছে ২৪ ঘণ্টাই।

জনগণ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৮ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না। ইউরোপ বা জার্মানিতে এমনটা ভাবাও যায় না। জার্মানিতে যদি আজ বাংলাদেশের মতো অবস্থা হতো, তাহলে কী হতো? সরকারই উল্টে যেত। এখানে অকারণে কোন বৈষম্য লক্ষ্য করা যায় না। একজন এমপি আর একজন সাধারণ মানুষের মধ্যে কেন পার্থক্য থাকবে? মন্ত্রীরাই বা জনগণ থেকে স্বতন্ত্র থাকবেন কেন? এখানকার মন্ত্রীরা অনেকেই সাধারণ আবাসিক এলাকায় বাড়ি নিয়ে থাকেন।

গেট পার হওয়ার সময় ভেতরে দু-একজন সাদা পোশাকের নিরাপত্তা বিভাগের লোক দেখা যায়। আর আমাদের দেশে একটি মন্ত্রী ভবনকে পাঁচশ/হাজার গজ দূর থেকেই নানা বাধানিষেধের বেড়াজালে জনগণ থেকে আলাদা করে রাখা হয়। আমার একজন প্রিয় দেশবাসীর (অনেকদিন ধরে এদেশে আছেন) কাছে শুনেছি, তিনি আগে দক্ষিণ জার্মানির একটি ছোট্ট শহরে থাকতেন। সপ্তাহান্তে ওই শহরের একজন প্রাদেশিক মন্ত্রী নিয়মিত তার (প্রদেশের) রাজধানীর প্রাদেশিক মন্ত্রীভবন থেকে এ শহরে তার নিজস্ব ভবনে আসতেন সপরিবারে। মূল উদ্দেশ্য ছিল, ভোটারদের সঙ্গে নিয়মিত প্রত্যক্ষ যোগাযোগ রাখা।

আমার স্বদেশীর সঙ্গে তার প্রতি শনিবার ভোরে শহরের একটি রুটির দোকানে দেখা হতো (ব্যতিক্রম যে হতো না, তা নয়, তবে কম)। দুজনেই ভোরের নাশতার জন্য রুটি কিনতে আসতেন। মন্ত্রী প্রায়ই একা আসতেন। দেহরক্ষী সঙ্গে নিয়ে তিনি কখনই তার শহরে কোথাও যেতেন না। মাঝে মধ্যে সঙ্গে তার স্ত্রী বা সন্তান থাকত।

এক শনিবারে বাংলাদেশী দোকানে আসেননি, শরীর খারাপ। ঘরে ফিরে মন্ত্রী ফোনে জিজ্ঞেস করলেন, 'আজ কি রুটি ছাড়াই নাশতা করছ তোমরা? দোকানে তো দেখা হলো না। ' অসুখের কথা শুনে এক ঘণ্টার মধ্যেই মন্ত্রী মহোদয় ফুলের তোড়া নিয়ে সপরিবারে হাজির। দ্রুত আরোগ্য-কামনাটি ব্যক্তিগতভাবে জানানোর জন্য। আমার প্রিয় সেই বাঙালির মন্তব্য বাংলাদেশের একজন এমপিকে তিনি তার স্বদেশে ৩২ বছর জীবনে একশ গজের মধ্যে দেখেছেন কি না সন্দেহ! আর মন্ত্রী তো আকাশের চাঁদ, দেখাই যায়, ধরা যায় না! বাংলাদেশের সংবিধানে বলা আছে জনগণই হলো দেশের মালিক।

আবার বলা হয়, জনগণই ক্ষমতার মূল উৎস। তাহলে জনগণ কেন এত দুর্ভোগ, কষ্ট পেয়ে থাকেন? এই প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই। ৩-৪-২০১০।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.