আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ব্লগাররা তথ্য দিতে পারল না, আফসোসটা সেখানেই

রাতের আকাশের নগ্নতা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখি কিন্তু পারি না মনের আকাশ দেখতে।

এর আগে ব্লগারদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, ছোট পাহাড় বা টিলা কাটলে কি ক্ষতি হয়? কারও খুব একটা আগ্রহ আছে বলে মনে হল না। ছাগু বা আম্বা ভিত্তিক পোষ্ট হলে খুব কাটত। যা হোক আমার আফসোস কাটতিতে নয়। মানুষ যে তথ্য দিতে পারল না, আফসোসটা সেখানেই।

যা হোক আমার জানা কারণগুলো আমি বলছি এবং সরকার কিভাবে আমাদের ক্ষতি করছে তাও বলার চেষ্টা করব। যেসব ক্ষতি হয়: ১. ইকোসিস্টেম নষ্ট হয়। ২. প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট হয়। ৩. গাছপালার পরিমান কমে যায়। ৪. বিভিন্ন প্রজাতির বিরুৎ জাতীয় ও ওষধি গাছ বিলুপ্ত হয়।

৫. বিভিন্ন প্রজাতির অনুজীব এবং প্রানী হারিয়ে যায় বা বিপন্ন শ্রেনীভুক্ত হয়ে পড়ে। ৬. মাটির উপরের স্তরের ভারসাম্য নষ্ট হয়। মাটি সরানোর ফলে সর্বোপরের প্লেট হালকা পাতলা হয়ে যায়। ফলে ভূ-পৃষ্ঠের চাপ কমে যায়। দুর্বল ভুমিকম্পেও ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা বেশি থাকে।

৭. সহজেই ভুমি ক্ষয় হয়। ৮. নিকটবর্তী নদী দ্রুত ভরাট হয়। ৯. পানি স্তর নীচে নেমে যায়। ১০. গ্যাসীয় চাপের ঊর্দ্ধোমুখী ও নিম্নমূখী চাপের পরিবর্তন ঘটে। ১১. বড় ও উঁচু পাহাড় পর্বতের ক্ষেত্রে বায়ু দিক পরিবর্তনে সরাসরি প্রভাব ফেলে।

যা বৃষ্টিপাত ও মরুকরণের জন্যে অনেকাংশে দায়ী। ১২. জুম চাষ বা অন্যান্য কৃষি পদ্ধতির পরিবর্তন ঘটে। যা ফসল উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটায়। ১৩. আবাসস্থল পরিবর্তন হওয়ায় প্রাকৃতিক দুযোর্গের সময় বন্যপ্রানীর আশ্রয়স্থল কমে যায়। ১৪. সামাজিক-অর্থনৈতিক সুদূর প্রসারী ক্ষতি হয়।

উপরের পয়েন্টগুলো কম বেশি আমরা সবাই বুঝি এবং সম্ভবত সবাই একমত। কিন্তু এগুলোর পরেও বাংলাদেশের পেক্ষাপটে আমার দৃষ্টি কোণ থেকে, কেন ছোট পাহাড় বা টিলা কাটা উচিত সে প্রসঙ্গে এবার বলব। প্রসঙ্গ দিক: ১. ইকোসিস্টেম প্রসঙ্গ খুবই জটিল একটি ব্যাপার। কিন্তু লোক দেখানো কাজ ইতোমেধ্যে বিভিন্ন সরকার শুরু করে গেছে। যেখানে ইকোপার্কের রক্ষকরাই ভক্ষক এবং চোরাচালানী সহযোগী ও সহকারী।

তাই ইকোসিষ্টেমের ব্যাপারটা গুরুত্বের পেছনের সারিতে রাখতে পারি। প্রতিকার: পাহাড়ী এলাকার জনবসতিতের সচেতন করে তুললেই অধিক ফলপ্রসূ হবে। কারণ সরকারের চেয়ে কৃষিজীবী স্থানীয়রা কৃষি ও প্রাকৃতিক পরিবেশ প্রতিবেশ নিয়ে নিয়ে বেশি চিন্তশীল এবং দায়িত্বপরায়ন। ২. সারা দেশের জেলা শহরগুলোতে বসতি স্থাপনের জন্যে দেদারছে পুকুর, খাল, নদীর কীনারা ভরাট করা হচ্ছে। তৈরী করা হচ্ছে নতুন প্লট।

ফলে কমে যাচ্ছে প্রাকৃতিক পানি শোষন ও পানি ধারনের আঁধার। প্রতিকার: পাহাড়ী এলাকায় বসতি স্থাপনের উপযুক্ত ভুমি তৈরী করা যেতে পারে। সাধারণত: ১৫-২৫ ফুট উঁচু টিলা কেটে সমান করলে সহজেই অনেক সমতল ভুমি পাওয়া সম্ভব। বসতিও গড়ে উঠতে পারে। কিন্তু সরকারের ভয়ে টিলা না কেটে বাড়ি বানাতে অনিচ্ছাস্বত্বেও অধিকাংশ শহরের দিকে ঝোকে।

৩. নদীর তলদেশ থেকে বালি তুলে শহরের জলাভূমি ভরাট করা হচ্ছে। ফলে নদীর আশপাশের পলি সমৃদ্ধ কৃষিজমিতে ধস নামছে । কমছে কৃষি আবাদী জমি। আবাদী জমি কমা মানে কৃষকের মাথায় হাত, ফসল উৎপাদন কম হওয়া। কৃষিপন্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়া।

সেই সাথে হাইব্রিড শস্যের দিকে ঝুকে পড়ে কৃষক। অধিক রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করে। যা ঘুরে ফিরে আমাদের পেটেই যায়। প্রতিকার: যদি শহরের পতিত ছোট ডোবা পুকুর ভরাট করার নিতান্ত প্রয়োজন হয়,তবে নদীর বালি দিয়ে ভরাট না করে ১৫-২৫ ফুট উঁচু টিলার মাটি ব্যবহার করলেই দুই দিকে ফল লাভ হবে। প্রথমত টিলার এলাকায় সমতল ভুমি বাড়াবে এবং দ্বিতীয়ত ডোবা ও মজা পুকুর ভরাট হবে ভাল মাটিতে, এবং সেখানেও উপযুক্ত ভূমি বাড়বে।

৪. ইটভাঁটার জন্যে কৃষিজমির উপরিতল (১২-২০ইঞ্চি) ব্যবহৃত হচ্ছে। যা অধিক হিউমাস সমৃদ্ধ এবং ফসল উৎপাদনের জন্য খুবই দরকারী। কৃষি উপযোগী মাটি তৈরী হতে প্রায় ২৫ বছর সময় লাগে। অথচ আমরা নষ্ট করছি জ্ঞান ও সচেতনাতার অভাবে। প্রতিকার: ১৫-২৫ফুট উঁচু টিলার মাটি ব্যবহার করলে প্রথমত কৃষি জমি রক্ষা পাবে এবং অনাবাদী টিলার মাটির উপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত হবে।

আর সমতল এলাকা তো তৈরী হবেই। ৫. শহরের উপর চাপ বৃদ্ধি। ফাঁকা জায়গা বা বৃহৎ পরিসরের অভাবে শহরের মধ্যেই কলকারখানা গড়ে উঠছে। শহরের ভুমির যে প্লেট, তা অধিক ভার নিতে বাধ্য হচ্ছে। ক্রমে ভুমিকম্প ঝুকিপূর্ন এলাকায় পরিনত হচ্ছে।

প্রতিকার: শহরের বাইরে যদি নগরায়ন প্রসারিত করা যায় তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রাণহানির আশঙ্কা অনেকাংশে কমে যাবে। জনসংখ্যার অত্যাধিক চাপে যে পরিমান কর্মঘন্টা নষ্ট হয় তা কমে আসবে। সবার অলক্ষ্যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে। অথচ সরকারের সুদূরপ্রসারী কোন পরিকল্পনাই নেই। যদি সরকার আইন করে, সে আইন মোতাবেক টিলা বা ছোট পাহাড় পরিদর্শনের পর সমূদ্র পৃষ্ঠ থেকে নির্দিষ্ট উচ্চতা বজায় রেখে তা কেটে সমান করতে দেয়, তবে অনেক সমস্যার সমাধান হবে বলে আমার ধারনা।

প্রিয় পাঠক, লেখাটি অনেক কাটছাট করে প্রকাশ করছি। তাই হয়ত এলোমেলো। বড় লেখা পড়তে ধৈর্য হয় না। তবে আমার উদ্দেশ্য হল আপনাদের কিছুটা হলেও এবাপারে তথ্য দেয়া এবং একটু প্রতিকার নিয়ে চিন্তা করা।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.