আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যশোরে কন্যাকে ধর্ষণ করতে না পেরে পিতাকে কুপিয়ে জখম

চিন্তায় আছে আইজ উদ্দিন

যশোর থেকে: যশোরের চৌগাছায় কন্যাকে ধর্ষণ করতে না পেরে পিতাকে কুপিয়ে জখম করেছে সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রধান আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ও তার ক্যাডাররা। এ ঘটনায় থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ আরেকজন আওয়ামী লীগ নেতার অনুমতি নেই বলে মামলাটি গ্রহণ করেনি। অন্যদিকে ধর্ষণ প্রচেষ্টা সফল না হওয়ায় ক্ষুব্ধ সন্ত্রাসীরা অসহায় পরিবারটিকে এলাকাছাড়া করেছে। ভাঙচুর আর লুটপাট করেছে বাড়ির ব্যবহার্য জিনিসপত্র। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গৃহকর্তাকে হত্যার ভয় দেখিয়ে হাসপাতাল থেকে বের করে দিয়েছে শামীম বাহিনীর ক্যাডাররা।

ক্ষমতাসীন হওয়ায় সন্ত্রাসীদের ভয়ে কারও মুখে নেই প্রতিবাদের ভাষা। এলাকাবাসী জানায়, একাধিক হত্যা, অস্ত্র আর মাদক মামলার ‘পলাতক’ আসামি শামীম তার কয়েকজন ক্যাডার নিয়ে মদ্যপ অবস্থায় গত পরশু রাত সাড়ে ১১টার দিকে চৌগাছার জাহাঙ্গীরপুর পূর্ব পাড়ার আমজাদ আলীর বিবাহিত মেয়ে শেফালীর ঘরে হানা দেয়। ঘরের দরজা খুলে দেয়ার জন্য শামীম চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করে। কিন্তু শেফালী ঘরের দরজা খুলতে রাজি না হলে শামীম ও তার ক্যাডাররা দরজা ভেঙে ফেলার হুমকি দেয়। এসময় আমজাদ আলী ও তার স্ত্রীও একই ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন।

লোকজনের কথা আর চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে ঘুম থেকে জেগে ওঠেন আমজাদ আলী। তিনি আগতদের পরিচয় নিশ্চিত হয়ে ভয়ে ঘরের দরজা খুলে দেন। আমজাদ আলী দরজা খুলে বাইরে বের হন। সঙ্গে সঙ্গে শামীম ও তার ক্যাডাররা শেফালীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। পিতা-মাতা আর একমাত্র সন্তানের সামনে শামীম শেফালীকে বিবস্ত্র করার লক্ষ্যে পরনের কাপড়-চোপড় ধরে টানাটানি শুরু করে।

তার শরীরের বিভিন্ন গোপন স্থানে সন্ত্রাসীরা আঘাত করে। হাত-পা বেঁধে সন্ত্রাসীরা শেফালীকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। এসময় শেফালীর বাবা- মাকে জোর করে ঘর থেকে বের করে দেয় সন্ত্রাসীরা। মায়ের ওপর সন্ত্রাসীদের নির্যাতনের দৃশ্য দেখে শেফালীর শিশুপুত্র রাসেল (৭) সন্ত্রাসীদের পিঠে ঘরের হাক দিয়ে পেটাতে থাকে। এ সময় সন্ত্রাসীদের একজন শিশুটির গলা ধরে দেয়ালের সঙ্গে ধাক্কা মারলে সে গুরুতর আহত হয়।

এসময় মেয়ের ইজ্জত বাঁচাতে এগিয়ে আসেন বৃদ্ধ আমজাদ আলী। সন্ত্রাসীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে আমজাদ আলীকে কুপিযে মারাত্মক জখম করে। বাবার ওপর সন্ত্রাসীদের এ হামলার ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে নির্যাতিত শেফালী ঘরে থাকা ধারালো বঁটি নিয়ে শামীমের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এসময় শেফালীর বঁটির আঘাতে শামীমের শরীরও ক্ষতবিক্ষত হয়। পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে আঁচ করে শামীমকে নিয়ে তার ৪ ক্যাডার টিটন, মাইনুদ্দিন, বাদল ও ইদ্রিস পালিয়ে যায়।

মুহূর্তে গোটা গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে এ খবর। ছুটে আসে গ্রামবাসী। কিন্তু শামীম বাহিনীর ক্যাডারদের ভয়ে মুমূর্ষু আমজাদ আলীকে ওই রাতে কেউ হাসপাতালে নিতে সাহস পায়নি। রক্তে ভিজে যায় তার পুরো শরীর। গতকাল সকালে পাশের গ্রামের আত্মীয়স্বজন এসে আমজাদ আলীকে প্রথমে চৌগাছা হাসপাতালে ভর্তি করে।

অবস্থা বেগতিক দেখে পরে তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের রেজিস্টার অনুযায়ী আমজাদ আলীর ভর্তি রেজিস্ট্রেশন নং-৮৫৪৭/১১। এদিকে আহত আমজাদ আলী ও তার নির্যাতিত মেয়ে এক পুত্র সন্তানের জননী শেফালী সাংবাদিকদের জানান, শামীমের মতো কুলাঙ্গার সন্তান যেন কোন মায়ের কোলে জন্ম না নেয়। তার হাত থেকে মা-মেয়ে, বউ, শাশুড়ি কেউ রেহায় পায়নি। বছরখানেক আগে আরও একবার শামীম শেফালীকে টার্গেট করে।

তার ওপর চালায় পাশবিক নির্যাতন। শেফালীর ঘর ভেঙে দেয়া ও তার মুখে এসিড মারার হুমকি দেখিয়ে ৫০ হাজার টাকা চাঁদাও আদায় করে সন্ত্রাসী শামীম। একমাত্র মেয়ের সুখের জন্য ভিটেমাটির একাংশ বিক্রি করে বৃদ্ধ আমজাদ আলী শামীমের হাতে তুলে দেয় সে টাকা। শেফালীর স্বামী গত তিন বছর ধরে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করায় তার ওপর লোলুপ দৃষ্টি পড়ে নরপশু শামীমের। তিন বছর ধরে শেফালী এই নরপশুর হাতে নানাভাবে নির্যাতিত হচ্ছে বলে সাংবাদিকদের জানান।

এবার মেয়ের ইজ্জত বাঁচাতে সেই সন্ত্রাসীদের হাতে জখম হলেন পিতা আমজাদ আলী। তিনি দুঃখ করে বলেন, এই সন্ত্রাসী কুলাঙ্গারের মৃত্যু হলে এলাকার শত শত পরিবার বেঁচে যেতো। তার হাতে গোটা এলাকার মানুষ জিম্মি। সন্ধ্যার পর তার ভয়ে মেয়ে-বউ-ঝিরা বাড়ির বাইরে বের হতে পারে না। প্রকাশ্যে রাস্তার পাশে বসে মদ খায়।

আর যার মেয়ে-বউ পছন্দ রাতের বেলা তার ঘরে হামলা করে। মান-সম্মান আর জীবনের ভয়ে অনেকেই এই নরপশুর আবদার মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছে। নির্যাতিত শেফালী অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বলেন, গরিবের ঘরে যেন কোন সুন্দরী মেয়ে না জন্মায়। এলাকাবাসী জানায়, শামীম ও তার ক্যাডারদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে একাধিক আগ্নেয়াস্ত্র। ভয়ে কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস পায় না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের ১৩ই অক্টোবর এই শীর্ষ সন্ত্রাসীকে অস্ত্রসহ র‌্যাব ৬-এর একটি টিম চৌগাছা থেকে আটক করে। পরে তাকে নিয়ে বেড় গোবিন্দপুর এলাকায় অস্ত্র উদ্ধারে গেলে শামীম বাহিনীর ক্যাডাররা বাহিনী প্রধানকে ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। এসময় র‌্যাবের ক্রসফায়ারে শামীম পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে জখম হয়। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষ নেতা ও স্থানীয় একজন জনপ্রতিনিধির তদবিরের কারণে র‌্যাবের ক্রসফায়ার থেকে শামীমকে কৌশলে রক্ষা করা হয়। চৌগাছার শীর্ষ সন্ত্রাসী এ আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে চৌগাছা ও ঝিকরগাছা থানায় হত্যা, অস্ত্র ও মাদক চোরাচালান, ডাকাতি, ধর্ষণ, চুরি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধে কমপক্ষে ২৫টি মামলা রয়েছে বলে পুলিশের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে শীর্ষ এ সন্ত্রাসী ভারতে পালিয়ে ছিল। আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের প্রায় ২ মাস পর সে এলাকায় ফিরে আসে। অন্যদিকে হাসপাতালে ভর্তি হলেও গতকাল দুপুরে সন্ত্রাসী শামীম বাহিনীর ক্যাডারদের হুমকির মুখে হাসপাতাল ছেড়েছেন আহত আমজাদ আলী। নিরাপত্তার স্বার্থে তাকে বাইরে কোথাও গোপনে চিকিৎসা করানো হচ্ছে বলে নির্ভরশীল সূত্রে জানা গেছে। নির্যাতিত পরিবারটি চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

এদিকে নির্যাতিত শেফালী বেগম গতকাল সকালে চৌগাছা থানায় শীর্ষ সন্ত্রাসী শামীম ও তার ৪ ক্যাডারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। কিন্তু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাফ জানিয়ে দেন, চেয়ারম্যান সাহেবের কাছে যান। তার অনুমতি ছাড়া এ ব্যাপারে কোন মামলা নিতে পারবো না। অন্যদিকে শামীম বাহিনীর ক্যাডাররা গতকাল আমজাদ আলীর বাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও ব্যবহার্য জিনিসপত্র লুটপাট করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিরাপত্তার স্বার্থে পরিবারটি বর্তমানে গ্রামছাড়া।

মানব জমিন

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।