আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শিরোনাম নাই (একান্ত ব্যক্তিগত। কেউ পড়লে ভালো, না পড়লো আরো ভালো)

তবুও জীবন যাচ্ছে কেটে জীবনের নিয়মে।

অনেকদিন ব্লগে ঢু মারা হয়নি। মানে অফিস থেকে ব্লগ ব্লক করে দিয়েছে। চান্সে কয়েকমাসের বিরতি। গত মাসে হঠাৎ করে দেশে যেতে হলো।

আসলে কাজ করতে করতে মাথা ধরে গিয়েছিলো। তাই কোন নোটিশ ছাড়াই চার সপ্তাহের জন্য ছুটি নিয়ে চলে গেলাম। সপ্তাহখানেক ঢাকায় কিছু ছোটখাটো কাজ শেষ করে সিলেট। বেড়াতে যাওয়া মানেই স্বাধীনতা। না হলে তো অফিস টু বাসা আবার বাসা টু অফিস।

এর বাইরে কোন কাজই হয় না। কক্সবাজার যাওয়ার জন্য সবকিছু ঠিকঠাক করে অপেক্ষা করছি। দেশে থাকতে প্রতি বছর অন্তত এক সপ্তাহের জন্য কক্সবাজার যাওয়া রুটিন হয়ে গিয়েছিলো। দেশে গেলে বন্ধুনদের নিয়ে একই রুটিন ধরে রাখার চেষ্টা করি। কিন্তু অফিসের কাজে জরুরী ভিত্তিতে দুই সপ্তাহের মাথায় ফিরে আসতে হলো।

আসতে গিয়েও ব্যাপক ঝামেলা। যে প্লেনে গিয়েছি ওখানে রিটার্ন টিকেটর তারিখ আগানো সম্ভব না। উপায় না পেয়ে মালয়েশিয়ান এয়ারের টিকেটের ওয়ান ওয়ে টিকেট করতে হলো। আসলে আমার জিগরি দোস্তু মালয়েশিয়া হয়ে সিঙ্গাপুরে ব্যবসায়ের কাজে যাচ্ছে। ও নিজে মালয়েশিয়া এয়ারের টিকেট ব্যবস্তা করে দিলো।

অনেক্ষন একসাথে আড্ডা দেওয়া যাবে এই জন্য এই পদক্ষেপ। এই প্রথম এশিয়ার কোন দেশে আমার যাওয়া। ১৬ ঘন্টার ট্রানজিট। সন্ধ্যায় টিকেট করে রাতে ফ্লাইট, তাই ওরা হোটেল কনফার্ম করতে পারেনি। আমাকে এয়ারপোর্টে গিয়ে হোটেলের জন্য চেষ্টা করতে হবে।

আমার বাংলাদেশী পাসপোর্ট। কিন্তু ভিসা অনেক। ওদের অনেক বড়ো ওয়ারপোর্ট। সেই অনুপাতে যাত্রি কম মনে হলো। দেশী পাসপোর্ট নিয়ে ওদের দেশে ঢুকতে হলে ট্রানজিট ভিসা নিতে হবে।

আমার সামনে একজন এশিয়ানকে ওরা রিফিউজ করলো। লোকটিকে শুধু বলতে শুনলাম আমি কি আগামী ১৬ ঘন্টা এয়াপোর্টেই থাকবো? ওরা হাসিমুখে বল্লো- জ্বী। শুনে আমার তো গলা শুকিয়ে কাঠ। ঐদিকে দোস্ত অলরেডি সিঙ্গাপুর এয়ারে উঠে গেছে। আমার পাস এগিয়ে দিলাম।

প্রতি পাতাতেই বিভিন্ন দেশের ভিসা। পাসপোর্টের মাত্র কয়েকটি পাতা খালি আছে। আসল ভিসার পাতা খুজে পেতে হলে আমার সাহায্য নেওয়া আবশ্যক । এখন তো উনারা জার্মান ভাষা বুঝে না। পাসপোর্ট নিয়ে অনেক্ষন নাড়াচাড়া করে পরে ওদের বসের কাছে গিয়ে কথা বলে এসে দেখলাম সিল মারতেছে।

আহ, শান্তি। দেশটা মোটামুটি ছিমছাম। অনেক চাঙ্কু আর তামিল দেখলাম। মোটামুটি ভালোই হোটেল ছিলো। তবে আশেপাশে বাঙালির দেখা পেলাম না।

বিকেলে একজনের সাথে দেখা হয়েছিলো। অবস্হা খুব একটা ভালো না। কন্ট্রাক্ট ছাড়া নাকি কাজ করতেছে। কখন ধরে পাঠিয়ে দিবে তার কোন ঠিক নাই। তখন ওখানে চায়নিজ নতুন বছরের ছুটি ছিলো।

প্রায় ১৬ ঘন্টার ফ্লাইট। শুনেই মোটামুটি মাথা খারাপ অবস্হা। দেশ থেকে এসে প্রচন্ড ঠান্ডার মধ্যে গরম লাগতেছিলো। বাইরে বরফ জমে পুরো পাথর হয়ে আছে। অথচ আমার গরম লাগে।

যা হবার তাই হলো। কয়েকদিনের মধ্যে জ্বরে কাহিল। কয়েকদিন পেরাসিটামল সেবন করে কাজ হলো না। ডাক্তারের কাছে গিয়েও একই ঔষধ। দেশে থাকতে প্রচুর বিড়ি ফুকেছিলাম।

লাঞ্চে নাকি কফ জমেছে। কিসব ঔষধ দিলো। কিন্তু জ্বরের কোনই অবনতি নাই। পরেরবার ডাক্তারকে গিয়ে বল্লাম আমি কিন্তু কয়েকসপ্তাহ বাংলাদেশে ছিলাম। এবার উনি একটু নড়েচড়ে বসে বল্লেন-তাহলে তো ম্যালেরিয়া টেষ্ট করতে হবে।

ঐ টেষ্ট আবার সব হাসপাতালে হয় না। আমি গত ৮/৯ বছরে একবারও কোন রকমের ডাক্তারি টেষ্ট-ফেষ্টের কাছে যাইনি। যদিও বছরে একবার করার নিয়ম। আর হেল্থ ইন্সুরেন্সের হাজার হাজার ইউরো ফাও নিয়ে যাইতেছে। তারপরও যেতে ইচ্ছে করে না।

ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে শুধু ম্যালেরিয়া টেষ্ট হয়। আমি হাসপাতালে টেষ্ট করাতে ভয় পাই। এখানে একবার যদি ইমারজেন্সিতে যাওয়া হয় তাহলে আর উপায় নাই। কোন রোগ না পাওয়া পর্যন্ত রেহাই নাই। দরকার হলে হাসপাতালে ৪/৫ দিন রেখে ওরা শত শত টেষ্ট করবে।

তারপর একদম শিওর না হয়ে ছুটি দিবে না। আমি ভয়ে ভয়ে ছোট ভাইকে নিয়ে টেষ্ট করাতে গেলাম। যদি রেখে দেওয়ার চেষ্টা করে তাহলে যাতে কোনমতে বের হয়ে আসতে পারি এজন্য সাপোর্ট নিয়ে গিয়েছিলাম। ওনেকগুলো টেষ্ট করে বল্লো কোন ম্যালেরিয়া না, তবে ওরা রক্তে কি একটি উপাদান কম পেয়েছে। তাই এন্টিবায়োটিক দিলো (কোন ডাক্তারই এন্টিবায়োটিক সহজে দিতে চায় না)।

সাথে ইউরিন সহ আরো কিছু টেষ্ট করে পরে জানাবে বলে চলে যেতে বল্লো। এদিকে জ্বরে অবস্হা এমন কাহিল যে কিছু খেতেই ইচ্ছে করে না। মা কিছুক্ষন পর পর এসে কি খাবো সেটা নিয়ে কথা বলতেই থাকে। তিন সপ্তাহে ওজন প্রায় ৫ কিলো মাইনাস। যে অফিসের জন্য এতো কষ্ট করে আসা ওখানে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

যদিও একদিন যাই পরের দুই দিন ডাক্তারের কাছে ফোন করে অসুস্হতার ছুটির কাগজ নিয়ে আসি। ম্যানেজার বলে তুমি আগে সুস্হ হও। আর অফিস থেকে লম্বা ছুটি নাও। তুমি যদি এসে আমার বাকি ডেভোলপারগুলোকে অসুস্হ করো তাহলে আমি রাস্তায় বসবো। বাসা থেকে কিছু কাজ করার ইচ্ছে প্রকাশ করলাম।

অনেকদিন কাজের বাইরে থাকলে টেকনিক্যাল অনেক কিছুই ভুলে যাই। এখন আমাদের ১০/১২ বছরের পুরনো প্রসেসর ছেড়ে নতুন প্রসেসর নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। তাই অনেক কিছু প্রতিদিন আপডেট হচ্ছে। নেট থেকে আমাদের অফিসের সবগুলো সার্ভার এক্সেস করার উপায় আছে। আর ডেভোলপারের কাজ তো কম্পু দিয়েই।

যদিও আমাদের সফটওয়্যার হার্ডওয়্যার রিলেটেট। তাই সফটওয়্যার কম্পাইল হলেই কাজ শেষ না। বেশিরভাগ সময়েই এ্যারর ফ্রি সফটওয়্যার ডিভাইসে কাজ করে না (গত তিনদিন ধরে ডিভাগ করে একটা এ্যারর ধরতে পারতেছি না। সি এর পয়েন্টার যতো ঝামেলা। কাজ করে মজা নাই।

শুধু পেটের ধান্ধায় কাজ করা)। জ্বর থেকে ছাড়া পেতেই হাসপাতাল থেকে ফোন। আমার নাকি সিরিয়াস টাইপের কিছু পাওয়া গেছে। আমি তাড়াতাড়ি যাতে যোগাযোগ করি। তখন gesundheitsamt (health authorities ) থেকে ফোনও আসছে।

আমি কি কাজ করি? কোথায় থাকি? সবকিছু শুনে উপদেশ দিলো আমি যেনো পাবলিক প্লেস থেকে দুরে থাকি। আরো অনেক রকমের হেল্থ টিপস। সব সময় লিকুয়িড দিয়ে হাত ধুতে হবে। সাবান ব্যবহার করা যাবে না(সোয়াইন ফ্লুর পর থেকে বাসা, অফিস সব জায়গাতেই সতর্কতা ছিলো আগে থেকেই)। ম্যানেজারকে বলতেই বল্লো বাসায় দৌড় দাও।

হাসপাতাল থেকে আরো এক সপ্তাহের ছুটির নোটিশ ধরিয়ে দিলো। দশ দিনের জন্য আরো একটি এন্টিবায়োটিকও ধরিয়ে দিলো। বাসায় বসে অফিসের সার্ভার ব্যবহার করে কিছু কাজ এগিয়ে রেখেছিলাম। বাসায় বসে কোন কাজ নেই। সারাক্ষন শুয়ে বসে সময় কাটানো।

যদিও ম্যানেজারের ইচ্ছে ছিলো আমি যেনো বাসা থেকে কাজ করি। আমাদের কিছু এক্সটারনাল ডেভোলপার আছে যারা বাইরে থেকে কাজ করে। কিন্তু ইউনিট ম্যানেজার মানা করে দিয়েছে। এক সপ্তাহ পর আবার টেষ্টের জন্য হাসপাতালে গেলে ওরা আবারও এক সপ্তাহের ছুটির নোটশ ধরিয়ে দিলো। টেষ্টের রেজাল্ট পাওয়ার আগ পর্যন্ত নাকি কোথাও যাওয়া রিক্সি।

আমি ঐটা পকেটস্হ করে অফিসে গিয়ে কাজ শুরু করে দিলাম। প্রায় ৭ সপ্তাহ পর কাজে গেলাম। কাজের পুরো জট গেলে গেছে । কয়েকদিন ১০ ঘন্টার মতো কাজ করতে হলো। আমাদের আবার কঠিন নিয়ম।

১০ ঘন্টার উপর কাজ করতে পারবে না। তাহলে নোটিশ খেতে হবে। কয়েকদি পর হাসপাতাল থেকে আবারো ফোন। টেষ্ট নেগেটিভ। কিন্তু আমাকে নাকি আরো দুইবার টেষ্ট করাতে হবে।

ঐ দুটো যদি নেগেটিভ আসে তাহলেই রক্ষ্যে। মনে মনে প্রমাদ গুনলাম। আগামী সপ্তাহে টেষ্ট দুটো দিয়ে যদি আল্লাহ উদ্ধার করেন। তবে হাসপাতালের অবস্হা খুবই ভালো। আমি চিন্তাও করতে পারিনি।

ওখানে সাধারন রোগিদের জন্য চা, কফি, পানি, বিক্সুট, কেক থেকে শুরু করে সবই ফ্রি। যার যা ইচ্ছে সবই খাচ্ছে। দেশ থেকে দোস্ত আসবে আগামী মাসে। উনার জন্য অফিস কামাই দিতে হবে। উনি সুইজারল্যান্ড থেকে শুরু করে কয়েকটি দেশ ঘুরতে আসবেন।

আমাকে উনারকে নিয়ে ঘুরতে হবে। তবে মোটামুটি অন্যের উপর দিয়ে আমি আরেকবার বিভিন্ন দেশে ঘুরে আসবো বলে বেশ নিশ্চিত ছিলাম । গতদিন আরেক দোস্ত ইউ.কে থেকে ফোনাইছেন। উনিও ঘুরতে আসতে চাচ্ছেন। উনারও ইচ্ছে সুইজারল্যান্ডে যাওয়ার।

এখন আমার একটাই চিন্তুা। দেশ আর ইউ.কে তে লিয়াজো করে দুইজনকে একসাথে নিয়ে আসার। তাহলে গাড়ি নিয়ে যেতে পারবো। এক ট্যুরেই দুজনকে সময় দেওয়া হবে। না হলে খবর আছে।

আমার মতে ইউরোপে দেখার মতো খুব একটা কিছু নেই। কেউ যদি বলে ফ্রাঙ্কফুট আসতেছি। একটু ঘুরিয়ে দেখাতে। আমি ব্যাপক চিন্তিত হয়ে পড়ি। দেখানোর তো কিছু নাই।

নদীর পাড় দিয়ে কিছুক্ষন হাটিয়ে বিদায় দেই। যদিও সুইস, ভেনিস, ফ্রান্সে, চেকের কিছু জায়গা আমার ভালো লেগেছে। কিন্তু ঐ একটা জায়গা দেখতে তো বেশিক্ষন লাগে না। প‌্যারিসে পরিচিত কেউ থাকলে পুরো প‌্যারিস দেখতে মাত্র কয়েক ঘন্টার ব্যাপার (গত ট্যুরে শাওন আমাদের সাথে থাকায় সবগুলো জায়গা দেখার পর দেখি এখনো কয়েক ঘন্টা বাকি আছে আমাদের ট্রেন আসার। প্লাটফর্মের ট্রেনে বসে কয়েকঘন্টা পার করলাম।

দেখার কিছু ছিলো না। ) সামারটা আসলে কিছু করার ইচ্ছে আছে। এরমধ্যে মাছ ধরা অন্যতম। অফিসে der Angler (fisherman) হিসেবে অলরেডি খ্যাতি অর্জন করে ফেলেছি। শুধু মাছ ধরাতেই আনন্দ।

এই দেশের মিঠা পানির মাছে কোন টেষ্ট নেই। আমাদের দেশের মাছ অনেকককক সুস্বাধু। (প্রথম পাতায় প্রকাশ না করার অপশনটা পাচ্ছি না কেনো??)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।